দিনলিপি ০৪: আবোলতাবোল

১.১- ইদানিং কেনো জানি অফিস করতে একদমই ভালো লাগে না। বুঝতেছি না কেনো। এখনি এই কাহিনি হলে আরো তো সময় অনেক পড়ে আছে। কি যে হবে। প্রথমে ভাবতাম শুধু আমার। কিন্তু না, পরে অফিসে তানভীর বা অন্যান্যদের সাথে কথা বলে দেখি একি কথা সব দিকে। আগের দিনের মানুষ রাও কি এতো তাড়াতাড়ি বোরড হয়ে যেতো? কি জানি। নাকি যুগের অনূভুতি এটা। হতে পারে এক জায়গায় বেশকয়েক বছর চাকুরি করার ক্লান্তি। হয়তো যারা অনেক সিনিয়র তারা এই লাইন পড়ে হাসতেছেন “বাছা এই কয়েক বছরেই হাপিয়ে উঠেছো। যাক আরো কয়েক বছর, বিয়ে শাদি করো, তারপর বুঝবা চান্দু”।সেই চিন্তা এখন করতেও চাই না, আগে কাইয়ূম ভাই সামলাক।
১.২- বোরিং হয়ে যাবার একটা কারন আগেই বললাম। এক জায়গায় অনেকদিন (জিপি তে জয়েন করেছি প্রায় ৪ বছর)থাকার কারনে হতে পারে।আমার এতোদিন কার দায়িত্ব ছিলো কল সেন্টার এর সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট করা এবং কল সেন্টার এর সার্ভার মেইনটেইন করা।এতো দিন ভালোই এনজয় করছিলাম। নিজের লাইনের কাজ। আর যেহেতু সফটওয়ার বানানো কাজ টা আমি বেশ এনজয় করি তাই ভালোই ছিলাম।আরেকটা সুবিধা আছে কল সেন্টার এ কাজ করার। যেহেতু কল সেন্টার ২৪ ঘন্টার ইউনিট, আর আমাকে একটা টীম লীড করতে হয় তাই আমি অফিসে যেতাম ১০/১১ টার দিকে , বের হতাম ৮/৯ টার দিকে। কর্পোরেট পলিটিক্স এর একটা প্রধান মটো হলো “Break the comfort zone”।মানে যে যেইখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ,তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দাও।এটা যখন আমরা লীডারশীপ ট্রেনিং করি সেখানে শেখানো হয়।
১.৩- বেশ কিছুদিন থেকেই আমাকে আমাদের পুরা ডিভিশন এর সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট আর রিপোর্টিং এর দায়িত্ব দেয়ার জন্য ঐ ইউনিট এর বস অফার করতেছিলেন। কিন্তু কেনো জানি যেতে ইচ্ছা করতেছিলো না।ভালোই তো আছি। কি দরকার এতো দৌড়ের উপর থেকে। কি হবে এতো তাড়াতাড়ি মাথায় এতো বোঝা নিয়ে? কিন্তু ঐ যে, বোর লাগার কারনে গত সপ্তাহে যখন ঐ বস ৩য় বারের মতো অফার করলেন, তখন ভাবলাম, দেখি একটি চেঞ্জ করে। বসকে বললাম ঠিক আছে আমি রাজি দায়িত্ব নিতে। উনি বললেন ঠিক আছে আমি প্রসেস শুরু করি। এই হলো কর্পোরেট কালচারাল এর আরেক পিকিউলিয়ার নীতি।সব কিছুতেই প্রসেস। ভার্বালি আমাকে রাজি করিয়ে পুরা ডিভিশন এ মেইল করা হলো ঐ ডিভিশন এ একজন কে নেয়া হবে। যারা আগ্রহী তারা যেনো মেইল করে। তারপর পরশু বেশ কয়েকজন কে মেইল দিয়ে জানিয়ে দেয়া হলো আপনাদেরকে শর্ট লিষ্ট করা হয়েছে ইন্টারভিউ এর জন্য। আজকে ছিলো সেই ইন্টারভিউ। আরেকটা কাহিনি মনে হয় সব কোম্পানীর জন্য সত্য। এইচ আর এর লোকজনের অফুরন্ত সময়।
তো ইন্টার ভিউ এ আমাকে যখন সংশ্লিষ্ট ইউনিট এর বস কে বলা হলো কিছু জিজ্ঞাসা করার জন্য উনি যেই কথাটা বললেন শুনে খুব ভালো লাগলো। মনে হলো যে, এতো দিন যে পরিশ্রম দিয়েছি কিছুটা হলেও কাজে লেগেছে। উনি বললেন, “I know what is his skill and capability. So discussing this is a waste of time”(বস দের মুখে এই কথা শুনতে কার না ভালো লাগে)।
কিন্তু খারাপ কথা হলো যে, আমাকে রবিবার থেকে সকাল ৮ টায় অফিস এ যেতে হবে। কারন ৯টায় ডেইলি CEO থেকে শুরু করে সব ম্যানেজমেন্ট এ একটা রিপোর্ট প্রতিদিন দিতে হবে। তাও একটা চেঞ্জ তো হলো।আর পুরো ডিভিশন এর সফটওয়ার ডেভেলপমেন্টও এখন থেকে আমাকেই দেখতে হবে।
১.৪-বিকালে হঠাত খেয়াল হলো আরে আগামী দুই দিন তো বন্ধ। আহ, ছিটি।কামরুল কে ফোন দিলাম ক্লাব এ আয় আড্ডা দেই। ও বল্লো ঠিক আছে আয়। মুস্তাকিম আর সাদিকুর কে ফোন দিলাম ক্লাব এ চলে আয়।অফিস থেকে বের হয়ে বনানী পর্যন্ত আসতেই বস আমাদের এজিএম এর ফোন। বের হয়ে গেছেন? জ্বি বস, ৬৩০ বাজে। কালকে যে একটু আসতে হবে। কেনো? সার্ভার এ তো আপনি ছাড়া কারো এক্সেস নাই। কালকে এসে টাইম ১ ঘন্টা আগাতে হবে।কি জ্বালা। ঠিক আছে বস, আমি কালকে এসে করে দিয়ে যাবো দুপুরে।
১.৫-ক্লাবে বসে আড্ডা দিচ্ছি আমি কামরুল। বাকিরা তখনো আসে নাই।হঠাত কামরুল বলে, যাহ আজকে ধরা খাইলাম। কেন কি হইছে? অই যে, দরজায় দেখ কে? তাকিয়ে দেখি আমাদের সানা ভাই।উনি এসে আমাদের সাথে বসলেন। বেশ অনেক্ষন আড্ডা হলো উনার সাথে। তারপর উনি চলে গেলেন। আর আমরা ছিলাম রাত ১০৩০ পর্যন্ত। ভালোই দিন গেলো। কিন্তু কালকে অফিসে যেতে হবে চিন্তা করেই তো মেজাজ গরম হচ্ছে। ঐ মাস্ফু ১০টা ফ্রন্ট্রোল দে তো। দেখি মেজাজ ঠান্ডা হয় নাকি।

২,৬৬৭ বার দেখা হয়েছে

৪৬ টি মন্তব্য : “দিনলিপি ০৪: আবোলতাবোল”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll:

    অন টপিক-অন্যকে যন্ত্রণা দিয়ে এই বিকৃত স্যাডিস্টিক মনোভাব প্রকাশের জন্য রিবিন ভিয়ের বিঞ্চাই :((

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আর পুরো ডিভিশন এর সফটওয়ার ডেভেলপমেন্টও এখন থেকে আমাকেই দেখতে হবে।

    রিবিন ভি ইঙ্গিতে জিনিয়ি দিলিন যি ইনার প্রিমোশিন হিইছে।
    ইই ইপিলিক্ষি একটা খিওয়া-দিওয়া চিই :((

    জবাব দিন
  3. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    ঠিক মতো বাসায় পৌছেছিলি তো? 😉
    সাদিকুর কিন্তু তিন পেগ খেয়ে বলছিলো 'কনকচাঁপাকে আজকে এতো সুন্দর লাগছে কেন?' :))


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  4. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)
    হয়তো যারা অনেক সিনিয়র তারা এই লাইন পড়ে হাসতেছেন “বাছা এই কয়েক বছরেই হাপিয়ে উঠেছো। যাক আরো কয়েক বছর, বিয়ে শাদি করো, তারপর বুঝবা চান্দু”।

    কি জানি ............ সংসার করার চাইতে চাকরী করাটা আমার কাছে বেশী বিরক্ত লাগে ............
    যাই হোক ...... অভিনন্দন রবিন ......

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    অভিনন্দন রবিন ভাই...... লেখা পড়ে ভাল লেগেছে, তবে সবচেয়ে ভাল লেগেছে শেষ দুই লাইন 😀


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. ইউসুফ (১৯৮৩-৮৯)

    দায়িত্ব বেড়ে যাওয়ার একটা আলাদা স্যাটিস্ফ্যাকশন আছে। আশা করি শত ব্যাস্ততার মাঝে তুমি সেটার স্বাদ পাবে। অভিনন্দন! কিন্তু জুনিয়র ছেলেপেলে এই উপলক্ষে কি যেন চায় সেটা একটু খেয়াল রেখ। স্পেশালি মাস্ফ্যু বেচারা অনেকগুলো তোমার মনোরন্জনমূলক :frontroll: দিল সেটা একটু দেখ।

    জবাব দিন
  7. রবিন (৯৪-০০/ককক)

    নাহ, এখনো মনে হয় ভালো ব্লগার বা লেখক হইতে পারি নাই। বুঝাতে চাইলাম এক, লোকজন বুঝলো আরেক।
    ভাইসব, আমার কোনো প্রমোশন হয় নাই। খালি এক ইউনিট থেকে আরেক ইউনিট এ গেছি। আর এই লেখায় বুঝাতে চাইলাম আমার সকালে উঠার বেদনা, শুক্রবারে অফিসে যাবার কষ্ট। কেউ বুঝলো না। :bash:

    জবাব দিন
  8. রকিব (০১-০৭)

    অনেক তো হলো রবিন ভাইয়ের; এবার কোন বাবাকেও বলবার সু্যোগ দিন, "আমার মেয়ের দায়িত্বটা নাও বাবা রবিন।"
    :grr: :grr: :grr:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।