কাই বৃত্তান্ত ২

আমার এক দোস্ত (নাম বললে চিনে ফেলবেন….) কাই-রে ডেকে আগের লেখাটা দেখাইছে। কাই খুবই ক্ষিপ্ত এতে। সে আমারে রিসেন্টলি ‘জান কবজ’ করার হুমকি দিছে। আমি নাকি অনেক চাপা মারছি…(তাও নাকি কথ্য বাংলায়………শুদ্ধ বাংলায় নাকি চাপা টের পাওয়া যায় না)…আর যদি ভবিষ্যতে লিখি এইরকম কিছু তাইলে নাকি আমার কুলখানিতে সবাইরে দাওয়াত দেওয়া লাগবে! তা আপনাদের দাওয়াত রইল। কিন্তু কি আর করা! হাতে কোনো কাজ নাই। কিছু তো লিখতে হবে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়া হইলেও continue করি ‘কাই উপাখ্যান’ এর ২য় পর্ব……

সেবারকার ঘটনা। আমরা আড্ডা দিতেছি। কাই হাজির হইল। এবং সে অতি উত্তেজিত, মানে red alert । আমরাও পাত্তা দিতাম না কিন্তু সে অইদিন চুল আঁচড়ায়ে নদীর ধারে আসছে আড্ডা দিতে।তা আমরা খুব টেনশিত মুখে অপেক্ষা করতেছি …………কি কয়?? কি যে কয়!! নতুন কি কেস ঘটাইলো সে আবার। যা জানলাম তা আরো মারাত্মক!!!!

কাই প্রেমে পড়ছে…

শুনে আমরা কয়েক সেকেন্ড চুপ……………… তারপর সবাই সমস্বরে,
😮 😮 😮
তারপর
:thumbup: :thumbup: :thumbup:

যাহোক আমরা তো খবর শুনে উত্তেজিত এবং উল্লসিত। তা কে সেই রহস্যময় বিপরীত লিঙ্গের জীব?! কে সেই কন্যা যে কিনা আকাশ বাতাস কাঁপায়ে, মেঘের গন্ধ ছড়ায়ে, স্বপ্নদৃষ্টি মাখায়ে, এলোপায়ে আলোল চুলে আগায়ে,………………এসে টোকা দিছে কাই এর দিলের দরজায়?! অনেক খোঁচায়ে, অনেক গুঁতায়ে যা জানলাম তা হইল মেয়ে পড়ে কাই এর ডিপার্টমেন্ট-এই। (নাম কবো না, তাইলে এই পোষ্ট পাবলিশ হইতে যা দেরি………আমি এর মধ্যেই শ্যাষ!) আমরা সাথে সাথে বু্ঝে গেলাম মেয়ের বর্ণনা কি হইতে পারে।কারণ টা বলি তাইলে। কাই রে তো চিনি খুব ভালো করেই। তাই আমার আইডিয়ায় কাই এর স্বপ্নের নারীর কিছু prerequisites:

১। মেয়ে খুব লম্বা না, খাটোও না……(এটাই প্রথম এবং শেষ সহজ চাহিদা)
২। চাঁপাইয়ের টানে কথা কয় না(নো অফেন্স, আমি ওই জেলায় ছিলাম পাঁচ বছর আর ওই টানে কথা বলতে পারি ভালোমত।)
৩। মুখে রঙ মাখে না(মেক আপ নেয় না)
৪। শেলী কিংবা কীটস-এর কবিতা পড়ে এবং বুঝে।
৫। মেঘের(!) মত চুল
৬। শ্যামা ত্বন্নী শিখরিদশনা…
………………………………
………………………………
………………………………
(অনন্ত ক্রম শেষে) কাই রে পাত্তাই দেয় না।

আমি জানি না সে মেয়ে কয়টা পয়েন্ট পূরণ করতে পারছে(শেষটা ছাড়া); মোদ্দাকথা কাই তারে ভয়ানক পেয়ার করে। কিন্তু প্রপোজ করে ক্যামনে? ক্যামনে?? শ কয়েক কাপ কফি আর শত শত গোল্ডলিফ গায়েব হয়ে গেলো। উপায় নাই। কয়েকদিনে চিন্তায় চিন্তায় আমাদের মাথায় prematured টাক পড়লো বলে ভাব, ঠিক তখনই কাই দুম করে মেয়েরে প্রপোজ করে বসলো। যাকে বলে একেবারে blunder!! মেয়ে আমাদের ধারণার চেয়েও স্মার্ট। সে কাই রে ডাইরেক্ট ‘না’ দিলো। কাই এমনিতেই একটু বেশি ডিসেন্ট। তাও সে কিছু ধানাই পানাই করলো। সে মেয়েরে জিগাইলো
“কেনো না…কেনো??? কেনোওওও”(এই অংশটা সিনেমাটিক স্টাইলে পড়েন……)

জবাবে মেয়ে যা কইছে তাতে আমরা বেশ অবাক। “তুমি খুব ভালো ছেলে, কিন্তু একটু পাগলাটে আছো। তাছাড়া খুব স্মোক করো। বেশি ফান করো আর মোটেও সিরিয়াস না লাইফ নিয়ে। বেশি ক্যাজুয়াল থাকো……আর তোমার সব কলেজ ফ্রেন্ড গুলার মাথায় গোলমাল আছে(মানে আমি ও আমরা ক’জন)………ইত্যাদি ইত্যাদি।”
=((
সে মেয়ে যা বললো কাইরে নিয়ে তা কাই কেনো আমাদের সবার বেলায় খাটে(পাগলামিটা কম এই যা)। কিন্তু এতে সমস্যা টা কই? যাইহোক আমরা কাইরে হলিউডি মুভি স্টাইলে সান্তনা দিলাম,

don’t worry dude, she would understand………someday(!). Now let’s get you to a bar. You’ll forget ‘bout her in 10 seconds.

দশ মিনিট পর এক ফাস্টফূডে বসে banana shake খাইতেছি আমরা, কাই কিছুক্ষণ চুপচাপ। হঠাৎ কাই বলে উঠলো……
“দোস্ত, মেয়রের বাসভবনে পটকা মারবি?”
“ক্যান!”
“লোকে মনে করবে বোমা মারছে।”
“পুলিশে দৌড়াইলে……?”
“দৌড়াবো।”
” :chup: (হালায় কয় কি!)”

আমাদের ভীষণ আপত্তি দেখে কাই একটু থামল। একটু পর আবার আওয়াজ দেয়,
“আচ্ছা, পছন্দ না হলে চল নাটোর ঘুরে আসি……সাইকেলে।”
“সিরিয়াস!”
“হ্যা!”
(দ্রষ্টব্যঃ রাজশাহী থেকে নাটোর ৫০ কি,মি, দূর……যেতে আসতে ১০০ কি,মি,……সাইকেলে!)

“অবশ্যই!” কাইয়ের ভাব এমন যে এইটা কোন ব্যাপারই না। একবার তো এই নাটোর ট্রিপ পোলাপাইন দিছেই।তাই হইছিলো আগে একবার………বিশ্বাস করেন। আমি যাই নাই অবশ্য। বাকিরা গেছিল। যারা গেছিল তারা এখনও গভীর রাতে কোমর ব্যাথায় ওই সাইকেল ট্রিপের দুঃস্বপ্ন দ্যাখে। ১০০ কিলোমিটার প্যাডেল মারার কোন খায়েশই আমাদের নাই; কিন্তু কি করা আজকের হার্টব্রোকেন নায়ক কাই। সে যা বলবে তাই আমরা সাপোর্ট দিব।

তাও ব্যাপার না,আমরা সবাই হ্যাপি, কাই ইজ ব্যাক টু নরমাল। এই সকল উদ্ভট প্রস্তাব কাই স্বাভাবিক থাকলেই দেয়। এতকিছুর পর যদি ওই মেয়ে কাইয়ের মাথা থেকে উবে যায় তাতে সবারই ভাল। আমরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছি কেবল, অমনি………

“দোস্ত, ওই মেয়ের মুখ দিয়ে আমি হ্যা শুনবই।”
“আরে? 😮 :-/ ” আমি সত্যই অবাক হইলাম। কাই আমারে পাত্তা না দিয়ে শুরু করল,
“যতদিন লাগে লাগুক। আমি ছাড়তেছি না। হাজার হউক আমার পরথম প্রেম। তা তোরা আমারে মানসিক সাহায্য করবি। আমি আবার…………..বক বক বক বক বক বক বক বক বক বক

………(অনন্তকাল ধরে)”

শুনে আমাদের মাথায় হাত ~x( ।(চলবে…)

কাই বৃত্তান্ত ১

২,৬৬৯ বার দেখা হয়েছে

২৮ টি মন্তব্য : “কাই বৃত্তান্ত ২”

  1. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    কাই ভাইয়ের জন্য শুভকামনা 😀 😀 😀


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  2. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    বিরাট চিন্তায় পড়লাম :dreamy:


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  3. আহমদ (৮৮-৯৪)

    “তুমি খুব ভালো ছেলে, কিন্তু একটু পাগলাটে আছো। তাছাড়া খুব স্মোক করো। বেশি ফান করো আর মোটেও সিরিয়াস না লাইফ নিয়ে। বেশি ক্যাজুয়াল থাকো……আর তোমার সব কলেজ ফ্রেন্ড গুলার মাথায় গোলমাল আছে(মানে আমি ও আমরা ক’জন)………ইত্যাদি ইত্যাদি।” :no: :khekz: :no: :khekz:


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রিজওয়ান (২০০০-২০০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।