ধন্যবাদ মিচ. . . . .

“অ্যাশেজ টু অ্যাশেজ, ডাস্ট টু ডাস্ট, ইফ টমসন ডাজন্ট গেট ইউ, লিলি মাস্ট………………” সত্যি সে এক সময় ছিল। লিলি, টমসন, হোল্ডিং, গার্নার রা তখন রাজত্ব করতেন পুরো ক্রিকেট সাম্রাজ্যটা জুড়ে। ২২ গজে দোর্দণ্ড প্রতাপে দাপিয়ে বেড়াতেন ‘দ্যা ফ্যান্টাস্টিক ফোর’। কত রথী মহারথী ব্যাটসম্যান রা তাদের ব্যাটিং পসিশন বদলে ফেলতেন শুধু নতুন বলে মার্ভ হিউজকে ফেস করতে হবেনা ভেবে। ম্যালকম মার্শাল এর এক একটা অগ্নিগোলক যখন ব্যাটের কিনারা ছুঁই ছুঁই করে বেরিয়ে যেত, নতুন বলের সেই বাতাস চেরা শব্দ, ব্যাটসম্যানদের সন্ত্রস্ত চাহনি আর বোলারের মুখের হাসি মিলিয়ে যে এক অদ্ভুত ভয়ঙ্কর আবহ তৈরি হতো তা হয়তো হলিউডের অনেক অ্যাকশান থ্রিলার কেও হার মানাবে।

রানিং মার্ক এ দাঁড়িয়ে বোলার, ব্যাটসম্যানের সামনের পা কাঁপছে, প্রথম বল…………চোয়ালের নিচে অল্প একটু রক্ত……… বোলারের সুতীক্ষ্ণ চাহনি, মাঝে মাঝে মুখ থেকে বেরিয়ে আসত দু একটি বাক্য………… তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিয়ে আবারও রক্তাক্ত চোয়াল বদ্ধ প্রতীক্ষায় বুকচিতিয়ে লড়ে যাওয়া সারাদিন। ক্রিকেটের সৌন্দর্য বুঝি এটাই।

ফাস্ট বোলারের হাতে লাল কোকাবুরা চকচক করতে দেখলে ব্যাটসম্যানের শিরদাঁড়া কিভাবে কেঁপে ওঠে তা আমরা এই ক্রিকেট বিজনেস এর যুগে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম কিভাবে কল্পনা করবো?? তবুও দুজন সত্যিকারের ফাস্ট বোলার কে তাদের ফর্ম এর তুঙ্গে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমাদের। লী আর শোয়েব আকতার বহুদিন ধরে এই ক্রিকেটীয় বাণিজ্য আর বোলারদের বধ্যভূমি বানিয়ে ফেলা পিচ গুলোতে লড়ে যাচ্ছিলেন একলা যোদ্ধার মত…………

একটা অ্যাশেজ সিরিজ পালটে দিলো দৃশ্যপট। একজন ফাস্ট বোলারের প্রত্যাবর্তন। হ্যাঁ, সত্যিকারের ফাস্ট বোলার। ১১৫ কিঃমি গতিতে স্লোআর বল করা ফাস্ট বোলার নয়। ফিরে এল সেই দোর্দণ্ড প্রতাপ, সেই আগ্রাসন, সেই আগুন ঝরা বাউন্সার আর খুনে দৃষ্টি, ভেঙ্গে যাওয়া ব্যাট, ফেটে যাওয়া হেলমেট আর চোয়াল এর নিচে অল্প একটু রক্ত। বহুদিন পর ২২ গজ এ আবার ফিরে এল হোল্ডিং গার্নার রা। কমেন্ট্রি বক্স এর পেছনে হোল্ডিং এর ছলছলে চোখে ধরা পরছিল তার সোনালী অতীত। বহুদিন নিজের ভেতর চেপে রাখা আফসোস টা বেরিয়ে এল টমসনের কণ্ঠে, “………চার পাঁচ বছর ধরে ব্যাটসম্যানরা মিডিয়াম পেসারদের খেলতে খেলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলো………।” ইংল্যান্ড গুঁড়িয়ে গেলো, আগুনে ঝলসে গেলো দক্ষিন আফ্রিকাও। বহুদিন পর ক্রিকেট এ ফিরে এল সেই পুরনো ফিল্ড সেটআপ; স্লিপ, গালি, পয়েন্ট, শর্ট লেগ, শর্ট কাভার।

যার হাত ধরে এই মারকাটারি T২০ আর ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতার যুগে ফিরে এল ক্রিকেটের সেই সোনালী অতীত সেই মিচেল জনসন  বিদায় বললেন ক্রিকেটকে। প্রথম দেখাতেই লিলি তাকে বলেছিলেন, ” Once in a life time” সত্যিই, জনসন এর অবসরের সাথে সাথে অবসান ঘটলো একটা যুগের। স্টেইন-অ্যান্ডারসন রাও আর নেই বেশিদিন। আবার হয়তো কোনদিন ফিরে আসবে ক্রিকেটের পুরনো সৌন্দর্য, আবার ফিরে আসবে সত্যিকারের ফাস্ট বোলার। কোন এক নতুন জনসনের হাত ধরে। সেই পর্যন্ত সুখে থাক গ্লাভস, হেলমেট আর বুড়ো আঙুলগুলো। ব্যাটসম্যানেরা ফেলুক একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস…………………।।

055821-73221dac-8d22-11e5-8ec0-13b93489e996

[ পুনশ্চঃ  ক্রিকেট সম্পর্কে আমার জ্ঞান নিতান্তই অপ্রতুল। অত্যন্ত আবেগতাড়িত হয়ে লিখে ফেললাম। ক্রিকেট নিয়ে অল্পবিস্তর পড়ালেখার খাতিরে অন্যান্য লেখার কিছু অনিচ্ছাকৃত প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে। অজ্ঞতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী ]

৩,৫৪৪ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “ধন্যবাদ মিচ. . . . .”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    লিলি, টমসন, হোল্ডিং, গার্নার এদের নাম কি একসাথে যাবে?
    মিচেল এর একটা ছবি যোগ করে দিলে ভালো হতো।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    ব্যাটসম্যানদের জন্য সেসময় হেলমেট ছিল না।
    এটাও একটা মনে রাখার বিষয়।
    ১০০ মাইলের কাছাকাছি বেগে ধেয়ে আসা বলের মুখোমুখি হতে হতো শুধু প্যাড আর গ্লোভসের উপরে ভরসা করে।
    ভাবা যায়?


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  3. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি।
    ঐ সময়ে এক এক দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টে নামতো তাদের পুরো পেস ব্যাটারী নিয়ে।
    পেস ব্যাটারী মানে ছ'জন সুপার ফাস্ট বলার।
    এন্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার, কলিন ক্রফট, সিলভেস্টার ক্লার্ক, ওয়েন ড্যানিয়েল।

    কতটা এরোগ্যান্ট হলে এমন একটা টিম কেউ ফর্ম করতে পারে, যেখানে ব্যাটসম্যান মাত্র চারজন।
    কারন একদিকে ঐ পেস-ব্যাটারি যারা দুনিয়ার যে কোন ব্যাটিং এটেম্পট গুড়িয়ে দিতে সক্ষম ছিল।
    আর ছিল ক্লাস ব্যাটস্ম্যান লাইক ভিভ রিচার্ড, গর্ডন গ্রিনিজ, রয় ফ্রেডারিক্স আর ক্লাইভ লয়েড।

    চার ব্যাটসম্যান, ছয় সুপার ডুপার পেসার, নো স্পিনার, নো অলরাউন্ডার, নো হেলমেট, নো এলবো গার্ড - কেমন হতে পারে একটা পাচদিনের টেস্ট?
    কল্পনা করে দেখো দেখি???


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।