এ ট্রিবিউট টু সুধীর কাকু

আমার বাবার কর্মজীবনের শুরু হয় বগুড়ায়, সরকারি আজিজুল হক কলেজের সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে, ১৯৭৩ সালে। আমার জন্মও বগুড়াতেই, ১৯৭৬ সালে। খুব ছোটবেলা থেকেই বাবার বন্ধুদের এবং সমবয়সী ও সমসাময়িক কলিগদের সান্নিধ্য পাবার সুযোগ হয়েছে। সেসময়ের জেলাশহরগুলোতে কলিগদের মাঝে পারিবারিক যোগাযোগ এবং মিলননেলাগুলো ছিল সত্যিই আজকের যুগে প্রায় অকল্পনীয়।

বাবার সমবয়সী তবে অন্য ডিপার্ট্মেন্টের কলিগ ছিলেন সুধীর কাকু। কাকুর সাথে অনেক স্মৃতি আছে আমার। কাকীর মাতৃস্নেহ, কৃষ্ণাদির আদর, কনকের বন্ধুত্বের কত কথাই আজ বারবার মনে পড়ছে। কাকী গত ক’মাস আগেই দেহত্যাগ করেছেন। আর আজ সকালে সুধীর কাকু ইহলৌকিক মায়া ত্যাগ করলেন।

মাত্র দু’চারদিন আগেই সুধীর কাকু তাঁর অসুস্থ শরীরে একাই এসেছিলেন আমাদের বাসায়, আমার বাবার সাথে দেখা করতে। কাকু অবসরের পরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তাঁর নিজ এলাকায় সেটল করেছিলেন। সেদিন যখন বাসায় আসেন, আমি তখন ভার্সিটিতে। বাবা ফোনে কাকুর সাথে আমার কথা বলিয়ে দেন। ঠিক তার একদিন পরেই (বুধবার রাতে) বাবা জানালেন সুধীর কাকু গ্রীণলাইফ হাস্পাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁর ভার্টিগো সমস্যা হঠাত বেড়ে যাওয়াতে হাস্পাতালে নিতে হয়েছে। তিনি নাকি হাস্পাতালে ভর্তি হয়েই তাঁর একমাত্র জামাইকে বলেন তাঁর মোবাইল ফোনে সেইভ করে রাখা নম্বরে ফোন করে আমার বাবাকে জানাতে।

বাবা বুধবার রাতেই আমাকে জানালেন। বৃহস্পতিবার সকালে বৌ-বাচ্চাকে নিয়ে বাণিজ্য মেলায় যাবার পূর্বপরিকল্পনা থাকায় বাবাকে নিয়ে বিকেলের দিকে গ্রীণ রোডের হাস্পাতালে যাবার প্লান করলাম।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাবাকে নিয়ে হাস্পাতালে গেলাম। বাবাকে দেখে কাকুর প্রথম কথাই ছিল, “আমি আর বাঁচব না মনে হয়”। আমি আর বাবা দুজনেই কাকুকে তিরস্কারের ছলেই সাহস দিলাম এই বলে, অসুস্থতায় এভাবে চিন্তা করতে হয় না, বরং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে, মনে জোর রাখতে হবে।

কাকু হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার বাবার দিকে। বাবার হাত ধরে অনেক কথা বলছিলেন। তবে বেশ কষ্টও পাচ্ছিলেন। বিশেষ করে ফোমের বিছানায় যে আরাম পাচ্ছিলেন না, তা বোঝাই যাচ্ছিল। এরপরে আমার দিকে হাত বাড়ালেন, আমি হাতটা ধরতেই অনেক প্রশ্ন তাঁর, “নাত্নী কেমন আছে? বৌমা কেমন আছে? তোমার চাকরি-পড়াশুনার কি খবর”? আমার প্রফেসর হতে আর কত সময় লাগতে পারে এটা খুব গুরুত্বের সাথে জিজ্ঞেস করলেন, আর বললেন, “মন দিয়ে চাকরি করবে বাবা”।

জ্যাম ঠেলে রাতে বাসায় ফিরে যেন সুধীর কাকুর চেহারাটা মাথা থেকে যাচ্ছিলই না। সকালে বেশ দেরিতেই বা দুপুরের দিকে বাবা জানালেন সকাল আটটায় নাকি সুধীর কাকুর জামাই ফোন করেছিলেন। অজানা আশংকায় মনটা কেমন কেমন যেন লাগছিল। বাবা শুধু বললেন, “সুধীর বাবু আর নেই”।

৪,৭৪২ বার দেখা হয়েছে

৩ টি মন্তব্য : “এ ট্রিবিউট টু সুধীর কাকু”

  1. মোহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ খান ওয়াহেদী

    পাশের মানুষগুলো যখন চলে যায় স্মৃতির পাতা খুলে যায় কত কথা মনে পড়ে, বুকের গভীরে কষ্ট মোচড়ায়। দিনগুলো অাজ ততটা মসৃন নয় পূর্বের মতন, তবু জীবন বহতা পৌছেতো নেবে বন্দরে।
    ভালো লাগলে ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।