রোমাঞ্চের তীব্রতা

খুব সম্ভবত ঘটনাটা ১৯৯০-এর। আমরা তখন সবেমাত্র ক্লাস নাইনে উঠেছি। ক্যাডেট কলেজের জুনিয়র গ্রুপের মধ্যে সিনিয়র ক্লাস। একদিকে হালকা মাত্রার সিনিয়রিটির ভাব, অন্যদিকে আবার জুনিয়রের সামনেই মাঝে-মধ্যে প্রিফেক্ট, স্টাফ বা টিচারদের দ্বারা পানিশমেন্ট। এক আজব সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা তখন। প্রথম বয়োসন্ধির নাকের নিচে হালকা গোঁফের রেখা। এরই মধ্যে আবার দুয়েকজন এই হালকা গোঁফে লুকিয়ে রেজার চালিয়ে ফেলেছে। তাই নিয়ে আবার একেকদিন একেকজনকে নিয়ে চলে হাসাহাসি। মনেও আবার সবার রঙিন হাওয়া। তা কেউ মুখ ফুটে বলুক, আর নাই বলুক। পাঠ্যপুস্তকের নারী চরিত্রগুলোও সেসময় বুকের গভীরে কোথায় যেন একটা সূক্ষ্ম চিনচিনে ব্যাথা নিয়ে আসে।

এমনই এক সময়ে আমাদের সকলের পরম শ্রদ্ধেয় বাংলার অধ্যাপক ডঃ জয়েনুদ্দিন স্যার ক্লাসে “রোমান্টিকতা” বোঝাচ্ছিলেন। খুব সম্ভবত ডাকঘর নাটক পড়ানোর সময়। “রোমাঞ্চ” বা “রোমান্টিকতা” শব্দগুলো শুনেই যেন সেই বয়সে কান লাল হবার দশা। মনে যতই ঘন্টা বাজুক, “ছিঃ ছিঃ মরি একি লজ্জা” টাইপের একটা অবস্থা তখন। স্মৃতি যদি এই মুহূর্তে ধোকা না দিয়ে থাকে, স্যারের দেয়া রোমান্টিকতার সরল সংজ্ঞাটা ছিল এমন, “বাস্তবের কোন অপ্রাপ্তিকে কল্পনায় পুষিয়ে নেবার প্রবণতাই হলো রোমান্টিকতা”। আবার রোমাঞ্চের তীব্রতা বোঝানোর সময় স্যার এমন একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন, “একজন তৃষ্ণার্তকে স্বাভাবিক ভাবে পানি পান করতে না দিয়ে তার মুখে যদি এক ফোটা জল দেয়া হয়, তার অনুভুতি যেন এমনটাই হয়ে যায় যে, সে যেন এক সমূদ্র পানি খেয়ে ফেলতে পারবে”।

স্যারের পড়ানোর স্টাইল এবং উদাহরণ, দুটোই বেশ মজার ছিল। ইফেক্টিভ তো বটেই। আর তা না হলে এত বছর পরে নিজের শিক্ষকতার জীবনে কেনই বা “রোমান্টিক পোয়েট্রি” কোর্সটা পড়ানোর সময় আমি বারবার স্যারের স্মৃতিচারণ না করে কোর্সের প্রথম ক্লাসটা শুরু করতে পারি না। একালের ছেলেমেয়েদের আমি আমার এই শিক্ষকদের গল্প বলি। তাঁরা কি পড়াতেন, তা যত না বলি, তার চেয়েও বেশি বলি তাঁরা কিভাবে আমাদের পড়াতেন। এই গল্পগুলো করতে কেন যেন বেশ লাগে। প্রশান্তি আসে মনে। নিজেকে ধন্য মনে হয়।

[লেখাটা ফেসবুকে শেয়ার করেছিলাম। আমার ওয়ালে মন্তব্যের ঘরে প্রথম পেলাম আমাদের এই পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষককেই। এর চেয়ে সম্মানের আর কি হতে পারে একজন ছাত্রের কাছে।]

৭,৭৪৯ বার দেখা হয়েছে

২ টি মন্তব্য : “রোমাঞ্চের তীব্রতা”

মওন্তব্য করুন : আহমদ (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।