অনুকথন স্মৃতিচারণঃ নকশীকাঁথার মাঠ

অনুকথন স্মৃতিচারণঃ নকশীকাঁথার মাঠ

আমার একটা কাঁথা আছে; তিনটা শাড়ির লেয়ার দিয়ে বানানো। তিনটা শাড়িই ছিল এম্ব্রয়ডারিতে ভরা সুতি শাড়ি। অনেক স্মৃতিবিজড়িত এই কাঁথাটা। এটার মূল্য আমার কাছে অনেক। জড়িয়ে নিয়ে থাকি, ঘ্রাণ নেই। অন্যরকমের একটা ছোঁয়া পাই। বাইরের দিকের শাড়ি দুটো আমার স্ত্রীর, যেগুলো আমি তাকে আমাদের বিয়ের সময় দিয়েছিলাম। ভেতরের লেয়ারে যে শাড়িটা আছে সেটা সবচেয়ে স্মৃতিবিজড়িত। আমার মায়ের অনেক শখের একটা শাড়ি ছিল সেটা। খুব সম্ভবত শাড়িটা মা আমাকে সাথে নিয়েই রাজশাহী নিউমার্কেট থেকে এম্ব্রয়ডারি করিয়েছিলেন। সেই শাড়িটা আমার স্ত্রীরও অনেক পছন্দের ছিল। কিন্তু এত পুরোনো একটা সুতি শাড়ি আসলে আর পরার মত অবস্থায় ছিল না। আর আমার স্ত্রীকে দেয়া বিয়ের সময়ে কেনা এম্ব্রয়ডারি করা সুতি শাড়ি দুটোও অনেক পুরোনো হয়ে রং নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছিল। জানিনা কাঁথাটা কতদিন টিকবে। আমার শাশুড়িকে অনুরোধ করে দিনাজপুরে বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে এক মহিলাকে দিয়ে এই কাঁথাটা সেলাই করানো হয়েছিল। ভারি এম্ব্রয়ডারি সহকারে তিনটা শাড়ি একসাথে সেলাই করতে নাকি অনেক কষ্ট হয়েছিল। আমিও যেকোন মূল্যে, যে কোন পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এই কাজটা করানোর জন্য অটল ছিলাম।

৫,৫১৪ বার দেখা হয়েছে

২ টি মন্তব্য : “অনুকথন স্মৃতিচারণঃ নকশীকাঁথার মাঠ”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂

    আমার মায়ের শাড়ি দিয়ে বানানো কাঁথা আমরা আজো ব্যবহার করি। তোমার কাঁথার গল্পটি আমার কুইল্টের গল্প মনে করিয়ে দিল। পশ্চিমে হাতে তৈরী কুইল্টের ভারী কদর। উনিশ শতকের শুরুতে সংসারের অন্য কিছুর মত পরিধেয় কাপড়েরও হিসাব করতে হতো। কোন কিছুই তখন ফেলে দেয়া হতো না, এমনকি পুরনো টুকরো কাপড়, তোয়ালে কিংবা পুরনো বিছানার চাদর জমিয়ে রাখা হতো। এইসব টুকরো টুকরো কাপড় জোড়াতালি দিয়ে তারপর বিয়ে কিংবা গ্র্যাজুয়েশনের মত উপলক্ষকে কেন্দ্র করে বাড়ির মেয়েরা এবং তাদের বন্ধুরা সবাই মিলে কুইল্ট বানাতো। এখন তো আমাদের কাপড়ের ঘাটতি নেই, তাই কুইল্টে এখন মানুষ স্মৃতিময় কবিতা আঁকে। মায়ের গাউনের হাতাটা, দিদিমার গলার ওড়নাটা, শিশুর প্রথম জন্মদিনের ফুলতোলা জামাটা কিংবা বাবার শার্টের পকেটের টুকরো কেটে এখনো পারিবারিক কুইল্ট বানানো হয়। প্রতিটা কুইল্টে একটা প্যাটার্ন থাকে।

    তারার এলিমেন্টারী স্কুল গ্রাজুয়েশন উপলক্ষে আমিও একটা টুইন সাইজের কুইল্ট বানিয়েছিলাম আমাদের টিশার্ট, তারার ছোটবেলার জামা আর আমার কামিজের টুকরো দিয়ে।

    আমরা মুমিসিং এর মানুষ জাম আলু হাতে চটকে লংকা পোড়া দিয়ে, ঘি মাখিয়ে ভাত খেতে ভালবাসি; পশ্চিমে মানুষ আইডাহো পটেটো থেতো করে, বাটার আর গোল মরিচ ছড়িয়ে ম্যাশড্ পটেটো খায় চামচে তুলে। কাঁথা কিংবা কুইল্ট যা'ই বলো না কেন সবই বিশ্বজনীন!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহমদ (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।