লিরিকস এণ্ড থটস

লিরিকস এণ্ড থটস

“পিয়ার ইয়ে, জানে ক্যায়সা হ্যায় / কিয়া কাহে, ইয়ে কুছ এ্যায়সা হ্যায় / কাভি দার্দ ইয়ে দেতা হ্যায় / কাভি চ্যায়েন ইয়ে দেতা হ্যায় / কাভি গাম দেতা হ্যায় / কাভি খুশি দেতা হ্যায়।” খুব সম্ভবত হায়ার সেকেণ্ডারিতে পড়ার সময় এটা প্রথম শুনি। এমনিতেই আমি এ.আর.রেহমানের অন্ধভক্ত ছিলাম। এখনও ভাল লাগে এই সুরকারের সুর। কিন্তু টিন এইজের মতন বিশেষ কোন ব্যক্তি বা বিষয়ে সেই অন্ধ আসক্তি এখন কোনখানেই আর কাজ করে না। ভাল লাগে। মাথায় ঘুরপাক খায়। চিন্তাগুলো খাপছাড়াভাবে এদিকে ওদিকে যায়। কিন্তু সেই তীব্রতা আর অনুভব করি না ইদানিং। কিন্তু মাথার ভেতরের পোকাটা সহজে কি আর যায়! কাব্যিক ভাষার অভিব্যক্তি মনে ঘুরে ফিরে বার বার খোঁচাতেই থাকে। এখন কখনো কখনো মনে হয় আইডিয়াটা অন্য কারো মাথায় ট্রান্সফার করে দিতে পারলে মন্দ হয় না।

আপাত দৃষ্টিতে বেশ ফানি মনে হলেও ইদানিং কেন যেন কিছু পৌরানিক বিষয়ভিত্তিক লাইন বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে মাথায় ঘুরঘুর করছেঃ “তুমি বুঝবে তখন নারীর বেদন / রাধার বুকে কত ব্যাথা”… কিংবা কখনো বা আবার “আমি মরিয়া হইব শ্রীনন্দীর নন্দন / তোমারে বানাব আধা”, এই ধরনের কিছু লাইন। দু’একজন সাহিত্যের চ্যালার সাথে শেয়ার করাতে, কথাগুলো মনোযোগ সহকারে খেয়াল করে তারা আঁতকে উঠে বলে, “এতো শুধু লিরিক নয়! রীতিমত অভিশাপ!” তাদের তাৎক্ষণিক রিএকশনে বেশ মজা পেয়েছিলাম সেই মুহূর্তে। মনে হচ্ছিল, যাক আরো অনেকেরই মাথার তার ছিঁড়ে মাঝে মাঝে। বাসায় গুনগুন করছিলাম, “বনমালি তুমি, পরজনমে হইও রাধা”। বৌয়ের রীতিমত অগ্নিচক্ষু। বৌয়ের দুঃশ্চিন্তা, বাচ্চাও যদি এই বয়সেই বাপের মত এইসব লাইন গুনগুন করে! কিছুদিন আগে নাকি বাচ্চাটা গুনগুন করছিল, “আমার যমুনার জল দেখতে কাল”। বলাবাহুল্য, সেখানেও অপরাধী আমিই ছিলাম। গত রিইউনিয়নে কালচারাল নাইটে ফিলার হিসেবে স্টেজে উঠতে হয়েছিল। দেখলাম, সিনিয়রদের তার আরো বেশি ছিঁড়া; তারা যমুনার জলেই গা ভাসানোর পক্ষে সমর্থন দিলেন।

খুব ছোটবেলায়, আমি যখন আমার মেয়ের বয়সী, তখনকার একটা সুর এখনো মাথায় ঘুরে ফিরে আসে। “ছোট্টবেলার সেই দিনগুলো হারিয়ে খারাপ যে লাগেনা মনটা / সেই লাল-নীল-হলদে রাজা-রানী পুতুলে ভরা ছিল জানালার কোনটা”। গানটা সেই ছোটবেলার পরে আর শুনেছি বলে মনে পড়ে না, কিন্তু কেন যেন প্রায়ই এই লাইনগুলো ভাবায়। ফিরে তো যাওয়া যায় না। অসম্ভব এবং অবাস্তব। মনে হয় ফিরে গেলে বেশিক্ষণ ভালও লাগবে না, মোহভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু তারপরেও মানুষ অতীতচারন করে। কেন করে, কে জানে! হয়ত ভাল লাগে, তাই করে। মানুষ মনে হয় স্বভাবগতভাবেই রোমাণ্টিক। আমাদের এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ১৯৯০ সালে ক্যাডেট কলেজে খুব সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর নাটক পড়ানোর শুরুতেই রোমাণ্টিকতার সংজ্ঞা তার নিজের ভাষায় বুঝিয়েছিলেন, “বাস্তবের কোন অপ্রাপ্তিকে কল্পনায় পুষিয়ে নেবার যে প্রবণতা, সেটাই রোমাণ্টিকতা”। সারাটি জীবন এই সংজ্ঞা অন্তরের গহীনে ধারন করে রেখেছি।

গতকাল থেকেই রংপুর ক্যাডেট কলেজের ব্যাচমেটদের উস্কানি দিয়ে যাচ্ছি, চল একটা ওল্ড হোম বানাই। বুড়া বয়সে আবার একসাথে সবাই মিলে থাকব। তখন আবার টিন এইজের মতন একে অন্যকে খোঁচানো যাবে। সেই দিনগুলোর মতন স্বাধীন হওয়াও যাবে। জীবন তো একটাই। শেষ সময়টা আবার আগের মত হলে ক্ষতি কি? কিন্তু আমিও খুব ভাল করেই জানি, এটা সম্ভব হবে না। যদি বন্ধুরা মিলে একটা ওল্ড হোম তৈরি করাও হয়, সেটাতে হয়ত আমদের থাকা হবে না। বৌ-বাচ্চা-নাতি-নাত্নি এসে মান-ইজ্জতের দোহাই দিয়ে জোর করে বাসায় ফেরত নিয়ে যাবে। কিন্তু তারপরেও কিছুদিন একসাথে থাকার চেষ্টা তো করা যেত। কিন্তু মাত্র কিছুদিন একসাথে থেকে কি আর সত্যিকারের একসাথে থাকার জীবনে ফিরে যাওয়া যায়? মনে হয় না। তবে একসাথে আবার জীবনের শেষ সময়টা থাকতে পারলে মন্দ হত না। অন্তত মরার সময় সত্যিকারের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে কান্ধা পাওয়া যেত। তবে তখন মনে হয় আরেকটা জটিলতা দেখা যেত। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কেউ আর বাঁচতে চাইত না। কান্ধা পাওয়ার আশায় হয়ত সবাই আগেই মরতে চাইত।

নাহ! কোথায় শুরু করলাম! আর কোথায় গিয়ে ঠেকলাম! এখন আর লেখা ঠিক হচ্ছে না। বাস্তবে ফিরে আসি। অনেক কাজ বাকি। বাজার-সদাই-কোরবানি সব মিলিয়ে এই হলো এবারের ঈদের ছুটি। সবাইকে আগাম ঈদের শুভেচ্ছা!

৪,৮৪৮ বার দেখা হয়েছে

৫ টি মন্তব্য : “লিরিকস এণ্ড থটস”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    কিছু কিছু লিরিকস এর সাথে ব্যক্তিগত থটসকে চমৎকারভাবে রিলেট করেছো। আর তোমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের দেয়া রোমান্টিকতার সংজ্ঞাটাও আমার বেশ মনঃপুত হয়েছে।
    ভাল বন্ধু পাওয়াটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। সেদিক দিয়ে ক্যাডেট কলেজের আমরা বোধকরি অন্যান্যদের চেয়ে বেশ ভাগ্যবানই। তবুও কেন যেন অন্তত মরার সময় সত্যিকারের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে কান্ধা পাওয়া যেত কথাটা তেমন জোর গলায় বলতে পারিনা।

    জবাব দিন
    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      ... ভাইয়া, আমাদের একজন গত দুবছরেরও বেশি সময় ধরে কমায় পড়ে আছে। তার দুইটা ছোট বাচ্চা। কিছুদিন আগে তার স্ত্রীর ক্যান্সার ধরা পড়েছে। আমাদের আরেকজন প্রয়োজনে তার এক বাচ্চাকে দত্তক নেবার ইচ্ছা ঘোষণা করেছে। দেশ বিদেশ থেকে বন্ধুদের মাঝে এই পরিবারটির জন্য ফাণ্ড রেইজিঙের প্রচেষ্টা হয়েছে কয়েকবার। এমনকি সেই বন্ধুপত্নীর চিকিতসাতেও বন্ধুরা যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তা ক্যাডেট কলেজের বাইরের পরিস্থিতিতে অন্য বন্ধুমহলে এতটা হতো কিনা, সন্দেহ আছে।
      ... তবে ভাইয়া, এই কথাগুলো চিন্তায় আসেনি আমার মূল লেখাটা দাড় করানোর সময়। তখন হঠাত এ.আর.রেহমানের লাইনগুলো মাথায় খাপছাড়া ভাবে কাজ করছিল। হাতের কাছে মোবাইল ছিল। শখের বসে মোবাইলেই টাইপ করতে করতে কেমন যেন এলোমেলোভাবে পুরো লেখাটা জন্ম নিল। তাতক্ষণিক আবেগে যা কিছুই মনে এসেছিল, নিজে যা ফিল করছিলাম/করি, তাই লিখে ফেলেছিলাম।
      ... আপনার মন্তব্য পেয়ে বেশ ভাল লেগেছে। আপনার মন্তব্যে পরিস্কার যে, আপনি প্রতিটা লাইন-শব্দ খুটে-খুটে পড়েছেন। আমার মত নগন্য মানুষের জন্য এই ফিলিংসের মূল্য অনেক ভাইয়া।
      ... আরেকটা কথা ভাইয়া, লেখার টাইটেলটা এসেছে লেখাটার শেষ মুহূর্তে এসে মনের তাতক্ষণিক রিফ্লেকশন থেকে।
      ... আবারো অনেক-অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া।


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।