প্রজন্ম-প্রজন্মান্তর

রংপুর ক্যাডেট কলেজের আমাদের ব্যাচ (১৯৮৮-‘৯৪)-এর দুজন (লেঃ কর্নেল হুমায়ুন এবং অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন শহীদ)-এর সন্তান বর্তমান প্রজন্মের ক্যাডেট। হুমায়ুনের বড় ছেলে ফৌজদারহাটে ক্লাস এইটে পড়ছে, আর শহীদের বড় মেয়ে আজ জয়পুরহাটে সপ্তম শ্রেনিতে ভর্তি হলো। নতুন প্রজন্মের সবার জন্য দোয়া, অভিন্দন, শুভকামনা এবং ভালবাসা!

আমার মেয়েটার কেবল সাড়ে তিন বছর বয়স। স্বপ্ন দেখি তাকেও ক্যাডেট বানানোর। কিন্তু ইদানিং কালের দূর্ঘটনাগুলো আসলেই মনে চাপ ফেলছে। মানষিক চাপ কিংবা সাইকলোজিকালি ফরম্যাটেড সুইসাইডাল টেণ্ডেন্সি, যেটাই হোক, আগেও ছিল, এখনো আছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে দূর্ঘটনার সংখ্যা চোখে পড়ার মত বাড়ছে। হয়তো এটা অনেক মা-বাবা-কে সন্তানকে ক্যাডেট কলেজে পড়ানোর ব্যাপারে সেকেণ্ড থটে নিয়ে যাচ্ছে। অন্তত, আমার মন কিছুটা হলেও এখন থেকেই দুলছে। আমরা মা-বাবা হবার পর থেকে আমার নন-ক্যাডেট স্ত্রীকে আমি ক্রমাগত মোটিভেট করে আসছি মেয়েকে যথাসাধ্য চেষ্টা করে ক্যাডেট কলেজে অন্তত ভর্তি পরীক্ষার ব্যপারে উতসাহিত করার জন্য। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে আমার নিজের মোটিভেশনটাই যেন দূর্বল হয়ে পড়েছে।

মনে প্রশ্ন জাগছেঃ সিষ্টেমের জন্য আমরা, নাকি আমাদের জন্য সিষ্টেম? আদৌ কি সিষ্টেমের ত্রুটি? নাকি এটা কৈশর মানষে লুকিয়ে থাকা আনকনশাস মোটিভের প্রকাশ? — উত্তর যেটাই হোক, প্রজন্মান্তরের আবর্তে কোন হিসেবে মেলাতে পারছি না।

যদি সিষ্টেম বা প্র‍্যাক্টিসের কোথাও ছেদ পড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তা এখনি শুধরানো দরকার। নয়তো, মুখিয়ে থাকা মানুষের সমালোচনায় এত বড় মাপের/মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/ব্যবস্থাপনার গ্রহনযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতেই থাকবে।

আর যদি মানষিক গঠন বা সাইকলোজিকাল প্যাটার্নের কারনে এটা হয়, তাহলে আরলি বা প্রি টিন এইজ রিলেটেড সাইকলোজিকাল টেষ্ট ক্যাডেট কলেজের ভর্তি পরীক্ষার বিবেচনায় থাকা জরুরী বলেই আমার মনে হচ্ছে। আর সেইসাথে, অন্তত একজন সাইকলোজিষ্ট থাকা দরকার প্রতিটা ক্যাডেট কলেজে।

হ্যা, প্রশ্ন হতে পারে, ক্রাইসিস মোমেন্ট ছাড়া এই সাইকলোজিষ্টদের কাজ কি হবে? আর রুটিন মাফিক কাজ না থাকলে তাদের নিয়োগ করার দরকারটাই বা কোথায়? — এই প্রশ্নের পারফেক্ট কোন জবাব এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই। এসব বিবেচনার জন্য যথেষ্ট যোগ্য জনবল সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে আছে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর আমি কোন এক্সপার্ট নই যে, এ বিষয়গুলোতে আমি কোন গাইডলাইন বা জাজমেণ্ট দেব। তবে আগের জেনারেশনের এক্স ক্যাডেট হিসেবে কিছু ভাবনা বা পরামর্শ মাথায় আসছে, সেগুলো সামনে নিয়ে আসছি। আমার ভুল হলে অভিজ্ঞরা দয়া করে শুধরে দেবেন।

১. আমার মনে হয় ক্যাডেট কলেজে সাইকলোজিষ্ট হবেন সার্বক্ষণিক ভিত্তিতে, এবং স্পেশালি ট্রেইণ্ড। তিনি ছুটিতে থাকলে তার অনুপস্থিতে আরেকজন অবশ্যই যেন তাদক্ষণিক সাময়িকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, সেটারও নিশ্চয়তা থাকা দরকার।

২. সাকলোজিষ্ট তার কাজের গুরুত্বের খাতিরে হবেন সর্বদা ক্যাডেট বান্ধব। ক্যাডেটরা যেন তাকে ভরসা করতে পারেন। আর্মি বা সিভিল যে ব্যাকগ্রাউণ্ডেরই হোন না কেন, তিনি একজন পরিবার সদস্যের মত হাউজে, একাডেমিতে, ক্লাশে, ডাইনিং-এ, খেলার মাঠে, মসজিদে ক্যাডেটদের সাথে মিশে যাবেন।

৩. তিনি ক্যাডেটদের প্রতি যে কারো হিউমিলিয়েশন ঠেকাবেন। আমার ধারনা, হিউমিলিয়েশন ব্যতিরেকে যে কোন প্রেশারে ক্যাডেটরা স্পোর্টসম্যান স্পিরিট দেখাবে/দেখায়।

৪. ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় থেকে সিলেক্টেড প্রত্যেক ক্যাডেটের আলাদা করে কনফিডেনশিয়াল সাইকলোজিকাল এসেসমেন্ট ফাইল থাকতে পারে, যাতে করে সাইকলোজিষ্ট বদলি হলে বা ছুটিতে থাকাকালীন সময়েও রুটিন এবং ক্রাইসিস দুটোই ম্যানেজ করা সম্ভব হয়।

৫. জরিমানা এবং প্যারেন্টস কল ছিল, আছে, এবং থাকবে। এগুলো রেজিমেন্টেড এডুকেশনের পার্ট। কিন্তু সমস্যা হলো হিউমিলিয়েটিং এপ্রোচে। এপ্রোচ হতে হবে অবশ্যই পজেটিভ এবং মোটিভেটিভ। মা-বাবা কিংবা সন্তান, কারো কাছেই কাউণ্টারপার্টের অপমান গ্রহনযোগ্য নয়, এটা ক্যাডেট কলেজের সংশ্লিষ্ট সকলকে বুঝতে/বোঝাতে হবে।

৬. প্রয়োজনে, ক্যাডেটদের মা-বাবা-র জন্যও পজেটিভ এবং অবশ্যই সোবার কাউন্সিলিং-এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যেটা হতে পারে ক্রাইসিস ম্যানেজমেণ্টের একটা অংশ।

৭. আমার এই মুহূর্তের সর্বশেষ একটা অপ্রিয় অনুধাবন দিয়ে লেখাটা শেষ করছি। ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পদ্ধতি থেকে শুরু করে সবকিছুই একটা হাইলি প্রফেশনাল কম্পিটিশনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই ধারাবাহিকতায় আছে টার্ম এণ্ড একাডেমিক্স, বিভিন্ন ইণ্টারহাউজ ইভেণ্টস এবং বছর শেষে হাউজ চ্যাম্পিয়নশিপ। বলাবাহুল্য এগুলো টিম স্পিরিট, ফেলো ফিলিংস এবং পার্সোনাল কম্পিটিটিভ এটিচিউড ডেভলাপ করার ক্ষেত্রে খুবই ইফেক্টিভ টুলস। কিন্তু এরই মাঝে কিছু ব্যক্তি পর্যায়ের প্রতিযোগিতা যে পার্সোনাল লেভেলে বয়সন্ধি কালের ক্রেজিনেস এবং জেলাসি ডেভলাপ করায় না বা ইতিহাসে কখনোই ডেভলাপ করায়নি, তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। ক্যাডেট কলেজে টিন এইজে কোন একটা বিষয়ে পিরামিড স্ট্রাকচারের এচিভমেণ্ট অবশ্যই আনন্দের, কিন্তু সেই এচিভমেণ্টটাই যে জীবনের চূড়ান্ত হিসেব নয়, এই মোটিভেশনটা সব ক্যাডেটদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া দরকার। আবার, কোন ক্যাডেটের বিশেষ কোন এচিভমেণ্টের ক্ষেত্রে তার বিষয়ের প্রশংসা যেন অন্যদের অপ্রাপ্তিকে চোখে আংগুল দিয়ে তুলনা করার দিকে ঠেলে দেয়া না হয়, সেটার ব্যালেন্স থাকাটাও বিবেচনায় নেয়া উচিত।

অনস্বীকার্য যে, ক্যাডেট কলেজ সিষ্টেমটা আর দশটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভিন্নতর। এই ভিন্নতা না থাকলে সম্ভবত ক্যাডেটশীপ মূল্যহীন। কিন্তু, যদি একটা কমিউনিটিতে একই ধরনের দূর্ঘটনা বর্ধিষ্ণু হয়, তখন অবশ্যই সচেতন দৃষ্টি দেয়া দরকার। এখানে উদ্দেশ্য তো বিভিন্ন স্তরের/ক্ষেত্রের লীডারশীপ ডেভলাপমেণ্ট। অংকুর বিনষ্ট হওয়া নিশ্চয়ই আমাদের কারোরই কাম্য নয়। পুরো বিষয়টাই আসলে এখানে অনেক সেন্সিটিভ। আর সেন্সিটিভ বিষয়কে সময় এবং প্রেক্ষাপটের বিবেচনায়, প্রয়োজন অনুযায়ি, রিষ্ট্রাকচার বা রিকনসিডার বা রিমডিফাই তো করাই যায়। তাই নয় কি?

পূনশ্চঃ এই লেখাটা সময়ের আবর্তে আমার মত আর দশজন এক্স ক্যাডেটের আকাঙ্ক্ষার সাথে একাত্বতা প্রকাশ মাত্র। কোন ব্যক্তি বা সিষ্টেম আমার লেখার উপজিব্য নয়। আশাকরি পাঠক এবং সমালোচক, উভয়েই এটা বিবেচনায় নেবেন।

৪,৮৯১ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “প্রজন্ম-প্রজন্মান্তর”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ক্যাডেট কলেজের মতো সম্পুর্ণ আবাসিক শিক্ষা ব্যবস্থার আমাদের দেশে বা যেকোন দেশেই ঠিক কতোটা প্রয়োজন তা প্রশ্নসাপেক্ষ। আমরা ক্যাডেট কলেজে পড়েছি বিধায় ক্যাডেট কলেজ সিস্টেমের প্রতি আমরা অতিশয় দুর্বল। বিশেষ করে এর কোন ধরণের সমালোচনা ই আমরা মেনে নিতে পারি না।

    যদিও আমি বাবা-মাকে কখনো বলি নাই কিন্তু সেভেন-এইটে থাকতে বেশ কয়েকবার ই মনে হয়েছে কলেজ ছেড়ে দেবার কথা। শুধু তারা কষ্ট করে ক্যাডেট কলেজে পড়িয়েছে তাই কলেজ ছেড়ে আসিনি। এমন না যে সকলেই এভাবে ভাবে। অনেকেই উপভোগ করে কলেজ জীবন একেবারে প্রথম থেকেই। তবে ১২/১৩ বছর বয়েসি কিশোর-কিশোরি দের জন্য ক্যাডেট কলেজ এর মতো আবাসিক শিক্ষা ব্যবস্থা কতোটা উপযোগি তাও ভেবে দেখার বিষয়।

    ক্যাডেট কলেজে ভালো অনেক কিছুই রয়েছে। যেমনঃ একেবারে জীবনের শুরু থেকেই স্বাবলম্বী হতে শেখায়। ১২ বছর বয়স থেকে নিজের বিছানা তৈরি, মশারি খাটানো, কাপড় ধোয়া, সেলাই করা ইত্যাদি।
    নিজের পড়া নিজে তৈরি করা।
    নানা রকম খেলাধূলার সুযোগ। যেমনঃ ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেটবল, ক্রিকেট, সাতার, টেনিস ইত্যাদি। এছাড়া স্পোর্টস। ইনডোর গেমস যেমনঃ টেবল টেনিস, দাবা, ক্যারাম ইত্যাদি। বেশ কিছু ক্যাডেট কলেজে বোট রোইং এর ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি কলেজে জিম ও রয়েছে।
    প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দৌড়, শরীরচর্চা বা প্যারেড সহ নানা অনুশীলনে অংশ নেয়া।
    বিশাল লাইব্রেরিতে পড়াশুনার সুযোগ।
    শিক্ষকদের সরাসরি তত্বাবধানে থাকা।
    ক্যাডেট দের জন্য আলাদা হাসপাতাল।
    এছাড়াও আরো অনেক সুযোগ সুবিধা ক্যাডেটরা পেয়ে থাকে। খাবার-দাবারের কথা বাদই দিলাম।

    এখন একবার ভাবুন তো লাখ লাখ/ কোটি ছেলেমেয়েদের মধ্যে (৭ম থেকে ১২ দশ শ্রেণিতে অধ্যয়নকারী) ৩৬০০ ছেলেমেয়েদের এই সুযোগ গুলো পাবার অধিকার রয়েছে কিনা????


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. সুবিধা অনেকি আছে কিন্ত টিভি দেখে ছেলেমেয়েরা জে প্রেম ভালোবাসা সিখেছে। অবস্থা দেখলেত মনেহয় প্রেমে সফল হয়াই তাদের এক মাত্র জিবনের পণ জেভাবেই হক সেটা এসিড মেরেই হক খুন করেই হক বা অপ,হরন করেই হক আমি পাবনা? তাহলে কাওকেই পেতে দেবনা মেরে নিজেও জিবন দেব। এ অবস্থায় মেয়ে দের কতটুকু নিরাপত্তা আছে?তখন অনচ্ছায় ও খারাপ হতে হয়।
    এটাই কি ঊন্নত সিক্ষা বেবস্থা?

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      "আমি পৃথিবীর বুকে আগুন লাগিয়ে দেবো
      যদি তুমি আমার না হও"
      - এই যদি হয় গানের কলি, তাইলে তো খবরই আছে...

      "আমি পাবনা? তাহলে কাওকেই পেতে দেব না, মেরে নিজেও জিবন দেব" - এর প্রেক্ষাপটে কথাটা বললাম...


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  3. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    শিক্ষাজীবনের মাঝামাঝি গুটিকয় ছেলেকে "বিশেষ" ব্যবস্থায় রেখে আলাদা একটা "ক্লাস" তৈরীর মত উদ্ভট চিন্তাটা আইউব খান নামক এক উদ্ভট মানুষের মাথা থেকে এসেছিল।
    এটা যে কোনো সফল প্রচেষ্টা হতে পারে না, সেটা প্রথম ব্যাচ বেরুনোর বছর পাচেকের মধ্যেই বোঝা গিয়েছিল।
    কিন্তু তারপরেও লিগেসিটা আমরা টেনেই যাচ্ছি। যাব আরও বহুদিন।
    উদ্দেশ্যের সাথে এক্সিকিউশনের মিল থাকতে হয়।
    আইউবি উদ্দেশ্যের সাথে মিলিয়ে যে পদ্ধতিটা তৈরী হয়েছিল, সেটা এখনকার উদ্দেশ্যের সাথে এখনকার প্রেক্ষাপটে বহু আগেই অবসলিট হয়ে গেছে।
    আগে এটা না বুঝলে, না মানলে অন্য কোনো সমাধান কোনো কাজে আসবে বলে আমার অন্তত মনেহয় না.........


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        হা হা হা!!!
        আমি মিরজাফর হলে, আইউব খান তাইলে খাটি দেশপ্রেমিক। এবং মরনোত্তর!!!
        গরিব প্রদেশে অভিজাত "ক্লাস" বানানো নিয়ে যেইটা বললাম, সেটা আইউব খানের "ফ্রেন্ড, নট মাস্টার" নামক আত্মজীবনিতে আছে।
        কেউ পড়তে চাইলে নিজ দায়িত্বে পড়বেন।
        কারন বইটা দুনিয়ার সবচেয়ে নিম্নমানের সাহিত্যমান সম্পন্ন একটা লিখা।
        মিরাক্কেলের ভাষায়, "বইটা এত বোরিং, এত বোরিং, এত বোরিং, যে-এ-এ - প্রতি পাতা শেষ করতে তিনবার করে ঘুম পাবে......"
        😛 😀 😛 😀


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন
    • ইশহাদ (১৯৯৯-২০০৫)
      কিন্তু তারপরেও লিগেসিটা আমরা টেনেই যাচ্ছি। যাব আরও বহুদিন। উদ্দেশ্যের সাথে এক্সিকিউশনের মিল থাকতে হয়। আইউবি উদ্দেশ্যের সাথে মিলিয়ে যে পদ্ধতিটা তৈরী হয়েছিল, সেটা এখনকার উদ্দেশ্যের সাথে এখনকার প্রেক্ষাপটে বহু আগেই অবসলিট হয়ে গেছে। আগে এটা না বুঝলে, না মানলে অন্য কোনো সমাধান কোনো কাজে আসবে বলে আমার অন্তত মনেহয় না

      এভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের ক্যাডেটানুভূতিতে আঘাত দেয়াটা ঠিক হল, পারভেজ ভাই? B-)



       

      এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...

      জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        অনুভুতি এত ঠুনকো হলে তাতে আঘাত লাগাটা কে থামাতে পারে?
        বারোটা ক্যাডেট কলেজ ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট এত এত ফ্যাসিলিটি আছে, শুধু এই জন্যই তো প্রতিবছর ছ'শো ক্যাডেট নেয়া হয়, তাই না?
        এই ট্রেনিং, এই শিক্ষা কবে আর কার কি কাজে লাগবে, এরকম কোনো উদ্দেশ্য কি এখনো কারো আছে?
        আমি যেটা বলছি, সেটা হলো এই যে এটা মানে ক্যাডেট কলেজ শিক্ষাটা এখন একটা সম্পুর্ন উদ্দেশ্যবিহীন কার্যক্রমে দাঁড়িয়ে গেছে।
        আর তাই এটা ধুকে ধুকে এগুচ্ছে কিছু মানুষের মনগড়া খেয়ালখুশিতে কোনো রকমের জবাবদিহিতা ছাড়া।
        না, জবাবদিহিতা মানে অর্থিনৈতিক জবাবদিহিতার কথা বলি নাই, বললাম, উদ্দেশ্যপুরনে সফলতা ব্যর্থতার যে জবাবদিহিতা, সেটার কথা।
        যা যা ঘটে যাচ্ছে চারিদিকে, দেখে কি মনে হয়?
        মনেহয় যে, "ক্যাডেট কলেজ সিস্টেম" কি সত্যিই খুব সফল কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা?
        এটা না থাকলে বিরাট এক দুর্যোগের ঘনঘটা নেমে আসতো এই বাংলার বুকে?
        নাকি টেরই পেতো না কেউ কোনো কিছু.........


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন
        • ইশহাদ (১৯৯৯-২০০৫)

          অনুভূতির প্রশ্নে ওপরে রাজীব ভাই'র মন্তব্য থেকে উদ্ধৃত করি-

          আমরা ক্যাডেট কলেজে পড়েছি বিধায় ক্যাডেট কলেজ সিস্টেমের প্রতি আমরা অতিশয় দুর্বল। বিশেষ করে এর কোন ধরণের সমালোচনা ই আমরা মেনে নিতে পারি না।

          এটি সত্য। দু-একজন দলছুট এর বাইরে চিন্তা করতে এলেও সামাজিক (পড়ুন ক্যাডেটিক) চাপে অফ যায়।

          রাজীব ভাই'র মন্তব্য থেকেই আরেকটু উদ্ধৃত করি-

          যদিও আমি বাবা-মাকে কখনো বলি নাই কিন্তু সেভেন-এইটে থাকতে বেশ কয়েকবার ই মনে হয়েছে কলেজ ছেড়ে দেবার কথা। শুধু তারা কষ্ট করে ক্যাডেট কলেজে পড়িয়েছে তাই কলেজ ছেড়ে আসিনি।

          এই গ্রুপটাকেও কি বরাবর 'সংখ্যালঘু' হিসেবে ট্রিট করা হয় নাই? এখানে পরিসর অনেক ছোট্ট। 'চাইলে' এমন দলছুট মানসিকতার মানুষদের একটু আলাদাভাবে কি ট্রিট করা যেত না? বিচ্ছিন্ন কিছু শিক্ষক ছাড়া সামগ্রিক বা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে এভাবে কেউ কি ভেবেছেন? না ভাবলে কেন ভাবেননি বা ভাবেন না এটি নিয়ে কি আলোচনা দরকার? আমার তো মনে হয়, দরকার।

          এই ট্রেনিং, এই শিক্ষা কবে আর কার কি কাজে লাগবে, এরকম কোনো উদ্দেশ্য কি এখনো কারো আছে? আমি যেটা বলছি, সেটা হলো এই যে এটা মানে ক্যাডেট কলেজ শিক্ষাটা এখন একটা সম্পুর্ন উদ্দেশ্যবিহীন কার্যক্রমে দাঁড়িয়ে গেছে।

          সম্পুর্ণ উদ্দেশ্যবিহীন কথাটা অনেক বড় হয়ে গেল কি, পারভেজ ভাই? হালকা দ্বিমত জানালাম। আইউব খান করুক আর যেই করুক বদলানোর আগ পর্যন্ত ক্যাডেট কলেজের 'মূল' উদ্দেশ্য ভবিষ্যৎ সেনা কর্মকর্তাদের একটা প্রি-গ্রুমিং। এই অর্থে উদ্দেশ্য অপূর্ণ আছে বলে তো মনে হয় না। আমার ভাবনা হল- আইউবি জমানা তো নাই, এই সঙ্কীর্ণ উদ্দেশ্যের স্পেকট্রামটা আরেকটু বড়, আরেকটু ডাইভার্সিফাইড করা যায় না? প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্যের মাপকাঠিতে একজন আতিউর রহমান, একজন শাহাদুজ্জামান, একজন আরশাদ মোমেন, একজন রায়হান রশীদ এরা কেউই কিন্তু ক্যাডেট কলেজের উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নন। আমরা চাইলে কি 'উদ্দেশ্য' টাকে একটু চওড়া করতে পারি? (আরো আলোচনার অপেক্ষায় রইলাম)



           

          এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...

          জবাব দিন
  4. ইশহাদ (১৯৯৯-২০০৫)
    সেন্সিটিভ বিষয়কে সময় এবং প্রেক্ষাপটের বিবেচনায়, প্রয়োজন অনুযায়ি, রিষ্ট্রাকচার বা রিকনসিডার বা রিমডিফাই তো করাই যায়। তাই নয় কি?

    একদম আমার মনের কথাটা বলেছেন, আহমদ ভাই! :salute:



     

    এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...

    জবাব দিন
  5. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    ক্লাসমেটদের সন্তান ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়াকে উপলক্ষ্য করে ক্যাডেট কলেজ সিস্টেমে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর প্রায় সবগুলোই কম/বেশি সমর্থনযোগ্য। কিন্তু ক্যাডেট কলেজ ব্যবস্থাটাই খারাপ, কোন কাজের না এটা কোনভাবেই ঠিক না। আইয়ুব খান বাংলাদেশে ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করলেও এই সিস্টেমের শুরু অনেক বছর আগে, ইংল্যান্ডের ইটন কলেজ থেকে এই সিস্টেমের উৎপত্তি। পৃথিবীর আরও অনেক দেশে একই রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, যেমন আমেরিকার ওবেরলিন কলেজ, ওয়েলেসলি কলেজ। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য থাকে সমাজের প্রতিষ্ঠিত এবং চলমান কৃষ্টি-কালচারের ভিত্তিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নের্তৃত্বদানে সক্ষম একটা দল, তথা এলিট তৈরি করা। উদাহরণস্বরূপ, ইটন এর ছাত্রদের মধ্য থেকে এ যাবৎ যুক্তরাজ্যের ১৯ জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। রাজনীতির বাইরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই এলিট লক্ষ্যনীয়।

    উদ্দেশ্য যেহেতু এলিট তৈরি করা, সেই বিচারে আমাদের ক্যাডেট কলেজগুলোর প্রয়োজন অবশ্যই আছে, আরও অনেকদিন থাকবেও। এর বিকল্প না-আসা পর্যন্ত ক্যাডেট কলেজকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়ার কোন কারণ দেখিনা।

    আহমদ ভাইকে ধন্যবাদ ক্যাডেট কলেজ ব্যবস্থায় পরিমার্জন আনার উদ্দেশ্যে সুন্দর কিছু প্রস্তাবনার জন্য। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      তোমার কমেন্টের মধ্যেই আসলে উত্তর নিহিত।
      আর তা ইটন, ওবেরলিন, ওয়েলেসলি-র এগজামপলেই।
      আমাদের এখানে ইটনের গং-এর ফ্যাকাল্টি ফ্যাসিলিটি, স্টুডেন্ট সিলেকশন-রিটেনশন, কোনো দিনই অর্জন করতে পারবো না।
      আমাদের রিসোর্স সেটা পারমিট করবে না।
      তাই এই আধা খেচড়া কপি করার চেষ্টা ব্যার্থ হবেই।
      যা হয়ে আসছে গত ৫০-৬০ বছর ধরেই।

      তাছাড়া আমাদের কালচার মূলতঃ এলট কেন্দ্রিক না।
      এদেশের হিস্ট্রিকালি এলিট ডমিনেটেড না।
      তাই এলিট দিয়ে দেশ চালাতে হবে, এইটাও আমাদের কালচার বিরুদ্ধ।

      কপি করলে পুরোটা করা উচিৎ, সিচুয়েশনে ফিট করে কিনা, সেটা বুঝে করা উচিৎ।
      নাইলে এই রকম রেজাল্ট না পাওয়ার কোনো কারন নাই...


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  6. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    তাছাড়া আমাদের কালচার মূলতঃ এলট কেন্দ্রিক না।
    এদেশের হিস্ট্রিকালি এলিট ডমিনেটেড না।
    তাই এলিট দিয়ে দেশ চালাতে হবে, এইটাও আমাদের কালচার বিরুদ্ধ।

    পারভেজ ভাই,
    আপনার সাথে আমার মতের অমিলের উৎস হচ্ছে উদ্ধৃতাংশে আপনার অনুমান, যা' আমি মনে করি ইতিহাসে অসমর্থিত।

    সমাজ সবসময়ই এলিট দিয়ে শাসিত হয়, সব সময়, সবখানে। এলিট না-থাকলে সমাজ এলিট তৈরি করে। কিন্তু নের্তৃত্ব এলিটই দেয়, কি গণতন্ত্র, কি সেনাতন্ত্র, কি স্বৈরতন্ত্র, সব ব্যবস্থায়। মার্ক্সের অনুমিত "কমিউন" (এর বাস্তবায়ন পুরোপুরিভাবে কোন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সম্ভব করতে পারেনি) ছাড়া এলিট দিয়ে শাসিত নয় এমন একটা সমাজব্যবস্থার উদাহরণ থাকলে জানাবেন। তাহলে আলোচনা করতে সুবিধে হবে।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : popy

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।