সোশালাইজেশন ম্যানার্সঃ ফেসবুক বিড়ম্বনা

সোশালাইজেশন ম্যানার্সঃ ফেসবুক বিড়ম্বনা

আমি খুবই বিব্রত বোধ করি যখন কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে, “আমি কি আপনাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতে পারি?” একদিন জনসম্মুখে এমন প্রশ্ন করায় একজনকে জবাব দিয়েছিলাম, “পাঠাতে পার, কিন্তু এক্সেপ্ট করব কি করব না, সে সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবেই আমার।”

আমার কাছে মনে হয়, এটা একটা একান্ত প্রাইভেট ব্যাপার। আমার পরিচিতজনদের মধ্যে কাকে আমি ড্রইং রূম থেকেই বিদায় দেব, আর কাকে বেডরুমে গিয়ে আমার বিছানায় পা তুলে বসে আরাম করে হেলান দিয়ে টিভি দেখতে দেব, এই সিদ্ধান্তের স্বাধীনতাও নিশ্চয়ই একান্তই আমার।

আমার নিজের পাঠানো ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট কেউ ডিনাই করলেও আমি মাইন্ড করি না। বরং যদি দেখি ঝুলিয়ে রেখেছে, আমি নিজেই আবার রিকুয়েস্ট ক্যান্সেল করে দেই। হয়ত কিছুটা হলেও সেই মানুষটার অস্বস্তি দূর করতে পারলাম। কখনো যদি মনে হয়েছে আমাকে নাও চিনতে পারে, সেক্ষেত্রে যথেষ্ট সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রেখে ইনবক্সে পরিচয় জানাই। তাতেও কাজ না হলে, নিজের ইজ্জত বাচানোর জন্য রিকুয়েস্ট ক্যান্সেল অপশন তো আছেই।

আমাকে কেউ আনফ্রেন্ড করলেও আমি ধাক্কা খাই না। কারন, এ অভ্যাস আমারো আছে। কেউ যদি ফেসবুকে রেগুলার না হন, কারো পোস্টের বা কমেন্টের ধরন যদি আমার দৃষ্টিতে নিয়মিতভাবে আপত্তিকর মনে হয়, কিংবা স্বল্পপরিচয়ে ফ্রেন্ডলিস্টে কোনভাবে ঢুকে গেছে, কিন্তু তার সাথে ঠিক জমছে না, এমন সিচুয়েশনগুলোতে আনফ্রেন্ড করাতে বা হওয়াতে আমি নেগেটিভ কিছু খুজতে বা ভাবতে চাই না। আফটার অল, এটা একটা ভার্চুয়াল জগত। এটাই জীবনের শেষ না। এখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে চলতেই পারেন।

সবচেয়ে বিব্রতকর মুহূর্ত হলো, কারো ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট ঝুলিয়ে রাখলে বা ক্যান্সেল করে দিলে কেউ যখন সরাসরি এ্যাপ্রোচ করে যে, “আপনি তো আমার রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেন নাই।” এখন আপনারাই বলেন, এই বেকুবগুলোকে নিয়ে কি করি? কেমনে বুঝাই? আড়ালে কথাটা বলে থাকলে মুচকি হেসে অথবা অন্য প্রসংগে গিয়ে মোড় ঘুরানোর চেষ্টা করি। তবে, প্রকশ্যে বা জনসম্মুখে এমন কথা আমার মত কাউকে না বলাই ভাল; কারন আমার মত চুপচাপ-শান্তিপ্রিয় অধিকাংশ মানুষই পাব্লিক প্লেস বা ওপেন ফোরামে পার্সোনাল খোচার বিনিময়ে কানের পোকা নামানোতে বিশেষ পারদর্শী।

পূনশ্চঃ নিজে ভাল থাকুন; অপরকে ভাল থাকতে দিন। পারস্পরিক সম্মানবোধকে সম্মান করতে শিখুন। সর্বোপরি, ভাবতে শুরু করুন যে আপনি একজন সুখী মানুষ।

৪,৭৫৬ বার দেখা হয়েছে

৫০ টি মন্তব্য : “সোশালাইজেশন ম্যানার্সঃ ফেসবুক বিড়ম্বনা”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    একদম ঠিক বলেছেন আহমদ ভাই। 😀
    সমস্যা হচ্ছে ইশারা করলে সবাই সেটা ধরতে পারেনা।
    কিছু কিছু মানুষকে চিৎকার করে অপ্রিয় কথা বলতে হয়...তা নাহলে তারা বুঝতে পারে না! 😐


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    একদম মনের কথাগুলো বলেছেন আহমেদ ভাই। আমার স্পেসে আমি কাকে জায়গা দেব আর দেবনা সেটা সম্পূর্ণ আমার ইচ্ছে। তবে বাধ্য হয়ে মাঝে মাঝে একটু ডিপ্লোম্যাটিক হতে হয়, তাদের জন্য রেস্ট্রিক্ট চিকিৎসা 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    বন্ধু তালিকা অনেক লম্বা করে ফেলেছি। খুব বাজে অবস্থা। ইদানিং রিকু ঝুলিয়ে রাখি বা সরাসরি ক্যান্সেল করে দেয়ার চেষ্টা করি। সবচাইতে বেশী চেষ্টা করি যত কম দেখা যায়, যাওয়া যায়। কাজটা খুব কঠিন কিন্তু চেষ্টা জারি আছে।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  4. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    ফেইসবুক কালচার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানা গেলো।
    আমার মতে, টুপুস করে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে চুপচাপ বসে থাকার চেয়ে দুটো কথা লিখে একটু হ্যালো বলে নিলে ভালো হয়। তাতে একটা আন্তরিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।

    জবাব দিন
    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      নিজের নেশা যেন অপরের যন্ত্রনা বা বিড়ম্বনার কারন না হয়, আপাতত এইটুকু খেয়াল রাখলেও চলবে। আর নেশা দূর করতে চাইলে ভার্চুয়াল জগতের চেয়ে রিয়েল লাইফের ছোট ছোট আনন্দ দুঃখ কষ্ট প্রাপ্তি বেদনা এসবের দিকে ফোকাস করতে হবে।


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন
  5. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    ভাই যা বলেছো।
    কি কি রকম যন্ত্রণা যে হয় মাঝে মধ্যে।
    রিকোয়েস্ট পাঠালো তো যদি এক্সেপ্ট করলাম মেসেঞ্জারে নানান রকম আলাপের চেষ্টা। খেলাম কিনা, ঘুমালাম কিনা, কোথায় থাকেন, ফোন নম্বরটা দেয়া যাবে নাকি... কতো কতো যে বিষয়...
    ধৈর্য ধরে দুই লাইনে সামলাতে না পারলে ইগ্নোর, বেশী জ্বালাতন হলে আনফ্রেন্ড, আরো বেশী হলে ব্লক...
    মাঝে মাঝে সুন্দর সুন্দর মতামতও পাই। ওইটা অবশ্যই ভালো লাগে। কিছু মানুষের সাথে ভার্চুয়াল কমিউনিকেশন থেকে বন্ধুত্বের সমান সম্পর্কও তৈরী হয়ে গেছে।
    তবে যন্ত্রণাটা বড্ড পীড়া দ্যায় কখনো কখনো।

    জবাব দিন
  6. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    আমরা আমাদের একচুয়াল পার্সোনালিটি অর্জন করি দীর্ঘ্যদিনের চর্চায়।
    সেখানে ভার্চুয়াল পার্সোনালি অর্জনের জন্য আসলেই কি খুব বেশী সময় আমরা পেয়েছি?

    শুরুতেই প্রশ্নটা রাখলাম, কারন একচুয়াল ও ভার্চুয়াল পার্সোনালিটির মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
    একজন গোবেচারা সাদাসিদা মানুষও ভার্চুয়াল দুনিয়ায় গ্রিংগো হিসাবে আবির্ভুত হতে পারেন নানান আনফুলফিলড ফ্যান্টাসি পুরন করতে।
    আবার একজন রিয়েল লাইফ গ্রিংগো হয়তো সুবোধ বালক হিসাবে উপস্থিত হচ্ছেন।

    অন্যান্যদের পক্ষে আগে থেকে এগুলো জানার আর কোন উপায় থাকে না।

    একজন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর জন্য কনসিস্ট্যান্ট ভার্চুয়াল পার্সোনালিটি মেইন্টেইন করাটা জরুরী হলেও কঠিন।
    আমার ধারনা, দিনে দিনে ব্যাপারটায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠছি।
    আরও হয়ে উঠব।

    সুযোগ সন্ধানিরা বাস্তব ও ভার্চুয়াল উভয় জগতেই তাঁদের চেষ্টা চালায়।
    বাস্তব জগতে আমরা অনেক বেশী ডিফেন্স ম্যাকানিজম ব্যবহার করে অভ্যস্ত, তাই তারা অতটা সুবিধা করতে পারে না।
    এই জগতটা, নতুন বলে এখনও আমরা অনেকেই এটা মোকাবিলার জন্য খুব একটা প্রস্তুত নই।
    সেই কথাও ভাবার আছে।

    আহমদ, ভাল একটা চিন্তার খোরাক দিয়েছো।
    এই বিষয়ের উপরে আরও কিছু ভাবনা চিন্তা করি। তারপর দেখি একটা গোটা ব্লগই না হয় দাড় করিয়ে দেবো...


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  7. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    আসলে ফেসবুক তো আমাদের একটা প্যারালাল জীবন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো জীবনটাকে ওর মধ্যে ঠেসে দেই, কখনো ফেসবুকই হা করে বাস্তব জীবনটাকে গিলতে এগিয়ে আসে। কী করা যাবে বল? আমাদের কথা বলার, যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আমি এখন এটিকে বেশ গুরুত্বের সাথে নিতে শিখেছি। দূরের বন্ধুকে পেয়ে কাছের মানুষের অবহেলাকে হেলা করতে শিখেছি। এ কি কম ব্যাপার?

    আমি বন্ধুত্বের ব্যাপারে অন্য যে কোন কিছুর মতই ধীর আর অপেক্ষমান থাকতে পছন্দ করি। আজ যেটা বুঝতে পারছিনা, দুদিন পরেই তা বুঝতে পারবো বলে মনে করি। তবে আমার মনে হয় শিষ্টাচারের বিকল্প নেই, নেই কমন সেন্স এরও। একটি মজার ঘটনা শেয়ার করি। আমি কখনোই ক্যাডেট দেখলেই আদিখ্যাতা দেখাই না। ক্যাডেট হলেই যে বুদ্ধিতে আর ব্যবহারে একটা কিছু হবে আমি সেটা মানিই না। তো এমনই এক ক্যাডেট , তা বয়সে কুড়ি বছর ছোট তো হবেই (যার বন্ধুত্ব কদিন আগেই গ্রহণ করেছি) বাংলাদেশের সময়ের হিসেবে প্রায় ভোররাতে মেসেজ পাঠাল -- 'hi, how's going?' আমার জবাব -- hi, not bad ?
    ওপাশ থেকে -- 'thn, ki koro? ghumaba kokhon?'
    আমি - looks like you don't know me
    উত্তর - yap, kinda like that

    তারপর যখন জিজ্ঞেস করলাম সে এক্স ক্যাডেট কি না। আমি কি তাকে চিনি কি না, তখন আমতা আমতা করতে করতে প্রথমে দিদি, তারপর দাদা বলে কেটে পড়লো। এই যে ছেলে পেলে মানুষজনকে নক করবে, করুক, কিন্তু মিনিমাম হোম ওয়ার্কটুকু পর্যন্ত করেনা। কোনদিন হয়তো মা-কেই নক করে বসবে। বন্ধুত্বের কি এতই আকাল পড়লো যে, একজন অপরিচিত মানুষকে এভাবে হিরো হিরো ভাব নিয়ে এপ্রোচ করতে হবে?
    যাক, আমার কাছে থেকে এটুকু নিশ্চিন্ত যে ওর নামটি কেউ জানবেনা। কিন্তু অন্যেরা ছাড়বে কেন। না কি সেসবের পরোয়া নেই। শুধু নামের কারণেই আমি বুঝি আমাদের দেশে মেয়েদের কি সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।