মহান বিজয়ের দিনে আমার মিশ্র অনুভুতি; প্রসঙ্গঃ ইসিএফ-এর প্রথম এক্সজিভিএল

ডিস্ক্লেইমারঃ আজ ঘন্টা দুয়েক আগে এই লেখাটা আমি ইসিএফ (এক্স-ক্যাডেটস ফোরাম)-এর ফেসবুক পেইজে দিয়েছিলাম। অনলাইনে আমার লেখালেখি কেবল সিসিবিতেই। এই প্রথম এমনটা হলো যে মনে কিছু মিশ্র অনুভুতি হয়েছে কিন্তু সিসিবিতে সেটা প্রকাশ করিনি। তাই লেখাটাকে প্রাসঙ্গিক ভাবে কিছুটা এডিট করে এখানে আবার পোস্ট দিলাম। তবে যেহেতু আজকেই ইসিএফ আয়োজিত প্রথম এক্সজিভিএল (এক্স গার্লস ক্যাডেটস ভলিবল লীগ) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, তাই সঙ্গত কারনেই আমার অনুভুতি আমি ইসিএফ-এই প্রথম শেয়ার করেছিলাম। যারা আমার এই লেখাটা ইসিএফ-এ পড়েছেন, তারা এই লেখাটাকে এখানে ইগনোর করে যেতে পারেন।

মহান বিজয়ের দিনে আমার মিশ্র অনুভুতি; প্রসঙ্গঃ ইসিএফ-এর প্রথম এক্সজিভিএল

আজকে ইসিএফ আয়োজিত প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত এক্সজিভিল-এ গিয়ে আমার অনেক ভাল লেগেছে। আমার ছোট্ট আম্মুটা অনেক মজা পেয়েছে। খেলা দেখে আর মিউজিকের তালে সেও দেখি হাততালি দিচ্ছে আর নাচের মতন করে দুলছে। কি বুঝেছে এই সোয়া দুই বছরের মেয়েটা, সেটা কোন বিষয় নয়, সে যে মহা আনন্দ উপভোগ করেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

বউয়ের কথা তো আর নতুন করে বলার দরকার নেই। সে নন-ক্যাডেট। আমাদের বিয়ের পর থেকে এই রকমের তার-ছেঁড়া ফ্রেন্ডশীপ আর আনলিমিটেড ফেলো-ফিলিংস দেখে সে এখন শুধু অভ্যস্তই নয়, বরং সবসময় অপেক্ষায় থাকে কখন ক্যাডেটদের কোন প্রোগ্রাম হবে।

আসল যে কথাটা মনে উঁকি দিয়েছে, এবারে সেটা বলি। আমি একজন ‘ইতিহাস’-কে দেখেছি আজ। তিনি হলেন মগকক (ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ)-এর প্রথম কলেজ প্রিফেক্ট। আমার ভাষায় বাংলাদেশের প্রথম জিসি (গার্লস ক্যাডেট) কলেজ প্রিফেক্ট। ইতিহাস তো অবশ্যই। অন্ততঃ আমার দৃষ্টিতে তিনি একজন কালের সাক্ষী। আপুর নাম মনে পড়ছে না। খুব সম্ভবত আমাদের চেয়ে ৮ থেকে ১২ বছরের সিনিয়র হবেন।

আপুর নাম ঘোষণা হবার সাথে সাথে আমাদের প্রথম কলেজ প্রিফেক্ট শাহনেওয়াজ ভাইয়ার কথা বারবার মনে পড়ছিল। আজকের এক্সজিভিএল-এ আমার কলেজের আমাদের ব্যাচের সাইদুল এবং রেজওয়ান মাঠে ছিল সকাল থেকেই; আমি গিয়েছি সপরিবারে দুপুরের পরে। সহপাঠী এই দুজনকে আমি সেসময় আমাদের প্রথম কলেজ প্রিফেক্টের কথা মনে করিয়ে দিলাম।

শাহনেওয়াজ ভাইয়া আজ আমাদের মাঝে নেই। পিলখানা ট্রাজেডীর সময়ে আমরা তাকে হারিয়েছি। ভাইয়ার সাথে আমার বিভিন্ন সময়ে, রকা (রংপুর ওল্ড ক্যাডেটস এ্যাসোসিয়েশন)-এর বিভিন্ন প্রোগ্রামে সামনাসামনি অনেক কথা হয়েছে। আমাদের ১৩ বছরের সিনিয়র। বাংলাদেশ আর্মির একজন ট্যালেন্টেড অফিসার এই ভাইয়াকে আমি সবসময় খুবই আন্তরিক ভাবে দেখেছি, পেয়েছি। হাস্যজ্জ্বল মেধাদ্বীপ্ত চেহারা। যখনই ফোনে কথা হয়েছে, আমি তার কন্ঠে আন্তরিকতার পরিচয় পেয়েছি। রকার যেকোন ক্রান্তিলগ্নে, তিনি ছিলেন উল্লেখযোগ্য কান্ডারীদের একজন। তার পরামর্শগুলো ছিল সবসময়ই ইমোশোন বিবর্জিত এবং ডায়নামিক। পরপর টানা তিনবার আমি রকার অর্গানাইজিং সেক্রেটারি থাকার সুবাদে আমার অনেক সিনিয়রদের একান্ত সান্নিধ্যে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। তাদের মধ্যে যাদেরকে আমি সবচেয়ে ডায়নামিক এবং ঠান্ডা মাথার মানুষ হিসেবে দেখেছি, মরহুম মেজর শাহনেওয়াজ ভাইয়া ছিলেন তেমনই একজন ব্যক্তিত্ব। সত্যি কথা বলতে, তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল যেমন আকর্ষনীয়, ঠিক একইসাথে তেমনই ঈর্ষনীয়, এবং অনুকরন বা অনুসরন করার মত তো অবশ্যই।

মহান বিজয়ের দিনে শত আনন্দের মাঝেও আজ আমার এই সিনিয়র ‘ইতিহাস’-এর কথা বারবার মনে পড়ছে। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। জানিনা তার পরিবারের সদস্যরা কেমন আছেন; তারা ভাল থাকুন, এটাও আমার প্রার্থনা।

যাহোক, আজকের এই আনন্দের মুহূর্তে আমি যদি কারও মন খারাপ করে দিয়ে থাকি, দয়া করে, আমার মতন এই নির্বোধের ইমোশনের প্রতি কিছুটা সহনশীল হয়ে বিষয়টাকে সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আজকের সকালের খেলাগুলো আমার দেখা হয়নি। ইচ্ছা ছিল বউ-বাচ্চা সহ যাব, আর তাতেই কাল হয়েছে। বউয়ের রেডি হওয়া, তারপরে বাচ্চাকে খাওয়ানো, রেডি করানো, রাস্তার মাথা খারাপ করা ট্রাফিক, এত কিছুর পরেও গিয়ে যে অন্ততঃ ফাইনাল ম্যাচটা দেখেছি, তাতেই আমার কাছে মনে হয়েছে আমি অনেক কিছু পেয়ে গেছি।

মগকক জিতেছে। তাদের সবাইকে আমার অভিনন্দন। যদিও আঞ্চলিকতার টানে আমি ছিলাম জগকক (জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ)-এর সমর্থক। তবে শুনলাম ফগকক (ফেনি গার্লস ক্যাডেট কলেজ) নাকি সবার মন জয় করে নিয়েছে — অবশ্যই খেলা দিয়ে, অন্য কিছু নিশ্চয়ই কেউ মিন করেনি। আর মিন করলেই বা কি! খেলোয়াড়দের দুচারজনের সাথে কথা বলে দেখলাম, সবাই আমার হাটুর বয়সী। আমি মেয়ে হলে বোধহয় আমার তাদের বয়সের বাচ্চাকাচ্চা থাকত!

আরেকটা কথা না বলা পর্যন্ত মনে হচ্ছে লেখাটা অসমাপ্তই থেকে যাচ্ছে, তা হলো রেজওয়ান এবং সাইদুল-কে অসংখ্য ধন্যবাদ বউ-বাচ্চা সমেত এই অধমকে ফিরতি পথে লিফট দেবার জন্য।

ফাইনালি, যারা এতক্ষন ধরে আমার এই লেখাটা পড়ে অনেক ধৈর্য্যের পরিচয় দিলেন, কিংবা যারা আমার মতন বোরিং মানুষের নাম দেখেই লেখটা স্কিপ করে গেলেন, তাদের সবাইকে মহান বিজয়ের শুভেচ্ছা ……… ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪।

………….. আহমদ, সিসিআর, ১৪ তম ইনটেক (১৯৮৮-৯৪)

২,৩৭৬ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “মহান বিজয়ের দিনে আমার মিশ্র অনুভুতি; প্রসঙ্গঃ ইসিএফ-এর প্রথম এক্সজিভিএল”

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।