কন্যা-জায়া-জননীঃ আই অ্যাম সরি টু ইউ অল – এ প্রাইভেট কনফেশন

কন্যা-জায়া-জননীঃ আই অ্যাম সরি টু ইউ অল – এ প্রাইভেট কনফেশন

[আই অ্যাম নেভার সরি ফর হোয়াট আই ডিড, বাট অফেন অ্যাশেইমড অফ দ্যা ওয়ে আই ডিড]

এটা কোন গল্প নয়। কোন অনুধাবনও নয়; আবার হতেও পারে। আসলে এই লেখাটাকে আমার সামান্য কিছু স্মৃতির দিনলিপি বলা যেতে পারে। লেখাটার টাইটেলের সাথে পুরো লেখাটার মিল নাও থাকতে পারে।

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০১৪, দুপুর ২টা ৫০ মিঃ (যখন লেখাটা শুরু করলাম)

এই মুহূর্তে আমি দিনাজপুরে। ঈদ করেছি ঢাকায় আমার বাবা-মায়ের সাথে। আজ সকালে বউ-বাচ্চা সহ বাস থেকে নেমেছি। এখন শ্বশুরালয়ে। মাত্র সাত ঘন্টায় ঢাকা থেকে চলে এসেছি। যাত্রাপথে প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে মেয়েটা আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে। আমার বেশ কয়েকবার ঘুম ভেঙ্গেছে। অনেক চিন্তা মাথায় আসছিল। পুরো বাস অন্ধকার। সবাই ঘুমে। আমিও ঘুমিয়েছি। কিন্তু কিছু চিন্তা মাথা থেকে নামাতে পারছিলাম না। তখনই ঠিক করেছি একটা কিছু লেখার চেষ্টা করব। অনেকটা কনফেশন স্টাইলে, কিংবা বলা যায় ব্যক্তিগত সাইকোথেরাপির মতন করে। আনেকেই অনেক ভাবে নিতে পারেন। আমার পরিবারের সদস্যরা এই লেখাটাকে কিভাবে নেবেন সেটা নিয়ে আমি সবচেয়ে বেশী চিন্তিত এবং শঙ্কিত। পাঠকের কাছে আমার একটা অনুরোধ, যারা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন বা যাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ আছে, দয়া করে তারা আমাকে এই লেখার ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করবেন না; এ ব্যাপারে আমার সাথে কোন আলোচনা করলে আমি হয়তো অনেক বিব্রত হব।

দু-তিন দিন আগে, ঠিক ঈদের আগের দিন বউয়ের সাথে খটমট লেগে গেল। তাও আবার ইফতারের ঠিক আগ দিয়ে। এবং আমার আওয়াজ বোধহয় বেশ জোরেই হয়ে গিয়েছিল, কারণ আমার স্টেপ-মাদার (শুধু নামেই স্টেপ, কার্যত অনেকের নিজের মায়ের চেয়েও তিনি আমার অনেক আপন) এক পর্যায়ে আমাদের রুমে এসে আমাকে সরাসরি ধমক দিলেন, “তুমি মনি-র সাথে এভাবে কথা বলছো কেন”? যাহোক, ঈদের দিনে যথারীতি মনি (আমার স্ত্রী) এবং আরিশা (আমাদের মেয়ে)-কে নিয়ে বেড়াতে গেলাম। রিক্সায় বসে মনির একটা কথা অনেকটা এমন ছিল, “আজকে ঈদের দিন বলে তুমি পার পেয়ে গেলে।” আর বেশী ঝামেলা হয়নি।

পরদিন সকালে গেলাম কাছাকাছি এক বন্ধুর বাসায়। সপরিবারে যাবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু মনির শরীরটা হঠাৎ একটু খারাপ করায় আমি একাই গেলাম, তারপরে আবার রাত্রে লম্বা জার্নি করতে হবে। যাহোক, রিক্সায় যেতে প্রায় কুড়ি মিনিটের মত সময় লেগেছে। এর মাঝে অনেকগুলো চিন্তা মাথায় এলো। চিন্তাগুলোর মূল সুরটা ছিল এরমকের যে, আমি টেম্পার ল্যুজ কেন করলাম। অনেক ভেবে দেখলাম, হয়তো শুধু মনি-ই না, আরো অনেকের সাথেই হয়তো এমন করেছি। এর কিছু কারণ বের করার চেষ্টা করলাম।

দেখা গেল আমি বা আমার মত মানুষেরা তাদের সাথেই এমনটা করি যাদের কাছে আমার/আমাদের এক্সপেক্টেশনস অনেক বেশী। ভেবে দেখেলাম, আমি হয়তো আমার সেই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সাথেই অনেক বেশী ঝামেলা করি, যাদের কাছ থেকে আমি কোন একটা কাজ ভালমত বের করে আনতে চাই। আমি মাস্টার্সের থিসিসের প্রোপোজাল লেখাতেই এতবার কারেকশন করাই যে হয়তো কেউ কেউ আমাকে পাগল ভেবে বসে। তারপরেও দেখেছি, অনেক ছেলে মেয়েই আমার কাছেই আসছে। যদিও তারা খুব ভাল মতই জানে যে আমার সাথে কাজ করার কতটা বিড়ম্বনা! আমি আগেই বলে দেই, “ভেবে দেখো আমার সুপারভিশনে থাকবে কিনা”। যেখানে আমি নিজেই এখন পর্যন্ত পিএইচডি-র জন্য একটা গ্রহণযোগ্য প্রপোজাল ফাইনালি রেডি করতে পারলাম না, সেখানে এই আমিই কেন আমার ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে এমনটা করি?

আর, আসলে এত কিছুর পেছনে রয়েছে আমার খুঁতখুঁতে স্বভাব। আমার নিজের মা ছিলেন এমন। তিনি ছিলেন কিছুটা শুচিবায়গ্রস্ত। আমার বাবাও যথেষ্ট পারফেকশনিস্ট। আর একারণে তিনি কিছুটা হলেও অথরিটেটিভ স্বভাবের, তবে অবশ্যই পজেটিভ বিবেচনায়। খুব ছোট বেলা থেকেই আমাকে বাসার থালা বাসন ধোয়া, ফার্নিচার মোছা, বাজার করা, কাপড় ধোয়া, ঘর ঝাড়ু দেবার মত কাজগুলো করতে হয়েছে। আমি ছিলাম আমার বায়োলজিক্যাল মায়ের একমাত্র সন্তান; ভালবাসার কোন কমতি ছিলনা, কিন্তু কোন বিষয়ে বাবা-মায়ের কাছে ছাড় পেয়েছি বলে মনে হয় না। আমার বাসাটাও ছিল, বলা চলে, ছোট-খাটো একটা ক্যাডেট কলেজ। ছোট থেকে আমি এই ভাবেই বড় হয়েছি।

এখন জেনেটিক্স-কে তো আর বাদ দেয়া যায় না। তার ওপরে আবার ক্যাডেট কলেজের রেজিমেন্টেড টিন-এজ লাইফ। আমি ছিলাম আমাদের ব্যাচ থেকে “বেস্ট ডিসিপ্লিন্ড ক্যাডেট” এওয়ার্ডপ্রাপ্ত। যদিও প্রিফেক্টশীপ, পুরস্কার, এওয়ার্ড এসবের ব্যাপারে আমি সিরিয়াস বা আকাঙ্ক্ষাগ্রস্ত ছিলাম না, কিন্তু কাজের প্রতি খুব ছোটবেলা থেকেই তীব্র একনিষ্টতা এবং একাগ্রতার চর্চা, এসব কিছুই আমার এই পারফেকশন এক্সপেক্ট করার পেছনে দায়ী। একদিন আমার বউ আমাকে তো বলেই বসল, “তোমার স্টুডেন্টরা তোমাকে টলারেট করে কিভাবে?” আরেকদিন মাস্টার্সের একজন সিনিয়র ছাত্রী আমার সম্পর্কে অনেকটা এই রকমের একটা কমেন্ট করেছিল, “স্যার, ভাবীর কথা ভেবে আমাদের মায়া লাগছে, উনি কেমনে সামলান!”

আমাদের বিয়ের এই সাড়ে সাত বছরে যে কয়বার উচ্চ-বাচ্য করেছি, সেটা এই একমাত্র খুঁতখুঁতে স্বভাবের জন্যই। বিষয় কিছুই না, যেভাবে ভাবছি বা চাচ্ছি, সেভাবে হয়তো হয়নি, নট এট অল এ বিগ ডিল; কিন্তু আমি রিএ্যাক্ট করে ফেলেছি। পরে খারাপ লেগেছে। প্রতিবারই পরে মনে হয়েছে, এমনটা না করলেও তো চলত। এবং, সম্ভবত ভবিষ্যতেও আমার দ্বারা এমনটাই হবে। আমার বিশ্বাস মনি-ও এটা খুব ভালভাবেই বুঝে গেছে। একদিন সে আমাকে বলেছিল, “মানুষ তোমাকে সবসময় ভুল বুঝবে, শুধুমাত্র তারা বাদে যারা তোমাকে অনেকদিন থেকে চেনে”।

‘দিল চাহতা হ্যায়’ মুভির আমির খানের একটা ডায়লগ গত রাত থেকে মাথায় ঘুরছে, “পারফেকশনকো ইমপ্রুভ করনা মুশকিল হ্যায়”। তাই যদি হয়, তাহলে আমি এত পারফেকশন এক্সপেক্ট করি কেন? আমি কি বিকারগ্রস্ত? একদিন আমার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান (যিনি নিজে চার কন্যার জনক) আমার আন্ডারে কোর্স এডভাইজিং চলাকালীন সময়ে আমার কিছুটা কড়া ডিলিংস-এর কারণে একদিন আমাকে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের কয়েকজন ছাত্রীর সামনেই বলেছিলেন, “আরে বাবা, তুমিও তো একজন মেয়ের বাবা, ওদের সাথে অমন করছো কেন?” আমি জাস্ট ‘থ’ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কোন জবাব ছিল না।

নিজের মেয়েটাকে আমি একটু কষ্ট দিয়ে বড় করতে চাই। পারব কিনা জানিনা। এমনকি আমার বাবার মত এত শক্ত মানুষটিও দেখি তাঁর নাতনীর ব্যাপারে সবচেয়ে দুর্বল। মেয়েকে একটু কড়া ভাবে ডিল করতে গেলে বাবা আমাকে সবার সামনেই বেশ ধমকে দেন। মেয়েটার ডাকে সাড়া না দিলে দেখি সে প্রাণপণ আমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়েই যায়। অনেক মায়া লাগে। কিন্তু আমার যে এক্সপেকটেশন অনেক বেশী। আমি এখন কি করব? আদর করব? নাকি কমান্ডো বানাব?

মাত্র কিছুদিন আগে, এই রমজানের শেষের দিকে, মেয়েটা হঠাৎ কিভাবে যেন আমার কাছে ব্যাথা পেয়ে যায়। আমি নিজেও কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। মেয়েটা বিছানায় হেলান দিয়ে ছিল। ওর শরীরের ওপরে ঝুঁকে আমি আদর করছিলাম, অনেকটা কাতুকুতু দেবার মত করে। হঠাৎ মেয়ের চিৎকার দিয়ে কান্না। প্রায় কয়েকঘন্টা সে তার একটা হাত নাড়াতে পারছিল না। আমার অসাবধানতার কারণে আমার বাবা-মা সেদিন আমাকে অনেক বকা দিয়েছিলেন। শুধু মনি-ই আমাকে কিছু বলেনি। কারণ সে বুঝেছিল আমি নিজেই কতটা কষ্ট পাচ্ছিলাম। কারণ মেয়েটা ব্যাথা পেয়েছে তার বাবার কাছে। আমার চোখের কোনের কষ্টটা বোধহয় মনি-ই শুধু দেখেছিল। সেদিনের কষ্টটা আমি এখনও অনুভব করি।

আমার নিজের মায়ের কথা প্রায়ই মনে পড়ে। অনেক খারাপ লাগে। চোখ ভিজে আসে। কাউকে বুঝতে দেই না; “বিকজ মেন মাস্ট নট ক্রাই”, এটাই তো নিয়ম! গত মাদারস ডে-তে ইউনিভার্সিটিতে আমার রুমে বসেই কেঁদে ফেলেছিলাম। রুমের দরজা বন্ধ করে করে চুপচাপ বসে ছিলাম। নিজেকে স্বাভাবিক করে তারপরে ক্লাসে গিয়েছিলাম। মায়ের সাথে আমার শেষ দেখা ১৯৯৬-এর সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ রাতে, হাসপাতালে। আমি মনে হয় সেদিন আমার নিজের হাতেই মামণি-কে রাতের খাবার খাইয়েছিলাম। বাসায় আসার ঠিক আগের মুহূর্তের মামণির কথাটা এখনো কানে বাজে, “কাল সকালে তাড়াতাড়ি এসো”। আমার আর তাড়াতাড়ি যাওয়া হয়নি। মামণি নাকি শেষ রাতের দিকেই কমায় চলে গিয়েছিলেন। বাবা ছিলেন পাশে। আমার চাচারাও ছিলেন। মামণি মারা গেছেন ভোর রাতে, আইসিইউ-এ। আমি কি করব? মামণি-কে তো এখন আর স্যরি-ও বলতে পারব না। এই অংশটা লেখার সময় অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকাতে হচ্ছে।

হয়তো আমরা অনেকেই কষ্ট ঢাকি হাসি দিয়ে, কিংবা অন্য কোন অবলম্বন দিয়ে। হয়তো এই খুঁতখুঁতে স্বভাবটাই আমার অবলম্বন। আমি তো আর সাইকিয়েট্রিস্ট নই যে নিজের মনের সব কিছু পড়ে ফেলব। তবে সাইকোএনালিটিক ক্রিটিসিজম নামের একটা চ্যাপ্টার আমি মাস্টার্স লেভেলে পড়াই; খুবই আগ্রহ নিয়ে পড়াই; চেষ্টা করি স্টুডেন্টদের আগ্রহী বানাতে যেন রেজাল্ট তারা যাই করুক, নিজেদের জীবনের বা আচরণের ব্যাখ্যা যেন তারা নিজেরাই একসময় বের করার চেষ্টা করতে পারে।

আমি বোধহয় এযাবত কালের বাংলাদেশের ক্যাডেট-কুলের মধ্যে সাংঘাতিক রকমের ব্যতিক্রমদের একজন যে কিনা একমাত্র সন্তান হওয়া সত্বেও ছুটিতে এসে মায়ের হাতে মার খেয়েছে। গল্পটা আমি আমার ক্লাসের ছেলেমেদের প্রায়ই বলি। তাদের অবাক দৃষ্টির সামনে নিজেকে সামলে নিয়ে বলি আসলে একমাত্র সন্তান ছিলাম বলে আমার মায়ের তো আর কোন অপশন ছিল না, তাই আমাকেই পেটাতেন। এই গল্পগুলো কেন করি জানি না।

আসলে আমার অবস্থাটা হয়েছে এমন, একান্ত কাউকে স্যরি বলতে পারি না, একটা সো-কলড টাফ-গাই ইমাজ তৈরী হয়ে গেছে। আবার কেউ তো আমাকে স্যরি বলার সুযোগ না দিয়েই বহুদূরে চলে গেছে।

যাহোক, এলোমেলো অনেক কথা লিখলাম। এখন আরাম লাগছে। আমি মনি-কে কাল রাতে বাসেই বলেছিলাম যে, মাথায় অনেক কথা বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে। তুমি এখন জানতে চেয়ো না, এমনকি কোথাও না ছাপানো পর্যন্ত রাফ ভার্সনটা পড়তে চেয়ো না। আমি যখন মনি-কে বললাম কথাগুলো লিখে ফেলতে পারলে সন্তান প্রসবের মত আরাম পাব, সে আমার দিকে আজব একটা ‘লুক’ দিয়েছিল। মনে-মনে কতখানি বিরক্ত হয়েছিল, বা গালি দিয়েছিল কিনা, জানি না। তবে আসলেই এখন অনেক আরাম লাগছে। হালকা লাগছে। জানিনা লেখাটা কখনো কোথাও আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা, কিন্তু এখন আসলেই আরাম লাগছে। (এখন সময় বিকাল ৫টা ৪৫মিঃ)

৩,০৭১ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “কন্যা-জায়া-জননীঃ আই অ্যাম সরি টু ইউ অল – এ প্রাইভেট কনফেশন”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    Flexibility বাড়াতে হবে। উপায় নেই।
    কোন কাজ নিঁখুতভাবে শেষ করার চেয়ে স্বস্তিদায়কভাবে করা শ্রেয় বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। চেষ্টা করে দেখতে পারো।
    নিয়ম করে relax করতে না পারলে স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে -- হয়তো পড়ছেও ইতোমধ্যে।

    সবশেষে, এই যে এখানে মন খুলে নিজের কথা লিখলে এটা একটা বিরাট ব্যাপার। স্যালুট তার জন্যে।
    আর উপরের কথাগুলো আসলে তোমার লেখা পড়েই যে উপলব্ধি হলো তা বলে ফেললাম - ঠিক উপদেশ বা পরামর্শ নয় কিন্তু। 🙂

    জবাব দিন
  2. আহমদ (৮৮-৯৪)
    কোন কাজ নিঁখুতভাবে শেষ করার চেয়ে স্বস্তিদায়কভাবে করা শ্রেয়

    দাদা, খুব খাটি কথা বলেছেন।
    আসলেই ফ্লেক্সিবিলিটির বিকল্প নেই।
    আমি ইদানিং একটা নতুন পলিসিতে থাকব ঠিক করেছি।
    প্রিন্সিপলস চেইঞ্জ করব না, কিন্তু পলিসি চেইঞ্জ করব।
    উদ্দেশ্য একই থাকবে, কিন্তু কাজের পদ্ধতি পাল্টাবে।
    আর, স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ঠিকই ধরেছেন, আমাকে নিয়মিত ব্লাড প্রেশারের ঔষধ খেতে হচ্ছে।
    যাহোক, দাদা, লেখাটা পড়েছেন, সেইসাথে খুব প্রাগমাটিক মন্তব্য করেছেন বলে খুব ভাল লাগল। (সম্পাদিত)


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
  3. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    আহমদ ভাই, আপনার লেখা আমার প্রিয়তে যোগ হয় সবচাইতে বেশী। এই লেখাটা আপনার একান্ত ব্যাক্তিগত চিন্তাপ্রসূত এবং সত্যি বলতে কি, কিছুটা খাপছাড়া প্রকাশভঙীর মাধ্যমে আপনার ভিতরের জমে থাকা অনেক ভাবনার প্রতিফলন।
    আপনার এরকম সমস্যা আমাদের অনেকেরই পোহাতে হয়, প্রায় প্রতিনিয়ত। পারফেকশনিস্ট না, একেবারেই, তবে যেকোন কিছুর "যা তা বা দায়সারা পরিবেশনা" একেবারেই মেনে নিতে পারি না। তাই ফাইনাল প্রোডাক্টে হেলাফেলা খুব যন্ত্রনা দেয় আমাকে। এই অযাচিত আবেগটাকে ধীরে ধীরে আয়ত্বে আনার চেষ্টা করছি, এবং নিজের ব্যাপার বাদে অন্যদের বষয়ে কিছুটা সহনশীল হতে পারছি ধীরে ধীরে। তবে ঐ যে আপনি বললেন, আমাদের আবেগের যাচ্ছেতাই বহিপ্রকাশ ঘটাই আমরা তাদের কাছেই, যাদের প্রতি আমাদের এক্সপেক্টেশান লেভেলটা বেশী এবং যারা আমাদের একান্ত কাছের মানুষ। আমাকে আপাতদৃষ্টিতে দেখলে বা সাক্ষাৎ পরিচয়ের প্রথমে সবারই মনে হবে আমি মোটামোটি ঠান্ডা স্বভাবের মানুষ। চ্চাকরিক্ষেত্রে, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুদের সাথে কখনও উচু গলায় কথা বলিনাই, ঝগড়া বা কলহের রেকর্ড নাই, মোটামোটি বেশ ভাল ব্যালেন্সড একটা ইমেজ নিয়ে চলি। তাই আমার ম। আমাকে বলে, "সারা দুনিয়ার জন্য তোর এক রূপ, আর আমার জন্য ভিন্নি রূপ"। আসলেই, আমার বাবা-মা-ছোট ভাই- আমার মেয়ে এরা সবাই আমাকে অনেকটা সমঝে চলে। এই কথাটার মধ্যে আমার দাম্ভিকতা খোজার চেষ্টা করেন না, কারণ আমি আসলেই লজ্জিত। সবচাইতে অত্যাচার চলে আমার মায়ের উপর। এর কারণটা আজ আপনার লেখায় পরিষ্কার হল। আমার মায়ের সাথে আমার সম্পর্কের ব্যাবধান ব্যাপক। কিন্তু তারপরও, মা-মেয়ের সম্পর্ক দুনিয়াতে সবচাইতে কাছের, আপন-এই সত্যও আমি বা মা অস্বীকার করতে পারি না। আর তাই সামান্য বিষয় থেকে মান-অভিমান-অভিযোগ-মনমালিন্য লেগেই থাকে।
    এখন আমি নিজে মা হয়েছি বলেই সংসারে মায়ের ভূমিকাটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারি। বিয়ের পর থেকে বন্ধুপাগল বাবার ছাচে নিজের আদল বদলাতে হয়েছে মাকে। প্রচন্ড সহনশীল আর সাহায্যকারী মনোভাবের কারণে আমার বাবা প্রতিনিয়ত আমার মা কে যেভাবে সাপোর্ট দিয়ে এসেছে তাতে করে মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মায়ের মত সুখী মেয়েমানুষ এই পৃথিবীতে নাই- কিন্তু মা হিসেবে হয়তো ততোটা সুখ আমি দিতে পারিনাই তাকে কখনোই।


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      লেখাটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। তোর মন্তব্যটা মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। আসলেই খাপছাড়া ভাবে লিখেছিলাম। এখন মাঝে মাঝে মনে হয়, এই লেখাটা লিখা ঠিক হয় নি। আবার কখনো মনে হয়, নাহ ঠিকই আছে, এট লিস্ট ভেন্টিলেট করারা জন্য হলেও লেখার দরকার ছিল। হয়তো আমার মত অনেকের সাথে মিলে যেতেও পারে।


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    আহমদ ভাই,
    মাত্র আপনার লেখাটা পড়লাম। এই ধরনের লেখা লিখতে যে পরিমান সাহস লাগে সেজন্য আপনাকে সশস্ত্র সালাম। কেননা বেশিরভাগই এভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না। আর আপনাকে যতটা চিনেছি আপনি বোধহয় বেশ ইন্ট্রোভার্ট আছেন। সেজন্য কাজটা আপনার জন্য আরও বেশি কঠিন হবার কথা।

    বয়সে ছোট হবার কারনে কোন প্রকার পরামর্শ দেবার ধৃষ্টতা দেখাতে চাইছি না -শুধুমাত্র নিজের মতামত জানাচ্ছি আর কি! 😀

    অন্যের উপর এক্সপেক্টেশন আপনার বেশি আর এ থেকেই অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে! এটি কমাতে হবে বা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। আরেকটি কথা, অনেক সময় নিজেকে দিয়ে অন্যকে বিচার করতে গেলে সংকটের সৃষ্টি হয়। ধরুন, আমি একটি বিষয়ে মোটামুটি ভাল জানি- অর্থাৎ সেটা আমার কাছে একেবারেই ডাল ভাত। অন্য আরেক জনকে সেটা বোঝাতে গিয়ে আমি যদি মনে করি 'আরে, এই সহজ জিনিসটা বুঝতে পারছে না কেন!'- তাহলে কিন্তু মহা গিয়াঞ্জাম হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রেই প্রতিটি মানুষকে বিচার করতে হবে সেই নির্দিষ্ট মানুষটি দিয়েই- অন্য কারও সাপেক্ষে না।

    নিজের চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করার জন্য আমাদের নিয়মিত কোন না কোন মাধ্যম দরকার। সেটা হতে পারে অন্য কোন ব্যক্তির কাছে প্রকাশ, ব্লগ লেখালিখি বা সামাজিক মাধ্যম ইত্যাদির সাহায্যে। সময়ের সাথে আমাদের মধ্যে ইতি/নেতিবাচক যে এনার্জি তৈরি হয় তা চ্যানেলিং না করে ভেতরে রেখে দিলে ধীরে ধীরে সেটা আমাদের শরীর ও মনের উপর প্রভাব ফেলে।

    চুপচাপ স্বভাবের যারা তারা ছোট-খাট বিষয়ে সাধারণত সহজে রিয়্যাক্ট করে না। কিন্তু ধীরে ধীরে এসব জমতে জমতে একদিন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রিয়্যাক্ট করে ফেলে। আমি নিজেও এটা প্রায়শই করি। তাই আমাদের উচিত মনের ভাবনা চেপে না রেখে অন দ্যা স্পটই তা প্রকাশ করা (অবশ্য স্থান, কাল, পাত্র স্মার্টলি বিচার করে তবেই এটা করতে হবে!!)

    অনেক কিছু লিখলাম। পুরোটাই ব্যক্তিগত মতামত। মতের মিল না হলে নির্দ্বিধায় উপেক্ষা করবেন।
    আরেকটা কথা- আমরা হচ্ছি বিশাল একটি যৌথ পরিবার। মনের কথা আমাদের সাথে শেয়ার করবেন না তো করবেন কার সাথে??
    ভাল থাকবেন।


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  5. সামিয়া (৯৯-০৫)

    প্রিন্সিপলস চেইঞ্জ করব না, কিন্তু পলিসি চেইঞ্জ করব।
    কথাটা ভাল লাগল। পারফেকশনিস্ট হওয়াতে কোন সমস্যা নাই, বরঞ্চ তাই হওয়া উচিৎ আমাদের। টলারেন্স লেভেল শুঁন্যের কোঠায় নিয়ে না গেলে আমাদের এই ট্রাফিক জ্যাম, চরিত্রের অস্থিরতা, সামাজিক অস্থিরতা দূর হবে বলে মনে হয় না। আমাদের এখানে একটা ব্যাপার চর্চা করি আমরা, দু'তিনবার চেষ্টায় কিছু না হলে সেটা আর হবে না ধরে নিয়ে নিত্যনৈমিত্তিক যা চলে আসছে তাই লালন পালন করতে শুরু করি। এভাবে দূরে যাওয়া যায় না। প্রযুক্তি অগ্রসর করা যায় না।
    একটা উদাহরণ দেই। নাপিতেরা এখানে বছরের পর বছর ধরে এক কাঁচি দিয়ে চুল কেটে চলেছেন। কাঁচির সুবিধা আছে, অসুবিধাও আছে। অসুবিধাগুলোকে আমরা আমলে নেই না, তাহলে নতুন ধরণের কাঁচি বানাবার চিন্তা করতে হবে। কে করবে অত কষ্ট। এই পৃথিবীরই আরেক কোণে একটি জাদুঘরে গিয়ে দেখেছিলাম, শত বছরের মাঝে কাঁচির কি পরিমাণ বিবর্তন ঘটে গিয়েছে, আমরা যা ব্যবহার করি তা পরিবর্তন হতে হতে হতে এখন মেশিনে গিয়ে ঠেকেছে, আর এখানে আমরা যেই কাঁচি সেই কাঁচি নিয়ে পরে আছি।
    এই চরিত্রের ভাল দিকও আছে, সুখে থাকা, অল্পে তুষ্ট থাকা। ভালটা রেখে মন্দ দিকটাকে পরিশোধন করে এগিয়ে যাবো, নাকি যা আছে তাই নিয়ে থাকবো এটা আলোচনা বিষয়।

    ছোট মানুষ, একটু বড় কথা বলি, কথাগুলা মায়ের কাছে শেখা, মেয়েকে নিজের মত বড় হতে দেন, তার ওপর প্রত্যাশা চাপিয়ে দিয়েন না, শুধু আপনার পারফেকশনিজমটা তার চরিত্রের মধ্যে লালন করুন, সে নিজেই সব কাজের কাজী হয়ে উঠবে।

    জবাব দিন
  6. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    লিখাটা বোধহয় মিস করে গিয়েছিলাম।
    পড়ে ভাল লাগলো এই জন্য যে আমার একটা পুরনো ধারনার সাথে এই লিখাটার একটা কনসিস্ট্যান্সি পেলাম।
    ধারনাটা কি?
    ধারনাটা হলো, একজন সৎ ও বুদ্ধিমান মানুষ নিজের দুর্বলতর দিকগুলো ডিফেন্ড না করে নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়ন করতে সক্ষম।
    আথবা এভাবেও বলা যায়ঃ
    যিনি নিজের দুর্বলতর দিকগুলো ডিফেন্ড না করে নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়ন করতে সক্ষম - তিনি নিঃসন্দেহে একজন সৎ ও বুদ্ধিমান মানুষ।
    আমার উপলব্ধি হলো: একজন সৎ ও বুদ্ধিমান মানুষ যখন নিজের কোন দুর্বলতর দিকের বিষয়ে ডিফেন্ড না করে ইভালুয়েট করেন, তার পক্ষে পরিস্থিতি আরও সহনীয় করাটা সম্ভব।

    এখানে বিবৃত ঘটনাটা তোমার নিজের হলেও, ঘটনার পিছনের সমস্যাটা যে অনেকেরই সমস্যা, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
    যাঁদের এই সমস্যা আছে, তাঁরা আশাকরি এখান থেকে তা হ্যান্ডেল করার একটা গাইড লাইন পাবে।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      ভাইয়া, এমন একটা মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আসলেই আমরা প্রায় ক্ষেত্রেই নিজের পক্ষে যুক্তি তৈরি করার চেষ্টা করি। এভরিবডি কনস্টিটিউটস দ্যা ফ্যাক্ট একর্ডিং টু হিস/হার ওউন ফ্যাশন। কিন্তু আমি ইদানিং সেল্ফডিফেন্সের চেয়ে সেল্ফক্রিটিসিজমের পথে থাকার চেষ্টা করছি। অন্ততপক্ষে আমি নিজে তো উপলব্ধি করতে পারছি, আমি কি! এটাই বা কম কিসে? তাই না?


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।