একটি ছোটগল্প, অন্যটি চতুর্দশপদি

প্রেম বনাম ফ্লার্ট

অহন আমি জাইনা গেছি, তুমি তারে ঘেন্না করো
ক্যান? ক্যান বা তার কথাগুলান বিষের লাহান
ঠেকে তোমার কানে? বুঝো নাই, তোমারে সে যে বড়
বাইসাছিল ভালো। তোমার জন্য পর্বত-প্রমান
প্রেম সাজাইয়া, হাত মেইললা – বইসা ছিল সে,
অপেক্ষার প্রহর গ্যাছে, আর তার প্রেম বাড়ছে।
কিন্তু তুমি যে তাঁর কাছে প্রেম চাও নাই, সেইটা
সে জানতেও পারে নাই। ক্যামনে জানবো এইটা

যা কখনো শোনে নাই সে, যা কখনো দেখে নাই সে।
মনে পড়ে, ক্যামনে তারে তুমি বাইছা নিয়াছিলা
অগুনতি মানুষের মাঝ থিকা? সেইটা শুধু যে
ছিল ক্ষনিকের সাধ পুরোনের, তা জানাইছিলা
তুমি তারে, একবারও? তোমার চোখে দেখা সেই
প্রেমরে সে ফ্লার্ট বইলা তাই মানতে পারে নাই।

একটি প্রোপিক কাহিনী

বন্ধুরা কে কে অনলাইন আছে, সেদিকে তাকিয়ে ফেবু স্ক্রল করছিল সবুজ।
হঠাৎ মনে হলো খুব হাস্যজ্জল একটা প্রোপিক এসে হাজির নিউজ ফিডে।
কে ওটা, দেখতে তাকালো সে।
কি অবাক কান্ড, মুহুর্তের মধ্যে হাস্যজ্জল মুখটা বিষাদে ভরে উঠলো?
সবুজ তো অবাক, এটা কিভাবে সম্ভব? সে কি তাহলে ভুল দেখছে? হ্যালুসিনেশন?
আবার তাকালো ডানদিকে নিচে, আড়চোখে সেই হাস্যজ্জল চেহারাই দেখতে পাচ্ছে সে। কোনো বিষাদ নেই তাতে। কিন্তু সরাসরি তাকানোর সাথে সাথেই যখন পুরো ছবিটা ফুটে উঠছে। সেই হাসিটা উধাও।
সেখানে ফুটে উঠছে বিষাদের ছাপ।
সবুজ বুঝলো, কি একটা রহস্য আছে ছবিটায়।
আচ্ছা, ছবিটা তো জয়ার, ওকেই জিজ্ঞাসা করবে নাকি সে?
তেমন ভাল আলাপ নেই জয়ার সাথে ওর, তবুও ভাবলো, এই ফাঁকে সামান্য একটু আলাপ করাও হয়ে যাবে!!!
যেই ভাবা, সেই কাজ।
সবুজ ইনবক্স করলো জয়াকে।
“একটা প্রশ্ন আছে ম্যাডাম।
আপনার প্রোপিকের ছবিটা কেমন যেন রহস্যময়, লক্ষ্য করেছেন?
একবার মনে হচ্ছে হাসিখুশি, আবার মনেহচ্ছে কেমন যেন অন্যরকম। এটা কি কোনো কাকতাল, নাকি পোজটা ইচ্ছা করেই এমন দিয়েছেন?
আচ্ছা ঘটনাটা কি এমন, যিনি ছবিটা তুলেছেন এমন একটা তা তিনি করেছেন, যখন আপনার মুখ যতটা হেসেছে, চোখ ততটা হাসে নাই?”
জিজ্ঞাসা করাটাই বাকি ছিল সবুজের, দেখলো অন্যদিক থেকে উত্তর লিখা শুরু হয়ে গেছে।
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে সবুজ।
কিন্তু টুং শব্দের সাথে যে লিখাটা ফুটে ওঠে পর্দায়, সেটার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত ছিল না সে।

সবুজের জন্য জয়ার সোজাসাপটা উত্তর:
“কি ব্যাপার, কোনো কাজ নাই নাকি আপনের?
রাত-বিরাতে আমার ছবি নিয়ে গবেষণায় নামতে হৈলো?
আপনে আবার ইন্ডিয়া ফোর্ডের লাহান বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্ট হৈলেন কবের থন?
আমার চোখ কি বলে আর মুখ কি বলে, এইসব এনালাইসিস বাদ দিয়া নিজের চরকায় তেল দেন মিয়া!!!”

উত্তর পেয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খায় সবুজ।
ভাবে, কি এমন আপত্তিকর কথা বলে ফেলেছে সে?
সে তো আসলেই ছবিটার রহস্য ভেদ করতে চাইছিল। কিন্তু জয়া তার সাথে এমন করলো কেন?
তার একবার ইচ্ছা হলো বলে, “কারো কথায় কি আর এনালাইসিস করা বাদ দেয়া যায়? যা কিছু এনালাইজেবল, কেউ না কেউ তা এনালাইসিস করবেই”।
তবে, বলা হলো না কথাগুলা তার।
তাই তো, কি হবে বলে?
জয়া যা করলো, সেটা হয়তো অন্য কোনো সময়ে হওয়া তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্যই।
নারীদের ছবি পেয়ে অনেকে এমন জঘন্য সব কমেন্ট করে ইনবক্সে বা কমেন্ট্রে, যে, সেজন্য ছবি সংক্রান্ত কোনো কথা শুনলেই এরকম অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে কেউ কেউ।
সবুজ ভাবে, নিজে দোষ না করেও এই ঝাড়িটা সে খেল তাঁর গোত্রীয় অন্য কোনো পুরুষের অপরাধে।
কী আর করার?

পুনশ্চ: জয়ার সহযোগিতা ছাড়াই ছবিটার রহস্য কিন্তু সে ইতোমধ্যে ভেদ করে ফেলেছে।
যা ঘটেছে, তা হয়েছে আলো আধারের খেলায়।
মুখে আর চোখে আলোর তারতম্যের কারনে হঠাৎ দেখলে বা সরাসরি না তাকিয়ে দেখলে, উজ্জ্বল মুখটা দৃষ্টি কেড়ে নেয়। আধাঁরে থাকা চোখের উপরে দৃষ্টি পৌছানো সম্ভব হয় না।
কিন্তু সরাসরি তাকালে ছায়ায় থাকার পরেও নিষ্পলক ভাবলেসহীন চোখগুলো সকল মনযোগ কেড়ে নেয় শুরুতেই। আর তাই উজ্জ্বল মুখে লুকিয়ে থাকা হাসি হাসি ভাবটা তখন হারিয়ে যায় চোখের গভীরতায়।
আগে যেই হাস্যজ্জল জয়াকে দেখা যাচ্ছিল, সরাসরি তাকানোয় মুহুর্তের মধ্যে সে হয়ে পড়ে বিষাদাক্রান্ত এক নারী।
দ্যাভিঞ্চির মোনালিসার সাথে কি এক একাত্বতা খুজে পায় সবুজ জয়ার প্রোপিক হওয়া ছবিটাতে। কিন্তু বলা হয় না তা, সবুজের………

তাই তো, তার এই রহস্যভেদের কথা সে আর কাকেই বা বলবে? কিভাবেই বা বলবে? কি জন্যই বা বলবে?

৪,৭৭৩ বার দেখা হয়েছে

১টি মন্তব্য “একটি ছোটগল্প, অন্যটি চতুর্দশপদি”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    প্রেম বনাম ফ্লার্ট এ কয়েক জায়গায় মুখের ভাষার সাথে কলমের ভাষা মিশে গেছে। যেমনঃ কিন্তু তুমি যে তাঁর কাছে প্রেম চাও নাই, সেইটা সে জানতেও পারে নাই

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।