একটি স্ট্যাটাস থেকে জন্ম নেয়া কবিতার কাহিনী…

আগে তো আবৃত্তিটা শুনুন, তারপরেই না হয় পিছনের গল্পটা শোনাবো…

এবার তাহলে এই আবৃত্তির পিছনের গল্পটা শুনাই…

এক স্নেহাষ্পদ ফেবু বন্ধুর অনুগল্পধর্মি একটা অসাধারন স্ট্যাটাস দেখলাম দিন দুই আগে।
দ্বিতীয় বার মনে মনে তা পড়ার সময় কেমন যেন একটা ছন্দ ছন্দ ম ম গন্ধ পাচ্ছিলাম। আর সেই গন্ধের টানেই সশব্দে তা পড়া শুরু করলাম, তৃতীয়বারে এসে।

এবার বুঝলাম, “আরে এ দেখি একখানা আবৃত্তি-উপযোগী কবিতার খসড়া………”

স্ট্যাটাসটা কপি করে ওয়ার্ডে পেস্ট করে কাব্যাকারে এডিট করা শুরু করলাম।
মোটামুটি ৯০% বা তারও বেশী মূল টেক্সট রেখে কাব্যাকারে যা দাড়ালো, সেটা এই:

=========================
বাবা মায়ের ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্কের
এক শীতল ভয় নিয়ে বেড়ে উঠা তার ……
বাবা কিংবা মা কারও ছায়া না পেয়েই
বড় হয়ে উঠা তার ……
অন্ধকারকে খুব ভয় পেয়ে পেয়ে
একা একাই বড় হওয়া তার ……
গায়ে ভীষণ জ্বর নিয়েও
একাকী রুমে বেড়ে উঠা তার ……
মন খারাপের সেই দিনগুলোতে
সেধে সেধে খাওয়ানোর কেউ নেই বলেই
না খেয়ে খেয়ে বেড়ে উঠা তার …
বাথরুমে তেলাপোকা বা মাকড়সার উপস্থিতি টের পেয়ে
সারারাত কাঁদতে কাঁদতেই বড় হওয়া তার ……
ভীষণ বজ্রপাতের শব্দে তীব্র আতংকে
নিজের রুমে কাঁপতে কাঁপতে বেড়ে উঠা তার ……

ছোটবেলার অপ্রাপ্তি থেকেই হোক
বা শৈশবের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায়ই হোক …
সেই বাচ্চা মেয়েটা কোনদিনই যেন
ঠিক বড় হয়ে উঠেনি আর ……
অন্ধকার…তেলাপোকা… মাকরসা … বজ্রপাত …
কোন ভয়ই এতটুকু কমেনি তার !!!!!!

সারাজীবন ধরেই তার কেবলই খুঁজে ফেরা
একটা নিরাপদ মানসিক আশ্রয়ের ……
অনেক পথ হেঁটে এসে ……
জীবনের অনেক মোড় পেরিয়ে এসে …
এক অচেনা তীরে বুঝিবা
সেই আশ্রয় টুকু খুঁজে পাওয়া তার …

ডুবতে থাকা হাত দুটোকে
টেনে হিঁচড়ে গভীর অতলে হারিয়ে যাওয়া থেকে
এক ঝটকায় কেউ বুঝি তাকে
উঠিয়ে নিলো এবার –

তার নিজের নৌকোয় ……

তাতে সেই নৌকা নিজেই
কতটুকু টলোমলো হয়ে গেল, কে জানে?
কিন্তু সে যেন খুঁজে পেল
তার অনন্ত নিশ্চিন্ত শেষ আশ্রয় …

এরপর,
কেবল-ই নৌকার এক প্রান্তে
চুপটি করে, লক্ষ্মী হয়ে বসে থাকা …
আর অন্য প্রান্তে বৈঠা বেয়ে
তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া ……

নৌকোর গলুইয়ে বসে
কি এক গান শুনতে শুনতে
মেয়েটার মনে পড়ে
তাকে মরতে মরতে নতুন করে
বাঁচতে শেখানো মানুষটাকে …
তাকে মরতে না দেয়া মানুষটাকে ……
তাকে জীবন এনে দেয়া মানুষটাকে……

বজ্রপাতের তীব্র শব্দে আতঙ্কিত হয়ে
এখন সে চোখ বন্ধ করে উচ্চারণ করে ফেলে
তাকে বাঁচিয়ে রাখা সেই মানুষটার নাম ……
অন্য কিছু নয় …
অন্য কেউ নয়।
=======================

এরপর সেটা রেকর্ড করে সাউন্ডক্লাউডে আপলোড করে লিংক ও কবিতাসহ বন্ধুটিকে জানালাম, কি করেছি তাঁর স্ট্যাটাসের হাল…

মনে হলো না তিনি অখুশি হয়েছেন।

আর তাই অনুমতি চাইলাম এই যৌথ প্রযোজনাটি “অডিও ব্লগাকারে” সিসিবিতে দেওয়ার জন্য।

ফেবু বন্ধুটির নাম উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকছি কারন তাঁর মূল স্ট্যাটাসটি পাবলিক নয়, রেসট্রিকটেড।
তবে উনি যদি নিজে থেকে কখনো পরিচয় দেন, তখনই না হয় জানা যাবে তাঁকে। ততক্ষন থাকি না অপেক্ষায় 🙂 🙂 🙂

আর আপনারা যারা শুনছেন বা পড়ছেন, বুঝতেই পারছেন – এটা এইভাবে প্রকাশের অনুমতি পেয়েছি বলেই তা শুনতে বা পড়তে পারছেন
🙂 🙂 🙂

এবার বলুন তো, কেমন লাগলো এই যৌথ প্রযোজনাটি???

৩,১০৮ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “একটি স্ট্যাটাস থেকে জন্ম নেয়া কবিতার কাহিনী…”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :clap: :clap: :clap: :clap:

    অসাধারণ বলবো এক কথায়, ভাইয়া! যিনি এমন চমৎকার লিখতে পারেন তাঁর থেকে ভবিষ্যতে আরো লেখা প্রত্যাশা করতেই পারি আমরা। তিনি যদি এক্স ক্যাডেট হয়ে থাকেন তবে বলবো, চলে আসুন আমাদের আড্ডায়। ক্যান্ট ওয়েট টু সি ইউ ইন সিসিবি! 😀

    লেখা বরাবরের মতোই ভাল লেগেছে। মাহবুব ভাইয়ার মতো বলতেই হবে বিষয় বৈচিত্র্যে তোমার তুলনা তুমিই! আমি দুষ্টু লোক তাই প্রশংসার সাথে একটু গিট্টু লাগিয়ে বলি, পাঠের ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিকের অভাব বোধ করেছি। তুমি তো জানোই ভাইয়া, আমার আবদারের শেষ নেই। আরো অডিও ব্লগ চাই তোমার থেকে।

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      আশেপাশের চেনাশোনা কত কত মানুষ যে কত কত অদ্ভুত প্রতিকুলতায় বেড়ে ওঠে, জানা হয়ে ওঠে না।
      কখনো জানতে পারলে আতকে ওঠা ছাড়া করার কিছু থাকে না।
      আসলেই কিন্তু, একটা মেকি স্বাভাবিকতা ধরে রাখতে আমাদের সারাক্ষন সেকি প্রানান্তকর চেষ্টা???


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।