আরেকখানা না-গদ্য, না-পদ্য: ধুমকেতু নারীর জন্য পংক্তিমালা

[এইটা একটা “গদ্য-কবিতা” নাকি “কাব্যধর্মি-গদ্য” তা নিয়ে আমার নিজেরই সংশয় আছে। তবুও স্ট্রাকচারটা যেহেতু কবিতার, তাই কবিতা হিসাবেই ক্যাটাগরাইজ করলাম। নীচে একটি ডিসক্লেইমার আছে। দেখতে ভুলবেন না]

ধুমকেতু নারীর জন্য পংক্তিমালা

প্রতিরাতে ঘুমুতে যাবার আগে
আমার শেষ কাজটি ছিল,
কিছু একটা করে বা লিখে
তা তোমার ইনবক্সে পাঠানো।

কখনো লিখতাম দু’ছত্র অনুভূতি
কখনোবা পড়তাম দু লাইন কবিতা
কখনো আবার নিদ্রা-পূর্ব সেলফি –
এর সবই থাকতো প্রেরন-তালিকায়।

তুমিও জানতে, এর সবই ছিল
আমার প্রেমের নৈবেদ্য।
আর তাই ঘুম থেকে উঠে
প্রথমেই যা করাতে তুমি তা ছিল –
ঐ পুজার অর্ঘ্য গ্রহন।
কি দারুন বিস্বস্ততায়ই না
দিনের পর দিন আমায় ধন্য করে
গ্রহন করেছো ঐসব আপাত তুচ্ছ
অথচ মর্মস্পর্শি যাবতিয় অর্ঘ্য
এবং নৈবেদ্য সমুহ।

মনেপরে, একরাতে পাঠিয়ে রেখেছিলাম
পনেরো সেকেন্ডের একটা ভিডিও ক্লিপ?

সেদিন ঘুম ভেঙ্গে উঠে
অন্যদিনের মতই হয়তোবা
ঘুমঘুম আধবোজা চোখে
সেলফোনের পর্দায় চোখ রেখে
রোজকার মতো খুজছিলে
দু’ছত্র লিখা কিংবা একটি গুডনাইট সেলফি-

ইনবক্সে যে ভিডিও ক্লিপ পাঠানো যায়
আমার মতো তোমারো জানা ছিল না তা
তাই, যা গিয়ে পৌছুলো তার মর্ম উদ্ধারে
কেটে গেল আরও কটা মুহুর্ত।
প্রথম দর্শনে দেখে উদ্ভটদর্শন-ঝাপসা
এক সেলফি-প্রচেষ্টা বলে ভুল হচ্ছিলো যা,
কেন্দ্রে থাকা ও হঠাৎ খুজে পাওয়া
প্লে-বোতাম চাপতেই প্রান পেল তা!

অবাক বিস্ময়ে তুমি দেখলে
ঐ ভোরে সন্তপর্নে
ভার্চুয়াল আমি পৌছে গেছি
কেবল তোমার মশারীর ভিতরেই না,
একেবারে নাকের ডগায়,
ঠোটের সামনে!
আর কি কি যেন
বলে যাচ্ছি একে একে –
যার আধেক কানে ঢুকছে
আর আধেক পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছে
সংকোচে-সংশয়ে-বিমুগ্ধতায়-বিস্ময়ে।
তবে শেষ দৃশ্যটা ছুঁয়ে গেল তোমার অধর
কারন ওখানে যে একটা সচল
“গুড মর্নিং কিস” আঁকা ছিল।

কি যে হলো আজ তোমার?
চুমুটা যেন পরিষ্কার অনুভব করলে তুমি
আর মুহুর্তেই রক্তিম হয়ে উঠলো তোমার গাল।
চুম্বনোত্তর আদুরে সেই ভাবটা এসে ভর করলো
তোমার গোটা অবয়বে।
একমুহুর্ত কি যেন ভেবে,
একটা সেলফি নিলে, সেই স্বর্গিয় অনুভবের।
আর পাঠিয়ে দিলে তা তক্ষুনি
আমার কাছে।

আমি তখন কাজে বেরিয়েছি
স্টিয়ারিং-এ হাত,
ছুটছি ট্র্যাফিক জ্যাম ঠেলে-
হঠাৎ দেখি বুকের কাছে সুড়সুড়ি দিয়ে
সেলফোন জানান দিচ্ছে “বার্তা আছে, বার্তা!”
চলতে চলতেই একপলক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করি-
“কি এমন জরুরী বার্তা?”
তবে হৃদপিন্ডটা লাফিয়ে গলার ভিতর
ঢুকে পড়ার জন্য, ঐ এক পলকই ছিল যথেষ্ট……

তাড়াতাড়ি রাস্তার ধারে গাড়ি থামাই
নিরাপদ জায়গা খুজে।
লাফাতে লাফাতে হৃদপিন্ড যখন
মুখের ভিতরে ঢুকে পড়ে, তখন
আর যা ই করা যাক না কেন,
গাড়ি চালানো তো আর সম্ভব নয়……

স্থির হয়ে, ভাল করে চেয়ে দেখি
তোমার পাঠানো সেলফিটার দিকে।
চুম্বনোত্তর তৃপ্ত আদুরে চাহনি
সমস্ত অবয়বে। ভাবি,
“এ কি করে সম্ভব?”

*************

দিন কাটে, রাত কাটে,
একদিন যেভাবে উল্কার মত এসে
উপস্থিত হয়েছিলে এই মনে, হৃদয়ে,
আরেকদিন ধুমকেতুর মত কিছু না বলে
উধাও হয়ে গেলে, জানি না কোন অজানার পানে।

যখন এসেছিলে, জানতে চাই নাই
“কেন এলে?” – নিজে থেকেই একদিন বলেছিলে তা।
চলে গেছো, এখনও তাই জানতে চাই না,
“কেন চলে গেলে?”
যদি মনেহয় জানাটা জরুরী
এবং তা বলবার মত কিছু,
একদিন হয়তো তা বলবে নিজে থেকেই।
অপেক্ষায় আছি সেই দিনটারই।

তবে, চলে গেলেও
ঐ একটা অভ্যাস তুমি
গড়ে রেখে গিয়েছো আমার জন্য:
তুমি নাই, তবুও, এখনো প্রতিটি রাতে
ঘুমুতে যাবার আগে
কিছু একটা আমার করতেই হয়
তোমাকে ভেবে ভেবে। হতে পারে তা:
দু’ছত্র কথা অথবা দু’পংক্তি পদ্য –
অথবা কোন পাঠ অথবা গান –
কখনোবা নাতিদির্ঘ ভিডিও ক্লিপ –

প্রতিরাতে গড়া এইসব স্মরনিকা
তুলে দেই এমন এক জাল-এ,
চাইলেই দেখতে পারো যা তুমি।

তুমি কি দেখো তার কোন কিছু?
আমি জানি না।
আগের মত কোন অনুভূতি, কোন সুখ-স্মৃতি,
ফিরে কি আসে তোমার মনে?
আমি তাও জানি না।

আমি শুধু জানি
তোমায় ভালবেসে বেসে এভাবেই
স্মরনিকা পাঠিয়ে আর
দূরে দূরে অপেক্ষায় থেকে কেটে যাবে
আমার বাকি দিনগুলি –
হে, ধুমকেতু নারী……

[ডিসক্লেইমার : ঘটনাটা কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে শোনা। সত্য-মিথ্যা জানি না। কিন্তু এটা নিয়ে লিখালিখি চলে বলেই তা লিখলাম এবং উত্তম পুরুষে। উত্তম পুরুষে লিখা দেখে কেউ আবার এটা আমার নিজের ঘটনা ভেবে বসলে তা হবে খুবই বিব্রতকর একটা অভিজ্ঞতা। আশা করছি এটাকে একটা ভিন্নধর্মি সাহিত্য প্রয়াস বলেই ভাববেন পাঠকগন।]

১,৫১০ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “আরেকখানা না-গদ্য, না-পদ্য: ধুমকেতু নারীর জন্য পংক্তিমালা”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    ডিসক্ল্যাইমারটি দেবার কোনই কারণ দেখিনা, ভাইয়া! উত্তমপুরুষে লেখক কিছু লিখলেই সেটি যে তার ব্যক্তিজীবনের গল্প হবে তার কোন মানে নেই। আর যদি সেটি হয়ও তবেও তো জাত গেল জাত গেল রবের পরোয়া কে করে বলো! পাঠকের কল্পনাশক্তিকে উস্কে দিতে তো লেখকই পারেন, তাইনা?

    ধুমকেতু নারীর গল্প নামটি কিন্তু চমৎকার লাগলো। লেখা বরাবরের মতোই। লিখতে থাকো দু'হাত খুলে, ভাইয়া!

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      আমি তো জানি, না দিলেও চলে।
      তবুও দিলাম মূলতঃ গৃহযুদ্ধের সম্ভবনা কমাতেই।
      ভাবলাম, ওটা দেখে বেগম সাহেবার মেজাজটা শুরুতেই অন্ততঃ বিগড়াবে না......
      😀 😀 😀 😀 😀 😀

      শেষে গিয়ে যদি বিগড়ায় তো বিগড়াক, কোন সমস্যা নাই...... (সম্পাদিত)


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    বি শা ল কবিতা!
    কিন্তু পড়তে দারুণ লাগল! :clap:

    ভাই, একটি ব্যাপার- ''মুহুর্তে ব্লাশ করে রক্তিম হয়ে উঠলে''
    এখানে 'ব্লাশ করে' পড়তে গিয়ে কেমন জানি থমকে যাচ্ছি...মনে হচ্ছে না থাকলেই ভাল হত! 'মুহুর্তেই রক্তিম হয়ে উঠলে'ই তো বুঝিয়ে দিত! (কিংবা ''মুহুর্তেই রক্তিম হয়ে গেল তোমার গাল!'')

    বিঃ দ্রঃ কয়েকটি টাইপো আছে। সময় পেলে ঠিক করে দিয়েন... 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. সাইদুল (৭৬-৮২)

    আমি তখন কাজে বেরিয়েছি
    স্টিয়ারিং-এ হাত,
    ছুটছি ট্র্যাফিক জ্যাম ঠেলে-
    হঠাৎ দেখি বুকের কাছে সুড়সুড়ি দিয়ে
    সেলফোন জানান দিচ্ছে “বার্তা আছে, বার্তা!”

    কী চমৎকার! তোমার এই কবিতার পিঠে আমার একটি কবিতা জুড়ে দেই,

    তোমার দিকে বাড়িয়ে দিলাম হাত
    বললে তুমি, দূরে দূরেই থাকো
    এই প্রবাসে একলা জেগে থাকি
    কখন তুমি আবার কাছে ডাকো


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  4. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    যেটা কোট করবো মনস্থির করলাম পড়তে পড়তে, এসে দেখি ঠিক তা ই তুলে এনেছেন সাইদুল ভাই ।

    আমি তখন কাজে বেরিয়েছি
    স্টিয়ারিং-এ হাত,
    ছুটছি ট্র্যাফিক জ্যাম ঠেলে-
    হঠাৎ দেখি বুকের কাছে সুড়সুড়ি দিয়ে
    সেলফোন জানান দিচ্ছে “বার্তা আছে, বার্তা!”

    এ তো কবিতা নয়, কথোপকথনের চিত্রকল্প।
    যেনো -
    বুকের গোপন ক্যানভাসে
    রংধনুর সব রঙ ভাসে
    কথার পিঠে কথার বুনন
    হৃদপুকুরে গভীর খণন !

    জবাব দিন
  5. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    একেবারে খাস নাগরিক পদ্য। তাতে সেলফি/ফেসবুক/ বার্তা এবং আরো নানান অনুষঙ্গ।
    ডিসক্লেইমার এর প্রয়োজন ছিলনা -- সাবিনা আপার মতই বলবো আমি।
    বাস্তবের সাথে যোগাযোগ বা মিল থাক আর না থাক -- শিল্পে উত্তীর্ণ হওয়াটাই বিবেচ্য ।
    আমার মনে হয়েছে -- আরেকটু নির্মেদ হলে ভাল হত।
    ধূমকেতুর কবলে পড়ে আপনার বন্ধুটির বেশ সঙ্গিন অবস্থা দেখছি। 😀

    বানান ঃ
    বেশ কিছু টাইপো নজরে এলো।
    'নৈবেদ্য' তে 'রেফ' নেই

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      "নাগরিক পদ্য" - নামটা পছন্দ হয়েছে।
      "নৈবেদ্য" বানান ঠিক করে দিয়েছি।
      এসব করতে গিয়ে আরও কিছু রিপেয়ার করলাম। কতটা নির্মেদ হলো, বুঝতে পারছি না...
      দেখি পড়তে কেমন লাগে......

      "ধূমকেতুর কবলে পড়ে আপনার বন্ধুটির বেশ সঙ্গিন অবস্থা দেখছি" - সেটা তো ভালই বুঝতে পারছি...
      আমিও 😀 😀 😀 😀 😀


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  6. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    দীর্ঘ কবিতা আর পাঠকদের মন্তব্যগুলো খুব ভালো লাগলো। কবিতা পড়ার সময় কিছু কিছু জায়গা একটু বেশীই ভালো লেগেছিলো।
    উপভোগ্য কবিতা ও বিদগ্ধ পাঠকদের আলোচনা!

    জবাব দিন
  7. কাব্যিক গদ্য বা নাগরিক কাব্য, যা- ই বলা হোক না কেনো, এটা যে মন ছুঁয়ে গেছে, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।পারভেজ, দোস্ত, চালিয়ে যা।
    লুৎফুল, তুই তো গুরু।
    আর সাইদুল ভাই এমনিতেই আনপ্যারালাল।

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      বড় বড় কথা রাখ। জলদি জয়েন কর। আর লিখা লিখি শুরু কর।
      তোর কাব্যের নমুনা কি দেবো?

      "এমন বৃষ্টি ভোরে
      কাব্য ঝরে পড়ে
      মনের অজান্তে
      যদি থাকো সাথে
      আলতো চিবুক ছুঁয়ে
      শীতল কোমল হাতে
      আরেকটি তখন
      গ্রীবায় খেলা করে
      চুম্বনে ব্যস্ত রেখে"

      মামুন, এইটা কার লিখা? তোর তো, তাই না?
      শুধু ডাক্তারি করলেই হবে? এই কবিতা গুলো জন্মাতে পেরে যে মনঃকষ্টে আছে, তাঁর খিয়াল ও তো রাখা লাগবে, নাকি??


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।