বাবাদিবস নিয়ে আজ বিডি নিউজ২৪-এ প্রকাশিত আমার অপ-এড

অনেকদিন পর বিডিনিউজ২৪-এর জন্য লিখলাম। এখানকার পাঠকদের জন্যেও তুলে দিচ্ছি। দেখুন দেখি কেমন পান… 🙂

অনানুষ্ঠানিক দিবস পালন নিয়ে কথকতা

১.

বিতর্ক করা খুব ভালো, এমনকি অকারণ বিতর্কও। এটা আরও ভালোভাবে টের পাই যখনই কোনো দিবস পালিত হয়। একদঙ্গল মানুষকে খড়গ হাতে নেমে পড়তে দেখি সেই আচারের বিরুদ্ধাচরণে। এই যেমন ২১ জুন পালিত হয় বাবা দিবস হিসেবে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন দিনে এটি পালন করা হয়। একটুখানি গুগল করলেই যে কেউ তা জানতে পারবেন। অথচ দেখবেন এমন একটা নির্দোষ দিন নিয়েও এখানে আমরা কী দারুণ বিতর্কে (মতান্তরে বাদানুবাদে) জড়িয়ে পড়ছি।

এই দেখা-বোঝা আজকের নয়, বহুদিন থেকেই। সেই ১৯৭৬এ ক্লাস সিক্সে পড়তে প্রথম শুনলাম, ‘এপ্রিল ফুলস ডে’ নাকি অনৈসলামিক। এটা পালন করা হারাম। গ্রানাডার মসজিদে মুসলমানদের পুড়িয়ে মারা উদযাপন করতেই এ দিবসের উদ্ভাবন। ওটা ঘটেছিল কোনো এক পয়লা এপ্রিলে।

তখন ইন্টারনেট ছিল না। তাই এই দাবি ভেরিফাই করার সুযোগও পাইনি। এখন বুঝি, কী অসদুদ্দেশ্যে সে সময় ঐ মিথ্যা চালু করে শিশু-কিশোরদের সৃজনশীল মন ও মননের উপর সিলগালা করার প্রচেষ্টা হয়েছিল। ঠিত তখনই ছাত্র সংঘ থেকে ছাত্র শিবিরে পুনরুত্থানের আগে, দিশারী থেকে ফুলকুড়ি সংগঠন গড়ে তুলে শিশু-কিশোরদের মনে প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল জামায়াতে ইসলামী নামের দলটি। মগজ ধোলাইএর প্রথম পদক্ষেপ হল, চিরচেনা কিছু একটার চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ করা। আর তা করতে দরকার ছিল নতুন কোনো ধারণার আমদানি– তা সত্য হোক কী মিথ্যা– তার প্রচলন। আমাদের সেই সময়ের অতিপ্রিয় উপলক্ষ, ‘এপ্রিল ফুলস ডে’ নিয়ে মিথ্যা প্রচার তেমন প্রচেষ্টার অংশ মাত্র।

‘এপ্রিল ফুলস ডে’ নাকি অনৈসলামিক, এটা পালন করা হারাম

কেন দিবসটি এত প্রিয় ছিল আমাদের? কারণ এই একটা দিনেই সবচেয়ে কঠিন মুখের মানুষ বা শিক্ষকের সঙ্গেও শিশু বা ছাত্রছাত্রীরা যে কোনো বুদ্ধিদীপ্ত প্র্যাকটিকাল জোক করতে পারত। তাতে উনি অবাক হন বা রেগে যান, কিছু আসে যায় না। শেষে বলে দিলেই হল, স্যার, আজ যেন কী দিবস্গহসবহ… মুহূর্তের মধ্যে পুরো ক্লাসের চেহারা বদলে যেত তাতে। ঐ রাগী স্যারসহ পুরো ক্লাস হেসে উঠত।

ক্লাস টু থেকে ফাইভ পর্যন্ত কতই-না উৎসাহ আর ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে আমরা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে ঐ এপ্রিল ফুলস ডে পালন করে এসেছি। তার মধ্যে ছিল সহপাঠীদের বই বা খাতার মলাট উলটে দেওয়া, হোমওয়ার্ক খাতায় ‘এপ্রিল ফুল’ লিখে রাখা, টিফিন বাক্স বদলে দেওয়া ইত্যাদি।

তবে সবচেয়ে ভালো জিনিস যেটা ছিল তা হল, শিক্ষকগণ আমাদের এপ্রিল ফুল প্রচেষ্টাগুলো শুনতেন, এরপর বুঝিয়ে বলতেন ওগুলো থেকে কোনটা করা ঠিক হয়নি কোনটা বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় ছিল সে সব। পুরো ব্যাপারটা বুদ্ধিবৃত্তিচর্চার পাশাপাশি ন্যায়-অন্যায়বোধ জাগাতেও ভূমিকা রাখত।

বিপত্তি বাঁধল ক্লাস সিক্সে ধানমণ্ডি বয়েজ স্কুলে ভর্তি হবার পরপরই। গ্রানাডা হত্যার প্রতিবাদে এখানে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হল ঐ দিবস পালন। এখন বুঝি, এর আরেকটি কারণ ছিল, ঐ স্কুলে জামায়াত ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল শিক্ষকদের সংখ্যাধিক্য। সবাই মিলে এমন ভীতিকর একটা পরিবেশ বেশ সাফল্যের সঙ্গে তৈরি করে ফেলা হল যে, এপ্রিল ফুলস ডে পালন আর ক্রুসেডে যোগদান করে ইসলাম ধ্বংস করা প্রায় সমার্থক হয়ে উঠল।

এটা তারা এতটাই সফলভাবে শিশুমনে, অস্থি ও মজ্জায় ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিল যে, বছর কয়েক আগে যখন জানলাম, গ্রানাডা হত্যার সঙ্গে এপ্রিল ফুলস ডের কোনো সম্পর্ক নেই– বরং এর রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ইতিহাস– সেটা বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল।

শুরুতে যা বলছিলাম, মিথ্যা বিতর্কও ভালো কেন? এপ্রিল ফুলস ডে নিয়ে যারা মিথ্যা তর্কে নেমেছিল, কয়েক দশক পরে হলেও তাদের উদ্দেশ্যের সততা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। আবার এপ্রিল ফুলস ডে তার স্বমহিমায় আসবে কী আসবে না, সেটা ঐ ডে পালনের প্রয়োজনীয়তা বলে দেবে। কিন্তু যারা চালবাজি করতে গিয়ে নির্দোষ অনেক বিষয় প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে, তাদের কোনো কথাই যে আর বিনা প্রশ্নে ছাড়া যাবে না, সেটা নিশ্চিত করা গেছে। আমার ধারণা, বড় একটা জনগোষ্ঠী আজকাল জামায়াত-শিবিরের প্রচারণাগুলোয় খুব গুরুত্ব দেন না। তাদের এই ক্রেডিবিলিটি হারানো তাদের ঐসব ছোট ছোট মিথ্যাচার স্পন্সর করার কারণেই।

২.

একটু আগে বললাম, দিবস পালন করার সঙ্গে সেটা পালনের প্রয়োজনীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় যে, কোনো একটি দিবস পালন করতে গেলে সেখানে নানা ফ্যাক্টর কাজ করে। শুনেছি, কোনো কোনো দেশে ‘হুইস্কি দিবস’, ‘হ্যামবার্গার দিবস’ পালন করা হয়। আমাদের দেশে এগুলো পালন অবান্তর এখনও। তবে যারা এসব দিবসও পালন করেন, তাদের জন্য তা বাস্তব বলেই তারা তা করছেন বলে মনে করি।

এখান থেকে দিবস পালনের একটা ফ্যাক্টর কিন্তু আমরা পেয়ে গেলাম। পালনকারীদের জন্য পালনীয় দিবসটির বাস্তব অস্তিত্ব থাকা চাই। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমানে পালন করা দিবসগুলি ছাড়াও বন্ধু দিবস, শিক্ষক দিবসেরও বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু বাস্তব অস্তিত্ব থাকাটাই যে পালনের একমাত্র অনুষঙ্গ নয়, তার প্রমাণ হল পালনের তালিকা থেকে এই দুটি দিবসের উপস্থিতি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাওয়া। কী তাহলে সেই ফ্যাক্টরগুলি? আমার ধারণা, সর্বজনীনতা ও স্বপ্রণোদিত ফান্ডিংএর সম্ভাব্যতা।

সর্বজনীনতা এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, এতে ইন্টারেস্ট গ্রুপটা বড় হয়ে যায়। বিরাট একটা ইন্টারেস্ট গ্রুপের ছোট ছোট অংশ মিলেও বড়সড় অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে। শিক্ষক দিবস এ কারণই মার খেয়ে গেছে। বর্তমানের শিক্ষার্থীরা ছাড়া খুব বেশি মানুষকে এতে সম্পৃক্ত করা যায়নি। সে দিক থেকে দেখলে বন্ধু দিবসটির টিকে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনেক বেশি সর্বজনীন হলেও এটা টেকেনি অর্থায়নে কর্পোরেটদের অনীহার কারণে।

৩.

যে কোনো দিবস উদযাপনের সঙ্গেই বাড়তি কিছু ব্যয়ভার বহনের ব্যাপার জড়িয়ে যায়। এটা করতে কে কতটা স্বতঃস্ফুর্তভাবে উৎসাহী, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই মুহূর্তে জনপ্রিয় ও টিকে থাকা আনঅফিসিয়াল দিবসগুলি, অর্থাৎ ভালোবাসা দিবস, মা দিবস, বাবা দিবস কী কারণে টিকে গেছে সেটা আশা করি পাঠক অনুমান করতে পারছেন।

তবে এখনও যে এই দিবসগুলি পালনের সময় বিতর্কের চেষ্টা চলে না, তা নয়। এই বিতর্কের কিছু কিছু এমন: ১) এটা আমাদের কালচার কিনা; ২) এটা ধর্মীয়ভাবে স্বীকৃত কিনা; ৩) মা বাবা কি একদিনের যে একদিন তা পালন করলাম, আর বাকি তিনশ চৌষট্টি দিন ভুলে থাকলাম?

দিবস পালন নিয়ে কালচার টানাটানি অনর্থক। নাম উল্লেখ না করেও বলা যায়, এই মুহূর্তে শুধু অনানুষ্ঠানিক নয়, আনুষ্ঠানিকভাবে পালন হওয়া অনেক দিবসই ভিন্ন কালচারের। সেগুলো পালন করার কারণ কালচার নয়, বরং কালচারাল ডাইভার্সিটি অর্জন। আর কালচারের উৎকর্ষতায় রক্ষণশীলতা নয় বরং ডাইভার্সিটি বেশি ভূমিকা রাখে।

দিবস পালনের ধর্মীয় দিক নিয়ে, এমনকি একুশে ফেব্রুয়ারি পালন নিয়ে বিতর্ক তো সেই অ্যাত্তোটুকুন বয়স থেকেই দেখে আসছি। কই, তাতে খালি পায়ে প্রভাত ফেরি করা থামেনি; বন্ধ হয়নি শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া। বরং উৎসাহের সঙ্গে দিবসটি পালনের প্রথা জেঁকে বসেছে। আর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পর এখন তো একুশে ফ্রেব্রুয়ারি গোটা বিশ্বের জন্য অবশ্যপালনীয় একটি দিবস।

তাতে খালি পায়ে প্রভাত ফেরি করা থামেনি; বন্ধ হয়নি শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া

বছরে একটা দিন ঘটা করে দিবস পালনের সঙ্গে প্রতিদিনের সম্পর্কের কি কোনো সংঘর্ষ রয়েছে? তা যদি না থাকে, এই অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন আসছে কেন? বছরে একদিন ঘটা করে বাবা বা মা বা অন্য কোনো প্রিয়জনের কাছে গিয়ে তার জন্য বিশেষ কিছু একটা করা উভয়ের জন্যই আনন্দের। এর ফলে বিষয়টি এমন দাঁড়ায় না যে, সারা বছর আর কোনো দায়িত্ব পালন থেকে আমরা দূরে থাকি। বরং বছরে একদিন একটি বিশেষ দিবস ঘটা করে পালনের সময় দেওয়া বাড়তি ইফোর্টের কারণে অনেক নতুন নতুন আগ্রহ-জাগানিয়া বিষয় যে সামনে এসে পড়ে, সেটা আজকাল খুবই আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করি।

৪.

শুধু মানুষ নয়, যে কোনো প্রাণির প্রজাতিটি উন্নততর হয়ে টিকে থাকবে কি না সেটা নির্ভর করে ঐ প্রজাতির নারীদের আগ্রহের উপর। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক নিম্নশ্রেণির নারী জাতীয় প্রাণি জেনেটিকভাবে দুর্বল পুরুষ সঙ্গীদের চিনতে পেরে তাদের প্রত্যাখান করে। প্রজাতির অধঃপতন ঠেকাতেই তারা কাজটি করে। এর অর্থ হল, একটি প্রজাতি টিকবে না কী নিঃশেষ হয়ে যাবে, সেটা ঐ প্রজাতির নারীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে।

নারী দিবস পালন, তাই বলা যায়, কেবলই নারীর অধিকার আদায়ের জন্য নয়, বরং মানবপ্রজাতিকে উন্নততর করা বা রক্ষা করতে নারীজাতির মহান দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা তর্পণের জন্যও।

এ তো গেল দলগতভাবে দিবস পালনের সময় জানা আগ্রহের বিষয়গুলো। এবার শুনি ব্যক্তিগত উদযাপনে কিছু আগ্রহ-জাগানিয়া কথা। গেল মা দিবসে আমার একসময়কার ছাত্রী সাবিহা রহমান জিতুর একটি লেখা খুব ভাবাল। সে মা দিবস পালনের যথার্থতার ব্যাখ্যায় যা লিখেছে তা মোটামুটি এই:

যে কোনো প্রাণির প্রজাতিটি উন্নততর হয়ে টিকে থাকবে কি না সেটা নির্ভর করে ঐ প্রজাতির নারীদের আগ্রহের উপর

মা দিবস মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রদর্শনের দিবস নয়। এই দিবসটি কেবলই মায়েদের জন্য। নয় মাস সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে; নিজের শরীর থেকে তার সন্তানের খাদ্যপুষ্টি নিশ্চিত করে; নিজের বিন্দু বিন্দু রক্ত, ক্যালসিয়াম, পুষ্টি দিয়ে একটা পরিপূর্ণ হৃৎপিণ্ডধারী মানবসন্তান ভুমিষ্ঠ করেন মা। তারপরও সন্তানের স্বাস্থ্য-সুরক্ষার কথা ভাবেন; ঘুমপাড়ানি গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ান; টিকা দিয়ে নিয়ে এসে জ্বর আসার ভয়ে বিনিদ্র রাত্রি কাটান। মা-ই তো কথা বলা, হাঁটা, গানের ছলে ছড়া, প্রথম পাঠ শিখান সন্তানকে। সন্তানের ভাষা, তা সে মুখেরই হোক কী মনের, বুঝতে পারেন মা-ই। স্কুলগামী সন্তানকে স্কুলব্যাগ গুছিয়ে দেন; প্রতিদিনের ভিন্ন ভিন্ন টিফিনের বাহানা মিটান মা। প্রতিবেলা খাওয়া নিয়ে হাজারটা বায়নাক্কা সহ্য করতে হয় তাকে। সন্তানের পেটের সমস্যা, ঠাণ্ডার সমস্যা নিয়ে নিয়মিত ডাক্তারবদ্যি করতে করতে খানিকটা ডাক্তারই হয়ে ওঠেন মা। কর্মজীবী মাকে আবার সামলাতে হয় ঘর-বার দুটোই।

এভাবে সন্তানের সব দিক সামলাতে গিয়ে এক সময় সন্তানের প্রতি ‘ওভার-প্রোটেকটিভ’ বা ‘ওভার-পজেসিভ’ আখ্যা পেয়ে যান কোনো কোনো মা। পান থেকে চুন খসলে সেই মাকেই আবার দোষীর কাঠগোড়ায় দাঁড় করানো হয়। এত কিছুর মধ্যে নিজের সত্তাই হারিয়ে ফেলেন মা।

এমন যে মা, তাকে বিশেষ একটি দিবসে সেলিব্রেশন করা হলে অন্তত মায়েরা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্যের বাইরে বেরিয়ে নিজেদের ক্ষমতা, ত্যাগ, অবদান ও আত্মবলিদানের বিষয়টি উপলব্ধি করেন। জিতু প্রশ্ন রাখে, ‘‘কী ক্ষতি তাতে?”

আসলেই তো, যাদের জন্য দিবস, তাদেরও কিছু ভাবনা-চিন্তা থাকতে পারে। তাদের বিশেষত্ব তুলে ধরার থাকতে পারে। অকারণ বিতর্ক করে এটা ভুলে থাকা কি ঠিক? আর যদি টেকার মতো না হয় তবে কোনো দিবস পালন বন্ধ হয়ে যাবে, তাতে কেউ বাধা দিতে পারবে না।

এডিটিং ও চিত্রসংযোজনের জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ফারহানা মিলি

২,৪০৪ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : “বাবাদিবস নিয়ে আজ বিডি নিউজ২৪-এ প্রকাশিত আমার অপ-এড”

  1. সাইদুল (৭৬-৮২)

    পড়েছি। ভালো লেগেছে। এপ্রিল ফুলের বিষয়টা বিষদ জানালে ভালো হত। ছোট কাল থেকে পালন করছি, মজা করার জন্যেই। আর কোন রহস্য আছে নাকি?


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আমি সাধারণত বিশেষ দিবসগুলো পালনে তেমন উতসাহিত নই। কিন্তু বিরুদ্ধেও নই।

    এবং আমি জানি কিভাবে ফান পার্টের অংশ হওয়া যায়।
    যেমন ধরেন আমার ক্রিসমাস পালনের কথা না। আমার নিচতলায় এক বুড়ি থাকে, প্রতি ঈদে ওরে খাবার দিয়া আসি।
    অথচ বুড়ি কোন ক্রিসমাসে আমারে এক টুকরা কেক ও দিলো না।
    অথচ আমার দুই মেয়ে তারে দেখলেই গ্র‍্যান্ড মা গ্র‍্যান্ড মা করে।
    লাষ্ট ইয়ারে ক্রিসমাসে এক বাঙালি বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গেলাম।
    গিয়ে দেখি উতসব করতেছে।
    মোটা তাজা আমিই ছিলাম।
    আমারই সান্তা হওয়া লাগলো।

    সামাজিক ও অর্থনৈতিক উভয় কারণে বিশেষ দিবসগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।

    অবশ্য এখন ইসলামী হাওয়া প্রবল।
    এরা এখন ১২ ই রবিউল আওয়াল পালনে ফতোয়া দেয়।
    সো বুঝতেই পারছেন অবস্থা।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      এত এত দিবস চারিদিকে, উৎসাহ নিয়ে এর সব পালন করা কি সম্ভব?
      তারমধ্য থেকে দু'চারটা পছন্দের দিবসে কেউ যদি আগ্রহ দেখান, অন্যদের তাতে গা পোড়ানিটা ক্যান যে ধরে, সেইটাই তো বুঝি না!!!

      তখনও বাবা দিবস উদযাপন হতো না এদেশে, কিন্তু জেনে গিয়েছিলাম যে আমার আব্বা বিদেশে এই দিবসটির উদযাপন নিয়ে বেশ বিরক্ত।
      এদেশে উদযাপন শুরুর পরেও তাই এটা নিয়ে তেমন একটা উচ্চবাচ্য করতাম না।

      বছর দু'তিন আগে এক বাবাদিবসে রাত দশটা-এগারোটার দিকে মায়ের ফোন পেলাম। শুনি আব্বার নাকি খুব মন খারাপ।একটা বাবা-দিবস গেলো, কিন্তু পুত্ররা কেউ তাঁকে উইশ করলো না, তাই নিয়ে......

      কি আর করার, রাত দুপুরেই ছুটলাম উইশ করতে।
      রাত বারোটার আগেই পৌছে উইশ করার পর দেখি আব্বা কি খুশি! কি খুশি!!

      বললাম, আপনি তো আগে পছন্দ করতেন না এসব উদযাপন, এখন হঠাৎ কি হলো?
      আব্বা বললেন, সারা দুনিয়ার মানুষ একটা জিনিষ পছন্দ করে করছে, আমি আর অপছন্দ করে কি হবে?
      তারচেয়ে, আমিও বরং ওদের দলে ভীরে যাই - ক্ষতি কি?

      আজকাল মা-দিবস, বাবা-দিবস বেশ আগ্রহ নিয়েই পালন করি।
      ঐদিন আব্বা-আম্মাকেও কি যে খুশি দেখি, বলার না!!!


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
      • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

        দ্যাটস দ্য পয়েন্ট।

        আমাদের বাঙালিদের সমস্যা হইলো আমরা সব বুঝি, এমনকি বাকি সবার চাইতে বেশি বুঝি।
        আর সব বিষয়েই আমাদের মতামত থাকে।

        এবং বাইরের যেকোন কিছুই আমাদের চোখে ষড়যন্ত্র।


        এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

        জবাব দিন
  3. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    অসাধারণ! দিব্যদৃষ্ট কথন। কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছেন। কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে করে থাকলে কোন কথা নেই। তবে সেসবের মোক্ষম বাংলা প্রতিশব্দ ছিল।


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      আপ্লুত!!!
      ইংরেজি ওয়ার্ডগুলো লিখার সময় সবচেয়ে বেশি জোরালো মনে হওয়ায় রেখে দিয়েছিলাম।
      এটা যেহেতু এডিট হয়, ভেবেছি এডিটরের কাচিতে ঠিক হয়ে যাবে।
      উনি যখন ছেড়ে দেন, ধরে নেই - হয়তোবা ঠিক আছে।
      উদাহরণ দিচ্ছি - ইন্টারেস্ট গ্রুপ, এর যুতসই বাংলা পাওয়া কঠিন।
      কালচারাল ডাইভার্সিটি কথাটা ব্যবহার করবো বলেই আগে থেকে সংস্কৃতি কথাটা ব্যবহার করি নাই।
      তবে ইফর্ট বাংলা করা যেত। ঠিক।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভাল লাগলো পারভেজ ভাই। এসব দিবস নিয়ে আমার মনোভাব হলো বিশেষ একটা দিনে যদি বিশেষ কিছু মানুষ কিছু আয়োজনের মধ্য দিয়ে আনন্দ পায় তাহলে ক্ষতি কোথায়?


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  5. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    উতসব আনন্দের পালা পার্বণ যতো হবে জীবন ততোই বর্ণিল আর আনন্দময় হবে। এ ব্যাপারে কারোই দ্বিধা থাকার কথা নয়। ছিদ্রান্বেষীদের কিথা আলাদা।
    সেই আনন্দের ভাগীদার হতে মন্দ লাগে না। তবে কোথায় যেনো কিছু একটা খচ খচ করে মনের ভেতর। সেই খচখচানোর ব্যাপারটা ভালো বোঝানো যেতো বন্ধু সূজা রশীদ (ঝকক ১৯৭৮-৮৪) এর একটা লেখা যদি পড়ানো যেতো। লেখাটার শিরোনাম ছিলো " স্পাইডারম্যানের ফাসী চাই "।
    লেখাটার সারবস্তু হলো এই যে, এক সুপার স্টোরে একটা বাচ্চা এক খান স্পাইডারম্যান খেলনার জন্য কেঁদে সবার কান ঝালাপালা করছে। সবাই বিরক্ত হচ্ছে, ভাবছে কিনে দিয়ে ল্যাঠা চুকালেই মামলা মিটে। আর এক সওদাকারী সূজা তখন মনে মনে এক হিসেব কষে।
    গ্রসারি, মর্টগেজ, ফুয়েল, এডুকেশন, ক্লোদিং, এমন কোন খাতে তার মাসের বাজেট কতো? আর বাজেট বহির্ভূত স্পাইডারম্যানের পেছনে প্রতি মাসে যে দু-পাচশ ডলার খরচ সেটা তাহলে কোথা থেকে হচ্ছে। আর এর পেছনে যা বার্ষিক ব্যায় তা থেকে একজন সীমিত আয়ের মানুষের কি কোনো পরিত্রাণ আছে (এই পুঁজিবাদী সমাজে) !তাহলে এই সংকট থেকে বাচার উপায়টা কি ?
    স্পাইডারম্যানের ফাসী ! নাকি ! (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      বন্ধু, ভাল বলেছিস।
      হ্যাঁ, সুজার লিখাটা আমিও পড়েছিলাম।
      আসলে উৎসব খরচ আজকাল একটা রেগুলার বিষয় হয়ে গেছে। এটা আর দশটা খরচের অংশ।
      উৎসব যেহেতু অনেক, তাই একটা কম্প্রোমাইজে তো আসতেই হবে, তাই নাই?

      আমার কম্প্রোমাইজটা বলি।

      পহেলা বৈশাখে কন্যারা ড্রেস নিয়েছে। ঈদের ছুটিতে বেড়াতে যাবে।
      ওদের বলে দিয়েছি, এবার ঈদে কেনাকাটা তাই বন্ধ।

      মানে হলো, স্পাইডার ম্যান নিতে চাও, ভাল। ঈদে জামা পাবা না।
      কি সমাধান ঠিক আছে তো?

      ঐ যে হিন্দি সিনামায় বলে না, "কুচ পানে কে লিয়ে কুচ খোনে কি জরুরাত হ্যায়"?
      অনেকটা সেই রকম আর কি......... (সম্পাদিত)


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  6. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    উপরে আকাশ যেমনটি বলেছে-

    বিশেষ একটা দিনে যদি বিশেষ কিছু মানুষ কিছু আয়োজনের মধ্য দিয়ে আনন্দ পায় তাহলে ক্ষতি কোথায়?

    এটাই সবচেয়ে বড় কথা!
    কিন্তু, সমস্যা তখনই হয় যখন আমরা বাড়াবাড়ি করি।
    (যেটা আসলে আমরা সবসময়ই করি!)


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  7. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    দিবস নিয়ে আমার তেমন কোন উচ্ছ্বাস কাজ করেনা -- তার মধ্যে নিজের জন্মদিন অন্যতম। কিন্তু মেয়ের জন্মদিন? সেটি নিয়ে আমি অবসেসড। খুব ঘটা করে তো করিনি কখনো -- কিন্তু বিশেষ দিনটি বিশিষ্ট হয়ে থাকে সারাদিন।
    কোন বিশেষ মুহূর্তকে মনে করে দিবস উদযাপনে কি যে ক্ষতি বুঝিনা। তবে কর্পোরেট দুনিয়া বোধ হয় লাভটা বেশি বোঝে।

    জবাব দিন
  8. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    বাবা দিবস থাকুক আর না-থাকুক, বাবা সবার জীবনেই অবিচ্ছেদ্য। আর তাই এ'নিয়ে বিতর্কও অহেতুক। তবে বাবা-দিবস বানিয়ে যদি কেউ কেউ তাদের বাবাদেরকে বেশি স্মরণ করতে চায়, তা'তে সমস্যা দেখিনা। কিন্তু এ'কে নিয়ে বানিজ্য শুরু হচ্ছে বলে বিরক্ত বোধ করি।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      যেকোন জিনিষ নিয়ে তখনই বানিজ্য শুরু হয়, যখনি মার্কেট প্লেসে একটা প্রোডাক্টে নিড আছে বলে ব্যবসায়ি বুঝতে পারে।
      এবং সেই নিডটা মেটানোর জন্য কিছু প্রসপেক্ট টাকা খরচ করতে রাজী।
      ছোট বেলায় আমরা আর্টশিট কিনে হাতে ঈদ কার্ড বানাতাম।
      এতে খরচ হতো আবার কষ্টও।
      ফুটপাতের ভিউকার্ড বিক্রেতা আজাদ সাহেব ঐ নীড বুঝতে পেরে "আজাদ প্রোডাক্টের" ব্যানারে এসব কার্ড বানানো ও বিক্রি করা শুরু করেন।
      সেইখান থেকে আজ আজাদ গ্রুপের বিশাল সম্রাজ্য বিস্তার করেছে।
      আমাদের লাভ, শুধু কিছু টাকা খরচ করে প্রয়োজনিয় সংখ্যক পছন্দনিয় কার্ড কিনতে পারছি।

      তবে হ্যাঁ, লুৎফুল যেটা বললো, সুজার রেফারেন্সে - বানিজ্য যখন নীডের বাইরের অর্থ দাবি করে, সেটা খারাপ।
      সেটা নিয়ন্ত্রনের জন্য একটা কিছু টেকনিক তো লাগবেই...


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  9. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    সময়োপযোগী এ আলোচনাটা পড়তে বেশ ভালো লাগলো। ঝরঝরে লেখা বলেই হয়তো একটু বেশী ভালো লাগলো।
    যেকোন উপলক্ষকে কেন্দ্র করেই বাবা মাকে স্মরণ করতে চাই, উইশ করতে চাই। যদিও বাবা আজ বেঁচে নেই, তবুও তার অবদানের কথা কৃ্তজ্ঞচিত্তে সবসময় স্মরণ করি। তবে নিজের জন্মদিনে বা বাবা দিবসে ছেলেরা উইশ করতে এলে কেমন যেন একটু আড়ষ্ট বোধ করি। তবে ভালো লাগে ভালোবাসা পেতে।
    জিতুর লেখাটা ভালো লেগেছে। তার ভাবনার সাথে কিছুটা মিল আছে আমার একটা কবিতার। তবে তা ইংরেজীতে লেখা বলে শুধু লিঙ্কটুকুই এখানে দিচ্ছি, কেউ আগ্রহী হলে পড়ে দেখতে পারেনঃ
    http://www.poemhunter.com/poem/womb-9/ (সম্পাদিত)

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাইদুল (৭৬-৮২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।