দু’খানা না-গদ্য, না-কবিতা…

এক : দূরত্ব

অনিতা শারমিন নিতা।
আমার ব্যাচমেট আবার আমার এক বন্ধুর ছোটবোন
এবং ডাকসাইটের সেলিব্রিটিও বটে।
টুকটাক যোগাযোগ আছে মুখবই-এ
সেই সুবাদে মাঝে-সাঝে তাঁকে নিউজ-ফিডে পাই।

তার আজকের একটা স্ট্যাটাসে দেখলাম সে লিখেছে:
[স্ট্যাটাস শুরু]
\\ক্রীং ক্রীং ক্রীং
বন্ধু: কি খবর?
আমি: দোস্ত এই weatherএ মন টিকে না রে
বন্ধু: কি চাও?
আমি: প্রেম করবো।
বন্ধু: ক্যামন পাত্র চাই?
আমি: চাই তো অনেককেই, কিন্তু পাই কই?
বন্ধু: তাও শুনি চাহিদাটা?
আমি: এই ধরো ব্র্যাড পিট, জর্জ ক্লুনি
কিংবা নিদেন পক্ষে অর্জুন রামপাল
বন্ধু: ও বুঝেছি………
(দীর্ঘশ্বাস শোনা যায় মুঠোফোনের ওপাশটায়)//
[স্ট্যাটাস শেষ]

নিতার বয়স এখন আটচল্লিশ বা উনপঞ্চাশ।
শুনেছি, তিনজনের সাথে নাকি
চারবার বিবাহ-বন্ধনে থাকার
অসুখি চেষ্টা করে-টরে
এখন সে সুখি সিঙ্গেল লাইফ লিড করছে-
সন্তান-বন্ধু-বান্ধবি পরিবেষ্টিত হয়ে

অথচ এই বয়সে হঠাৎ হঠাৎ
এক এক বৃষ্টিভেজা দিনে,
তার মন ভেজাতে ইচ্ছা হয়,
প্রেম জেগে ওঠে মনে।
কিন্তু কার সাথে করবে সেই প্রেম?
নিতার যে জানা নেই তা।
সে শুধু জানে,
ডাকলে তার পিছনে লাইন দেবার লোকের অভাব হবে না।
কিন্তু সে এটাও জানে,
তারা কেউ তাকে কেবলই ভালবেসে এগিয়ে আসবে না।

নিতাকে ভালবাসা ছাড়াও
তাঁদের প্রত্যেকেরই থাকবে –
ভিন্ন ভিন্ন মতলব,
ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য।

*** *** ***

এই পর্যন্ত ভাবার পর,
আজ হঠাৎ মনে হলো তোমার কথা।
আচ্ছা, আজকাল তোমার কি কখনো
ইচ্ছা হয় না প্রেম করার?
এই আবহওয়ায়?
অথবা অন্য কোনো ক্ষনে?
ইচ্ছা হয় না দেখতে,
গভীর ভালবাসায় কেউ একজন ধরুক ঐ হাত,
আর ভিজিয়ে দিক মনটা?

অবশ্য ইচ্ছে না হবারও তো আসলে
কারন আছে তোমার।
তুমি যে জানো,
কেউ একজন আছে ঐখানে,
ঐ যে, ঐ পর্দার ওপাশে
অথবা হাতের তালুর উল্টো দিকেই –
তোমার অপেক্ষায়,
সারাটা ক্ষন নিষ্পলক দাঁড়িয়ে
ভালবাসায় ডোবাতে, এবং ভাসাতে……

জানো, সেই পুরনো কথাটা ভেসে ওঠে মনে:
“যার আছে, সে বোঝে না কি আছে;
আর যার নাই,
সে ই কেবল বোঝে –
‘আহ যদি থাকতো আমারও’……”

তোমাতে নিতাতে দূরত্ব ঐ টুকুনই…

দুই : স্বর্গোদ্যানে

অফিস থেকে বেরিয়ে
ওয়াক-ওয়ে ধরে
আধ ঘন্টার হাটা পথ,
তারপরে বাক ঘুরলেই এক উদ্যান।

লিখা আছে, “স্বর্গোদ্যান” কিন্তু
স্থানীয়দের মুখে এটা “১ নম্বর পার্ক” –
কি জানি, কোন ২ নম্বর পার্কও আছে কিনা কোথাও?

প্রতিদিন না, মাঝে মাঝে,
এই স্বর্গোদ্যান বা ১ নম্বর পার্কে
এক ফুলপরী আসে।
কবে আসবে, কেউ জানে না
আমিও না।
কিন্তু আমি যেদিন গেলাম না, সেদিনটাতেই
যদি ফুলপরী এসে ঘুরে যায় –
শুধু একথা ভেবে ভেবে রোজই একবার ঘুরে আসি।
ফুলপরী আসুক বা না আসুক,
আমার স্বর্গোদ্যান ভ্রমনটা কিন্তু চাই ই চাই।

আজ একটা অফিশিয়াল কাজে আটকে ছিলাম দীর্ঘক্ষন।
ওটা শেষ করে বেরুতে বেরুতে সন্ধ্যা ঘুরে গেল।
ভাবছি, “আজ স্বর্গোদ্যানে যাবো?”
“না কি যাবো না?”

হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলাম,
যেতে যে আমাকে হবেই।
কারন ঐ স্বর্গোদ্যানে যে যাই,
সে তো শুধু ফুলপরী: তোমাকে দেখতে না,
বরং দিনের কিছুটা সময় তোমার জন্য খরচ করতে।
ফুলপরী: শেষ তোমার দেখা পেয়েছিলাম গত বুধবারে,
তারপর থেকেই লক্ষ করছি,
স্বর্গোদ্যানে গিয়ে তোমার দেখা পাই বা না পাই,
তাতে আর কিছু যায় আসে না আজকাল।
বরং বেরুনো পর থেকে শুরু করে স্বর্গোদ্যানে পৌছুনো,
তোমাকে দেখার অপেক্ষায় সময় কাটানো,
আর দেখা হোক বা না হোক,
এই একটা উচ্ছাস নিয়ে ফেরা যে:
দেখা হলে – আহ্‌! দেখা হলো আজ!!
দেখা না হলে – আহ! কাল বা পরশু দেখা হবে তবে!!
– এর সবটাই, জানো,
দারুন উপভোগ করি আজকাল।

ফুলপরী:
তুমি আমার অনেক কিছুই বন্ধ করতে পারবে –
যোগাযোগ, কথাবলা, দেখাশোনা, আরও কত কি…
কিন্তু তোমার জন্য আমার এই সময় দেয়ার আনন্দটা-
বন্ধ করো দেখাও দেখি একবার?

জানো, মনের কোনে, কোনো একদিন
ঠিকই এটা গুন গুন করে গান শোনাবে তোমায়।
বলবে, প্রতি তিনশো দিনে, কেউ একজন তোমার ভালবেসে
তোমার জন্য হাজারটা ঘন্টা কাটিয়ে গেছে স্বর্গোদ্যানে,
স্বার্থপরের মত,
একা একা অপেক্ষার আনন্দগুলো উপভোগ করে গেছে সে।
আর উপেক্ষা বা দেমাগ দেখাতে গিয়ে,
নিরানন্দ ভাবে তুমি সেই হাজার ঘন্টা কাটিয়েছো, একা একা,
যা তোমার জন্য সান্নিধ্যের আনন্দময়তায়,
ভরে উঠতে পারতো, উপচে উঠতে পারতো………

১,০৭২ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “দু’খানা না-গদ্য, না-কবিতা…”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    মোকাচিনোর মত আমিও ভয়ে ভয়ে বলি ভাইয়া, কবিতাকে আজো ধারণ করতে পারিনি নিজের মাঝে। দু'খানা কবিতা পড়ে কবিদের প্রেমে পরেছি হামেশাই। পড়তে পড়তে আমার মত অকবিরও মনে হয়েছে আরে, এটিতো গুরুদেব অথবা নাম না জানা অই কবি আমাকেই নিয়ে লিখেছেন। কাজের কাজ হয়নি কিছুই, জগতের বহু কবিতার স্বাদ আস্বাদন করলেও তাকে ঠিক আত্মস্থ করে উঠবার মত যোগ্যতা আজো আমার হয়নি বলেই মনে হয়। কবিতার পেছনের গল্পটি জানা থাকলে আগ্রহ নিয়ে পড়ি, জানো! সত্যি কথা বলতে কি জানো ভাইয়া, সিসিবির কবিতা পড়তে শুরু করেছি সিরিয়াসলি। আর তোমার লেখা পেলে তো কোন কথাই নেই।

    কবিতাবোদ্ধা না হয়েও সহজ ভাষায় লেখা বলেই হয়তো তোমার লেখা একটুখানি বুঝতে পারি এবং আনন্দের সাথেই পাঠ করি। তোমার এই লেখাটি পড়ে মনেহলো, সেলিব্রিটি মেয়েটির সাথে কবির ব্যাক্তিগত ফেইসবুক আলাপচারিতা অথবা তার নামখানির উল্লেখ না করলেও কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হতোনা। তোমার কবিতা ইটসেলফ ইজ টেলিং আ স্টোরি, শানে নজুলের কোন দরকার ছিল কি সত্যিই?

    লেখা বরাবরের মতই ফ্রেশলি বেইকড পটেটোর মত লেগেছে! জয়তু! :clap: :clap: :clap: :clap: :clap: :clap:

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      এত হৃদয় ছোয়া একখানা কমেন্ট পেয়ে, একটু আবেগাপ্লুত হয়ে গেলাম রাত-দুপুরে।
      অনেক কিছুই লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু ঘুমও আসছে।
      আরও একটু ভাবি।
      ভেবে, কাল রেসপন্ড করি।
      কেমন?


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  2. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    এক এক বৃষ্টিভেজা দিনে,
    মন ভেজাতে ইচ্ছা হয়,
    প্রেম জেগে ওঠে মনে।
    এই বৃষ্টি জল সখ্যতায়
    হঠাৎ মনে হলো তোমার কথা।
    তোমার কি এমন হয় মানে
    আমাকে বা সেই কংক্রিট বেঞ্চিকে
    হাতের নাগালে প্রেম ও অভিমানের
    স্মৃতি বুকে নিয়ে আজো আছে
    রোদ জল মাখা মানুষের মেল বন্ধনে
    মনে কি হয় কখনো !!!

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      মারহাবা! মারহাবা!!
      বহুৎ খুব, বহুৎ খুব,

      এই হলো কবিতা।
      যা তৈরী হতে এক কবি-হাতের স্পর্শ চাই।
      আর এইজন্যই আগেই বলে রেখেছি,
      উপরেরটা :
      না-গদ্য না-কবিতা...

      বন্ধু, মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ে গেলাম তো গেলামি.....


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  3. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    বৃষ্টি নামল যখন আমি উঠোন-পানে একা,
    দৌড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম তোমার পাব দেখা।
    হয়ত মেঘে-বৃষ্টিতে বা শিউলিগাছের তলে
    আজানু কেশ ভিজিয়ে নিচ্ছো আকাশছেঁচা জলে।
    কিন্তু তুমি নেই বাহিরে - অন্তরে মেঘ করে,
    ভারি ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে!
    ----এমনই তো লাগলো!


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  4. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    ১। দুটোর মধ্যে 'দূরত্ব'টা বেশী ভালো লেগেছে। তবে আমিও সাবিনার সাথে একমত যে পরিচিতির উপক্রমণিকাটুকু না হলেও চলতো। কবিতায় ব্যক্ত প্যাশন মুগ্ধ করেছে।
    ২। ফুলপরীর সান্নিধ্য সন্ধানে 'স্বর্গোদ্যানে' আনাগোনা আর তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা ভাবনাগুলো বেশ সুন্দরভাবেই কবিতায় ফুটে উঠেছে।

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      আরেকখানা বড় উত্তরের প্রমিজ জমা হলো।
      কবিতাগুলো নিয়ে আবেগের উত্তাপ এখনো কমে নাই।
      কমার অপেক্ষায় আছি।
      কমলে তখন কারেকশন করবো সাথে টু দ্যা পয়েন্ট রেসপন্সও।

      আপাততঃ কোটে ফিরে আসার বিরতি চাইছি আরেকবার...


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।