অন্য কোন এক জীবনের গল্প

আমরা পরিচিত ছিলাম,
আমাদের মধ্যে শ্রোদ্ধার সম্পর্ক ছিল,
আমরা পরষ্পরের গুনমুগ্ধ ছিলাম,
আমাদের নিজেদের পৃথক জীবন ছিল।

সেই জীবন-যাপনের ফাঁকে একদিন –
হয়ত আরেকটু পরিচিত হতে,
অথবা খানিকটা অজানাকে জানতে,
খানিকটা বিনোদন পেতে,
একটুখানি ভিন্নতার আস্বাদ নিতে,
আমরা আলাপচারিতায় জড়ালাম।

এই আলাপচারিতা
আমাদের পারষ্পরিক শ্রোদ্ধাবোধ
আমাদের গুনমুগ্ধতা বাড়িয়ে দিল।
আমরা একে অন্যের বন্ধু হয়ে উঠলাম।

আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতা জানতাম
আমরা আমাদের গন্ডি বুঝতাম।
তারপরেও আমাদের অন্তর্গত মুগ্ধতা
আর তা থেকে গড়ে ওঠা নির্ভরতা
কোন কিছু বুঝে উঠবার আগেই কিভাবে যেন,
এক সুক্ষ প্রেমময়তার জন্ম দিয়ে গেল।

এই সুক্ষ প্রেমময়তা দিনেদিনে আমাদের
একসাথে ভাসতে শেখাল, ঢুবতে শেখালো
আমরা আরো, আরও গভীর ভাবে
একে অন্যের পাশে এসে দাড়ালাম।

আমরা একসাথে কাছে আসা শিখলাম
আমরা একসাথে হাত ধরা শিখলাম
আমরা ভয়-ভীতি, সংস্কার পিছনে ফেলে
আরও ঘনিষ্টতর হওয়া শিখলাম।
দেহ অবলম্বন করে আমরা দেহাতিত এক
স্বত্তায় পৌছুনোর পথ আবিষ্কার করলাম।

ঠিক তক্ষুনি কোথা থেকে এক ঝড় এসে
আমাদের এলো মেলো, তছনছ করে দিয়ে গেল
আমাদের যাবতিয় সীমাবদ্ধতার কথা
তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেল।

তুমি ভেসে উঠতে চাইলে,
সাঁতরে ডাঙ্গা পেতে চাইলে –
তোমায় হাত ধরে ডাঙ্গায় পৌছে দিলাম।
তুমি সাক্ষাতের ইতি চাইলে,
তুমি সীমাবদ্ধতাহীন সঙ্গির হাত ধরতে চাইলে –
তোমায় সেইরকমের সঙ্গির হাতে সঁপে এলাম।

তুমি প্রেমময়তার সংকোচন চাইলে,
তুমি যোগাযোগ সীমিত করতে চাইলে –
আমি যোগাযোগ সীমিত করলাম।
কিন্তু তোমাকে এ ও জানালাম –
“প্রেম কি আমার হাতের নাটাই”
– যে চাইলেই তাকে থামানো যাবে?

তুমি কি বুঝলে, জানি না –
হঠাৎ হারিয়ে গেলে, উধাও হয়ে গেলে,
নিরূদ্দেশ হয়ে গেলে, হাওয়ায় মিলিয়ে গেলে।
একটা সময়ে এ ও জানতে পারলাম,
তোমার সেই সীমাবদ্ধতাহীন সঙ্গি নাকি
তোমার হাত ছেড়ে দিয়েছে।

ঘনিষ্টতা হারানোর মত করেই
তুমি প্রেমময়তা হারাতে চাইলে
তুমি বন্ধুত্ব হারাতে চাইলে
তুমি পরিচিতি হারাতে চাইলে

হারাতে কি পেরেছো?
কি করে পারবে, ভেবেছো কখনো?
পরিচিতি, বন্ধুত্ব অথবা প্রেম – এসব কি আর
ঘনিষ্টতার মত জৈব বা জড় কিছু যে,
কেবল ভৌগলিক দূরত্ব তা
ঘুচিয়ে দেবে, মিটিয়ে দেবে?

বরং, স্বেচ্ছায় চোখের আড়াল হয়ে
তুমি ঠাই নিলে আমার দু’চোখের মাঝে।
তোমার আশ্রয় হলো হৃদয়ের গভীর কোনো
নিরাপদ সযতন নিভৃত কোনে।

“নক্ষত্রের রূপলি আগুন ভরা রাতে” –
তুমি ফিরে আসো বা না আসো
প্রতিরাতে আমি তোমার জন্য
একশো ফানুস উড়িয়ে যাবোই
তুমি চাও বা না চাও, তোমার জন্য
একশো আটটা নীলপদ্ম খুজে আনবোই।

জানি, “একবার চলে গেলে
নারীরা ফেরে না” – তাই বলে কি
সুরঞ্জনারাও ফেরে না কখনো আর?
একবার জীবনানন্দ হয়ে জেনে যেতে চাই……

১,১২৬ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “অন্য কোন এক জীবনের গল্প”

  1. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    বন্ধুত্বের পত্রপল্লবে প্রেমময়তার পুষ্প !
    সেই স্বর্গের সুবাস পেতে চাইতেই
    অতর্কিত ঝড়ে সব হলো তছনছ !

    চোখের তারার ভেতর থেকে অমোঘ অস্তিত্ব
    জেগে উঠবে নীলপদ্মের অবয়ব থেকে
    অকস্মাত কখনো কোনো এক দিন ।

    দেখা হয়ে যাবে জীবন আনন্দ বহতার কোনো এক ক্ষণে ...

    জবাব দিন
  2. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    তোমার লেখাটিকে ঠিক কবিতা নয় মনেহলো একটা চলচ্চিত্র দেখলাম। রাগ, অনুরাগ, মনোজৈবিক প্রেম শেষে ফিরে ফিরে আসা অথবা সুযোগ বুঝে সরে যাওয়ার চিরন্তন কাহিনী কী চমৎকার করেই না বললে!

    :clap: :clap: :clap: :clap:

    জবাব দিন
  3. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    ছোট গল্প অথবা কবিতা বা নাটকের আদলেও কিন্তু লিখতে পারো, ভাইয়া!

    'বকুল বিছানো পথে' যে চলে গেছে সেকি তার সবটুকু কি নিয়ে গেছে, বলো? তার টুকরো হাসি, ছোটখাটো আবদার অথবা খুনসুটি বা উষ্ণ করতলের খানিক ছোঁয়া কি রেখে যায়নি কবির জন্য? সবটুকু নিয়ে কেউ যেতে পারেনা...রয়ে যায় কিছু দীর্ঘশ্বাস, কালো একটি চুলের ক্লিপ অথবা ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা ফুচকার টক অথবা রাতজাগা দীর্ঘশ্বাস!

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      আরেক দিন চমৎকার একটা কথা বলেছিলে: "সব প্রেমই আসলে প্রথম প্রেম..."
      তসলিমা নাসরিনের বলা একই রকমের একটা কথা দারুন পছন্দ আমার: "প্রেম তো প্রেমই, তার আবার স্বকিয়া অথবা পরকিয়া কি?
      তাই তো, যে প্রেমে পড়ে, তার নিজের জন্য তো সব প্রেমই স্বকিয়া, তাই না?

      আজকের দর্শনটাও খুব মনে ধরেছে।
      পাখী উড়ে গেলে পাখির পালক পড়ে রয়-এর মত।
      প্রেমাষ্পদ 'বকুল বিছানো পথে' চলে গেলেও রেখে যায় পায়ের ছাপ।
      শুধু পায়ের কেন, আরও অনেক কিছুর ছাপই আসলে রয়ে যায়।
      ঠিক ঠিক ই বলেছো প্রায় সবগুলো।
      কিন্তু ঠোটে কি কেবলই ফুচকার টক মেলে? আর কিছু না?
      আর গায়ের ঘ্রানের কি হবে?
      ওটা নিয়ে যাওয়া কি এতই সহজ?


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  4. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    পারভেজ ভাই,
    আপনার গত কয়েকটি লেখায় যেন একই ঘটনা/দৃশ্যাবলীর ছায়া দেখতে পাচ্ছি। লেখাগুলোকে একটি (বা একাধিক) সম্পর্কের পোস্টমর্টেম হিসেবে দেখছি।
    জার্নালধর্মী এ-লেখায় বড় হতাশা ছড়িয়ে আছে।
    কিছু বানান - শ্রদ্ধা, সূক্ষ্ম, সত্তা

    অন আ লাইটার নোট ---
    আপনি তো দেখি লাভগুরু বস। পরামর্শ কেন্দ্র খুলতে পারেন --- ভিড় সামলাতে হিমশিম খাবেন
    😀 😀 😀

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      ভাইরে, সুখের ঘটনা তো আর কেউ শেয়ার করে না, দুঃখের গুলাই করে।
      করে নিজে হালকা হয়।
      কিন্তু ঐগুলা একা একা টানা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
      গল্পচ্ছলে, কবিতার আকারে সেসব এখানে যে দিচ্ছি, বেশিরভাগই সংশ্লিষ্টদের অনুমতিক্রমে, এতে আমার ঐ বয়ে বেড়াবার চাপ টা কমে যাচ্ছে।
      আর তোমরাও কিন্তু জব্বর পাঠক।
      শুধু গল্পটা, এনালাইসিসটাতে ইন্টারেস্টেড।
      আজ পর্যন্ত কাউকে রিয়েল পাত্র-পাত্রী খোজাখুজিতে উতসাহি দেখি নাই।
      এই রকম একটা ভরসার জায়গা থাকলে কি আর পিছনে ফিরে তাকানোর কোন দরকার পরে?
      হ্যাটস অফ টু অল মাই কমপ্যাশনেট রিডারস... :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:

      "পরামর্শ কেন্দ্র খুলতে পারেন --- ভিড় সামলাতে হিমশিম খাবেন"
      =)) =)) =))


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  5. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    যার জীবনেরই গল্প হোক না কেন, এসব গল্প ছকে বাঁধা হলেও শুনতে ভালো লাগে। কবিতার সাবলীল ধারায় গল্প এগিয়েছে। শুরু থেকে 'আমরা' ও 'আমাদের' কথাগুলো শুনতে ভালোই লাগছিলো, সপ্তম স্তবকে "কোথা থেকে এক ঝড় এসে"যখন "আমাদের যাবতিয় সীমাবদ্ধতার কথা" 'তোমাকে' স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেল, তখন মনে হলো, শুধু 'তোমাকে' কেন?
    তবে যাই হোক, "হৃদয়ের গভীর কোনো নিরাপদ সযতন নিভৃত কোনে" যে একবার ঠাঁই নেয়, সে নিরন্তর কবি মনে কবিতার জন্ম দিয়ে যায়।
    কিছু ভুল বানান সম্পাদনা করে নেয়া যেতে পারে। যেমনঃ
    ঢুবতে>ডুবতে, শ্রোদ্ধার>শ্রদ্ধার, ঘনিষ্টতা>ঘনিষ্ঠতা ইত্যাদি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহবুব (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।