একটি কাল্পনিক কথোপকথন

(কিছু ফরমায়েশি ও প্রমিজড লিখা জমে গেছে। ওগুলো লিখে পোস্ট করার আগেই এই রেডি লিখাটা দিয়ে দিলাম। এইটা বেশ কিছুদিন আগে খসড়া করা ছিল। নীচে নামতে নামতে কিছুটা সময় পাওয়া যাবে। ততদিনে ওগুলো নামিয়ে ফেলবো বলে আশা করছি…)

-এখানে এসেছেন কেন?

-তুমি জানো না বুঝি?

-না বললে জানবো কি করে?

-না ই যদি জানো, তবে থাক না তা অজানাই
কি আর এমন হ্রাস-বৃদ্ধি হবে তাতে?
সম্পর্কটা তো চুকে বুকেই গেছে,
এই জানাটা কি আর জুড়তে পারবে তাঁকে?
আর যদি জানোই, যে কেন এসেছি,
উত্তর পেতে নিশ্চয়ই করনি প্রশ্নটা?

-তা ঠিক, উত্তর পেতে নয়,
কথার শুরুটা পেতেই করেছিলাম এই প্রশ্নটা।
তাছাড়া, এতদিন ধরে চিনি আপনাকে,
এটা জানবো না, তা কি করে হয়?
মনে আছে এখনো, সেই যে বলেছিলেন একদা,
অন্ত্যোষ্ঠিক্রিয়ার অনুষ্ঠানগুলো আপনি
সহ্য করতে পারেন না একেবারেই।
আর তা আপনার ক্লাসট্রোফোবিয়ার কারনেই।
আরও বলেছিলেন, বদ্ধ কফিন দেখে
আর নিজেকে ঐখানে শায়িত ভেবে,
আপনার নাকি দম বন্ধ হয়ে আসে।
সেই আপনি, আজ এই অন্ত্যোষ্ঠিক্রিয়ায় এসেছেন?
এ যে মৃতের প্রতি শ্রোদ্ধা জানানোর জন্য নয়,
সেটা আমার চেয়ে ভাল করে
আর কে ই বা বুঝবে, বলুন?
তবুও, আপনার মুখেই শুনতে চাইছিলাম
এই আগমনের হেতুটা।
যদিও, আমিই অনুমান করে নিতে পারতাম তা।
আর এও জানি,
ঠিক ঠিকই সেই অনুমান মিলে যেতো
এক্কেবারে শতভাগ।

-হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছো,
মৃতের শেষযাত্রায় নয়
নিজের শেষ যাত্রায়-ই এসেছি।
খুব কাছ থেকে কতিপয় চেনামুখ দেখতে
আর একটি মুখ পড়তে, কি লিখা আছে
সে মুখে এবং গভীর দুই নয়নে?

-ভণিতা করছেন কেন?
সোজাসুজি বলে ফেলুন না,
আমাকেই দেখতে এসেছেন
এই অন্ত্যোষ্ঠিক্রিয়ায় অংশগ্রহনের অজুহাতে?
যে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে
এখনো তাতে দেখাদেখির
কি আর রয়েছে বাকি, বলুন দেখি?

-নিখাদ প্রেমময় কিছু সময় তোমার সাথে কাটিয়ে
আমি বোধহয় অনেক লোভী হয়ে উঠেছিলাম,
এবং চাইছিলাম,
আরও দীর্ঘায়িত হোক এই প্রেমমগ্নতা।
আর তাই একদিন যখন জানতে চাইলাম-
“কোথায় তুমি”, উত্তরে বললে:
“আমি যেখানে খুশি সেখানে থাকি, তাতে আপনার কি?”
আমি অবাক হই নাই, কারন
জানতাম, এরকমটা একদিন ঘটবেই
শুধু ভেবছিলাম, “এত তাড়াতাড়িই
তাহলে ঘটে গেল সব?”
তোমার কন্ঠে কি ছিল সেদিন?
বিরক্তি? নাকি ঘৃণা?
সেটুকুই কেবল জানার ছিল বাকি।
আমার আজকের এই উপস্থিতি
তোমাকে খুব কাছ থেকে দেখে
অনুমান করার চেষ্টা,
কোনটা আসল কার্যকারন – বিরক্তি নাকি ঘৃনা?

-দেখলামই তো, তাকিয়ে আছেন দীর্ঘক্ষন।
কি দেখলেন? কি বুঝলেন, শুনি?

-না থাক, কি আর হবে জেনে?
ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্কটা তো আর জুড়বে না ওতে,
তবে এটুকুই জানাতে পারি শুধু –
আমি ওদুটোর কোনটাই খুজে পাই নাই,
না বিরক্তি! না ঘৃনা!!
আর
সে-ই আমার একমাত্র স্বস্তি!!

১,৪০৩ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “একটি কাল্পনিক কথোপকথন”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    লেখাটা পড়ে সৈয়দ শামসুল হকের 'ঈর্ষা' নাটকের শুরুটা মনে পরে গেল।
    কিছু পর্যবেক্ষণ :
    ফিউনেরাল বা বলে ফিউনারাল বলছেন। দেশে (যদি দেশের প্রেক্ষাপটে লিখে থাকেন) কি এভাবে উচ্চারিত হয় কমনলি? অনুমান করছি কথপোকথন বাস্তবানুগ করার জন্য 'অন্ত্যোষ্ঠিক্রিয়া' ব্যবহার না করা শ্রেয় মনে করেছেন।

    'নিশ্চয়ই' তে 'য়' বাদ পড়েছে
    ক্লাইস্টোফোবিয়া বলতে কি কল্স্ট্রফোবিয়া বোঝাতে চেয়েছেন?

    'দীর্ঘ্যক্ষন' --- দীর্ঘ-তে য-ফলা নেই

    কেবল বিরক্তি বা ঘৃণা নয়, স্রেফ অবসাদের কারণেও প্রেম টুটে যেতে পারে কিন্তু। সে-কারণে কেবল বিরক্তি কিংবা ঘৃণারই সন্ধান করতে হবে এমন তো কথা নেই। কি বলেন? 😛 😛

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      "বেড়ে বলেছো তো ভাইডি!!!"

      অল্প কথায় ভাবনার অনেক গুলো দুয়ার একসাথে খুলে দিয়েছো।
      সেই ভাবনার আলোয় আলোকিত পুরো রেসপন্স এটা না।
      জাস্ট এ প্রিলুড।
      পুরো রেসপন্সটা কম্পাইল করে পরে পোস্ট করবো।
      তবে যা যা ভাবছি, রেসপন্স হিসাবে তা অনেক বড় হয়ে যেতে পারে। সেইক্ষেত্রে আরেকটা ব্লগাকারেও দিয়ে দিতে পারি, যদি বুঝি যে তার একটি ইন্ডিপেন্ডেন্স তৈরী হয়েছে।

      এখানে এটুকুই বলি, অবসাদ এক্ষেত্রে অবশ্যই হতে পারে একটা ভায়াবল অপশন।
      তবে শুরুতেই এটা গন্য না করার প্রধান কারন, ঐ যে কী (Key) ডায়ালগ "আমি যেখানে খুশি সেখানে থাকি, তাতে আপনার কি?" - ওটার টোনে শ্রোতা ক্রোধ শুনেছিলেন।
      অবসাদ কি ক্রোধের জন্ম দেয়?
      দিতে পারে হয়তো। তবে ঘটনাটা জানার পর এনালাইসিস করতে গিয়ে সেটা আমি গন্য করি নাই।
      আমি হয়তো ধরে নিয়েছিলাম, অবসাদাগ্রস্থ বানীর মধ্যে হতাশা বা হাহাকার বা শূন্যতা থাকবে, ক্রোধ নয়।
      এখন মনে হচ্ছে, যত বিরলই হোক, ক্রোধও থাকতে পারে।
      গোটা ব্যাপারটা নিয়ে আবারও ভাবি।
      গুছিয়ে লিখি। তারপরেই না হয় আবার পোস্ট করে বলি আমার যা যা বলার.........

      বাই দ্যা ওয়ে, অন্যান্য সাজেস্টেড কারেকশন গুলোও করে দিচ্ছি।
      ব্লগ লিখে কারেকশনের সাজেশন পাওয়াটা হলো বাড়তি লাভ। এইটা না হলে ব্লগের কোন মজাই তো আর থাকে না।

      এত সময় দিয়েছো, ভেবেছো - এইজন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। আর হ্যাঁ, "ঈর্সা" পড়া হয় নাই। খুজে দেখি, পেলে অবশ্যই পড়ে ফেলবো.........


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      আসলে দুই শেষ যাত্রা দুই অর্থে লিখেছিলাম।
      প্রথমটা এটারনাল জার্নি অর্থে আর পরেরটা লাস্ট এটেম্পট অর্থে।
      প্রথমটার মাঝে স্পেস থাকার কথা ছিল না। এডিট-ফেডিট করার সময় মনেহয় মনের ভুলে এক করে ফেলেছি।
      ঠিক করে দিচ্ছি।
      শেষযাত্রা = এটারনাল জার্নি
      শেষ যাত্রা = লাস্ট এটেম্পট

      এই কবিতাটা সদোদ্দেশ্যে লিখা।
      রিলেশন মেইন্টেন করা বা ব্রেক আপ করা - উভয়ক্ষেত্রেই সততার সাথে কমুনিকেট করে যাওয়ার গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছি।
      "ও বুঝে নেয় না ক্যান?" - এইটা যে কতবড় রিস্কি একটা প্রোপজিশন, সেইটা অনেকেই বোঝে না।
      আর তাই দিনের শেষে সকল পক্ষকেই দেখি দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট বয়ে বেড়াতে......


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      আরও একটা মিল আছে এই দুটোর।
      দুইটাই কনক্লুসিভ।
      এটার্নাল জার্নির পর যেমন আর কিছু অর্জন করার থাকে না, লাস্ট এটেম্পটের পরেও তাই হাল ছেড়ে দেয়াটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  2. সাইদুল (৭৬-৮২)

    হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছো,
    মৃতের শেষযাত্রায় নয়
    নিজের শেষ যাত্রায়-ই এসেছি।
    খুব কাছ থেকে কতিপয় চেনামুখ দেখতে
    আর একটি মুখ পড়তে, কি লিখা আছে
    সে মুখে এবং গভীর দুই নয়নে?


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।