তিনটি আটপৌরে কবিতা

এক: বিচ্ছেদ-১
========
বন্ধু বলেছিল –
ছ’টা মাস যাক, শোক ও সক দুই-ই নাকি কেটে যাবে ধীরে ধীরে।
চারটা মাস তো কাটলো প্রায়
কৈ কিছুই তো কাটছে না আমার?

কাজের ফাঁকে আজ হঠাৎ এসে ভর করলে তুমি মাথার ভিতরে
কি এক শুন্যতায় ভরে গেল চারিটা ধার
খালি খালি হয়ে উঠলো বুকের গহ্ববর
জিভ শুখিয়ে কাঠ।

বন্ধন ছিন্ন হলেও ভালবাসা কেন থেকে যায় অটুট?
সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলেও অনুভুতি গুলো কেন রয়ে যায় একইরকম?
প্রত্যাখ্যত হবার পরেও ভালবাসা কেন বেচে রয় আগের মতন?

তবে কি এটাই ঠিক যে –
ভালবাসার মৃত্যু হয় না,
কেবলই ঘটে রুপান্তর?
একজন থেকে অন্যজনে?

০১-০৪-২০১৫

দুই: বিচ্ছেদ-২
========
মনেপড়ে,
কেন আমি অকুল পাথারে পড়েছিলাম, তোমার আকস্মিক অন্তর্ধানে?
অথবা মুখ ফিরিয়ে নেয়ায়?
আমি বুঝতে পারছিলাম না, এটা কি আমার কোন কৃত কর্মের শাস্তি,
নাকি তোমার একটা পছন্দ?

জানাটা প্রয়োজন ছিল কেন, তাও বলেছিলাম তখন।
আমার কৃতকর্ম তোমার এই মুখ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য দায়ী হলে
তার যথাযোগ্য শাস্তি আমার অবশ্যই প্রাপ্য।
আর তা মাথা পেতে নিতে রাজি আমি সবসময়।
তবে এই ছেড়ে যাওয়াটা তোমার একটা পছন্দ হয়ে থাকলে –
সুস্থ্য একটি “ফেয়ার ওয়েল” কিন্তু আমার প্রাপ্য ছিল।

যতই দিন যাচ্ছে, তোমার নিরবতা আমাকে বলে দিচ্ছে,
প্রথমটি হয়তো নয় কারন।
তা যদি হতো, এই দীর্ঘ্য নিরবতা তার উত্তর হতে পারে না।
এতদিনে কোন না কোন ভাবে
সে কথা, মানে আমার অপরাধ, তুমি আমাকে জানাতেই।

আমরা শুনে থাকি,
টাইম ইজ দ্যা বেস্ট হীলার” বা সময় নাকি শ্রেষ্ঠ নিরামইয়কারী।
যে অর্থে সেটা বলা হয়, তা হলো –
সময়ের সাথে সাথে পুরনো ক্ষত গুলো নাকি সয়ে আসে।
এই ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা হয় নাই।
সময়ের সাথে সাথে কিছুই সয় নি আমার
তবে কিছু কিছু অজানা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি
তোমার নিরবতা থেকে।

এখনো ক্ষত গুলো একই রকমের যন্ত্রনা নিয়েই বয়ে বেড়াচ্ছি
কারন ওগুলো সারবার নয়
দ্বিতীয় কোন “তুমি” যে আসবে না –
আসা সম্ভবও না আর এই জীবনে;
তাই ক্ষত সারার কোন চেষ্টা বা আশাও করি না আর।
তবে আমি তোমার ক্ষতি করি নাই, এটা যদি ঠিক হয়ে থাকে,
অন্ততঃ একটি পাপবোধ থেকে আমার মুক্তি মেলে,

আর তা বিনাকারনে এই
কয়মাস সশ্রম কারাদন্ড ভোগের পরেই।

১০-০৪-২০১৫

তিন: প্রার্থনা
========
বিনা অপরাধে কয়েকটা মাস ধরে আমারে যে শাস্তি তুমি দিয়েছো,
এবং সেই শাস্তির কারনে আমি যেই কষ্ট পেয়েছি, এখনও পাচ্ছি,
কামনা করি, দোয়াও করি – এর কোন কিছুই যেন কোনদিনও স্পর্শ না করে তোমায়।

শুভাকাঙ্খি হতে গিয়ে কেউ যেন আর কখনো এই রকম ভুল বুঝাবুঝির শিকার না হয়
বিনা প্ররোচনায় কখনো যেন কেউ প্রেমাষ্পদের ঘৃনার বস্তুতে পরিনত না হয়
আর একান্তই যদি তা হওয়ারই থাকে, কিছুটা হলেও পূর্বাভাস পাক তারা সবাই।

যদি কোনদিন বোঝো, এতটা ক্রোধ-ঘৃণা-দুর্ব্যবহারের যোগ্য আমি ছিলাম না,
অনুতাপ করবে না একেবারেই। অনুতাপে মুখটা মলিন করবে না একটুও।
সব কষ্ট, সব মান- অপমান, সব ঘৃণা, সহ্য করে নেবো হাসি মুখে
কিন্তু তোমার মুখের মলিনতা সইতে পারবো না এতটুকুও……

সুখে থাকো, ভালো থাকো, আনন্দে থাকো –
এরচেয়ে বড় চাওয়া আর কি হতে পারে আমার?

১৫-০৪-২০১৫

৭৯৪ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “তিনটি আটপৌরে কবিতা”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    আটপৌরে মোটেও নয়, বরং বলা যায় হৃদয়মথিত তিনটে কবিতা। কবিতার আবেগ পাঠকের মন স্পর্শ করে যায়। একবারের জন্য হলেও, কবিতা পড়া থামিয়ে কিছুটা ভাবতে হয়।

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      খায়রুল ভাই, সম্পর্কে ঢোকা ও তা ভাঙ্গাটা আজকাল এতটাই আটপৌরে ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে যে তা নিয়ে কবিতা লিখাটাকেও আটপৌরে বলেই ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলাম।
      অনেকেই আজকাল এসব বিষয়ে লিখা দেখলে বলে বসে,
      "ওহ্‌ নো, সেইম ব্রেক-আপ স্টোরি?"
      আপনি যে এক মুহুর্ত থেমে ভেবেছে, এই জন্য আপনাকে অনেক অনেক সাধুবাদ.........


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  2. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    সব চিহ্ন মুছে ফেললেও মোছার চিহ্নটুকু থেকে যায় ।

    আর ভালোবাসা ! ওটাতো হৃদয়ের টিউবারকিউলোসিস ।
    খুব বড়জোর দমিয়ে টমিয়ে কোয়ারেন্টাইন ...
    কবি হলে তবু সে বলে - "স্মাইল, ইউ আর স্টিল মাইন" ...

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      ভালবাসা জিনিসটা বড়ই অদ্ভুত। চাইলেই করা যায় না। আবার না চাইলেও নিজ থেকে এসে পড়ে।
      আর পড়ে তো পড়েই, যে সে পড়া না। সব কিছু ভেঙ্গেচুড়ে পড়া।
      নিজ থেকে একবার যখন আসে, একে আর দমিয়ে রাখা ভার।
      সাথে রফিক আজাদের মত ভাবায়:
      "যদি ভালবাসা পাই, আবার সুধরে নেবো জীবনের ভুলগুলি........."


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  3. সাইদুল (৭৬-৮২)

    কাজের ফাঁকে আজ হঠাৎ এসে ভর করলে তুমি মাথার ভিতরে
    কি এক শুন্যতায় ভরে গেল চারিটা ধার
    খালি খালি হয়ে উঠলো বুকের গহ্ববর
    জিভ শুখিয়ে কাঠ।

    পারভেজ প্রথমটি খুবই ভালো লেগেছে, পরের দু'টি মনে হয় আবৃত্তি বান্ধব


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      সাইদুল ভাই, আপনি বলার পর পড়ে দেখলাম।
      আবৃত্তির জন্য একটু রিপেয়ারের দরকার আছে।
      আগে কখনো এইভাবে পড়া হয় নাই।
      লিখেই খালাস ছিলাম।
      আমার কবিতা কেউ আবৃত্তি করতে পারে, এটা মাথায় আসতেই দিতাম না।

      আপনার কথা শুনে মনে হলো, যে কোন কবিতা লিখার পর তার আবৃত্তি বান্ধবতার দিকটা নিয়েও ভাবা উচিত।
      এখন থেকে ভাববো।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  4. সামিউল(২০০৪-১০)

    ভালবাসার এই অনুভূতি গুলো যে পারসোনালি অনুভব করেছে, সে ঠিকই বুঝতে পারবে আপনার কবিতাগুলোর গুরুত্ব।
    সুন্দর লেগেছে ভাই


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
      কবিতা পড়াটা আমার ডিপার্টমেন্ট হলেও লিখাটা মূলতঃ না।
      তাই লিখে ভয়ে ভয়ে থাকি "কোথায় কি ভুল হয়া যায়"...
      কাচা লিখাগুলোতে কেউ ভাল কিছু খুজে পেলে আসলেই বিগলিত হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না তাই।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  5. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    পারভেজ কবিতা লিখছে এযে বড় ভালো সংবাদ। নানা ইস্যুতে কঠিন সব প্রবন্ধ লিখে লিখে কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছিল, অথচ আমি জানি, সেই কবে থেকেই জানি, ওর ভেতরে একটা কবি আছে। মেধাবী, অন্তর্ভেদী। :clap:

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      আসল কারনটা বলতে পারবো না তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি।
      বিরহটা যখন এক্সটার্নালি এনফোর্সড হয়, তখন সেই বিরহের বিরুদ্ধাচারনের কোন উপায় থাকে না।
      হয়তো তাই সান্তনা পেতে ধরে নেয়া হয়, মিলনটা নিশ্চয়ই মলিনই হতো। তাই যে বিরহটা পাওয়া গেল, তা সেই মলিন্য থেকে বেঁচে যাওয়ার দামেই। মিলনের দামে যে বিরহটা কেনা হয়েছে, তাঁকে উজ্জ্বল না বলে আর উপায় কি?

      কিন্তু এই যুক্তির দুর্বলতা হলো, যে মিলন হয়ই নাই তা যে মলিনই হতো, সেটা বুঝলাম ক্যামনে?
      আসলে বুঝি নাই। এটা সান্তনা পাওয়ার জন্য ধরে নেয়া। "মিলনটা উজ্জ্বলতর হতো" - এটা ধরে নিলে তো বিরহি মনে আর কোন সান্তনাই থাকে না।
      আর প্রকৃতি যখন বিরুদ্ধাচারন করছে, ফাইট ব্যাকেরও তো কোন সুযোগ থাকে না।
      তাই না?
      😕 😕 😕


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।