দুটি কবিতা

এক: গুন

বেশ কিছুদিন থেকেই দেখছি,
তুমি আমায় এড়িয়ে যাচ্ছো।
কি হয়েছে তোমার?
অথবা কি বা দোষ আমার?
আজ যখন তোমাকে পেলাম
অনেক দিনের পর, বুঝলাম –
আমার সাথে কথা বলতে না চাওয়াটা
ঘৃণা বা বিরক্তি প্রসূত নয়।

তুমি আসলে ভয় পাচ্ছো,
নিজেকেই ভয় পাচ্ছো তুমি।
ভয় পাচ্ছো, কারন তুমি জান যে
আমাকে উপেক্ষা করতে পারবে না তুমি।
সেই শক্তিই তোমার নাই।
তুমি জান যে-
আমার সাথে কথা বললে তুমি আবার আঁদ্র হবে।
তুমি কথা বলতে চাও না,
কারন তুমি আঁদ্র হতে ভয় পাও।

আজ রাতে শান্তির একটা ঘুম হবে আমার।
আমি জানলাম,
তোমার এই এড়ানোটা আমার দোষে নয়।
আমার গুনে।

দুই: পুঁজি

মনেপড়ে?
একদা তোমায় এক তরুণীর গল্প শুনিয়ে ছিলাম……

ষোড়শী সেই তরুণী –
যার উনিশ বর্ষিয় স্বামীটি বিয়ের সাত দিনের মাথায়
কলেরার ছোবলে তাকেই শুধুই নয়,
ধরাধামই ছেড়ে গিয়েছিল।

কি আর করার ছিল সেই তরুনীর?
সব মেনে নিয়ে নতুন কাউকে
স্বামীত্বে বরন করা ছাড়া?
কিন্তু তিনি তা করলেন না-
মাত্র সাতদিনের সুখস্মৃতি পুঁজি করে
তিনি মনের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখলেন
মৃত সেই স্বামীটিকে।

ইচ্ছা শক্তি দিয়ে প্রতিরাতে
তিনি সেই মৃত স্বামীতে জাগিয়ে তুলতেন
আর তাঁর নৈশকালিন সংসার চালিয়ে যেতেন।
একটি বা দুটি দিন না
একটি বা দু’টি বছরো না,
এইভাবে তিনি একাশি বর্ষিয়া হয়ে
মৃত্যু বরনের পূর্ব পর্যন্ত পয়ষট্টিটি বসন্ত
কাটিয়ে গিয়েছেন মৃত স্বামীর সাথে সধবার মতন।

জীবনে কেউ তাঁকে সাদা শাড়িতে দেখে নাই
দেখে নাই সাজগোজহীন নিরলঙ্কারা রূপে
বিশেষ করে সন্ধ্যা নামলেই খুবই
ব্যস্ত হয়ে পড়তেন একখিলি পান মুখে পুড়ে
নিজ কক্ষের খিল আটতে।
বলতেন, “উনি” – নাকি পানের গন্ধে বিভোর হন।

একটু যদিবা দেরী হতো কোনোদিন,
আপন মনে কাকে যেন বলে যেতেন,
“রাগ করে না লক্ষিটি, এইতো আসছি বলে”
-কিন্তু কাকে বলতেন এসব?
কেউ দেখেনি তাঁকে। কোনদিনও।

পয়ষট্টি বছরে কতকিছুই বদলে গেছে এই শহরের বুকে-
বৃটিশ গিয়ে পাকিস্তান, তাদের পর বাংলাদেশ,
গ্যাসের বাতির পর টিমটিমে ডিসি বাতি।
এখন ঝলমল করা এলইডি, রাত্রিভর টিভি-
অথচ তরুনীর জীবনযাত্রায় এসবের
কোনকিছুরই কোন প্রভাব পরেনি।

সন্ধ্যা সাতটা নামার আগেই পরিপাটি হয়ে তিনি
শোবার ঘরে গিয়ে ঢুকতেন
সেখানে নাকি তাঁর উনিশ বর্ষিয় স্বামীটি
এসে বসে বসে অপেক্ষা করছেন আগে থেকেই।

একসময় তিনি লক্ষ করলেন,
তিনি বুড়িয়ে যাচ্ছেন, বাকিয়ে যাচ্ছেন
অথচ তাঁর সেই উনিশ বর্ষিয় স্বামীটি
আগের মতই রয়ে গেছেন, তরুন ও ঋজু।
কিন্তু তিনি গা করলেন না একটুকুও।
উনিশ বর্ষিয়র কাছ থেকে পাওয়া
যে ভালবাসায় ঢুবে আছেন তিনি,
তাঁকে তিনি যুপকাষ্ঠে নিয়ে বিচারের
মুখমুখি করলেন না।
বরং মাত্র সাতটা দিনের ভালবাসার
ওজনে মাপলেন।
আর তাই এখন যা পাচ্ছেন, তা তাঁকে
উনিশ দিক বা উনষাট, কি আর এসে গেল তাতে?

আমি জানি, তোমরা একে সিজোফ্রেনিক বলো
কিন্তু কি আর এমন হ্রাস-বৃদ্ধি তাঁর,
যে হেটে চলেছে এই স্বপ্নের পথ ধরে?
=============================
মাত্র সাতদিনের স্মৃতি নিয়ে একজনকে আমি
পয়ষট্টি বছর পথ চলতে দেখেছি-
আমার তো আছে পুঁজি, দু’সপ্তাহের স্মৃতি।
জীবনের বাকি কিছুটা কাল কাটানো
কি এতটাই কঠিন?
কি করে ভাবলে তুমি, বলতো?

৭৪৬ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “দুটি কবিতা”

    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      তোমাকে না টানায় দোষের কিছু নাই।
      এই দুইটাতে ছিল কিছু টুকরো ভাবনা সাজানোর আর এক অদ্ভুত গল্প বলার চেষ্টা।
      রাত দুপুরে ভাবনাগুলো যে সাজাতে পারি নাই আর গল্পটাও যে পূর্নতা পায় নি তা খুব ভালোই বুঝতে পেরেছিলাম।
      তাও ব্লগ বলেই পোস্ট করলাম এই ভেবে যে দেখি কিছু ফিড ব্যাক পাই কিনা।
      ভালোই ফিডব্যাক পেলাম।
      দেখি এই ফিডব্যাকগুলো নিয়ে কিছু কাজ করে কিছুটা ইম্প্রুভ বা রিরাইট করা যায় কিনা?


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।