কাব্যধর্মি ধারাবাহিক নাটিকা – ১ম ও ২য় কিস্তি

এটা একক অভিনয়ের জন্য লিখার প্রক্রিয়াধীন একটি কাব্যধর্মি নাটিকা। একক অভিনয়, একক মূকাভিনয় (নেপথ্য বর্ননার সাথে), অথবা একক নৃত্যাভিনয় যে কোন মাধ্যমেই এটা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব বলে এটার লেখক মনে করেন। তবে ডাইরেক্টর যেটা সবচেয়ে ভাল মনে করবেন, সেটা করার স্বাধীনতা তার থাকবে। লিখা শেষ হলে এটা প্রযোজনায় লেখকের কোন অনুমতি লাগবে না। তবে লেখককে জানানো হলে ও ফেসবুকে ছবি প্রকাশ করে লেখককে ট্যাগ করা হলে তিনি খুবই খুশী হবেন।

(আপাদমস্তক সাদা পোশাকে ঢাকা একজন নারী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকবেন। নেপথ্যে ভেসে আসবে বিচারকের কন্ঠ)
(বিচারক) – আসামি মিতু মাহমুদ, পিতা মরহুম বদরুল মাহমুদ। এই প্রেমাদালতে আপনার বিরুদ্ধে আনিত মন ভাঙ্গার একাধিক অভিযোগ আপনি শুনলেন। এইবার আপনি বলুন, আপনি কি দোষি নাকি নির্দোষ?

(আসামী) – মহামান্য আদালত:
আমার বিরুদ্ধে আনা যাবতিয় অভিযোগ আমি শুনলাম।
আমি দেখলাম, আপনারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে
আমার বিরুদ্ধে যাবতিয় সাক্ষ্য-প্রমান সংগ্রহ করেছেন,
বিচারের উদ্দেশ্যে তা উপস্থাপন করেছেন।
যে যে অভিযোগ আপনারা উত্থাপন করেছেন,
আপনাদের উপস্থাপিত এইসব সাক্ষ্য-প্রমানে
তার সব কটিই অত্যন্ত সুচারুভাবে
প্রমানিত হয়ে যাবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

এখন পর্যন্ত আমি,
আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত কোন অভিযোগ অস্বীকার করি নাই।
এখন পর্যন্ত আমি,
আনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিজেকে নির্দোষ দাবী করি নাই।
এখন পর্যন্ত আমি,
জানতে চাই নাই, আমার বিচারে এই আদালতের এখতিয়ার আছে কিনা?
এখন পর্যন্ত আমি,
আপনাদের কোন কার্যক্রমকে উচ্চ-আদালতের দৃষ্টতে আনি নাই।

মহামান্য আদালত:
আমার এই কর্মকান্ড দেখে আপনাদের কি
একবারও মনে হচ্ছে না যে-
আমি আপনাদের এই আদালতে স্বেচ্ছায় বিচারের জন্য
নিজেকে সমার্পন করতে সম্পুর্ন প্রস্তুত?

তা যদি মনে হয়েই থাকে,
মহামান্য আদালত,
এক্ষণে আপনারা কি এই ভেবে বিচলিত যে,
কেন আমি এখনো আমার স্বীকারক্তি প্রদানে
অথবা নিজেকে দোষী ঘোষণা করতে
এতটা কলক্ষেপেন করছি?

হ্যাঁ, মহামান্য আদালত,
আপনারা ঠিকই ধরেছেন।
নিজেকে দোষি বা নির্দোষি ঘোষনার আগে
আমার কিছু বলার আছে
আর আজ অন্ততঃ আমি তা বলতে চাই-ই চাই।

এতকাল অনেক কিছুই তো সয়ে গেছি
দেহে এবং মনে
কেউ কখনো শুনতে চায়নি,
জানতে চায়নি, প্রশ্ন করেনি,
আমার কিছু বলার ছিল কিনা?
আজ যখন শুনতে চাইছেন,
আমি এত্তো এত্তো মন ভেঙ্গেছি কিনা?
শোনাবো, অবশ্যই শোনাবো তা –
কিন্তু তার আগে শুনতে হবে,
আমারও কিছু কথা।

মহামান্য আদালত, আমি কি আমার
সেই বক্তব্য শুরু করার অনুমতি পেতে পারি?

(নেপথ্যে বিচারকের কন্ঠে শোনা যাবে)
(বিচারক)- অনুমতি দেয়া হলো

প্রথম কিস্তি শেষ
====================================
দ্বিতীয় কিস্তি শুরু

মহামান্য আদালত:
আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলি
বর্নে-শব্দে-বাক্যে এমনভাবে বিন্যাসিত
যা শুনে মনেহয়,
আমি যেন দুরতর কোন দ্বীপ থেকে আসা
অজানা এক প্রানী।
আমার একমাত্র কাজই হলো নির্বিচারে
পুরুষ-ভক্ষন।
আমি যেন এক ঘৃন্য পুরুষ-খেকো।

প্রসিকিউশন কর্তৃক আমাকে নিরাভরন করার এই প্রচেষ্টাতে
আমি বিন্দুমাত্রও বিচলিত হই নাই।
অপছন্দের নারীকে যুগযুগ ধরে এইভাবেই তো
প্রকাশ্যে নিরাভরন করে গিয়েছেন ক্ষমতাসীনগন।
ওঁরা অবশ্য কিছুই বলার সুযোগ পাননি প্রত্যুত্তরে।
তবে আমি কিন্তু এই একটা ব্যাপারে ওঁদের থেকে এগিয়ে,
সুযোগ পেলাম আজ কিছু উত্তর দেবার,
আমার কথা শুনাবার।

মহামান্য আদালত:
আমাকে “নির্বিচারে পুরুষ-খেকো” হিসাবে
চিহ্নিত করার আগে, একটু ভাবুন দেখি–
যে তিনজন পুরুষের মন ভাঙ্গার অপরাধে
আজ আমি এই প্রেমাদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছি,
তাঁদের মাঝে আমার শিকার হবার মত
কি কি মিল আর কি কি অমিল আছে?

লক্ষ করুন প্রথমেই যে তারা তিনজনই প্রতিনিধি
তিনটি ভিন্ন দশকের-
ঘটনাকালে তরুনজন ছিলেন সদ্য ত্রিশে
জেষ্ঠ্যজন পঞ্চাশ ছুই ছুই
আর মাঝের জন? এদুয়ের মাঝে-
অর্থাৎ প্রায় চল্লিশ।
এইভাবে বেছে বেছে তিনটি পূর্ন দশকের
পুরুষ খুজে নেয়াটাকে কি খুবই কাকতাল বলে
মনে হচ্ছে, হে মহামান্য আদালত?

যদি মনেহয়, আসুন তো দেখি
পর্বরতি বৈশিষ্টখানি।

আমার এই তিন শিকারের
একজন পেশাজীবী,
একজন আমলা আর
অন্যজন শিক্ষক অর্থাৎ – বুদ্ধিজীবী।
কি তাজ্জব ব্যপার, তাই না?
আবারও বেছে বেছে এমন তিনজন নির্বাচিন পেরুলো-
সমাজ সংসারে যারা সবচেয়ে গুনি বলে
স্বীকৃত, প্রমানিত, ও সর্বজন শ্রোদ্ধেয়।

মহামান্য আদালত, এখনো কি আপনার কাছে
পুরো নির্বাচনি প্রক্রিয়াটাকে কাকতাল
বলেই মনে হচ্ছে?
এখনো কি আপনি বলবেন
আমার বিশেষ কিছু ছিল না প্রমানের?
যদি তাই হয়, দোষ দেবো না,
শুধু আমন্ত্রণ জানাবো আরেকটা বৈশিষ্ট্যের বিচারে-

আমার এই তিন শিকারের-
একজন বিবাহিত, একজন বিচ্ছিন্ন
আর তৃতীয়জন এখনো অকৃতদার।
এখনো ফুরসৎ পাননি
জীবন সঙ্গি জোটাবার।
এখনো কি বলবেন, হে মহামান্য আদালত
এসবই আসলে ছিল কাকতাল?
নাকি ভেবে দেখবেন যে,
খুবই ঠান্ডা মাথায় আমি
এমন সব পুরুষ নির্বাচন করেছি
যাঁদের নুন্যতম সংখ্যায় নির্বাচন করেও
আমি কি দারুন ভাবে নাক ভাঙ্গতে
পেয়ে গেছি, নাক উঁচু হামবড়া
তথাকথিত উঁচুতলার
সকল পুরুষ প্রতিনিধিগিনকে,
ঠিক যেমন ল্যাটিন-স্কয়ারের ব্যবহার করে
বেছে নেয়া হয় নুন্যতম সংখ্যায় কিন্তু বিবিধ
বৈশিষ্ট্যের যাবতিয় নমুনা-সদস্যকে।

আর তা করেছি,
আমার শিকার বানাতে-
প্রেম দিয়ে, দেহ দিয়ে, নারীত্বের
যাবতিয় ছলা-কলা দিয়ে,
যেন দিনে দুপুরে আমি প্রমান করে দিতে পারি
কি ভিষণ দুর্বল এই পুরুষ জাতি-
নারীদের কাছে।

যেন আমি প্রতিশোধ নিতে পারি
গোটা পুরুষজাতির বিরুদ্ধে,
একদিন যারা তাদের তিন প্রতিনিধি দিয়ে
অপমান করেছিল আমার আপার সম্ভবনার
অবজ্ঞা করেছিল আমার নারীত্বের
অবহেলা করেছিল আমার সৃষ্টিশিলতার, সামর্থের।
আমাকে বুঝিয়েছিল-
নারী মানেই অসমপুর্নতা, বিকলাঙ্গতা
আমাকে বুঝিয়েছিল-
নারী মানেই ছায়াসঙ্গি, নির্ভরশীল।
একজন সক্ষম সমর্থ পুরুষ ছাড়া
আমার নাকি কোনই গতি নেই।

মহামান্য আদালত,
আজ আপনার সামনে দাঁড়িয়ে
আমি চিৎকার করে, গলা ফাটিয়ে জানিয়ে দেবো-
কত, কত ভুল ছিল ঐসব উচ্চারন!
তুমি কে? যে শুনিয়েছিলে ঐসব অবাস্তব কথকথা?
তুমি কি কোন বুদ্ধিজীবী?
তুমি কি কোন পেশাজীবী?
কিংবা বিরাট কোন আমলা?
তুমি তরুন? পৌঢ়?
কিংবা এই দুইয়ের মাঝামাঝি কেউ?
নাকি তুমি বিবাহিত, বিচ্ছিন্ন অথবা এখনো অকৃতদার?
শোন! জেনে রাখো,
আমি তোমাদের সব্বাইকে চিনি,
অস্থি ও মজ্জায় চিনি,
রক্তে-মাংশে-চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে চিনি,
বাইরে যতটা হামবড়া গুরু-গম্ভির
অথবা শক্ত-পোক্ত ভাব নিয়ে
থাকোনা কেন তোমরা, ঠিক ঠিকই জানি,
ভিতরে ভিতরে কি ভিষন আশহায়
আর স্নেহের কাঙ্গাল তোমরা সবাই।
মাঝে মাঝে তাই ওরিয়ানা ফ্যালাসির মত
আমারো বলতে ইচ্ছা করে তোমরা পুরুষরা আসলেই
সামনে লেজধারী কিম্ভুত জীব ছাড়া
আর নও কিছুই!!!

চলবে……

দৃষ্টি আকর্ষনঃ প্রথম পাতায় অলরেডি দুইটা লিখা আছে বলে নতুন ব্লগাকারে দেয়া গেল না। আগেরটায়ই ঢুকালাম। কবে যে অন্য লিখাটা দ্বিতীয় পাতায় যায়, সেই অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন গতি নাই…

২,৯১৬ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “কাব্যধর্মি ধারাবাহিক নাটিকা – ১ম ও ২য় কিস্তি”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :boss: :boss:

    "আজ যখন শুনতে চাইছেন,
    আমি এত্তো এত্তো মন ভেঙ্গেছি কিনা?
    শোনাবো, অবশ্যই শোনাবো তা –
    কিন্তু তার আগে শুনতে হবে,
    আমারও কিছু কথা।"

    চমৎকার, ভাইয়া! পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    এইটা তো ছিল ভূমিকা।
    পরবর্তি পর্বটা লিখতে নিজেই অনেক চাপ বোধ করছি।
    তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরলাম ঐ কারনেই।
    দেখি, কত তাড়াতাড়ি লিখে ফেলতে পারি তা?

    পছন্দ ও অপেক্ষা করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  3. মুজিব (১৯৮৬-৯২)

    :clap: :clap: :clap:


    গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

    জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    দারুন পারভেজ ভাই, যাযাবর এর জনন্তিক এর কথা মনে পড়ে গেল 🙂

    অফটপিকঃ আপনি আপনার পুরোনো লেখার তারিখ বদলে দ্বিতীয় পাতায় পাঠিয়ে দিতে পারেন।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  5. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :boss: :boss: :boss: :boss:

    "আমি তোমাদের সব্বাইকে চিনি,
    অস্থি ও মজ্জায় চিনি,
    রক্তে-মাংশে-চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে চিনি"

    মানুষ চেনা আর পুরুষ মানুষ চেনার মাঝে ফারাক রয়েই যায়!
    চমৎকার লেখা, ভাইয়া! চলতে থাকুক! 🙂

    জবাব দিন
  6. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    উইকএন্ড আসার আগে বিস্তারিত মন্তব্যে যেতে পারছিনা পারভেজ ভাই। দুটো শব্দ ঠিক করতে হবে - মূকাভিনয় হবে, মুখাভিনয় নয়।
    নির্দোষ হবে, নির্দোষী নয়।

    জবাব দিন
  7. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    একবার ভাবছিলাম নিজের কন্ঠ মেয়ে মেয়ে করে আমিই আবৃত্তি করে ফেলবো নাকি। 😛


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      আইডিয়াটা মন্দ না!!!

      পৃথিবীর সহজতম একটা কঠিন প্রশ্ন হলো:
      "জুলিয়েটের চরিত্রে অভিনয় করা কোন অভিনেত্রীকে শেক্সপিয়ার ঐ চরিত্রের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মনে করতেন?"

      উত্তর: কেউ না। কারন তখনো কোন অভিনেত্রী নয়, কেবল অভিনেতারাই নায়িকার সাজে ঐ অভিনয়গুলা করতেন।
      হেড়ে গলার কাউকে নিশ্চই জুলিয়েটের সাজে মানাতো না। তাই গলা তো চিকন করতে হতো, তাই না?

      তোমার আইডিয়াটা শুনে সেই কথাটাই প্রথমে মনে পড়ে গেল...
      =)) =)) =))

      আর হ্যাঁ, আর দুটো পর্ব মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু শাস্ত্রীয় সঙ্গিত উৎসব আর ট্যাক্স রিটার্ন জমা করনের চক্করে লিখা হয়ে উঠছে না।
      লিখবার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ভালই করেছে।
      এখন লিখে ফেলতে হবে চট করে... (সম্পাদিত)


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মামুন

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।