তারুন্য

বার্থডে আসে বার্থডে যায় বয়স বাড়ে দেহের।

মনের বয়স কি বাড়ে?

মনের বয়স বাড়তে যেমন বার্থডে লাগে না। তেমনি আবার শত বার্থডেতেও কারো কারো মনের বয়স বাড়ে না।

বার্থডে যতই আসুক না কেন, মনের বয়স থেমে থাক একজায়গাতেই।

কলেজে থাকতে আমাদের অনেকেরই লিখালিখির গুরু ছিলেন এন্ডু অলক কুমার দেওয়ারী ভাই। তার উৎসাহে, প্ররোচনায়, আদেশে, প্রশ্রয়ে কবিতা লিখায় হাতে খড়ি তখন।

কলেজ ছাড়ার পর কেন যেন আর লিখতে ইচ্ছা করে নাই দীর্ঘ্যদিন।

আজকাল সিসিবিতে কবিতা দেখে দেখে হঠাৎ হঠৎ পদ্যাক্রান্ত হই। সংক্রামিত হই।

তারুন্য সেলিব্রেট করতে তাই লিখে ফেললাম কয়েক ছত্র।

বহুদিন পর কাঁচা হাতে লিখা, ক্ষমা-সুন্দর পাঠ কাম্য। তবে কথা আছে একখানা—

এই পদ্যগুচ্ছ আজকের সেই সব বার্থডে বয় বা বার্থডে গার্ল ফেবু বন্ধুদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে চাচ্ছি, আজ যারা বয়স বাড়া নিয়ে উৎকন্ঠা বোধ করছে বা করছেন।

“হে বন্ধু মোর, বয়স বাড়ুক কিন্তু তরুন্য টিকে থাক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত………”

(১)

তরুণ:
তুমি থাকো সবখানে
নিদ্রায় ও জাগরনে
তুমি থাকো মনে
শয়নে স্বপনে

তরুনী:
তুমি আছো বুকের মাঝে
কুচি দেয়া শাড়ির ভাঁজে
তুমি আছো নিস্তব্ধতায়
সংগোপন ভালো লাগায়

তরুনঃ
ভাসতে চাও মিলন ভেলায়
আমি কিন্তু আছি
খুবই কাছাকাছি
নিরন্তর তোমারই অপেক্ষায়

তরুনীঃ
ভাসবো বলেই বেরিয়েছি
লোক লজ্জা এড়িয়ে
শহর নগর পেরিয়ে
এই দেখো না তোমায় ছুয়েছি

(২)

আমি তোমার মুর্তমান
নিয়ত বর্তমান
আমি তোমার হাতের বালা
গলার মুক্তোমালা
আমি তোমার চুলের ফিতা
খোঁপার অপরাজিতা
আমি তোমার কানের দুল
পুজার ফুল
আমি তোমার সকাল সন্ধ্যা
রূপচর্চ্চার সর্পগন্ধা
আমি তোমার বেলা শেষের গন্তব্য
শেষ মন্তব্য

(৩)

যদি মুখ ফিরিয়ে রাখো
ভেবো না
তোমায় আমি ছোব না
মুখ ঘুরিয়ে দেখো
এই যে কেমন কিলবিলিয়ে
আমার আঙ্গুল উঠছে বেয়ে
তোমার দেহে
ঘামে ভিজে উঠছে নেয়ে
কন্ঠ নাসা সব ছাপিয়ে
আমার দেহে

সেই তো তবে মুখ ঘোরালে
সেই তো তবে চোখ নাচালে
সেই তো তবে দীপ জ্বালালে
মাঝ রাতে
সেই তো তবে ঠোঁট ছোঁয়ালে
সেই তো তবে বুক কাঁপালে
সেই তো তবে গা ভেঁজালে
শেষ রাতে

(কবিতা লিখতে বসে অলক ভাই-কে খুব মিস করছি। ছোট বেলায় লিখাটাই ছিল আমার কাজ। ওটা পড়ে টরে দাড় করানোটা ছিল অলক ভাইএর কাজ। এবং তা যতি-চিহ্নসহ। অলক ভাইএর অনুপস্থিতিতে এই পদ্যগুচ্ছ যতি-চিহ্ন বিহিনই থাক। “দাদা, এভাবে চলে গেলে কিছু কিছু জিনিষ তো অপুর্ন থাকবেই। থাকুক না এই পদ্যগুচ্ছও অসম্পূর্ন – তোমার অনুপস্থিতিতে”)

৭০০ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “তারুন্য”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    "আজকাল সিসিবিতে কবিতা দেখে দেখে হঠাৎ হঠৎ পদ্যাক্রান্ত হই" 🙂

    কবিতার ভূবনে সুস্বাগতম! আমরা আরো একজন কবি কে পেলাম সিসিবিতে! 🙂 লিখতে থাকুন মুচমুচে সব কবিতা আমাদের জন্য!

    অটঃ এন্ডু অলক কুমার দেওয়ারী কি ডিএকে দেওয়ারী স্যার এর ছেলে? স্যার আমাদের কলেজে ভিপি ছিলেন, পরে রংপুরে চলে যান বদলী হয়ে!

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    পোষ্ট করার পর প্রায় ১২ ঘন্টা কেটে যাচ্ছিল, অথচ কোন প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য না দেখে, একটু চিন্তাযুক্তই হয়ে গেলাম, কি ব্যাপার? এতই পচা, মানে মন্তব্যের অযোগ্য হয়ে গেল নাকি কবিতাগুলো?
    আপু, তোমার এই কমেন্ট তাই এক পশলা বৃষ্টির মতই ভাল লাগালো।
    কবি-টবি কিছু না।
    কবিতা যে আবার লিখতে পারবো, সেই আস্থা ছিল না। এখনো চিন্তায় আছি কবিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে। তারপরেও এই সম্ভাষন, এই প্রশংসায় আপ্লুত হলাম

    হ্যাঁ আপু ঠিক ধরেছো। আমাদের অনেকেরই গুরু "অলক দা" জনাব ডিএকে দেওয়ারী স্যারের জেষ্ঠ্য পুত্র ছিলেন।
    পিতার মতই শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নেন।
    চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত থাকা কালে এক অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটিনায় নিহত হন। সেও তো ছ'বছর হ'লো।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  3. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর সাথে কাজ করি। সেদিন কথা প্রসংগে একটি মেয়ে বলে উঠলো, 'oh I will become 21 next month. I don't want it to be.." মৃদু হেসে উত্তর দিলাম, "at least you have nine more years left in the twenties. I have only two." চমকে উঠেছিল বাকি সবাই। বলার পরে বুঝতে পারলাম আমি শারিরীক বয়সে কতটা আদু ভাই সেটা মাত্র বলে দিলাম।

    দুটো পরিবর্তন ইদানিং খেয়াল করিঃ ১) সারারাত জেগে থেকে কাজ করলে পরের দু'দিন মরার মত ঘুমাতে হয় নাইলে জুত পাওয়া যায় না। ২) ৬০-৭০-৮০র দশকের গান আরেকটু বেশী ভাল লাগে।

    কবিতাটি ভাল লাগলো। বেশ ভেবে চিন্তে সময় নিয়ে পড়লাম। 🙂


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      কবিতা ভাল লাগায় কৃতজ্ঞ।
      কবিতায় যে অনীহা দেখছি সবার, ভবিষ্যতে আর লিখার উৎসাহ পাচ্ছিলাম না।
      ভেবে দেখি, কি করা যায়......


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
      • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

        চরণ মেলানো বসানো, থিম, সব মিলিয়ে কবিতা লেখাটা জটিল লাগে। তারপরেও যে চেষ্টা করিনি তা নয়। তবে সাহিত্য বিষয়ক লেখালেখির জন্য পরিবেশ, অনুভূতি, আগ্রহ সবকিছু মেলাতে হয়। অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়। এককালের আজিজ মার্কেটের লিটল ম্যাগের কবি, পরবর্তীতে সব ভুলে বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠা আমার কাকার একটা বই আছে, নাম "গ-তে গদ্য ক-তে কবিতা।" ব্যবসা জগত হতে হঠাৎ গায়েব হয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে বাসায় পড়ে থাকতেন। তখন এই বইটি লিখেছিলেন। ছোট ছোট এক প্যারার লিখা। একবার পড়লে মনে হয় ছোট ছোট গল্প আমার মনে হয় গদ্য কবিতা। কেমন জানি। উনি বলেছিলেন তখন একটা ভাইব কাজ করছিল। লিখে ফেলেছিলাম।


        \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
        অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

        জবাব দিন
        • পারভেজ (৭৮-৮৪)

          এইটা ঠিক বলেছো। আমিও ব্যাপারটা খুব মানি। কবিতা লিখা যায় না। কবিতাকে আসতে হয় নিজ থেকে।
          সত্যিই, একটা ভাইব লাগে।
          ভাইব ছাড়া এই জিনিষ আঙ্গুল গলে বেরোয় না।

          সেই যে চুরাশি-পচাশিতে শেষবারের মতো কিছু প্রকাশ যোগ্য পংক্তিমালা বেরিয়েছিল "তারপর কত চন্দ্রভুক অমবস্যা কেটে গেল" - আঙ্গুল গলে কোন কবিতা আর বেরুলো না। প্রায় ত্রিশ বছর পর কিভাবে যেন আবার কবিতায় পেলো।
          মাঝের সময়টাতে কবিতা "কোথায় হারালো? মাকাল লতার তলে শিশিরের নীল জলে কেউ তার জানে না সন্ধ্যান"

          দুচার বার যে কলম হাতে বসার চেষ্টা করি নাই, তা না। কিন্তু যা বেরিয়েছে তাঁকে আর যে নামেই ডাকা হোক না কেন, কবিতা বলাটা অন্যয় হয়ে যেতো।
          ভীষন অন্যয়...


          Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

          জবাব দিন
      • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

        নিজের আনন্দে লিখবেন, ভাইয়া! সব কিছুর শুরু কিন্তু হয় নিজেকে আনন্দ দিতে! আমরা সবাই অন্যকে আনন্দ দিতে এতো ব্যস্ত থাকি যে নিজের দিকে তাকাই না বলতে গেলে। মেহমান এলে বোন চায়নার ডিনার সেট বের করে ক্যান্ডেল লাইটে রাতের খাবারের আয়োজন চলে অথচ নিজেরা খাই হয়তো স্টাইরো ফোমের প্লেটে! 😛 নিজেকে এন্টারটেইন করতে থাকেন, দেখবেন এক সময় মোমের আলো না থাকলেও পাঠক তৈরি হয়ে গেছে নিজের অজান্তেই! 🙂

        শুভ কামনা রইল আমাদের কবির জন্য!

        জবাব দিন
  4. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    পুরো সপ্তা এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, 'বিস্তারিত' ক্লিক করে পুরো পোস্টটা একনজর দেখা পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি।
    লেখায় মন্তব্য না এলে লেখকের একটু উৎকণ্ঠা হয়ই, তবু পাঠকের জায়গা থেকে আমিও সৎ থাকতে চেষ্টা করি বরাবর। সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ে কিছু বলবার চেষ্টা করি। মন যোগানো কথা প্রায় বলিনা এ প্রতীতি নিয়ে বলছি -- অসাধারণ লেগেছে পারভেজ ভাই। কবিতা অনিয়মিত লেখার কিছু এডভান্টেজও আছে --- একদম আনকোরা ভাষায় কিছু কথা বেরিয়ে আসে। পাঠকের জন্যে একধরণের নভেলটি বলতে পারেন অভিজ্ঞতাটুকু। হাত খুলে লিখতে থাকুন।

    জবাব দিন
  5. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    প্রথমে সাবিনাকে বলিঃ
    আপু লিখা লিখির শুরুটা ছিল কিন্তু নিজের আনন্দেই।
    পরে কিছু পাঠক পেয়ে গেলাম। এখন সবসময়েই আর নিজের আনন্দে লিখা হয়ে ওঠে না। মাঝে মাঝে ওদের জন্যও লিখতে হয়।
    এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা।

    এবার নূপুরকে বলিঃ
    উৎকন্ঠা যতটা নিজের লিখার মান নিয়ে, তারচেয়ে ঢেঁড় বেশি পাঠকদের বিরক্তি উৎপাদন করছি কিনা, সেটা নিয়ে।
    লিখালিখির একটা প্যাটার্ন দাঁড়িয়ে যাওয়ায় নতুন ধরনের কিছু লিখলে আজকাল এটা হয়।
    আশা করছি কেটে যাবে শীঘ্রই।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  6. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আমিও কিছুদিন আগে আরেকটু বড় হলাম, তবে সে নিয়েই অবশ্য চিন্তিত নই মোটেই। আমার মোটো হলো বড় হও, বুড়ো না 🙂

    ছন্দ মিলিয়ে মিলিয়ে লেখা কবিতা খুব ভাল লাগলো :thumbup:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।