মেডিক্যাল! মেডিক্যাল!!

বছর কয়েক আগের ঘটনা। এক ব্যাংকে গেছি কি এক কাজে। ম্যানেজারের রুমে বসে আছি। দেখি এক বাবা-মা মেয়েসহ এলেন। নিজেদের সব সঞ্চয় তুললেন।

কিছুক্ষণ পর মেয়েটার নানা এলেন। সাধারন বেশভুষার মানুষ। প্যাকেটে করে আনা অনেক গুলো ৫০০ টাকার নোট তুলে দিলেন নাত্নির হাতে।

আরও কিছুক্ষণ পর মেয়েটার দাদা এলেন। আরও কিছু টাকা তুলে দিলেন।

মোট দরকার সাড়ে সাত লাখ। আজ জমা দেয়ার শেষ দিন। আর মাত্র দুঘন্টা বাকি। প্রাইভেট মেডিক্যালের এডমিশনে এই এক চুড়ান্ত ফাজলামি। পাঁচ বছরের পুরো টাকাটাই একবারে দিতে হয় শুরুতেই। সব গুনে দেখা গেল আরও হাজার পঞ্চাশেক লাগবে। কিন্তু কোথায় পাওয়া যাবে এই সবচেয়ে দরকারি শেষ পঞ্চাশ হাজার টাকা?

ভদ্র মহিলা হাতের চূড়ি খুলে দিলেন। স্বামী নিষেধ করলেন।

অনেক লজ্জা নিয়ে ভাইদের কাছে একে একে ফোন করা শুরু করলেন।

“মাত্র পঞ্চাশ হাজার বাকি। তোর ভাবী গহনা খুলে দিচ্ছে। কি যে করি?” ছল ছল চোখে বসে আছেন বাবা আর শশুর। অন্যদিক থেকে কি উত্তর আসছে বোঝা যাচ্ছে না। শুধু বুঝলাম ভাই-বোন-ভগ্নীপতি সব সিলেবাস শেষ। এখন অন্যদিকে হাত বাড়াতে হবে।

 একই রকমের মলিন মুখে ভদ্রলোক একের পর এক ফোন করে যাচ্ছেন আর একই কথা বলে যাচ্ছেন সবাই কে। হাতে আর ঘন্টাখানেক সময় আছে। আমার কাছে আছে হাজার পঞ্চাশেকের চেয়েও বেশী টাকা তখন পকেটে। ম্যানেজার অর্থপুর্ন দৃষ্টতে তাকাচ্ছেন আমার দিকে। আমিও ম্যানেজারের দিকে অর্থ পূর্ন চোখে তাকিয়ে ঘাড় কাত করলাম।

আর এরই মধ্যে উচ্ছসিত হয়ে অন্য কোন বন্ধুকে পেলেন ভদ্রলোক। তাকেও বললেন একই কথা কিন্তু কি শুনলেন, জানি না। ফোনটা বন্ধ করতে করতে, নীচের দিকে তাকিয়ে আবেগ দমন করছেন। করতে করতে শুধু বলতে পারলেন, আসছে…

এরপরেই ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললেন।

পুরো ঘরের পাঁচটি মানুষই হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো।

ম্যানেজার সাহেব বললেন “পারভেজ সাহেব, চলেন আমরা বাইরে গিয়ে একটা সিগারেট খেয়ে আসি।”

১৫ টি মন্তব্য : “মেডিক্যাল! মেডিক্যাল!!”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)
    ম্যানেজার সাহেব বললেন “পারভেজ সাহেব, চলেন আমরা বাইরে গিয়ে একটা সিগারেট খেয়ে আসি।”

    স্বস্তি উদযাপনের সাথে নিকোটিনটা খুব যায়। সাড়ে সাত লাখ টাকায় মেডিকেল মানে তো বেশ অনেক বছর আগের কথা বলছেন। মানে ২০০৫-৬ এর দিকের ঘটনা! ভুল বললাম নাকি?


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  2. সামিউল(২০০৪-১০)

    এই জিনিসটা পুরাই ফাইজলামি...... 😡 😡 পাঁচ বছরের টাকা একেবারে দিয়ে দেয়া। এরা মানুষজনকে কী ভাবে? টাকার গাছ??

    নাকি একেবারে পুরো টাকা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আটকিয়ে ফেলা হয়? ~x( ~x(


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  3. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    "পড় আর না পড়, ছাড়াছাড়ি নাই" 😛

    আমি ভাবছিলাম, মা বাবাকে ভিখিরী বানিয়ে মেডিকেলেই বা পড়তে হবে কেনো? জগতে আরো কত উপায়েই না মানুষের সেবা করা যায়!

    আমাদের এখানে প্রতি সেমেস্টারের বিল সেই সেমেস্টারে দিলেই চলে। এমনকি প্রতি মাসে ইন্সটল্মেন্টে দিতে পারা যায়...

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।