ব্রাজিল বিশ্বকাপের টক-ঝাল-মিষ্টি

বিশ্বকাপ শেষের প্রায় কাছাকাছি। সৌভাগ্যবশত বিভিন্ন মাধ্যমে বিশ্বকাপ নিয়ে বিস্তর কলমবাজি, মতান্তরে কী-বোর্ডবাজি করলাম। অনেকে তাতে অংশগ্রহণও করলেন। সবাইকে ধন্যবাদ এভাবে সাড়া দেওয়ায়। শীঘ্রই বিশ্বকাপের যবনিকা নামতে যাচ্ছে। কিছু কিছু কলমবাজিরও। যেমন, পূর্বাভাস সম্পর্কিত বিশ্লেষণগুলির। পোস্টমর্টেম অবশ্য আরও কিছুদিন চলবে। তা চলুক…

সেমিফাইনালগুলো নিয়ে কিছু বলি।

সবচেয়ে ভালো দিক হল, যে চারটা দল সেমিফাইনালে আছে তারা সবাই নিঃসন্দেহে নিজেদেরকে কাপের অন্যতম দাবিদার প্রমাণ করেই এই পর্যন্ত এসেছে। যারা বাদ পড়েছে তাদের কারও জন্য এ রকম মনে হচ্ছে না যে, “আহারে, কত ভালো দলটা, একটুর জন্য বাদ গেল।”

যে চারটা দল সেমিফাইনালে আছে তারা সবাই নিঃসন্দেহে নিজেদেরকে কাপের অন্যতম দাবিদার প্রমাণ করেই এই পর্যন্ত এসেছে

আবার যে ক’টা টাইব্রেকার হল, তুলনামূলকভাবে যোগ্যতর দলই প্রতিটাতে উতরেছে। নাকে-মুখে ৯০ + ৩০ মিনিট পার করে ‘ছুৎ’ করে কী একটা জাদু দেখিয়ে টাইব্রেকারের উপর ভর করে পরের ধাপে কেউ ঢোকেনি। বোঝা যাচ্ছে, সবগুলো দলই টাইব্রেকারকে খুব সিরিয়াসলি নিয়ে সেজন্য স্ট্র্যাটিজি নির্ধারণ ও পৃথক অনুশীলন করেছে।

বত্রিশ বছর হয়ে গেল বিশ্বকাপে টাইব্রেকার প্রচলনের। চার ধাপে নকআউটের মতোই টাইব্রেকারও এখন এক প্রতিষ্ঠিত সত্য। কোনো নিরীক্ষা নয়, অথচ এখনও কেউ কেউ এটা মানতে পারেন না। আর কোনো কোনো মিডিয়া তো ‘ভাগ্যপরীক্ষা’– এই গান গাইতে গাইতে কান পচিয়ে দিল। তাদেরই-বা দোষ কী দেব? কিছু শ্রোতা-দর্শক-পাঠক যদি তা শুনতে-পড়তে চায়, তারাই-বা কেন তা পরিবেশন করবে না?

ভাগ্যপরীক্ষা হল এফর্টলেস বা মিনিমাম এফর্টে যেটা হয়, যেমন টস। যে জিনিস নিয়ে রীতিমতো অনুশীলন চলছে, স্ট্র্যাটিজি ঠিক করা হচ্ছে, এমনকি এবার তো দেখা গেল বিশেষজ্ঞ গোলকিপারও আনা হয়েছে কেবলই টাইব্রেকার মাথায় রেখে, সেখানে টাইব্রেকারকে ভাগ্যপরীক্ষা নাম দেওয়াটা এবং এই নামে বর্ণনা করার চেষ্টাকে অর্বাচিনতা বলে গণ্য করা হবে না কোন যুক্তিতে?

টাইব্রেকার যদি এতটাই অগ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে অমীমাংসিত থাকা নকআউটের খেলায় ফলাফলটা আসবে কীভাবে? নকআউটই-বা হবে কীভাবে?

কয়েক দশক আগে বাতিল করে দেওয়া ম্যাচ রিপ্লেই কি তাহলে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে টাইব্রেকারের বিকল্প হিসেবে? তার জন্য যে সাফারিং, সেটার কী হবে? ওটা কেন বাতিল করা হয়েছিল, তা জানতে তো কারও আর এখন বাকি নেই।

৯০ মিনিটের পর আরও ৩০ মিনিট দেওয়া হল, খেলে ফল বের করার জন্য। এরপরেও ফল বের করতে না পারলে এটা ধরে নেওয়া কি খুবই অন্যয় যে “এই দুটি দল খেলে আর ফল বের করতে পারবে না?” আর তা যদি অন্যায় না হয়, তাহলে ফল বের করার জন্য কিছু প্লেয়ারের বিশেষ কোনো স্কিল পরীক্ষার যদি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেটা ভাগ্যপরীক্ষার শর্ত পূরণ করে কীভাবে?

টাইব্রেকার যদি এতটাই অগ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে অমীমাংসিত থাকা নকআউটের খেলায় ফলাফলটা আসবে কীভাবে

প্রশ্ন হল, বিশেষ স্কীলটা কী। সকল খেলোয়াড়দের জন্য তা হল স্পট কিকে উৎকর্ষতা যাচাই, আর গোলকিপারের জন্য স্পট কিক রুখতে পারার সক্ষমতা যাচাই। এই দুটো ব্যাপারই অনুশীলন করা এবং অনুশীলনের মাধ্যমে উৎকর্ষতা অর্জন সম্ভব। গত বত্রিশ বছর ধরে এটা হয়েও আসছে। এবারের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের জন্মের আগে থেকে। তারা কিন্তু জন্ম থেকেই জানে ও মানে যে, এটা ফুটবলের অংশ। আর কতদিন পার হলে সবাই সেটা জানবে ও মানবে? এরপরেও এটা ভাগ্যপরীক্ষা হয় কীভাবে?

হাজার হাজার বার কয়েন-টসের অনুশীলন করেও কিন্তু একজন অধিনায়ক বলতে পারবেন না যে, “আমি টসে জেতায় অনেক দক্ষতা অর্জন করেছি”। কিন্তু কয়েক শত বার স্পটকিক প্র্যাকটিস করেই একজন খেলোয়াড় যদি দাবি করেন যে, “আমি এখন স্পট কিক থেকে গোল করার ব্যাপারে অনেক কনফিডেন্ট’’, তাকে “না, ওটা ভাগ্যপরীক্ষা, প্র্যাকটিস করার কিছু নেই”– এই ঝাড়ি গেলানো যাবে কীভাবে?

যাহোক, মূল প্রসঙ্গে যাই। বলছিলাম, চারটা দলই নিঃসন্দেহে যৌক্তিকভাবে শিরোপার দাবিদার। সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত কে যে ফসল তুলে আনবে সেটা পরিষ্কার করে কারও পক্ষে বলা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিটা দলেরই অনেক সামর্থ্য আছে, আবার কিছু কিছু দুর্বলতাও আছে। খেলার দিন তারা নিজেদের সামর্থ্যের কতটা ব্যবহার করতে পারে আর প্রতিপক্ষের দুর্বলতার কতটা সুযোগ নিতে পারে সেটাই নির্ধারণ করে দেবে শেষ হাসিটা কে হাসবে।
এক এক করে এসবের বিশ্লেষণ করা যাক। পছন্দ অপছন্দ নয়, কেবলই বর্ণানুক্রমে।

প্রথম থেকেই আর্জেন্টিনার অতি-মেসি নির্ভরতাটাকে এবং ডি মারিয়া ও হিগুয়েনের নিস্প্রভ পারফরমেন্সকে তাদের দুর্বলতা বলেই মনে হচ্ছিল। কারণ একজন প্লেয়ার-নির্ভর দলের ট্যাকটিকস খুব সহজেই পড়ে ফেলা ও তা ভাঙার জন্য প্রতিষেধক বের করা সম্ভব। দেখা গেল তারপরও তাদের এই ট্যাকটিকস দিয়েই সাফল্যের সঙ্গেই তারা গ্রুপ পর্ব পার করল। রাউন্ড অব সিক্সটিনে গিয়ে যে উনত্রিশ বার তারা সবাই মিলে আক্রমণ চালাল, তার এগারোটিই ডি মোরিয়ার পা থেকে। এটা কি কাকতাল, নাকি পরিবর্তিত ট্যাকটিকস?

যখনই তারা বুঝল, প্রতিপক্ষ মেসিকে রুখতে ব্যস্ত, তারা এতদিন নিস্প্রভের ভান করা (?) ডি মোরিয়াকে আক্রমণের কেন্দ্রে নিয়ে এল, যার জন্য প্রতিপক্ষের সম্ভবত বিশেষ কোনো প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা ছিল না। কোয়ার্টার ফাইনালে ঘটল আরেক চমক। এদিন নিশ্চয়ই মেসি ছাড়াও ডি মোরিয়াও ছিল প্রতিপক্ষের লক্ষ্য, অর্থাৎ পরিকল্পনার অংশ। আর এদিন তারা আক্রমণের কেন্দ্রে নিয়ে এল হিগুয়েনকে।

বোঝা গেল, এতদিন ধরে আন্ডার পারফর্ম (?) করার ভানটা ছিল আসলে গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটিজির অংশ

চমৎকার ডিসেপশন প্ল্যান। বোঝা গেল, এতদিন ধরে আন্ডার পারফর্ম (?) করার ভানটা ছিল আসলে গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটিজির অংশ। সেমিফাইনালে কি তারা অন্য কাউকে কেন্দ্রে এনে তাকে দিয়ে আক্রমণ শানাবে? এত রিসোর্স কি আছে তাদের? যদি থাকে তাহলে আগের খেলাগুলোর মতো সেমিফাইনালেও ক্লিন ব্রেক অর্জন করা সম্ভব হবে। আর না হলে কঠিন হবে। তবে হবে না, এটা বলা যাবে না।

এই পর্যায়ে দুর্বলতা বলতে একটাই, ডিফেন্স তেমন কোনো কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েনি। নেদারল্যান্ডের সঙ্গে সেই রকম কোনো পরীক্ষায় পড়লে তারা সেটা কীভাবে হ্যান্ডেল করবে, তা বলা যাচ্ছে না।

ব্রাজিল মূলত নেইমার-কেন্দ্রিকই ছিল। সঙ্গে আরও কিছু খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স-নির্ভর। ওরা জ্বলে উঠতে পারলে সহজ জয় করায়ত্ত করেছে। না হলে কষ্টে জিতেছে। নেইমারের উপস্থিতির কারণে আরও কিছু খেলোয়াড় ব্যক্তিগত দক্ষতা দেখানো থেকে বঞ্চিত ছিলেন। নেইমারের অনুপস্থিতি মূল পরিকল্পনায় সমস্যা ঘটাবে কিন্তু অন্যদের দক্ষতা দেখানোর ও দল হিসেবেও নির্ভার হয়ে খেলার অনুপ্রেরণা দেবে। অন্যয়ের শিকার হলে পোয়টিক জাজমেন্ট পাবার একটা অদৃশ্য অনুপ্রেরণা যে তৈরি হয়, সেটার সুযোগ তারা নিতে পারেন কিনা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

নেইমারের অনুপস্থিতি মূল পরিকল্পনায় সমস্যা ঘটাবে কিন্তু অন্যদের দক্ষতা দেখানোর ও দল হিসেবেও নির্ভার হয়ে খেলার অনুপ্রেরণা দেবে

শুরু থেকে সকল বিভাগে যে যে সমন্বয়হীনতা চোখে পড়ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা অনেক কমে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। এখান থেকেও তারা কিছু সুবিধা বের করতে পারে কিনা, সেটাও দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। আর স্বাগতিক হিসেবে চাপের পাশাপাশি সমর্থনের কিছু বাড়তি সুবিধা তো থাকবেই।

জার্মানি ও নেদারল্যান্ড উভয়েই প্রথম থেকেই প্রতিপক্ষের উপরে একটা চূড়ান্ত আধিপত্য বিস্তার করে খেলার মনোভাব নিয়ে শুরু করে। প্রতিপক্ষ এটা একবার সামাল দিতে পারলে ওরা কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেলে। ওদের কোনো প্লান-বি আছে কিনা, আর থাকলেও সেটা যে কী বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে এই চূড়ান্ত আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাটা সফল করতে পারলে প্রতিপক্ষ সহজেই আত্মসমর্পণ করে। স্পেন ও পর্তুগাল যা করেছিল।

খেলার দিন কোনটা যে ঘটবে, আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। তবে প্লান-বি না থাকার কারণে এই পর্যায়ে মানে সেমিফাইনালে ভালোই সমস্যায় পড়ে যেতে পারে দু’দল। এই দুটি দলেরই প্রধান শক্তি হল দলের গভীরতা এবং আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের চেয়ে সংঘবদ্ধতায় এগিয়ে থাকাটা। এটার ব্যবহার তারা কতটা করতে পারে, সেটা দেখতে চাই।

এই পর্যায়ে এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল, কোনো ফেভারিট বা আন্ডারডগ নেই। শিরোপার জন্য চারটি দলই প্রায় সমান সম্ভাব্য। পার্থক্য যেটা আছে, তা উনিশ-বিশ। আর ফাইনালটা তো ওয়াইড ওপেন। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা-জার্মান ফাইনাল যতটা সম্ভব ব্রাজিল-নেদারল্যান্ড বা জার্মান-নেদারল্যান্ড ফাইনালও ততটাই সম্ভাব্য। আর সেই ফাইনালে বিজয়ী হতে পারে এই চার দলের যে কেউই।

সেমিফাইনাল পর্বে এসেও যে কোনো দল কোনো রকম নির্ভারতা অর্জন করতে পারেনি আর তাদের শক্তিরও যে একটা প্যারিটি তৈরি হয়েছে, এটা নিঃসন্দেহে ফুটবলের একটি বিজয়, যাকে ফিফারও একটি সাফল্য বলে গণ্য করা যায়।

আরও কিছু মনোমুগ্ধকর ফুটবল বিনোদন পাবার অপেক্ষায় থাকলাম।

পুনশ্চঃ বিশ্বকাপের বাকি অংশ নিয়ে একটা হালকা স্ট্যাটাস লিখা শুরু করেছিলাম। এক সময় দেখলাম তা যে কলেবর নিচ্ছে তা দিয়ে একটা অপ-এড দাড় করিয়ে ফেলা যায়। বিডি নিউজ ২৪-এ মাসে একটা লিখাতো দেইই, এইটা দিয়েই এইবার না হয় চালিয়ে দিলাম!!!

মুল লিখাটা দেখা যাবে এইখানে

১,৪৬৫ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “ব্রাজিল বিশ্বকাপের টক-ঝাল-মিষ্টি”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    বেশ কিছুদিন পরে লিখলেন পারভেজ ভাই, ভাল লাগলো 🙂

    টাইব্রেকারের ব্যাপারে আপনার সাথে সম্পূর্ন একমত, এটাকে লটারি, ভাগ্য পরীক্ষা বলা পুরোপুরী যুক্তিহীন। আমার তো মনে হয় একটা টাইব্রেকার নিতে গিয়ে একজন প্লেয়ারের যে পরিমানে মানসিক প্রেশার নিয়ে হয় আগের ১২০ মিনিট খেলাতেও ততটুকু নিতে হয় না।

    সেমিফাইনালের চার দল সম্পর্কেও বহুলাংশে একমত, ছোট দু একটা ব্যাপারে একটু যোগ করবো। আর্জেন্টিনার গ্রুপ পর্বের সাথে নক আউট পর্বের ম্যাচ গুলোর মধ্যে যে পার্থক্য হয়েছে তা হলো গ্রুপ পর্বে বসনিয়া, ইরান এরা আল্ট্রা ডিফেন্সিভ মুডে খেলায় মেসি, ডি মারিয়া, হুগুয়েন সবাই কেই ডাবল মার্কিং করেছে যেটা থেকে মেসি বের হয়ে নিজের খেলাটা খেলতে পেরেছে কিন্তু বাকিরা পারেনি। নক আউটে এসে সুইজারল্যান্ড আর বেলজিয়াম খেলতে চেয়েছে কাউন্টার এটাকে, ডিফেন্স কিছুটা হালকা হয়েছে আর এতে করে মেসি বাদে ডি মারিয়া, হিগুয়ান স্পেস পেয়েছে। গত ম্যাচে হিগুয়ান গোল পেলেও ওকে আমার এখনো অতটা এভেক্টিভ লাগে নি, গোলটা দারুন ছিল কিন্তু বলটা পেয়েছিল ভাগ্যক্রমে একটা ডিফ্লেকশন থেকে। তবে মেসি যে দলে খেলে সে দলের জয়ের জন্য আসলে তেমন কিছু প্রয়োজন হয় না, ওর দুই তিনটি কার্যকরী মুভই যথেষ্ট।

    আজকে আমার মতে ব্রাজিল নেইমার থেকে সিলভাকে বেশি মিস করবে, নেইমারের অনুপস্থিতে উজ্জেবিত হয়ে অস্কার, হাল্ক, উইলিয়ানরা আরো বেশি রেস্পন্সিবিলিটি নেয়ার কথা, সেটা করতে পারলে নেইমারের অভাব পূরণ করতে পারবে, কিন্তু সিলভার খেলা এবং লিডারশীপ দুটোই ব্রাজিল মিস করবে।

    জার্মানী বরাবরের মতই টিম এফোর্টে এগিয়ে যাচ্ছে, কোন সুপার স্টার বা ফ্লেয়ার প্লেয়ার নেই। এটার একটা সমস্যা হলো প্রতিপক্ষ ডিফেন্সিভ মুডে চলে গেলে ওদের সেটা ভেদ করতে সমস্যা হয়। আগের ম্যাচ গুলোর তুলনায় জার্মানীর গত ম্যাচের ফর্মেশন ভাল লেগেছে। কিন্তু জার্মানীর সাফল্য পেতে হলে ফ্রি-কিক কর্ণার কাজে লাগিয়ে পেতে হবে।

    নেদারল্যান্ড আমার দল তাই হয়তো বায়াসড তবে নেদারল্যান্ডসকেই আমার সবচেয়ে বেশি প্লান ওয়ালা দল মনে হয়েছে, যার পুরো কৃতিত্ত্ব কোচ ভ্যান হালের। মেক্সিকোর বিপক্ষে খেলায় এক ম্যাচেই তিনটি আলাদা ফর্মেশনে খেলিয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বের করে নিয়ে এসেছে। আবার কোস্টারিকা আল্ট্রা ডিভেন্সিভ খেলে কাউন্টারে আসবে বলে অল আউট এটাকে না গিয়ে বল পজিশনে রেখে, ডিফেন্স অটুট ধীরে ধীরে এটাক করেছে, টাইব্রেকারে জেতে হয়েছে সত্য কিন্তু পুরো ১২০ মিনিটে ওরা কোন তাড়াহুড়ো করেনি, ডিফেন্স ফাঁকা করেনি। আর বারে লেগে ফিরে আসা তিন বারের যেকোন একবারও যদি বল গোলে ঢুকে যেত তাহলেই ওদের ট্যাকটিক্স পুরোপুরি সফল বলা যেত। আর ওদের প্লাস পয়েন্ট হলো রোবেন, ছকে বাধা টিম এটাকের মাঝে মাঝে হঠাৎ করে পুরো নিজের চেষ্টায় ঢুকে যাওয়া। তবে নেদারল্যান্ডস ভোগাবে ডিফেন্স, একদম তরুন এই ডিফেন্সেরই কারোরই তেমন বিগ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই, ক্লাব লেভেলেও নেই। বিশ্বের অন্যতম সেরা এটাক সামলাতে এদের যথেষ্ট বেগ পেতে হবে।

    অনেক বেশি ব্বলে ফেললাম মনে হয় 😛


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      খুব ভাল এনালাইসিস। সবগুলার সাথেই একমত। সবচেয়ে বেশী একমত এটার সাথে:

      একটা টাইব্রেকার নিতে গিয়ে একজন প্লেয়ারের যে পরিমানে মানসিক প্রেশার নিয়ে হয় আগের ১২০ মিনিট খেলাতেও ততটুকু নিতে হয় না।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    বসনিয়া নিয়ে বেশ খানিকটা আফসোস আছে, ওদের কাছ থেকে অনেক বেশি আশা করেছিলাম। তবে, সেমিফাইনালের চার দলই যে যোগ্যতর সে ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। প্রথম রাউন্ডে অনেক আপ ডাউন হলেও এই পর্যায়ে এসে সবার সম্ভাবনাই প্রায় সমান। নেইমারের ইঞ্জুরি ব্রাজিলকে কিছুটা ব্যাকফুটে দিলেও আশা করছি ওরা আজকে ভাল ফাইট দেবে...


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      এই রকম একটা আশংকা আমার ছিল। যেজন্য খেলা শুরুর কিছুক্ষণ আগে বলেছিলাম "অবশ্য গোহারা হারলে অন্য কথা। তবে সেই সম্ভবনা খুবই কম।"
      আমি আশা করেছিলাম, ওরা অফেন্স আর ডিফেন্সের দুই মধ্যমনি ছাড়া মাঠে নামছে তাই নিজেদের অবস্থাটা, দুর্বলতাটা বুঝবে। জার্মানদের ১২০ মিনিট কন্টেইন করাটাই হবে প্রধান চেষ্টা। তা যদি পারে, তারপর কিছু একটা মিরাকেল ঘটাতে চাইবে। এবং হয়তো ঘটাতেও পারবে। কিন্তু ওরাও যে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মত "ন্যাচারাল গেম" খেলা পাবলিক, সেইটা হওয়ার সম্ভবনা কম ধরে নিয়েই বলেছিলাম "তবে সেই সম্ভবনা খুবই কম"।
      দেখা যাচ্ছে কম সম্ভবনার সেই কাজটাই তারা করলো।
      ঘোর বিপদে থাকা ও গর্তে পরে খাবি খাওয়া অবস্থায়ও ব্রাজিল যদি "ন্যাচারাল গেম" খেলতে চায়, তো আমাদের নাফিস-তামিমদের আর দোষ দেই কেন?
      ব্রাজিলের কল্যানে আজ থেকে তোমরা শাপমুক্ত হলে।
      তবে এখন থেকে তোমাদের জন্য নতুন অভিধাঃ "তোরা দেখি ব্রাজিলের মত গাধা"


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ব্রাজিল-জার্মানী ম্যাচটা আমার মতো ফ্যানদের আজীবন তাড়া করে ফিরবে।
    রিপ্লে দেখতে দেখতে আরেকটা গোল -- তারপর আরেকটা --- পরপর গোলের এই যে বন্যা এটা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে গল্পগাঁথার একটা বিরাট উপাদান হয়ে রইলো।

    তবে এত বড় শক্তিধর, নামী দলের এহেন হাল দেখে নিজে কিছু শিক্ষা নিতে পারি কি না তাই ভাবছি। প্রতিটা খেলা, প্রতিটা পরীক্ষা সিরিয়াসলি না নিলে অঘটন ঘটে যেতে পারে কয়েক মুহূর্তেই --- তলিইয়ে যেতে তো বেশী সময় লাগেনা, ফুটবল মাঠে ১০ মিনিটই যথেষ্ঠ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : pavel

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।