এত রাজনীতি বোঝো …… রাজনীতি কর না কেন?

মাঝে মাঝেই সুহৃদগন জানতে চান: এত রাজনীতি বোঝো, রাজনীতি নিয়ে এনালাইসিস করো, রাজনীতি কর না কেন?
আমারও একই প্রশ্ন, কেন আমি রাজনীতি করি না?
রাজনীতি করার প্রথম পদক্ষেপ হলো , হয় কোন একটা প্রতিষ্ঠিত দলে যোগ দেয়া নয়তো নিজে নিজেই একটা দল ফ্লোট করা। দল নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতায় নতুন দল গঠন এতই জটিল ও ব্যয়বহুল একটা ব্যাপারে দাঁড়িয়ে গেছে যে ওটা আর সাধ্যের মধ্যে নাই। সেইক্ষেত্রে একমাত্র অপশন হলো প্রতিষ্ঠিত কোন একটা দলে যোগ দেয়া। সেখানেও বিরাট সমস্যা। যেই দলের কথাই ভাবি না কেন, তার চরিত্র মূলতঃ তিন প্রকারের: ১) পারিবারিক ব্যবসার সাথে তুলনিয়, ২) সিঙ্গেল প্রোপ্রিরেটরশীপ-এর সাথে তুলনীয়, নয়তো ৩) মাল্টি-ন্যাশেনাল কোম্পানীর এদেশি শাখার সাথে তুলনীয়।
এই তিন ধারার কোনটি যে গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থার সাথে তুল্য তা বের করা সত্যিই কঠিন। আর তাই দল সিলেকশন করতে না পারাই রাজনীতি বিমুখ হবার প্রথম কারন। অন্যভাবে বললে রাজনীতি করার প্রথম প্রতিবন্ধকতা।
অনেক কষ্ট করে যদিওবা এই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করা সম্ভব হয়ও, খুব দ্রুতই পরবর্তি প্রতিবন্ধকতা সামনে এসে দাঁড়ায়। পছন্দের দলে কিভাবে অন্তর্ভুক্ত হবো?
দলে যোগদানের অলিখিত প্রচলিত পদ্ধতি হলো একজন মুরব্বি ধরা যিনি হতে ধরে দলের অংশ করে নেবেন। ছায়া দিয়ে রাখবেন। বিনিময়ে তাঁকে সুযোগ মত খুশি রাখতে হবে। কিন্তু তা কেন হবে? একটি রাজনৈতিক দলে চাঁদা দিয়ে সদস্য হবার, সেই সদস্য পদ মেইন্টেইন করবার কোন প্রচারিত ও জানা পদ্ধতি থাকবে না কেন?
রাজনৈতিক দলগুলো কি চায় না জনগন তাঁদের সদস্য পদ নিক? সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে তাঁদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়ুক? তা যদি চাইতো তাঁরা তা প্রচার করে না কেন?
আরেক সমস্যা হলো, দলের এত উইং, এর কোনটায় যে আমি ফিট হই সেটা নির্ধারন করা। যদিবা নির্ধারন করতেও পারি, মূল দলে যোগ না দিয়ে সেখানে কেন যোগ দেবো, সেইটা জাস্টিফাই করা।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যাঁদের সেবা করার জন্য রাজনীতেতে আসা তাঁদের মানে জনগনের স্কেপ্টিক দৃষ্টিবানে জর্জরিত হওয়া। প্রথমেই তাঁরা জানতে চাইবেন: ভদ্রঘরের ছেলে, এইসব নোংড়ামিতে নামার ভিমরতিতে পেল কেন? যদি বা কিছু বোঝানোও যায়, দ্বিতীয় প্রশ্ন হবে: বুঝছি, শর্টকাটে বড়লোক হওয়ার, শুল্কমুক্ত গাড়ি, কোটায় প্লট বাগানোর ধান্দা করতেছো;তো বাবাজি তোমার এই ধান্দার বাজেট কত?
এর সাথে আবার ফ্রীতে এক দঙ্গল কর্মি-প্রত্যাশি জুটে যাবে যারা প্রতিনিয়ত নানা খরচের অজুহাতে হাত পাতবে আর আশ্বাস দেবে: বড়ভাই, চিন্তা কইরেন না। আমরা আছি না। আপনার পুরো ইনভেস্টমেন্ট কড়ায় গন্ডায় উঠিয়ে আনবো। ভোটটা একবার হতে দেন…

প্রিয় পাঠক: এইবার বলুন, এই জঙ্গল-দঙ্গল ডিঙ্গিয়ে-ঠেঙ্গিয়ে কিভাবে রাজনীতি করা যাবে? বা নিজে রাজনীতিতে আসা যাবে? বা অন্যকে রাজনীতিতে আসতে উৎসাহ দেয়া যাবে?
আর তাই আমি এই লিখালিখি নিয়েই থাকবো যতদিন না এই অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। খুবই আশা হয়, একদিন এই অবস্থার উন্নতি হবেই হবে। আর তখন:
– জনগন রাজনীতিবিদ মানেই লোভে লকলক করা জ্বিহবা বের করে থাকা একজনকে দেখবে না।
– দলের অফিসে সদস্য অন্তর্ভুক্তির পৃথক ডেস্ক থাকবে। নতুন সদস্যগনকের নিয়ে সারা বছর ধরে এমন সব রাজনৈতিক ইভেন্ট পরিচালিত হবে যা থেকে প্রশিক্ষিত হয়ে আগামী দিনের নেতৃত্বদানে সক্ষম নেতা বের হয়ে আসবে।
– রাজনৈতিক দলগুলো পরিচালিত হবে সদস্যগনের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন বুকে করে। কোন ব্যাক্তি, পরিবার বা বিদেশে অবস্থিত হেড কোয়ার্টারের অঙ্গুলি হেলানে নয়।

সেইদিন আমি থাকি বা না থাকি, আমার মত রাজনীতি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা অনেকেই স্বেচ্ছায় এসে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবে। তাঁদের কাউকে জিজ্ঞাসা করার দরকার পড়বে না: “এত রাজনীতি বোঝো …… রাজনীতি কর না কেন?

১,৩৯৫ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : “এত রাজনীতি বোঝো …… রাজনীতি কর না কেন?”

  1. মাহমুদুল (২০০০-০৬)

    একদম সঠিক চিত্র তুলে ধরেছেন।

    পরিচ্ছন্ন রাজনীতির জন্য বর্তমান দলগুলোর সদিচ্ছার বিকল্প নেই। ব্যাপারটা এমন যে এই রাজনীতির দূর্বৃত্তায়নের গোলকধাঁধা থেকে উত্তরণের জন্য দূর্বৃত্তদের সহযোগিতা নেবার মত।


    মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      দুটো মন্তব্য করবো একটি আলোচনামূলক আরেকটি উস্কানিমূলক।

      আলোচনামূলকঃ পরিবর্তনের কথা আসলে সাধারণত দুই ধরনের মন্তব্য দেখা যায়, একপক্ষ বলছেন প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন দরকার। আরেকপক্ষ বলছেন ব্যক্তিগত পরিবর্তন দরকার। আমি উদ্দেশ্যহীনভাবে দুই দলেই ঘোরাফেরা করি। কারণ পরিবর্তন একটি জটিল বিষয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন একে অপরের সম্পূরক ও একে অপরের উপর নির্ভরশীল। মাঝে আরো প্রচুর ফ্যাক্টর আছে যেগুলো পূরণ করাটাও জরুরী এবং ফ্যাক্টরগুলো আপনার লেখায় উঠে এসেছে।

      আবার অনেকে বলেন স্বদিচ্ছার কথা। বাঙলাদেশে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয় এই কথাটি কিঞ্চিত অতিরঞ্জিত। শক্তি থাকলে ইচ্ছা হয় আর ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। থিওরেটিকালি এক নয় দুই নয় পরিবর্তনের জন্য সামষ্টিক অবিচল সিদ্ধান্ত আসতে হবে দলের ভেতর থেকে। সেই সাথে অনেক ত্যাগের ব্যাপার আছে যেটা এই সমষ্টি করবে না। নিকট ভবিষ্যতে দেখছি না।

      উস্কানিমূলকঃ বাঙলাদেশে সামরিক শাসন দরকার। বড় দাগে এই দেশের জনগণ রেসলিং খেলা, সামাজিক এ্যাকশানধর্মী চলচিত্র দেখতে পছন্দ করে। সেই সাথে পছন্দ করে বুটের লাথি খাওয়া দেখতে এবং ক্ষেত্রবিশেষে বুটের লাথি খেতে।


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      @মাহমুদুল: "রাজনীতির দূর্বৃত্তায়নের গোলকধাঁধা থেকে উত্তরণের জন্য দূর্বৃত্তদের সহযোগিতা নেবার" - আইডিয়াটা চমৎকার। সমস্যা হলো, নিজ থেকে তো কেউ সহযোগিতা দেয় না, দিতে চায়ও না। ওটা আদায় করতে হয়। একদিন জোর করে আদায় করা হবেই, এবং তারা দিতে বাধ্য হবেনই, এটা যদি যদি ঠিক মত কমুনিকেট করা যায়, হয়ত কিছু আশা করা যেতেও পারে। দেখা যাক, কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়?


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  2. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    আমার মনে হয়, ছাত্র রাজনীতি কারও রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার একটা পথ ছিল। এপথে বর্তমানের অনেক ভাল নেতা রাজনীতিতে এসেছেন। তবে দুর্ভাগ্য হল, নব্বইয়ের দশকে নির্বাচনমুখী থেকে ছাত্র রাজনীতি সিলেকশানমুখী হয়ে গেছে। তাতে সেই পথটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ভাল মানুষের রাজনীতিতে ঢোকার রাস্তা বন্ধ। এটা দেশের ভবিষ্যতের জন্য বড় একটা চিন্তার বিষয়।

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      রাজনীতিবিদগন যখন থেকেই তাঁদের কর্মকান্ড এনক্যাশ করা শুরু করেছেন, তাঁরা নিজেদের বসংবদ ছাড়া অন্য সবার জন্য তা কঠিন করে ফেলেছেন। ছাত্র রাজনীতি কঠিন করাটাও তারই অংশ।
      এই পুরো প্রক্রিয়াটা ঘটেছে সামরিক পৃষ্ঠপোশকতার সরকার সমূহের হাত ধরে।
      রাজনীতির বিরাজনীতিকরনের এই বিষয়গুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছা আছে।
      মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    মেডিকেল কলেজে ছাত্ররাজনীতির পাণ্ডাবন্ধুরা ত আমাদের বলতোই --- তোরা তো বাইরে চলে যাবি, চলে যা। যত বেশি যাবি ততই ভালো, তাইলে আমরা একটু চরে-করে খেতে পারবো।

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      খুব বোকার মত প্রশ্ন হয়ে যাবে কারণ রাজনীতি হয়তো আদতেই চরে খাবার ব্যাপার কিন্তু নূপুরদার মেডিকেলের ব্যাচমেটরা (৯০-৯৬) বলছে সমসাময়িকরা বাইরে চলে গেলে সুবিধা। চলে গেলে চরে করে খেতে পারবে। এই চরে খাবার রাজনীতি শুরু কবে থেকে? নাকি এটা ঐতিহ্যগতভাবেই চলে আসছে?


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        গুড কোয়েশ্চেন।
        রাজনীতিতে এটা ৯১ পরবর্তি বাই প্রোডাক্ট।
        ৯০-এর গণ আন্দোলনে ছাত্রদের অবদানের কৃতজ্ঞতা জানানোর ফসল।
        বহুদিন ক্ষমতা থেকে দূরে থাকা মেইনস্ট্রিম নেতারা জায়গা ছাড়তে রাজি না হওয়ায় স্বৈরাচার হটানোর মূল কৃতিত্বের দাবীদার ছাত্রনেতাদের পুরষ্কার হিসাবে এই ইন্টারিম ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। পরে তা ইন্সটিটিউশনালাইজড হয়ে যায়।
        বিভিন্ন লাইসেন্স কনট্রাক্ট ইত্যাদি দিয়ে ওদের "চরে খাওয়ার" সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।
        এটার দরকার ছিল আরেকটা কারনে। "এরশাদ-ভ্যাকেশন" নিয়ে নিয়ে ওদের বয়স এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে ছাত্রত্ব শেষে কোন রেগুলার ক্যারিয়ারে যাওয়াটা ওদের অনেকের পক্ষেই আর সম্ভব ছিল না।
        আবার বয়স বাড়ার অমোঘ পরিনতিতে অনেকে বিয়ে-শাদি করে বাল-বাচ্চা নিয়ে চাঁদের হাট জমিয়ে ফেলেছিল। সেখান থেকেও নিশ্চই চাপ আসছিল একটা কিছু শুরুর। কথিত আছে ঐ সময়য়ে নেত্রী এক ছাত্র নেতা দাওয়াতে গিয়ে শোনেন যে তা "ছাত্রনেতা"-র নাত্নীর আকিকা। নানা হয়ে যাওয়া মানুষ ক্যামনে ছাত্র থাকে সেটা নেত্রীরও প্রশ্ন ছিল।
        আবার মূলধারা কখনোই এত ছাত্র নেতা কে একোমডেট করতে পারে না। হিস্টীকালি ফ্রন্টলাইনে থাকা ছাত্রনেতাদের বড় একটা অংশ রেগুলার ক্যারিয়ারে চলে যায়। এইক্ষেত্রে ক্যারিয়ার শুরু করতে না পারা ঐসব নেতাদের বিকল্প ক্যারিয়ার হিসাবে চরে খাওয়ার এই সুযোগটা সৃষ্টি জরুরী হয়ে পড়েছিল।


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন
        • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

          আমি একটু যোগ করি পারভেজ ভাইঃ
          আমরা তো এই ৯১ তেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করলাম। করে যেটা বুঝলাম সেটা হচ্ছে -- ছাত্ররাজনীতির যে ক্যারিশমা তার কাছে ভালো ফল করা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নেয়া, কিংবা ভালো চেহারা থাকা এসব নস্যি। উপরন্তু, যেহেতু 'ভালো-ছাত্রত্ব + সাংস্কৃতিক কাজ-মাজ + চেহারা'-র একটা ভালো বাজারমূল্য আছে সেহেতু এদেরো রাজনীতিতে ভিড়িয়ে নেয়ার একটা প্রতিযোগিতা (সুস্থ না হয়ে অসুস্থ পথেই) দেদারসে চলতে দেখছিলাম। অর্থাৎ, ক্যাম্পাসে ভালো ভালো কাজকর্ম হচ্ছে-- খুব ভাল সিনেমা দেখানো হচ্ছে, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, নাটক ইত্যাদি হচ্ছে কিন্তু এসবের মূল স্পন্সর হচ্ছে সেই দলীয় গডফাদার। এবং এসবই চলছে কম শক্তিশালী (অথচ কোনভাবেই কম মেধাবী নয়) প্রতিপক্ষের কথা বলার, মত-প্রকাশের অধিকারের তোয়াক্কা না করে।

          কিভাবে যে, দারুণ কথা বলা টগবগে ছেলেটার হাতে বন্দুকও থাকতো, কী করে চমৎকার একটি মেয়ের সাথে প্রেম করতে থাকা একটি ছেলে খুর দিয়ে পোঁচ দিয়ে দিচ্ছে সহপাঠীর গায়ে!

          এবং এমনসব সময়ে কোন পক্ষ না নেয়া ছেলে-মেয়েরা মাথা নীচু করে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করে, তাদের কোন অস্তিত্ব থাকেনা। চরে খেতে হলে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থাকাটাই শ্রেয় মনে করবে তরুণদের দল এতে আর আশ্চর্য কি। দলের ক্ষমতা চলে যাবার পর এই চরে খাবার দলের কেউ কেউ মরেও যায় -- প্রাণে, অথবা মনে।

          এতসব জেনে বুঝেও আমি নিজেও, ছাত্রজীবনের শেষে এসে, কিছু (রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতামূলক) সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অংশ হয়েছিলাম এই আশায় যে হয়তো কিছু পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব লংটার্মে। কিসসু লাভ হয়নি, উল্টে এসব তথাকথিত কালচালারাল কাজকে পুঁজি করেই নষ্ট রাজনীতির বাড় আরো বেড়ে গেছে -- সীমা ছাড়িয়েছে।

          এবং আজকে, এই যুগে, ছাত্রসমাজে যে রাজনৈতিক ভাবনার প্রতিও অনীহা, ঘৃণা এসব আমার মনে হয় এমনসব কারণেই। লাগাতার সামরিক শাসন আমাদের ছাত্রজীবনের মূলচিন্তাশক্তিকে এভাবে ক্ষয়ে যেতে দিয়েছে। প্রধান দুটো রাজনৈতিক দলের কোনটাই এই অবক্ষয় রোধের জন্যে কিছু করেনি -- তার সুযোগ নিয়েছে। ফলে সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর দলে যোগ হয়েছে এই চরে খাওয়া করে খাওয়া 'ছাত্রসমাজ'।

          সমাধান কি, জানিনা। তবে দেয়ালের দিকে মুখ করে, ক্যারিয়ার গড়ার নামে রাজনৈতিক ভাবনা থেকে পালিয়ে থাকাটা কোনকালেই সমাধান ছিলোনা। সেকারণেই শাহবাগ নিয়ে এত পরজীবী ভাবনা। সবাই অপেক্ষা করে; অপেক্ষা করে কখন আন্দোলনটা শকুনে খাবে -- তারপর প্রাণপণে গালাগাল দেবে। আমরা সবাই ক্রিমটাই চাই, কিন্তু তার জন্যে প্রাণপাত যে করতে হয় তা মনে রাখিনা।

          জবাব দিন
          • পারভেজ (৭৮-৮৪)

            ভাল এনালাইসিস।
            এই এনালাইসিসগুলা একটু ফরমালি করা গেলে সবার জন্য চিন্তার খোরাক হতো।
            পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে একটা পুরানা কনসেপ্টের উপরে: "শত্রুর ছেলেকে নষ্ট করতে চাও? তার হাতে টাকা ধরিয়ে দাও"। গোটা আশির দশকে ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রে থাকা ছাত্রসমাজকে এইভাবে সিস্টেম্যাটিক ভাবে পলিউট করা হয় যার শেষ পর্যায়টা তুমি নিজেই এক্সপেরিয়েন্স করেছো।
            ছাত্র রাজনীতির রীচ কালচারটাকে এমনভাবে পঙ্গু করা হয়েছে যে সেটা আর মেরামতের কোন সুযোগ নাই।
            এই জন্য আজ শুধু তোমাকেই না, আমাকে সবাইকেই বলতে হচ্ছে "সমাধান কি, জানিনা।"
            খুবই দুঃখজনক...


            Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

            জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    রাজনৈতিক দলগুলো কি চায় না জনগন তাঁদের সদস্য পদ নিক? সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে তাঁদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়ুক? তা যদি চাইতো তাঁরা তা প্রচার করে না কেন?

    খুব ভালো কথা বলেছেন।
    এগ্রি করছি।
    এখনো কর্মী রিক্রুট করার ব্যাপারটা মনে হয় জামাত ছাড়া আর কেউ করে না।
    বাম রা করতে পারে। কিংবা করে হয়তবো বা।
    আমার কাছে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে বিনোদন হইলো বাম রা।

    আজকেই অবশ্য দেখলাম বিএনপি-আওয়ামীলীগের মধ্যে একটি দল তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য অনলাইনে বলা হচ্ছে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      জামাত বামেদের কর্মি রিক্রুট থেকে এইটার একটু প্রভেদ আছে।
      জামাত যাঁদের কর্মি হিসাবে রিক্রুট করে, তাদেরকে পে করা হবে, প্রোভাইড ও এসটাবলিশ করা হবে এইরকমের একটা আন্ডারস্ত্যান্ডিং এর উপরেই রিক্রুটমেন্টটা হয়। বামদের মূলতঃ চলে সান্ধ্যকালিন আড্ডা ও চা সিংগাড়া খাওয়া।
      হিস্ট্রিকালি (দেশ স্বাধীনের পূর্ব পর্যন্ত) আওয়ামিলীগে যা হতো তাতে ঐ সান্ধ্যকালীন আড্ডাটা ছিল তবে তা চা সিংগাড়া খাওয়া দিয়েই শেষ হয়ে যেত না। এই আড্ডায় অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে উৎসাহ, সিনসিয়ারিটি, ডেডিকেশন, সামর্থ, যোগ্যতা এসব পরখ করে স্পেশাল এসাইনমেন্ট দিয়ে দেশের অন্যান্য অংশে পাঠানো হতো গনসংযোগ করতে। খরচ দিত পার্টি। আর তখন তো চাদাবাজি ছিল না, পার্টির আয় বলতে ছিল মাসিক সদস্য-চাঁদা। সেই চাদাই এতটা পাওয়া যেত যা দিয়ে প্রতি মাসে বেশ কয়েকটা এরকম গনসংযোগ করা যেত। অবশ্য জেলা কম ছিল। মাত্র উনিশটা।
      এই স্পেশল এসাইনমেন্টগুলা যারা পেত তাঁরা যেমন নিজেদের কর্ম ততপরতা দেখানোর সুযোগ পেতো, পার্টিও তার ভাবী সাংসদ প্রার্থিকে বাজিয়ে দেখার সুযোগ পেতো।
      দলের মধ্যে এত কো অর্ডিনেটেড একটিভিটি ছিল বলেই সত্তরে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এই রকমের একটা ক্লীন সুইপ করতে পেরেছিল।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আপনি তো দেশে থেকে শুনছেন কিছু বলার চেষ্টা করছেন।

    আমরা যারা বাইরে আছি তাদের শুনতে হয়,

    মামা দেশে আইসা দেশপ্রেম দেখাও।

    শুনি আর হাসি।

    হতে পারে দেশে যারা থাকেন তারা দেশের নানাবিধ সমস্যা ফেস করছেন।
    কিন্তু দেশের বাইরে আছি বলে মনে হয় দেশ নিয়ে কথা বলার রাইট ও হারিয়ে ফেলছি।
    দিন কে দিন আমরা হয়ে পড়ছি ঈর্ষাপরায়ণ।
    ব্যাপারটা এমন মনে হয়,
    যেহেতু আপনি দেশে কালো ধোয়া খাচ্ছেন গাড়ির, আমারো খেতে হবে।
    জ্যামে বসে থাকছেন কয়েক ঘন্টা, আমারো বসে থাকতে হবে।
    ফরমালিন দেয়া মাছ খাচ্ছেন, আমারো খেতে হবে।

    এবং এসব করার পরেই দেশ নিয়ে কিছু বলতে পারার যোগ্যতা অর্জন করবো।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  6. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    সেইদিন আমি থাকি বা না থাকি, আমার মত রাজনীতি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা অনেকেই স্বেচ্ছায় এসে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবে। তাঁদের কাউকে জিজ্ঞাসা করার দরকার পড়বে না: “এত রাজনীতি বোঝো …… রাজনীতি কর না কেন?“

    :thumbup:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।