ইমপিউনিটির কুফল

অপরাধ করার পর বিচারের সম্মুখিন না হওয়াটা, শাস্তিহীনতা বা ইমপিউনিটি সমাজে কিভাবে অপরাধ উৎসাহিত করে আর তার জন্য ভুক্তভোগী হয় নিরপরাধ সাধারন মানুষ সেই প্রমাণ হাতেহতে পেতে দেখছি গত কয়েকদিন বারডেম-এর চিকিৎসক আক্রান্ত হবার পর থেকেই। ঘটনার সাথে জড়িত ও চিহ্নিত হওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তাকে “প্রত্যাহার” নামক এক উদ্ভট ব্যবস্থার আওতায় নেয়া হয়েছে। এটা কি, তা কেউ জানে না। কোন পুস্তকে কিতাবে এর কোন উল্লেখ নাই। তাই ধরে নেয়া যায়, স্বহস্তে প্রহার করে আহত করার মত একটি পেনাল কোডে উল্লেখিত শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার পরেও এখনো তাঁকে আইনের আওতায় আনা হয় নাই। উনি বহাল তবিয়তে নিয়মিত সরকারি দায়িত্ব পালন করছেন এবং বেতন ভাতা সহ রাস্ট্রিয় যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।
প্রহার ও আক্রমনে অংশ নেয়া চিহ্নিত সরকারি কর্মকর্তা অপর ব্যক্তির ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা তা কোথাও দেখি নাই। আক্রমনে উৎসাহদানকারী ও পরবর্তিতে ধামাচাপা দেয়া এবং ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়ার মূল নকশাকার একজন নারী ও সাংবাদিক। এই জঘন্য একটা ঘটনা রাজধানীর কেন্দ্রে ঘটে যাওয়ার পরেও ২৪ ঘন্টার বেশী সময় ধরে কোন মিডিয়ার এ সম্পর্কে টু শব্দ না করাটা কতটা নিউজ এডিটরের ব্যক্তিগত-পেশাগত দৃষ্টিকোনে নেয়া সিদ্ধান্ত আর কতটা ঐ নারী সাংবাদিকের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত, সেই প্রশ্ন এসেই যায়।
ঘটনা ঘটার পর সপ্তাহখানেক তো হতে চললো। গুটি কয়েক কমিটি গঠন ছাড়া আর কিছু হয়েছে বলে শুনি নাই। আর কে না জানে যে ডেডলাইন ছাড়া কমিটি গঠন করার অপর নাম কালক্ষেপন ও অকার্যক্রম (ইনএকটিভিটি) উৎসাহিত করা। এইভাবে কিছুসময় পার হবার পর মানুষ ভুলে যাবে, আর কিছু করার দায় থাকবে না কর্তৃপক্ষের।
কিন্তু সমস্যা হলো, কিছু বিষয় মানুষ সহজে ভুলতে পারে না। আর সেইজন্য আক্রান্ত হয় দুর্বলতর প্রতিপক্ষ।
শারিরীকভাবে আক্রান্ত হওয়া সেইরকম একটা অপমানজনক ব্যাপার।
আমার মনে হয়েছে, বারডেমের ঐকয়জন আক্রান্ত চিকিৎসক নয়, দেশের সকল চিকিৎসক ঐ অন্যয় আক্রমনটা নিজেদের দেহে অনুভব করেছেন। কিন্তু এইজন্য জ্বালা মেটাতে তাতক্ষনিকভাবে পুলিশের বিপক্ষে দাড়াতে বা সরকারি কর্মকর্তাদের বিপক্ষে দাড়াতে পারেন নাই। হয়তো দাঁড়ানোর তেমন কোন সুযোগও পান নাই।
সুযোগ যেটা এসেছে, সাংবাদিকদের মোকাবেলার। আর কি অবাক কান্ড তার একটা সুযোগও হেলায় হাতছাড়া করেন নাই।
সাধারনভাবে ডাক্তারি পড়তে যান মোটামুটি শ্রেয়তর মেধাবীগন। তাঁদের বেশিরভাগই ছোটবেলা থেকে থাকেন সুশৃংখল। সাধারনভাবে চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলি অন্য অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে তুলনামূলকভাবে সুশৃংখল। সেখানে, দিন কয়েকের ব্যবধানে উপর্যোপরি চিকিৎসক কর্তৃক সাংবাদিক আক্রান্ত হওয়াটা কে কাকতাল মেনে নেয়া কঠিন। বরং অন্যকিছু মনে হওয়াটাই সহজ।
ঘটনা ঘটালো কে আর এখন এইজন্য ভুগছে কারা?
ঐ নারী সাংবাদিকের প্রভাবে পড়ে যেসব নিউজ এডিটর খবর গুম করলেন, তাঁরা কিন্তু ভালই আছেন। চিকিৎসকদের ক্ষোভের স্বীকার হচ্ছেন পথে-ঘাটে (ফিল্ডে) থাকা সাংবাদিক-চিত্রগ্রাহক। এর ফলশ্রুতিতে যে স্বাস্থ্য-অব্যবস্থাপনা ঘটে গেল তার ভুক্তভোগী নিম্ন আয়ের সাধারন মানুষ, যাঁদের বিকল্প কোন স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার সামর্থ্য নাই।
মাঝে মাঝে ভাবি, কি এমন ক্ষতি হতো ঐ দুই পালের গোদাকে “বিহাইন্ড দ্যা বার” নেয়া হলে? সরকার যদি এই দৃঢ়তা দেখাতো তাহলে কি পুলিশ ও প্রশাসন একজোট হয়ে সরকারকে নাজুক অবস্থায় ফেলে দিত? সে সামর্থ্য কি তাঁদের আছে?
তা যদি না থাকে, তো সরকারের মত একটা ক্ষমতাবান প্রতিষ্ঠান কিসের ভয়ে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত আছেন? আর সেই সুবাদে নিরপরাধ সাধারন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, হয়রানির শিকার হচ্ছে।
কবে যে আমরা একটা সুশাসনময় দায়িত্ববান রাস্ট্র ব্যবস্থা পাবো, তা যদি জানতাম……

১,৭১৭ বার দেখা হয়েছে

১৭ টি মন্তব্য : “ইমপিউনিটির কুফল”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    পক্ষাঘাতে মৃত্যু না হলে ধরে নেই আমি আরো বছর ত্রিশের মত বাঁচবো। আমি আমার জীবদ্দশায় দেখে যাবার আশা দেখি না। বাঙলাদেশে সুশাসন একটি মরীচিকা।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
      • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

        এবং বাঙলাদেশে ইনস্টিটিউশনাল ক্যাপাসিটি এনালিসিস, কিংবা গণপ্রশাসনের অন্যান্য যে টেস্টগুলো অন্যান্য দেশে পন্ডিতরা করে থাকেন তার কিছুই করা হয় না। মোদ্দা কথা বাঙলাদেশে যেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণার পাশাপাশি যেই বিষয়ে গবেষণা হওয়া খুবই জরুরী সেটা হলো পাবলিক পলিসি, পাবলিক এ্যাডমিনিসট্রেশান, পাবলিক ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। আমি বাঙলাদেশ নিয়ে বাঙলাদেশের কয়জন পাবলিক এ্যাডমিন প্রফেসর এই বিষয়ে লেখালেখি করেন? আমি দেখি নাই এবং এই অভিযোগ আমি আগেও কোন এক লেখায় করেছি। বাঙলাদেশে অন্যান্য সব বিষয়ের মত এই বিষয়গুল‌োতে কোন একাডেমিক স্কলারশিপ নাই। বড়জোর যা দেখেছি খুবই থিওরেটিক্যাল লেখালেখি। ব্যাপারটা খুবই হতাশাজনক। হয়তো বলবেন বাঙলাদেশের আমলাতন্ত্রে এ্যাকসেস পাওয়া খুব কঠিন তাই গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা তুলনামূলকভাবে কঠিন। কথাটি সত্য এবং একই সাথে একটি অজুহাত। বাঙলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবতাসম শিক্ষকরা চাইলেই গবেষণাধর্মী লেখা লিখতে পারেন। উনাদের নামের শেষে যেই পিএইচডি লেখা সেটা যদি ভুয়া না হয়ে থাকে, তাহলে কিভাবে গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে হয় সেটা উনাদের ভাল মত জানার কথা।

        যাই হোক, এত কথা বললাম কারণ ছোট কিছু পরিবর্তন দিয়ে শুরু হতে পারে বড় পরিবর্তনের পথে পথচলা কিন্তু সেটার জন্য সমাজের কিছু শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে কিছু পদক্ষেপ দরকার যেই পদক্ষেপ গুলো নিতে উনাদের বড় ধরণের কষ্ট করা লাগবে না। কিন্তু উনারা তা করবেন না। উনারা না করলে গদিতে যারা বসে আছেন তাদের কাছ থেকে কেন আশা করবো আমরা?


        \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
        অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

        জবাব দিন
        • পারভেজ (৭৮-৮৪)

          মূল কনসার্নগুলো নিয়ে এড করার কিছু নাই। সোজা ভাষায়: কান্ট এগ্রি মোর। তবে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের ইনডিফারেন্স নিয়ে কথা আছে।
          সবকিছু এতটাই মেরুকৃত যে ওনাদের ইনএকটিভিটিটা এসে যায় স্কেপটিসিজম থেকে।
          "কি বলতে কি বলে ফেলি আর অন্যদলটা ক্ষেপে গিয়ে ক্ষমতায় এসে কনসাল্টেন্সি আটকে দেয়?" - এই টেনশন মাথায় নিয়ে ক্রিয়েটিভিটি আসবে কোত্থেকে?
          আফটার অল কনসাল্টেন্সিইতো ওনাদের বেশিরভাগের সংসার চালানোর মূল আয়। বেতনের টাকা তো চলে যায় ড্রাইভারের আর গাড়ির পিছনেই।
          কঠিন অবস্থা......


          Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

          জবাব দিন
        • ইফতেখার (৯৫-০১)

          লেখালেখি হওয়ার আগে দেশে পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্র্যাক্টিসে অর্গ চেন্জ্ঞ বা চেন্জ্ ক্যাপাসিটি আছে নাকি। আমারতো মনে হয় বড় একটা ট্রান্সফর্মেশন ছাড়া এইটার উপায় নাই। এ্যাডমিনিস্ট্রেশনে সিভিল সার্ভিস সিস্টেম করে পুরো সিস্টেমটায় একটা সেন্ট্রালাইজড ফিউডালিজম নিয়া আসা হয়েছে। কমিনিউনিটি ডেভেলপমেন্ট বা লোকাল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এর সুযোগ নাই (বাজেটের দিকেই তাকাও)। যদি পাবলিক এ্যাডমিনে চেন্জ ক্যাপাসিটিই না থাকে, তাহলে লেখালিখি রিসার্চ করে লাভ হবে কতটুকু?

          এ্যাডমিনি্স্ট্রেশন চেন্জের আগে দরকার ব্যুরোক্র্যাটিক চেন্জ (টপ-ডাউন)। এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের হাতে রিসোর্স এ্যালোকেশনের ক্ষমতা দাও, শুধু ম্যানেজমেন্ট না (এই চেন্জটা সেন্ট্রালি আনতে হবে), তাহলে পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশনে বাস্তবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। নাইলে রিসার্চ করলে লাভকি ?

          জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সুশাষন/আইনের শাষন অলীক কল্পনা ছাড়া এখন আর কিছু মনে হয় না 🙁


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    আপনি সবসময়ই অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখেন এবং মনে হয় পর্দার অন্তরালের অনেক খবর রাখেন।
    আইনের শাসন হচ্ছে একটি দেশের উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক। এখানে দুই তরুণকে দেখলাম হতাশা ব্যক্ত করছে বাংলাদেশে আইনের শাসন নিয়ে।
    বাংলাদেশের রাজনীতি যেহেতু অনেকটাই মধ্যবিত্ত তরুণদের মানসিকতার প্রতিবিম্ব, তারা যুদ্ধপোরাধীদের বিচার দাবী করে তা সম্ভব অবস্থায় নিয়ে যেতে পারলে দেশে আইনের শাসন দাবী করে না কেন?
    এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ট্রযাযেডি যে তরুণ নির্ভর বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতি প্রকৃতি কখনই তরুণ সমাজের কাছ থেকে প্রজ্ঞাময় দাবী পায় না।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      "আপনি সবসময়ই অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখেন" - পড়ে যেটুকু ফুলে উঠেছিলাম, "মনে হয় পর্দার অন্তরালের অনেক খবর রাখেন" - পড়ে আবার চুপসে গেলাম।
      পর্দার আড়ালের খবর যারা রাখে, তাঁরা জাসুস গোত্রিয়। পরিচয়টা সুখকর না। আমি তেমন কোন খবর পাই না। অনুমান করি। অনুমানের উপরেই লিখি। অনেক সময়ে অনুমানগুলো মিলে যায়, এই যা।
      আর বিষয়গুলোর ব্যাপারে বক্তব্য হলো: এগুলো এতটাই দৈনন্দিন আটপৌরে যে এগুলো কোন গুরুগম্ভির আলোচনায় উঠে আসে না। বিশেষজ্ঞগন এগুলো নিয়ে কথা বলতে কুন্ঠা বোধ করেন। তাদেরকেও দোষ দিতে পারি না। আমরা শ্রোতারা যদি তাঁদের কাছ থেকে কেবলই গুরুগম্ভির বিশেষ জ্ঞান পেতে চাই, তাঁরাই বা কি করবেন?
      আমি অনেকটা অভ্যাস বসতঃ এইসব ছোটছোট বিষয় নিয়ে সেগুলোর সমাধান নিয়ে ভাবি আর তা টুকে রাখি। কারো পড়ে ভাল লাগলে তাতে আমার কোন কৃতিত্ব নেই। কৃতিত্ব সেই উৎসাহী পাঠকের যিনি আমার মতই ঐসব দৈনন্দিন আটপৌরে বিষয়গুলো নিয়ে কনসার্ন।
      যে ট্রাজেডিটার কথা বলেছেন, সে বিষয়ে আমার বক্তব্য হলো: আমাদের দেশের রাজনীতি সংশ্লিষ্টগন খুব নিষ্ঠার সাথে সত্যিকারের তারুন্যের কাছে রাজনীতিকে একটি অগ্রহনযোগ্য বিষয় হিসাবে উপস্থাপন করে ফেলেছেন। রাজনীতির এই নেগেটিভ ইমেজটা তাঁরা যতদিন ধরে রাখতে পারবেন, সত্যিকারের তারুন্য ততদিনই এইভাবে রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন আর তাঁরা জ্ঞাতি-পরিবার নিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যাবেন।
      মূলধারার রাজনীতিতে তারুন্যকে সিস্টেমেটিক ইনফিলট্রিট করানোর কোন পদ্ধতি তৈরী করা না গেলে এ থেকে উত্তরন কঠিন। প্রায় অসম্ভবই।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      ভাবছিলাম অনেক কিছু বলবো। পারভেজ ভাই মোটামুটি বলে দিয়েছেন। শুধু একটা কথা যোগ করবো, আমাদের মত তরুণদের প্রজ্ঞাহীন চিন্তাধারাকে "ট্র‍্যাজেডি" হিসাবে আখ্যা দিয়ে হাত ঝাড়া দায়িত্ব শেষ করার চেষ্টা বন্ধ করুন। একটি প্রজন্ম একরাতে প্রজ্ঞাহীন হয় নাই এবং এই ব্যাপারটি বোঝার ক্ষমতা আশা করি আপনার আছে। (সম্পাদিত)


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  4. আন্দালিব (৯৬-০২)

    আমি যা বুঝি এই পরিবর্তন একদিনে হবে না। একজনের দ্বারাও হবে না। এইটা ধীর পরিবর্তন এবং এতে সকলের অংশগ্রহণ জরুরি। "সকল" এর মধ্যে দেশের অত্যন্ত মেধাবী ও গুণী লোকজন যারা বিদেশে গিয়ে বসবাস করছেন, তারাও অন্তর্ভুক্ত। তাদেরকে দেশে ফিরে নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজ শুরু করতে হবে বিনা অজুহাতে। একটা প্রজন্মের ভয়ানক সংগ্রাম করতে হবে, কিন্তু সেই ২৫ বছরে দেশের সকলের মানসিকতার বদল হবে। দেশে ধীরে ধীরে বিনিয়োগের ক্ষেত্র ও পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

    আমি মনে করি না এটা অসম্ভব। কিন্তু এটা একার পক্ষে অসম্ভব। আমার আশা আমাদের প্রজন্ম (যাদের আশির দশকে জন্ম, যাদের বয়স এখন ২৫-৩৪ এর মধ্যে) এই বদলটা আনতে পারবে আগামী ২৫ বছরে যদি তারা সকলে মিলে চায়। (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • ইফতেখার (৯৫-০১)

      আমার মনে হয় এই পরিবর্তন দরকার স্টেপওয়াইস (উপর থেকে নিচে) সিস্টেমে। পরিবর্তনের দাবী যদিও শুরু হয় গ্রাসরুট লেভেলে (যেটা মনে হয় শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে) পরিবর্তনটা শুরু করতে হবে উপর থেকে। নাইলে অনেকটা ঝি কে মেরে বৌকে শেখানো পর্যায়ে যাবে এইটা পরিবর্তনের শিক্ষা।

      রাজনৈতিক ভাবে এই পরিবর্তনটা হবে অনেক আস্তেআস্তে। ইলেকটেড অফিসিয়ালরা স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তনে আপত্তি করবে, আর যাদের ইলেক্টেড হবার সামর্থ্য আছে, তারা সাধারনত এই নতুন প্রজন্মের মাঝে পড়ে না। কাজেই শুরু হওয়া দরকার এ্যাপোয়েন্টেড লেভেল থেকে, প্র্যাক্টিশনারদের মাঝে থেকে।

      জবাব দিন
  5. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    সবার মন্তব্যের উপর একসাথে আমার প্রতিক্রিয়া দিচ্ছি।
    চলমান বিশৃখলার যারা সুবিধাভোগি, তাঁরা যে খুব সহজে কোন পরিবর্তন প্রক্রিয়া শুরু করতে দেবেন না সেটা বুঝতে কাউকে রকেট সাইন্টিস্ট হতে হয় না। সাধারন জ্ঞান বুদ্ধিই এজন্য যথেষ্ট।
    আবার বৃহৎ জনগোষ্ঠির মধ্যে যে পরিবর্তনের প্রতি একটা সায় আছে, আকাংখাও আছে, সেটাও ঐ সাধারন জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েই বোঝা যায়।
    তবে শুধু যে সুবিধাভোগিদের কারনে এটা শুরু হচ্ছে না, তাও কিন্তু নয়।
    জনগন এক অর্থে ঘরপোড়া গরুর মত। সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরায়। আগে যতবার যতজনের উপরে পরিবর্তনের জন্য আস্থা রেখেছে, তাঁরা কেউ সেই আস্থার সামান্য মূল্য দেয় নাই।
    তাই কেউ যদি পরিবর্তন সুচনা করার নুন্যতম ইংগিত দেয়, তাঁদের থামাতে সুবিধাভোগিদের কাজ হলো একটা সন্দেহের, স্কেপ্টিসিজমের ধুম্রজাল সৃষ্টি করা। আর একবার তা করতে পারলে সেই যাত্রায় তাঁদের মানে সুবিধাভোগিদের স্বার্থ টিকে যায়। পরিবর্তনের সুত্রপাত থমকে যায়।
    চেঞ্জের জন্য চেঞ্জ এজেন্ট জরুরী। ভবিষ্যত চেঞ্জ এজেন্টদের কে এই সন্দেহবাদ মোকাবেলার সামর্থ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কিভাবে তা হবে, এখনো জানি না। কিন্তু তা হতেই হবে এবং যত শীঘ্রই সম্ভব।

    চেঞ্জ এজেন্টগনের ক্রেডিবিলিটি এসটাবলিশের একটা সহজ "অপরচুনিটি" বহুদিন ধরেই আছে।
    দেশের এমপি মন্ত্রী গণ ঐ ঐ কোটায় রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে বিধিবদ্ধভাবে রাজউকের প্লট পান। আর আইন বলে পান বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানির সুযোগ। রাস্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে এই যে ব্যক্তিস্বার্থের চরিতার্থতা, এটার বিপরীতে আবস্থান নিয়ে চেঞ্জ এজেন্টগন খুব সহজেই নিজেদের ক্রেডিবিলিটি এসটাবলিশ করতে পারেন। আমি দেখতে পাই, এইরকম দুইটা ট্রাম কার্ড হাতে নিয়ে বসে আছেন সবাই। কিন্তু তা ছাড়তে সবার বুক কাপছে।
    কেন? এটা কি বৌ (স্বামী) বাচ্চাদের ভয়ে? ওরা যদি প্রশ্ন করে কিসের ড্যাসের (অশ্লীল) এমপি হইলা, পাজেরো গাড়িও দেখলাম না চোখে প্লটতো আরও দুরের জিনিষ?
    গাড়ি-প্লট-লাইসেন্স-কন্ট্রাক্ট-দালালি-লবিং এইসবের উর্ধে উঠতে পারে, এইরকম ২০০ মানুষ আমাদের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে নাই, এটা বিশ্বাস করি কিভাবে?
    আর একটা জিনিষ বুঝি, চেঞ্জ আনবার মত কোন সুযোগ কখনোই হাত ছাড়া করা যাবে না। সেটা যখনই যেই ফরমেটে সামনে আসুক না কেন...


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  6. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    অনেক কিছু বলার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু এবেলা চেপে গেলাম। শুধু এইটুকু বলি যে, সমাজ বা
    দেশের পরিবর্তনের আগে আমাদের নিজেদেরকেই পরিবর্তন করতে হবে যে সমাজ/দেশের স্বপ্ন দেখি সেটার উপযোগী হওয়ার জন্য। আমার ধারণা, আমরা যেরকম, আমাদের সমাজ/দেশ এখন ঠিক সেই রকম।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ইফতেখার (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।