কালোটাকা সাদাকরন সমাচার

বছর খানেক আগে এই লিখাটা অন্য একটা সাইটে প্রকাশিত হয়েছিল ভিন্ন নামে। ওখানে কেন যেন কোন কমেন্ট আসে না যদিও প্রচুর হীট-রেকর্ড দেখতে পাই। কমেন্ট না আসায়, পাঠক কি ভাবছে জানতে না পারার একটা ক্ষুধা রয়ে যায়। এখানে আবার দিচ্ছি কিছু মন্তব্য শোনার আশায়……

কালোটাকা দুইপ্রকারঃ
১) আইনত দন্ডনীয় কোন কাজের মাধ্যমে অর্জিত টাকা যেমনঃ ঘুষ, অপরাধ সংঘটনের থেকে প্রাপ্ত অর্থ, অবৈধ বানিজ্য (ড্রাগ, অস্ত্র ব্যবসা ইত্যাদি) থেকে পাওয়া উপার্জন ইত্যাদি। ইংরেজীতে একে “illegal income” বলা হয় বলেই এই আলোচনায় আমরা একে “অবৈধ আয়” বা “বেআইনি আয়” বলব।
২) বৈধভাবে উপার্জিত আয় যা আয়কর প্রদানের সময় প্রদর্শিত হয় নাই। আমরা একে “অপ্রদর্শিত আয়” বলব।
বাজেট ঘোষনার মৌশুমে এদেশে কালোটাকা-সাদাটাকা, কালোটাকার সাদাকরন, ইত্যাদি কথাগুলো বিভিন্নমহলে বেশ শোনা যায়।
একপক্ষ সাদাকরন এরপক্ষে কাচুমাচু মুখচোখ করে এমনভাবে যুক্তিদেন যেন নিতান্ত অনিচ্ছা সত্বেও তাঁরা এই গর্হিত কাজটি আপাতত মেনে নিয়েছেন, তবে তা না মেনে নিলেই ভালো হত। আর যারা এর বিপক্ষে থাকেন তাঁরা এমন যুদ্ধংদেহী ভাবে নৈতিকতার বিচারে, সাম্যতার বিচারে এটা কত ভীষণ গর্হিত কাজ তার ফিরিস্তি দিতে থাকেন। ভাবখানা এমন যে তাঁদের চারপাশে যেকোন আনৈতিক বা অসাম্যের কাজ দেখলেই তাঁরা একইভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন এবং তা প্রতিরোধ করেই ছাড়বেন।
এখানে প্রথমেই বলে রাখা প্রয়োজন যে কালোটাকা যেমন দুইপ্রকার তা বৈধকরনও দুইপ্রকার। “প্রকারভেদ-১”-এ বর্নিত অবৈধ বা বেআইনি আয় যা শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে, তা বৈধকরনের কোন আইনি ব্যবস্থা সংবিধানিকভাবেও নেই নৈতিকভাবে তো নেই-ই। কেউ যদি তা করেনও, তা মেনে নেয়ার কোন বাধ্যবাধকতাও কারো উপর বর্তায় না। এই জাতিয় অর্থ বৈধকরনের প্রক্রিয়াটিকে তাই সাদাকরন না বলে বলা হয় ধৌতকরন বা মানি ওয়াশিং। অবৈধ অর্থ ধৌতকরনের সবচেয়ে পরিচিত পন্থার নাম হল মানি লন্ডারিং। আর এদেশের আইনানুযায়ী তাও একটি শাস্তীযোগ্য অপরাধ। সুতরাং আইন করে মানি লন্ডারিং করতে দেয়া হচ্ছে, এই কথাটা শুনতে হাস্যকরই শোনাবে। এটা সম্ভবও নয়।
“প্রকারভেদ-২”-এ বর্নিত বৈধভাবে উপার্জিত অপ্রদর্শিত আয়টি যদিও আরেক ধরনের কালোটাকা কিন্তু তা প্রদর্শন করে সাদাকরনের ব্যবস্থা সকল সময়ই আয়কর আইনে বিদ্যমান। কোন ধরনের “কালোটাকা সাদাকরনের বিশেষ সুযোগ” না থাকলেও এইটাকার মালিক তা সাদা করতে পারেন। তবে যতক্ষন তা করা হচ্ছে না ততক্ষন সেটা কালো। আর প্রদর্শন করলেই তা সাদা। এই শ্রেনীভুক্ত কালোটাকা সাদাকরন উৎসাহিত করতে যখন সময় সময় বিশেষ আইনী সুযোগ দেয়া হয় তাকেই আমরা এই আলোচনায় “সাদাকরন” বলে বুঝাব।
একথা সত্য যে, একজন উপার্জনকারীকে তাঁর যেকোন ধরনের বৈধ আয় ঘোষনা করে উপযুক্ত কর প্রদান করতে হয়। তাঁর জন্য এটা করা একটি নাগরিক দায়িত্ব। কর-প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের দায়িত্ব নয় দেশের সব নাগরিককে ধাওয়া করে তাঁদের আয় খুঁজে খুঁজে বের করা এবং তাঁকে উপযুক্ত কর প্রদানে বাধ্য করা। তবে যদি কেউ কর এড়াতে বা ফাঁকি দিতে বৈধ আয় লুকাতে চান, তাহলে সেটা করতেই হবে, ছাড় দেয়া যাবে না। এটা কর-প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে পড়বে।
এরপরেও নানাবিধ কারনে করযোগ্য আয়ের উপর উপযুক্ত করারোপ হয় না অর্থাৎ অপ্রদর্শিত রয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কবে তিনি তা বুঝবেন এবং নিজ থেকে কর দিয়ে যাবেন অথবা কর-প্রশাসন তাঁকে খুঁজে বের করবেন ও কর প্রদানে বাধ্য করবেন সেই আশায় বসে না থেকে সময় সময় বিশেষ সুবিধা দিয়ে এজাতীয় অপ্রদর্শিত বৈধ আয়কে সাদাকরন দুইপক্ষের (সরকার ও করদাতা-নাগরিক উভয়) জন্যই সুবিধাজনক যাকে ব্যবস্থাপনার ভাষায় বলে উইন-উইন সিচুয়েশন।
এই উইন-উইন সিচুয়েশনটি কিভাবে হয় তা বলার আগে সমালোচকদের সাম্যতা ও নৈতিকতার প্রশ্নে কিছু বলে আসি। একথা ঠিক যে যারা স্বাভাবিক অবস্থা অর্থাৎ অপ্রদর্শিত আয় সাদাকরনের সুযোগ না থাকা অবস্থায় আয় ঘোষনা করে যে কর দিয়েছেন তাদের চেয়ে সাদাকরনের সুযোগ থাকা অবস্থায় প্রদেয় আয়কর কম। অর্থাৎ একজন সাদাকরনের সুবিধাগ্রহনকারী যথাসময়ে আয়কর প্রদানকারীর থেকে কম কর প্রদান করে কিছুটা অসাম্যের স্বীকার হচ্ছেন। একইভাবে, যথাসময়ে আয় ঘোষনা না করে যে অন্যয় করা হয়েছিল তার প্রতিকার না করে কম কর দিয়ে তাকে দায়মুক্ত করা কতটা নৈতিক হচ্ছে সে প্রশ্ন ও যৌক্তিক।
সাম্যের প্রশ্নে আমার বক্তব্য হল, যারা যথাসময়ে কর দিয়েছেন তাঁরা সুনাগরিক হিসাবে যে প্রশংসার দাবিদার তা সাদাকরন সুযোগ গ্রহনকারীর জন্য প্রযোজ্য না। তাছাড়া তিনি (যথাসময়ের করদাতা) তার দায়িত্ব পালন করেছেন এর সাথে পরে কে কি সুযোগ পাচ্ছে বা পাচ্ছে না তার কি সম্পর্ক? তাঁরা কেউ কি বলেছেন যে আমি কেন দায়িত্বজ্ঞানহীন হলাম না তাহলে তো আমার টাকা বাঁচত? এই জন্য সাম্যের এই প্রশ্ন আমার মতে হাস্যকর।
নৈতিকতার প্রশ্নটিও খুব বড় করে দেখার সুযোগ নেই কারন যাঁদের এই অপ্রদর্শিত আয় থাকে তার সবাই যে খুব পরিকল্পিতভাবে এই অনৈতিক কাজ করেছেন, এটা কিন্তু ঠিক না। এমন প্রচুর (আমার মতে বেশিরভাগ) ঘটনা ঘটে যা কেবলই অজ্ঞতাপ্রসূত বা কেয়ারলেসনেসজনিত বা পদ্ধতিগত অসংগতি এমন কি কখনো কখনো অপরিকল্পিত ভুলের জন্যও। যদিও আইনের দৃষ্টিতে পরিকল্পিতভাবে কর ফাঁকি দেয়ার মত এসবই অন্যয় কিন্তু এর পিছনের কার্যকারন বিশ্লেষণ করে সবগুলি কে একই রকম গুরুতর মনে করাটা কতটা নৈতিক সে প্রশ্নও করা যায়।
তাছাড়া কর নির্ধারন ও আদায় সম্পর্কিত পদ্ধতিগত জটিলতা, সময় ও খরচের প্রয়োজনিয়তা বিবেচনা করে সময় সময় এধরনের সাদাকরন সুযোগ প্রদানকে খুববেশি অনৈতিক ভাবার সুযোগ নেই।
এবার উইন-উইন সিচুয়েশন নিয়ে বলি। এটা ঠিক যে কর-প্রশাসন যদি কর এড়িয়ে যাওয়া কাউকে কর-জালে আটকাতে পারে, তাঁরা বেশি কর আদায় করতে পারবেন তবে এজন্য যে সময়, অর্থ, লোকবল ব্যবহার করতে হবে তা দিয়ে অন্যত্র আরো বেশি কর আদায় করা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হবেন। দিনের শেষে মোট আদায় কিন্তু কম হবে। যা দেশে ও দশের জন্য কাম্য নয়। আর সুযোগ দিয়ে একবার কোন অপ্রদর্শিত আয় কর-জালে অন্তর্ভুক্ত হলে নুন্যতম এফর্টে বছরের পর বছর সেই খাতে কর আদায় হতেই থাকবে। এটা হবে বাড়তি লাভ। করদাতার সাদাকরন সুযোগগ্রহনের লাভজনক দিকটিতো সহজেই অনুমেয়। তাই আর ব্যাখ্যা করলাম না।
সবই যদি ভাল হয় তাহলে এত কথার কি আছে? আবার মানুষতো এই সুযোগের তেমন একটা সদ্বব্যবহারও করে না, তা-ই বা কেন?
আমার ধারনা নেগেটিভ পাবলিসিটি এক্ষেত্রে ফল পাওয়ায় প্রধান অন্তরায়। এমনভাবে কালোটাকা কালোটাকা বলে একটা হাহাকার সৃষ্টি করা হয় যে “অপ্রদর্শিত বৈধ আয়” এই মিনিং না পেয়ে তা “বেআইনী কাজে প্রাপ্ত অবৈধ আয়”-এই মিনিং পেয়ে যায়। একটা বড় অংশের সুযোগগ্রহনইচ্ছুকগণ এই কনফিউজিং পরিস্থিতির জন্য সুযোগগ্রহনে নিরুৎসাহিত হন। তাছাড়া “আয়ের উৎস সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হবে না” কথাটা এমন অপমানজনকভাবে বলা হয় যেন প্রদর্শন প্রত্যাশিরা সব অপ্রকাশযোগ্য কোন কাজে লিপ্তছিলেন। বৈধ যেকোন আয় যেকোন সময়ে “income from other sources” এই হেডে ঘোষনা করা যায়। শুধু শুধু ফালতু কথা বলে সেনসেটাইজ করাটা কার স্বার্থে তা বোধগাম্য না।
আবার ঐ একই কারণে এরকম একটা ধারনাও উঠে আসে যে বেআইনি আয়ও বুঝি বা আইনসঙ্গত করে ফেলা যাবে। না জনাব, তা হবে না। আইন অনুযায়ী এনবিআর উৎস জানতে চাইবে না ঠিকই, কিন্তু বেআইনি কাজ প্রমানিত হলে এই আয়কে এক্সিবিট হিসাবে নিতে আদালতের কোন সীমাবদ্ধতা নেই।
এতক্ষন যা যা বলেছি সব কিন্তু বৈধভাবে উপার্জিত অপ্রদর্শিত আয় সাদাকরনের সুযোগ সম্পর্কে। এবং আমার ধারনা এটা ঠিক মত করা হলে তা অর্থনীতির জন্য সুফলদায়ক হবে। নৈতিকতার বিচারে এটা তেমন কোন হুমকি নয়, সাম্যতার দৃষ্টিতে তো আরও নয়। তবে কেউ যদি এটাকে বেআইনি আয় ধৌতকরনে ব্যবহার করতে চান, সাময়িকভাবে তা পারলেও কার্যতঃ তা সম্ভব না। অচীরেই তিনি যে আরও বড় জালে আটকা পড়ে যাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত।

১,৩৬৯ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “কালোটাকা সাদাকরন সমাচার”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    উপর থেকে নিচে জনগণ, সরকারের বর একটা অংশ দুর্নীতিপরায়ণ।
    এইটা মনে হয় অন্যতম কারণ ট্যাক্স না দেয়ার পেছনে।
    আর ট্যাক্সের টাকা ঘুরেফিরে নেতাদের পকেটে যায় সেটাও আরেকটা কারণ।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    পারভেজ ভাই,
    গাফিলতি, অবহেলা বা অজ্ঞতার কারনে যাদের সাদা টাকা কালো রয়ে যায় তাদের জন্য কিছুটা হলেও সহানুভূতি দেখালেন মনে হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রাজস্ব বিভাগ কিন্তু বৈধ কালো টাকা এবং অবৈধ কালো টাকার পার্থক্য করতে পারবে না (পারলেও অনেক কষ্টসাধ্য! )। সেক্ষেত্রে সবাইকে এক চোখে দেখাই তাদের জন্য শ্রেয় নয় কি?

    সবচেয়ে বড় কথা সুন্দর সুন্দর কথা বলেও মানুষকে কিন্তু অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করায় সরকার তেমন উৎসাহিত করতে পারে নি। আসলে আমাদের দেশে টাকা বৈধ করাটাই জরুরী কোন ব্যাপার না। আইনকে তোয়াক্কা না করেই আরামসে জীবন পার করে দেয়া যায়।

    আমার মতে আগের ধাপেই নজর দিতে হবে বেশি। অর্থাৎ শুরুতেই মানুষকে কর প্রদানে উৎসাহিত (এবং বাধ্য!) করতে হবে। কিভাবে তা সম্ভব? কিছু পয়েন্ট মাথায় আসছেঃ
    ১। বেশি বেশি কর সপ্তাহ/আয়কর মেলা, রেডিও টিভিতে বিজ্ঞাপন ইত্যাদি অর্থাৎ করের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করার জন্য জনসংযোগমূলক কাজ করতে হবে।

    ২। স্কুল-কলেজে ভর্তি হবার সময় পিতা/পোষ্যের ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট দেয়াটা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

    ৩। ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ যে কোন ফর্ম বা সার্টিফিকেট (বা ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট ইত্যাদি) তোলার সময় তাকে হালনাগাদ ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট দেখাতে হবে (ইনকাম থাকুক আর না থাকুক)

    ৪। বাসা ভাড়া নেবার সময় নির্দিষ্ট ফর্ম এর সাথে ইনকাম সার্টিফিকেট দেয়াটা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে করে বাড়িওয়ালাও ট্যাক্সের আয়তায় চলে আসবে।

    ৫। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এই একটি জিনিস ঠিক মতন করা হলে সমস্যার আশিভাগ সমাধান হয়ে যাবে। আমরা ভাবি আমাদের দেশে যে কোন কিছু করেও পার পাওয়া সম্ভব। এই অচলাবস্থা ভাঙ্গতে হবে। অনেক দেশে বড় বড় ট্যাক্স ফাঁকিবাজদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। ইন্ডিয়াতে ট্যাক্স খেলাপিদের বাড়ির সামনে ঢোল পিটানোর ঘটনা ঘটতে শুনেছিলাম। এভাবে উপায়ে কর খেলাপীদের সচেতন করা সম্ভব।

    ৬। আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকদের ন্যূনতম সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক এর নানা বলদ মার্কা সিদ্ধান্তের কারনে আউটসোর্সিং করা ছেলে-মেয়েরা বিদেশ থেকে সহজে টাকা আনতে পারছে না। ইনকামের প্রায় ২৫/৩০ ভাগ ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে আনার জন্য খরচ হয়ে যায়। এটা নাকি করা হয়েছে মানি লন্ডারিং রোধ করার জন্য। অথচ দেশ থেকে সুটকেস ভর্তি টাকা নিয়ে গেলে সরকার খুঁজে পায় না। এগুলো বলছি এ কারনে যে, যে কাজের জন্য যোগ্য তাকে সেই কাজে নিযুক্ত করতে হবে- স্বজনপ্রীতি করে উলটা-পালটা লোককে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসালে দেশের কোন কিছুই ঠিকমতন হবে না।

    বাংলাদশের রাজস্ব বিভাগে লোকবল যথেষ্ট আছে এবং কর অঞ্চল সুন্দরভাবে ভাগ করা আছে। সুতরাং সদিচ্ছা থাকলে দেশের সিংহ ভাগকে করের আয়তায় আনা কোন ব্যাপারই না।

    আপাতত আর কথা না বাড়াই। ভাল থাকবেন
    লেখাটার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    (ব্যক্তিগত মতামত :D)


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      ভালো বলেছো।
      কর দেয়া যে দায়িত্ব এবং যিনি কর দিচ্ছেন তিনি যে দায়িত্ব পালন করছেন, এই বোধটা কর কর্তৃপক্ষের নাই। তাঁদের হাবভাব দেখে মনে হয়, যিনি কর দিতে এসেছেন, তিনি করারোপযোগ্য আয় করে বিরাট অন্যয় করে ফেলেছেন। আমাদের জালে ধরা পড়েছেন (নামটাও মাশাল্লাহ সেইরাম "ট্যাক্স-নেট" হে হে)। এইবার গাবটারে নিয়ে একটু খেলাধুলা করি!
      আর যারা ঐ "জালটা" এড়াতে পারলেন, না জানি কি বিরাট অর্জন করে ফেললেন।
      মাছের ব্যবসা দেখিয়ে ৫% কর দিয়ে পার পাওয়া যাবে, এটা কোন করদাতার মাথায় আসলেও তাঁর পার পাওয়া সম্ভব না। বছরে কোটি কোটি টাকা লাভ হয় (শুধু রেভিনিউ না) এরকম মাছ চাষের জায়গাটা কোথায়, সে ঠিকানা জানতে চাইলেই সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে যেত। কিন্তু তা যখন হয় নাই, তখন কি ঘটেছিল তা বুঝতে কাউকে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না।
      খোঁজ নিলে দেখা যাবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কর কর্মকর্তার যোগসাযোগে কর আইনিজীবীর মধ্যস্ততায় এই কোটি কোটি টাকার মাছ চাষের আয় ৫% করারোপের মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হয়।
      কর কর্তৃপক্ষ যতদিন করদাতাকে সম্মান দেখাতে না পারবেন, হয়রানি চালিয়ে যাবেন, এই দেশে কর প্রদান চর্চ্চার উন্নতি হবে না।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      জুনায়েদ ভাই,
      পয়েন্ট ১) আমরা হইলাম খচ্চর টাইপের জাতি, দিন-রাত কানের পাশে চিল্লাইলেও কিছু হবে না। করের কথা বাদ দেন, এক হেলমেট, আর সীটবেল্ট ঠিক মত পরাইতে পারি না! x-(

      পয়েন্ট (২) থেকে (৪) - করতে পারলে তো কথাই নাই এবং সম্ভব। বিশেষ করে (২) ও (৩)

      পয়েন্ট (৫) দুঃস্বপ্ন কিংবা মতান্তরে দিবাস্বপ্ন :dreamy: :dreamy:

      পয়েন্ট (৬)

      ইনকামের প্রায় ২৫/৩০ ভাগ ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে আনার জন্য খরচ হয়ে যায়। এটা নাকি করা হয়েছে মানি লন্ডারিং রোধ করার জন্য। অথচ দেশ থেকে সুটকেস ভর্তি টাকা নিয়ে গেলে সরকার খুঁজে পায় না।

      :khekz:

      তারপরেও আশা দেখি! :dreamy:


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
      • জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

        মোকা,
        আশা তো অবশ্যই দেখি। কেননা আমাদের যদি শুধুমাত্র গুটিকতক জায়গায় যোগ্য এবং সৎ মানুষ থাকে তাহলে পুরো দেশ সাইজে আসতে খুব বেশি দেরি হবে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে... 🙁


        ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

        জবাব দিন
        • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

          কথা সত্য। ১০০ অসৎ ও অযোগ্য মানুষ একটা দেশের বারোটা বাজাইতে যেই সময় নিবে, ১০০ সৎ ও যোগ্য মানুষ সেই দেশকে সাইজ করতে তারচেয়ে কম সময় নিবে।

          **শর্ত প্রযোজ্য 😀


          \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
          অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

          জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভাল লেখা পারভেজ ভাই। আমি নিশ্চিত আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই ট্যাক্স না দেয়া বৈধ ভাবে উপার্জিত টাকাকে কালো টাকা বলে মনেই করে না।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      আয় যিনি করেন, ট্যাক্স দেয়া যে তাঁর দায়িত্ব, আয়ের উৎস খুজে বের করে ট্যাক্স দিতে বাধ্য করা যে কোন প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব নয় এটা সত্যিই আমাদের দেশের বেশির ভাগ শিক্ষিত মানুষই জানেন না।
      আরও দুঃখজনক হলো, এটা জানানোর কোন সিস্টেমেটিক প্রক্রিয়াও চোখে পড়ে না। বরং একটি আয়, তা বৈধ হোক অবৈধ হোক তাকে সব ধরনের জবাবদিহীতার বাইরে রাখার এবং গোপনীয়তা দেয়ার একটা প্রবনতা চারিদিকে। এটা যদি শুধু অবৈধ আয়ের ক্ষেত্রে হতো, তা হলে তা নিরুৎসাহিত হতো।
      কিন্তু বৈধ-অবৈধ নির্বিশেষে সব আয়ের ক্ষেত্রে এটা হওয়ায়, ডেলিংকুয়েন্টের সংখ্যা এত বেড়ে যায় যা এভেলএবেল কর প্রশাসন বা বিচার ব্যবস্থার পক্ষে হ্যান্ডেল করা সম্ভব না।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  4. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।
    নব্বই দশকের গোড়ার দিকে আমার ছোট ভাই (জেসিসি, আমার এক বছরের জুনিয়ার) আইবিএম-এ কর্মজীবন শুরু করে। ওদের প্রতিষ্ঠান স্যালারী থেকে ট্যাক্স কেটে রাখে। তারপরেও বছরের শেষে কি একটা ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যে ওকে যেতে হতো, তা অকল্পনীয়।
    ৯৫ এর দিকে একবার আইবিএ-তে ক্লাশে একজন খুব রেগুলার শিক্ষক দীর্ঘ্যক্ষন আসছেন না। আমরা বেশ অবাক। উনি কেন এভাবে দেরী করছেন? কখনো তো করেন না।
    উনি এলেন কিছু পরে। এবং এসে বললেন যে উনি ট্যাক্স রিটার্ন দিতে গিয়ে দীর্ঘ্যক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ঘেমে নেয়ে উঠে ফিরে এলেন ক্লাসে দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে।
    তাজ্জব ব্যাপার হলো, আমার এত ঘনিষ্ট, শ্রোদ্ধেয় এই সব মানুষদের সেসময়কার ঐসব হয়রানি দেখে আমার মনে বিন্দু মাত্র মমতা জাগে নাই। বরং এই ভেবে এক ধরনের প্রশান্তি হয়েছে যে "কর / করেন এইসব মজার প্রাইভেট / স্বায়েত্বশাসিত চাকুরি। নাগালে পেয়েও সরকারি চাকুরি না করলে এই হালই হওয়া উচিৎ।"
    এটা মনে হওয়ার কারন, আমি তখন সরকারি চাকুরী করার সুবাদে শুধু ট্যাক্স না ট্যাক্স রিটার্ন প্রদান থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত ছিলাম।
    আর এজন্য ট্যাক্স রিটার্ন প্রদানকে দায়িত্ব মনে না করে এই অব্যাহতিটাকে একটা প্রিভিলেজ বলেই ভাবতে শিখেছি।
    কাউকে ট্যাক্স দিতে হোক বা না হোক, কোন এক অজুহাতে দেশের সকল মানুষের সাথে হয়রানি বিহিন ভাবে তাঁর আয় সম্পর্কিত একটা ইন্টার একশনের জন্য প্রতিবছরে না হোক কয়েক বছর পরপর কিছু একটা ব্যবস্থা সৃষ্টি করা না গেলে এই অবস্থা উত্তোরনের (কালো টাকা কমানোর) আশু কোন উপায় দেখি না।
    এমন অনেক গৃহকর্মি, ড্রাইভারও কিন্তু আছে, যারা আইনতঃ করারোপযোগ্য আয় করে। তাঁদের কে তথাকথিত "করজালে" আটকানো কঠিন। হয়তো উচিতও না। কিন্তু তাদের আয়টির বৈধ আয়ের স্বীকৃতিও থাকা বাঞ্চনীয়।
    নয়ছয় করে ট্যাক্স-সিস্টেম ডজ দেয়াটা সবার জন্যই অসম্মানজনক।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপারটা তুলে আনলেন। এ এক অদ্ভূত খেলা। উপরে আহসান ভাই যেটা বললেন, ট্যাক্স দিচ্ছিনা, কিন্তু আমার আয় যেহেতু বৈধ সৎ, এখানে ট্যাক্স দেয়া বা না দেয়ার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। ‌ট্যাক্স দেয়ার সাথে ট্যাক্স নম্বর থাকার সম্পর্কটা আমাদের এখনো অনেক ঘোলা। জুনায়েদ ভাই‍ বলেছেন, টিআইএন নাম্বার নেয়ার ব্যাপারটা বাধ্যতামূলক করে ফেলতে পারলেই কাহিনীচিত্র পরিবর্তন হওয়া শুরু হবে।

      ব্যর্থতা আমাদের নয়।‍‍‍‍‍ যারা গদীতে বসেছেন, নয়-ছয় করেছেন সমস্যা তাদের। আবার আরেক গোষ্ঠী দেখবেন, "রাঘব বোয়াল ধরার নাম নাই, হলমার্ক কেলেংকারী হয় সাজা পায় না, শেয়ার বাজারে লোপাট করে বহাল তবিয়তে আর আপনি আছেন খেটে খাওয়া মানুষের ট্যাক্স নিয়া টানাটানি" বিশেষ ধরনের ত্যানা যা প্যাঁচাতে বেশ ভাল লাগে।


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        ডাইরেক্ট ট্যাক্স নেটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অর্থ যে নাগরিক হিসাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সরাসরি অংশ গ্রহন করা, এবং তা যে একজন নাগরিকের জন্য গর্বের বিষয়, এই ধারনাটা আমাদের সরকার ও ট্যাক্স অথরিটি আজ পর্যন্ত কমুনিকেট করতে পারে নাই।
        বরং কে দেবে আর কে দেবে না, আর দিতে চাওয়া মাত্রই তাঁকে হয়রানির ঘেরাটোপে বেধে ফেলার যে আয়োজন সেটা দেশের অর্থনৈতিক শৃংখলার জন্য মোটেও উৎসাহ ব্যাঞ্জক না।
        তাছাড়া কোন অজুহাতেই ক্ষুদ্র ট্যাক্স পেয়ারদের ওভার লুক করাটা ঠিক না। এখনকার যে ট্যাক্স ব্রাকেট তাতে অন্তত আরো কোটি খানেক মানুষ ট্যাক্স নেটে আসা উচিৎ। এঁদের নুন্যতম ২০০০ টাকা করে ট্যাক্স দেয়া উচিৎ। আর তাতে দু হাজার কোটি টাকা বাড়তি রেভিনিউ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু তাঁরা আসতে চাইলেও পারবে না। এত বিপুল ট্যাক্স পেয়ারকে প্রচলিত ব্যবস্থ্যায় ট্যাক্সনেটে একোমোডেট করার মত ইনফ্রাস্টাকচার আমাদের নাই।
        তাহলে এমন ব্রাকেট দেয়া হলো কেন, যা নিশ্চিত ভাবেই উপেক্ষিত হবে? সিস্টেমই যদি কর এড়ানো বান্ধব হয় তো করফাকিদাতার দোষ দিয়ে কি লাভ আর কর-সংগ্রাহকের ইনএফিসিএন্সি নিয়ে কথা বলে কি লাভ।
        আইন অনুযায়ী করদাতা হবার যোগ্য কোটি কোটি নাগরিককে ট্যাক্স নেটে আনার পদ্ধতি নিশ্চয়ই আছে। তা খুব কঠিনও না। সেই চেষ্টা কেউ করবে কি?
        কি জানি?


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।