একটি অনাবিল আনন্দময় ও স্মরণীয় ভ্রমন অভিজ্ঞতা

ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ১৫তম ইনটেকের (৭৮-৮৪) আমরা ১৮ জন বন্ধু (১৫ জন সস্ত্রীক) তাঁদের ২৭ জন সন্তান (একজন আবার এক্সক্যাডেট) সহ দিন কয়েক আগে দুরাত ও এক দিনের এক ভ্রমনে গিয়েছিলাম বরিশালে, আমাদেরই এক বন্ধু রিজভির আমন্ত্রনে, পৃষ্ঠপোশকতায়।

কথা ছিল ফিরে এসে ঐ অভিজ্ঞতার কথা লিখবে, যারা যারা লিখালিখি করে বা লিখালিখির সাথে জড়িত।

আমি এককিস্তি লিখেছিলামও। কিন্তু আমার বন্ধু বুয়েটের শিক্ষক মাহবুব সাড়ে চার কিস্তিতে এমনই এক স্বপ্নালু গদ্যের জন্ম দিয়ে ফেলল যে আমি আমার লিখার উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম। এই লিখাটা এতই আকর্ষনিয় যে নতুনবার্তা <http://www.natunbarta.com> তা ছেপেও দিল। সিসিবি-র পাঠকদের জন্য এখানে তুলে দিতে চাচ্ছি।

আর হ্যাঁ, আমারটা লিখার উৎসাহ হারিয়ে ফেললেও বন্ধুদের পিড়াপীড়ি আছে, শেষ করবার জন্য। যদি অনুরোধে ঢেকি গিলতে পারি মানে ওটা শেষ করতে পারি, ওটাও এখানে তুলে দেবার আশ্বাস দিচ্ছি।

আরেকটা কথা, এই লিখার পাবলিক সার্কুলেশনে বন্ধুর ভালোই আপত্তি ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে। ওর ভাষায়: “এমন কিছু আগ্রা-দিল্লি-তাজমহল দর্শন তো নয়- লঞ্চে বরিশাল (যাওয়া আর আসা), যা কিনা হাজার হাজার লোক নিত্য নিত্য করছে। এই নিয়ে আস্ত একটা লেখা, তা ও আবার পত্রিকায়- একটু বেশি হয়ে যায় না!”

তবে সহযাত্রী বন্ধুরা মানে আমরা সবাই বিপুল উৎসাহ দিয়ে শেষমেষ লিখাটা প্রকাশ মানে পাবলিক করে ফেলি। পড়ে বলুন দেখি, হিল্লি-দিল্লী ভ্রমন না হলে কি একটি লিখা সাহিত্যের কোন এক মাপকাঠিতে ভ্রমন-কাহিনী বলে গন্য করার উপযুক্ত হয় না?

জীবনানন্দের দেশে

মাহবুব রহমান

ঘাটের কথা
নদীর ঘাট, আরেকটু বাড়িয়ে বললে বন্দর, আমার কাছে সবসময়ই পরম বিস্ময়ের ব্যাপার। আকাশ ভ্রমণের আগে এটাই ছিল সবচেয়ে দুঃসাহসী ও দূরগামী যাত্রার অনুষঙ্গ। নানারকম জলযানের আসা-যাওয়া এখনো আমাকে মুগ্ধ করে। বিচিত্র তাদের আকার প্রকার, সাজ সজ্জা, নামকরণ ও গন্তব্য। সাধারণ খেয়া নৌকা থেকে বিরাট যন্ত্রচালিত নৌযান- যেমন স্টিমার, লঞ্চ, কিংবা দৈত্যাকার মালবাহী জাহাজ- সবারই যেন একটা নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আছে। জলযানদের গভীর চিন্তাশীল চেতনাসম্পন্ন জীব বলেই আমার মনে হয়। এদের চালচলনেও একটা রাজসিক ধীরস্থির ভাব আছে- ডাঙ্গায় ছুটে বেড়ানো গাড়ির মতো ছটফটে নয় মোটেও। আবার অদ্ভূত ব্যাপার- এদের চাল যতটাই ঢিলেঢালা, ঘাটের লোকদের ব্যস্ততা ঠিক যেন ততটাই বেশি। এক একটা জাহাজ গম্ভীরভাবে জেটি ছোঁয়া মাত্র একদল দড়িদড়া নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে – জাহাজের সঙ্গে জেটির (শিব্রামীয় ভাষায় জ্যাঠাতুতো সর্ম্পক) বাঁধনটি মজবুত করার কাজে। আরেকদল করে মালপত্র নিয়ে টানাটানি। সেই সঙ্গে স্রোতের মতো যাত্রীদের উঠানামা। দৃশ্যটি সম্পূর্ণ করতে আরো আসে হরেক রকমের ফেরিওলা। কাঁধে ও মাথায় সম্ভব অসম্ভব যাবতীয় জিনিষ নিয়ে সার্কাসের নৈপুন্যে তারা বিচরণ করে এক জাহাজ থেকে অন্যটায়।

আবার কোনো মেধাবী ব্যবসাদার এতেও থেমে নেই, আস্ত দোকানটাই তুলে এনেছে ডিঙ্গি নৌকায়- বিস্কুট পাউরুটি থেকে মাথাধরা বমিনাশক ওষুধ- কী নেই। এবং সেই ভাসমান ডিপার্টমেন্টাল স্টোরটি নিয়ে বড় বড় জাহাজ গুলির মাঝখানে বেচাকেনা চালিয়ে যাচ্ছে। এই হট্টগোল ও দুলুনির মধ্যে কিভাবে যে কেনাবেচা চলছে তা রীতিমত গবেষণার বিষয়। আর আছে ভিখিরি ও ধর্মীয় চাঁদা তোলার দল।

জলযাত্রায় ঝুঁকি আছে- বিষেশত বর্ষাকালে নদীগুলির যে করাল ভয়াল রূপ, তাতে যাত্রীরা নিরাপদ যাত্রার আশায় কিছু দান-খয়রাত করতেই পারে। জাহাজে চড়ার এক অনবদ্য বর্ননা আছে শরৎচন্দ্রের অমর উপন্যাস শ্রীকান্তে। আর খালাসি ও ঘাটকর্মীদের ভাবের আদানপ্রদানের প্রাঞ্জল বিবরণ দিয়েছেন আমার ভ্রমণগুরু সৈয়দ মুজতবা আলী তার জলে ডাঙ্গায়। আগ্রহী পাঠক পড়ে দেখতে পারেন- মজা পাবার পূর্ণ নিশ্চয়তা রইল।

বুড়িগঙ্গা ঢাকার প্রাণসঞ্চারী জলধারা- ইংরেজিতে যাকে বলে লাইফলাইন।এই নদীর তীরে প্রধান বন্দর সদরঘাট- কবে কিভাবে এটি গড়ে উঠেছে জানি না। এখানে প্রাণের প্রবাহ এখনো খুবই জোরদার। এখানে এলে আমি একধরনের রহস্যময়তা অনুভব করি। বন্দরে যেন সাময়িক তন্দ্রায় জাহাজগুলো ঝিমায়। তাদের গায়ে গন্তব্য পথের দিশা- দূরের হাতছানি দিয়ে ডাকে। দৃষ্টিসীমার বাইরে যেকোনো স্থানই যেন অন্য কোনো জগতে। সেইসব অজানা অদেখা দেশের পানে একটি একটি করে জাহাজ যাত্রা করে, এবং নদীর উদার বিস্তারের মাঝে মিলিয়ে যায়। আবার তেমনি যেন পর্দা ভেদ করে একে একে এদের আবির্ভাব ঘটে।

আপাতত আমরা কজন বন্ধু সপরিবারে চলেছি বরিশাল। জাহাজের নাম সুরভী-৭, এই পথে নিয়মিত চলাচল করা বাহনদের অন্যতম। এটি আমাদের সফরের মূল আমন্ত্রক ও আয়োজক বন্ধুর পারিবারিক মালিকানায়। সুতরাং আথিতেয়তার ব্যাপক ও নিখুঁত ব্যবস্থা। আমাদের এই বন্ধুটি একটি বিখ্যাত রফতানি শিল্পের সফল কর্ণধার- আয়োজনের প্রতিটি পর্যায়ে তার পেশাগত দক্ষতার ছাপ লক্ষ করা যায়। আর এই বন্ধুমহলের কথা এখানে- এতো অল্পে বলা সম্ভব নয়। বহু বছর আগে এক ভিন্ন জগতে আমাদের যাত্রা শুরু- এ নিয়ে আস্ত একটা বই হতে পারে। শুধু এটুকু বলি, এই বিশেষ মহলটির সঙ্গ যেরকম আনন্দ ও সুখের অনুভূতি এনে দেয়, সারাজীবনে এর সমতুল্য কিছু আমি কোথাও পাইনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি- এতে আয়ু বৃদ্ধি হয়। শত শত পুরিয়া ‘এন্টি-অক্সিডেন্ট’ ও হাজার ঘণ্টা ‘ইয়োগা’ করেও যা হয় না, এখানে দু’ঘণ্টা বসলেই তা হয়।

রাত প্রায় ন’টায়, বিধিমত পুর্বরাগ সেরে অর্থাৎ শেষ মুহূর্তের দৌড়-ঝাঁপ, খালাসী-ঘাটকর্মীদের দ্বৈরথ এবং জাহাজের পিলে কাঁপানো সাইরেন বাদন শেষে সুরভী-৭ তার রাজসিক ভঙ্গিতে যাত্রা করে। আমরা ডেকে দাঁড়িয়ে মহানগরীর বিলীয়মান আলো দেখি, এবং দীর্ঘ আনন্দময় রজনীর জন্য প্রস্তুত হই।

নদীবক্ষে
নদী-প্রকৃতির হাতে গড়া মহাসড়ক। উষর প্রান্তরে প্রাণদায়িনী জলধারা। সেকারণেই হয়তো মানবসভ্যতার বেশিরভাগই গড়ে উঠেছে নদী অববাহিকায়। এই নদী, কালের সাক্ষী হয়ে কত হাজার বছর ধরে বয়ে চলেছে জানি না। এই পথে এসেছে দেশি-বিদেশী বনিকের দল, এসেছে মগ-ফিরিঙ্গি-পর্তুগিজ দস্যুরা। এই নদীতেই হয়তো একদিন ভেসেছিল চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙ্গা। হয়তো এই পথেই লখিন্দরের শববাহী ভেলা অনুসরণ করে ইন্দ্রের সভা পর্যন্ত ছুটে গিয়েছিল পতিপ্রাণা বেহুলা।

কিছুক্ষণ পরই আমরা প্রমত্তা মেঘনায় এসে যাই, পেছনে পড়ে থাকে মানুষের হাতে চরম লাঞ্ছিত বুড়িগঙ্গা, আর যেন বা মানুষের বোধহীন বর্বরতার কথা জানায় তার দুর্গন্ধময় দীর্ঘনিঃশ্বাসে। রাতের অবছায়ায় মেঘনার উদার বিস্তার অসীমের আভাস দেয় এবং তার ভাগ্যহীনা সঙ্গীনির কথা ভুলিয়ে দিতে চায়। নদীর বুকে মাঘের উথাল-পাথাল ঠান্ডা বাতাস, কুয়াশায় অস্পষ্ট অন্য জাহাজের ভৌতিক অবয়ব, জাহাজের সার্চলাইটে তৈরি আলোকময় সুড়ঙ্গ- সব মিলিয়ে এক পরাবাস্তব জগতে আমরা প্রবেশ করি। শুধু উপরে আকাশে পরিচিত কালপুরুষ অভয় দেয়- না, তোমরা এই পৃথিবীতেই আছো এখনো।

এক সময় খোলা ডেক ছেড়ে সবাই জড়ো হই ভেতরের বৈঠকি ঘরে। রাতের ভোজনপর্ব শুরু হয়েছে। আবারো শরৎচন্দ্রের উক্তি ‘গঙ্গার হাওয়ায় বাবুর ক্ষুধার উদ্রেক হইলো’… মনে পড়ে। কথাটা মিথ্যে নয়। ভোজনের বিবরণ দিতে চাই না- রসিকজন বুঝে নিন, আমি যেন দু’জন হয়ে যাই। পুরো যাত্রায় আমাদের আহারবিহার ও যাবতীয় আরাম আয়েশের ব্যাপারটি দেখবার জন্য আমাদের বন্ধুপত্নীটি যেন দশভূজা অন্নপূর্ণা হয়ে বিরাজ করেন।

শুধু আমরা কেন- গত প্রজন্মের মনীষীরা বিশেষভাবে গোয়ালন্দের স্টিমার যাত্রা এবং স্টিমারের খাওয়া দাওয়ার অকুণ্ঠ তারিফ করে গেছেন। বস্তুত আমাদের ধ্রুপদী সাহিত্যে যত রকমের যানবাহন আছে তার মধ্যে নৌযানের উল্লেখ সবচেয়ে বেশি পাই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘নৌকাডুবি’ লিখেছেন। ‘প্লেন ক্র্যাশ’ কিংবা ‘রেলগাড়ি লাইনচ্যুত’- এমন কিছু এখনো কেউ লিখেছেন কি না-জানি না।

আড্ডা জমতে দেরি হয় না। দ্রব্যগুণে রসবৃদ্ধি- সুতরাং ত্রিলোকের কোনো বিষয় বাদ থাকে না। হাসি আনন্দের স্রোত বয়ে চলে মেঘনার স্রোতধারার মতোই অবাধ-উদ্দাম। মনের গহীন ভেতর থেকে অনেক কথা বের হয়ে আসে যা বহুকাল কাউকে বলা হয়নি।

এই পথের নিয়মিত যাত্রীরা বেশিরভাগই খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েছে। কেবল আমরা ক’জন জেগে হল্লা করছি। কখনো একাকী খোলা ডেকে গিয়ে দাঁড়াই- নদীবক্ষের রহস্যময় আলো-আঁধারি সারা গায়ে মেখে নিতে চাই। মাঝে মধ্যে দেখা যায় মিটমিটে আলো- জেলেদের নৌকার। এই অসীম সাহসী মানুষদের নিয়ে আমার একটা বিস্ময় মাখা শ্রদ্ধা আছে। ছেলেবেলায় নানাবাড়ি ভৈরববাজারে এদের বেশ কাছ থেকে দেখেছি। মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকায় এদের বিচরণ ছিল। কিন্তু এদের নিয়ে লেখার সাহস আমার নেই। ওই কাজটি পরম মমতায় করে গেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অদ্বৈত মল্লবর্মন, সমরেশ বসু প্রমুখ দিকপাল জীবনশিল্পীরা।

আড্ডা শেষ হতে চায় না, তবু রাতের শেষ প্রহরে যে যার কেবিনে যাই। সামান্য তন্দ্রা এসেছে- এমন সময় একটা জোরালো সংঘর্ষে গোটা জাহাজ কেঁপে উঠে। সাথে মানুষের উচ্চকিত কথা ও দ্রুত পায়ের শব্দ- কিছুটা বিভ্রান্ত হই। এই অন্ধকারে নৌযানের মধ্যে সংঘর্ষ ও দুর্ঘটনা অসম্ভব নয়। তা ছাড়া হলিউডের ‘টাইটানিক’ ছবিটাও ক’দিন আগে দেখেছি। তাই ব্যাপারটা কী দেখতে বের হই, এবং পরম বিস্ময়ে আবিষ্কার করি যে আমরা ইতোমধ্যে বরিশাল পৌঁছে গেছি। সংঘর্ষটা কিছু না, জেটির সাথে জাহাজের প্রথম স্পর্শ, আর লোকজনের ছুটোছুটি, ছিল দড়িদড়া নিয়ে মাল্লাদের নিয়মিত কসরৎ। বন্দর তখনো জনশূন্য, যাত্রীরাও বেশিরভাগই ঘুমে আচ্ছন্ন। কেবিনে ফিরে একটি সুন্দর দিনের অপেক্ষা করি।

ধান-নদী-খাল
এই তিনে বরিশাল। বাংলাদেশের একটি অন্যতম সুন্দর এলাকা- আপন সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বৈশিষ্ঠে অনন্য। একদিকে নদী পথে সারা দেশে, অন্যদিকে উপকূলের কাছাকাছি বলে সাগর পথে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ। কাজেই বহুকাল আগে এখানে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধ জনপদ। এরকম এক জনপদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকাই স্বাভাবিক।

প্রসঙ্গত সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসের কথা মনে আসে, যেখানে ঠিক যেন এরকমই এক নদীবেষ্ঠিত এলাকার মানুষদের জীবন উঠে এসেছে।  ইংরেজ আমলে, এমনকি তার পরেও – তখনো সারাদেশ ঢাকামুখী হয়নি, বরিশালের সঙ্গে কলকাতার সরাসরি জলপথে যোগাযোগ ছিল। এর ফলে এখানে রাজনীতি ও সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য উত্তরণ ঘটে। অনেক দেশবরেণ্য ব্যক্তি, রাজনীতিক, কবি-সাহিত্যিক এই পলিমাটির সন্তান।

আমরা যখন জাহাজ থেকে নামি তখন বেলা প্রায় দশটা। পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা আগেই করা ছিল। তাতে চেপে সবাই প্রথমে যাই বরিশাল সার্কিট হাউসে। এর একটি প্রাচীন অংশ আছে। সেটাকে বিলুপ্ত না করেই আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ একটি নতুন অংশ নির্মাণ করা হয়েছে। সার্কিট হাউসে ঘণ্টাখানেক সময় কাটে-সবাই সারাদিনের জন্য প্রস্তুত হয়। আয়োজক বন্ধুর সরল উক্তি- এখানে শুধু নদী আর খাল, সেই অর্থে দেখবার তেমন কিছু নেই। আমাকে অবশ্য নদী-মাঠ-সেতু সবকিছুই প্রবলভাবে আকর্ষণ করে।

প্রথম গন্তব্য গাবখান সেতু, এর একটা বিশেষত্ব আছে। এখানে মূল নদীটি হাঁসুলি বাঁকের মতো, বাঁকের দুই প্রান্ত খাল কেটে যুক্ত করেছিলেন এক দূরদর্শী ব্যক্তি, যার স্মৃতি বহন করছে এই সেতুর নাম। খাল তো নয়- চওড়ায় ও গভীরতায় বরং আরেকটি নদীই বলা যায়। বড় জাহাজও এতে সহজেই চলতে পারে। সেতুটি নির্মিত হয়েছে এই কৃত্তিম নদীর উপর, জাহাজ চলাচলের সুবিধার্থে অনেক উঁচু করে। কারো এক্রোফোবিয়া থাকলে ওখানে না যাওয়াই ভালো- মাথা ঘুরে একটা কিছু ঘটে যেতে পারে।

পরবর্তী গন্তব্য দপদপিয়া জোড়া সেতু। নদীর দুই ধারে শান্ত স্নিগ্ধ পল্লী দেখি, আর নদীতে চলমান জীবন। নদীর পানি এতো পরিষ্কার এতো সুন্দর হতে পারে তা যেন নতুনভাবে আবিষ্কার করি। এই অঞ্চলে নারিকেল ও সুপারি গাছের প্রাচুর্য এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিশেষ মাত্রা এনেছে। প্রেমিক ও বিদ্রোহী কবি নজরুলও “বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি’র” সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তবে সেটা ছিল ফরিদপুরে।

বেলা প্রায় দু’টা অবধি  ঘোরাফেরা করি এবং মুহূর্তগুলি ক্যামেরা বন্দি করার চেষ্টা চলমান থাকে।

এক সময় উপস্থিত হই রূপসী বাংলার রূপকার সেই নিভৃতচারী কবি জীবনান্দ দাশের এককালীন বসতবাটিতে। যদিও তার কোনো চিহ্ন আজ আর সেখানে নেই। তবুও- যেই কবি বার বার ফিরে আসতে চেয়েছেন এই ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে- তার সেই রূপসী বাংলা তো রয়েছে! রয়েছে প্রিয় কাঁঠাল ছায়া, প্রিয় ধানসিঁড়ি…এমন কিছু রাজসিক ইন্দ্রপুরী তো নয়, অতি সাধারণ গ্রাম্য ব্যাপার। একজন কবিই আসলে পারেন এইসব অতি তুচ্ছ জিনিস এমনভাবে ভালোবাসতে।

দুপুরে ভোজনপর্ব। বন্ধুবরের পৈত্রিক নিবাসে। এই পর্বের বিবরণ দেবার চেষ্ঠা করব না। শুধু ভেবে নিন- শ’খানেক মানুষকে কাচ্চাবাচ্চা সমেত হোটেলে খাওয়ানো হয়তো তেমন কঠিন কর্ম নয়, কিন্তু বাড়িতে? ওই বাড়ির প্রতিটি মানুষ কি রকম পরম আদরে ও মমতায় এই কঠিন কাজটি এমন সুচারুভাবে করলেন, তার যথার্থ প্রশংশা করতে আমি অক্ষম।

বিকালে আবারো শহরে ও আশপাশে ঘুরে দেখা। মাঘের অপরাহ্নের মিঠে আলোয় এই প্রাচীন শহর আরো সুন্দর, আরো মায়াময় দেখায়। আমরা যারা ঢাকা শহরের কথিত উন্নয়নের ভয়াবহ আক্রমণের মুখে বাস করি, সবুজের সমারোহ এবং আয়ু ক্ষয়কারী দূষণের হাত থেকে এখনো বেঁচে যাওয়া এই পরিবেশে কিছুকালের জন্য নাগরিক সভ্যতার অন্য আরেকটি রূপ যেন আবিষ্কার করি। অল্প সময়ের জন্য যেন সবার উপর এক ঐন্দ্রজালিক মায়া বিস্তার করে স্থানটি। আমি ব্যক্তিগতভাবে অবাক হয়ে ভাবি কেন মানুষ এমন দিশেহারা হয়ে ঢাকা নামক বসবাসের অযোগ্য কংক্রিটের জঙ্গলপানে ছুটছে। এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী বা অর্থনীতিবিদরা ভালো বলতে পারবেন। আমি শুধু এটুকু বলব- শরীরের সব রক্ত মাথায় চলে আসা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো নয়।

দিনভর বেড়ানো শেষে সন্ধ্যায় ফিরতি যাত্রার জন্য বন্দরে আপেক্ষমান সুরভী-৭ এ সবাই উপস্থিত হই। ধুমায়িত চা হাতে ডেকে দাঁড়িয়ে জাহাজ ছাড়ার দৃশ্য দেখি, আর ভাবি –আহা! দিনটা বড্ডো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল!

উজান পথে
মৎসকূল উজানযাত্রা করে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে- সৃষ্টির পরম্পরা রক্ষায়। এভাবে তাদের জীবনচক্র পূর্ণ হয়। আমাদের ফিরতি যাত্রাও উজানে, অবশ্য ভৌগলিক কারণে। ফিরতি যাত্রাতেও আনন্দ-আপ্যায়নের কোনো কমতি নেই। তবু আমার মনের এক নিভৃত কোণে অদৃশ্য মাকড়শা বিষন্নতার জাল বুনে চলে। আহা- আবার কবে এমনটি হবে? কোনোদিন আদৌ হবে তো? সেই তারাশঙ্করের ‘কবি’র খেদ- “জীবন এত্তো ছোটো ক্যানে!”

একসময় ঘন কুয়াশায় চলা কঠিন হয়ে উঠে। সতর্ক সারেঙ্গ জাহাজ থামিয়ে দেয়, ঘর্ঘর ধাতব শব্দে মাঝগাঙ্গে নোঙর ফেলা হয়। কারো কারো মনে দুঃশ্চিন্তার কালো মেঘ জমতে থাকে। এভা্বে মাঝগাঙ্গে গহীন অন্ধকারে কতসময় ভেসে থাকতে হয় কে জানে। আস্বস্তি কাটানোর জন্যই বুঝিবা সবাই একটু বেশি উচ্ছ্বল হয়ে উঠি। ঘণ্টাখানেক পরই অবশ্য অবস্থার উন্নতি হয়। খালাসীদের ঐতিহ্যবাহী কোরাস- মারো টান হেঁইয়ো..ইত্যাদি শোনা যায়, সাথে নোঙর তোলার ধাতব শব্দ। একটু বাদেই জাহাজের সারা দেহ যেন প্রাণের উচ্ছ্বাসে থরথর করে কেঁপে উঠে, স্রোতের বিপরীতে তার যান্ত্রিক শক্তিতে এগিয়ে চলে।

প্রথম রাতের তুলনায় একটু আগেই আসর ভঙ্গ হয়। মহানগরীতে অপেক্ষা করছে জীবনের নানাবিধ কর্তব্যের বেড়াজাল। অতএব বিশ্রাম নিদ্রার প্রয়োজনীয়তা বোধ করি সবাই। অবশেষে সুরভী-৭ ঢাকায় ভেড়ে সকাল সাড়ে আটটায়। মহানগরী তার স্বভাবসুলভ কোলাহলে জেগে উঠেছে। পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বিষন্ন মনে যে যার গন্তব্যে যাত্রা করি। মনের গহীনে নিয়ে যাই এক আশ্চর্য ভ্রমণের স্মৃতি- যা বহুকাল আমাদের সঙ্গী হয়ে থাকবে।

কিছু ভাবনা
নদীমাতৃক বাংলাদেশ- কথাটা শুধু শ্রুতিমধুর প্রবচন নয়, বরং কঠিন বাস্তব ব্যপার। নদীপথে ভ্রমণ করলে হয়তো এই সত্যটি উপলব্ধি করা সহজ হবে। আমাদের অস্তিত্ব ও ইতিহাসের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে দেশ জুড়ে বয়ে চলা শিরা-উপশিরার মতো অসংখ্য জলধারা। ভূপেন হাজারিকা একবার অনুযোগের সুরে গেয়েছিলেন কেন ভারতবর্ষের এতো দুঃখ দুর্দশা দেখেও গঙ্গা নিঃশব্দ নীরবে বয়ে চলেছে। আমি কিন্তু মনে করি আমাদের পদ্মা-মেঘনা-যমুনা সহ দেশের সব নদ-নদী হাওর-বাওড় মুক্তিসংগ্রামে আমাদের পাশে ছিল। যখন অগণিত নিরপরাধ মানুষের শব ভেসেছে এই পানিতে, রক্তে লাল হয়েছে শুভ্রধারা, তখন বুঝিবা এরাও ফুঁসে উঠেছিল নিজ সন্তানদের রক্ষায়। এদের কারণেই হয়তো অতিশয় প্রশিক্ষিত, যোদ্ধা জাতির অলীক গর্বে স্ফীত, বর্বর পাকিস্তানি সেনা তাদের যুদ্ধবিদ্যার কেরামতি দেখাতে পারেনি। বরং এই বিস্তীর্ণ জলরাশি ছিল তাদের কাছে মূর্তিমান বিভীষিকা, অবাধ চলাচলের পথে বিষম বাধা, এবং অনেকেরই সমাধি।

আজকে স্বাধীন এই দেশে আমরা হাজারটা ভুলভ্রান্তি সত্ত্বেও এগিয়ে চলেছি- এই জাতি এগিয়ে যাবেই। উন্নয়নের আবশ্যিক অনুষঙ্গ হিসেবেই ঘটবে আরো শিল্পায়ন ও নগরায়ন। কিন্তু একদিন আমরাও শিখব কিভাবে আমাদের মূল শেকড়টিকে বাঁচাতে হয়। তখন আমাদের নদীগুলো আবারো বিমুক্ত হবে অবাধ দূষণ ও অত্যাচার থেকে।চিরন্তন সৌন্দর্য নিয়ে ছুটে চলবে, যেমনটি চলেছে অযুত শতাব্দী ধরে। এই মাটি ও মানুষ যে তাদেরই একান্ত আপন!

৩,২৬৫ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “একটি অনাবিল আনন্দময় ও স্মরণীয় ভ্রমন অভিজ্ঞতা”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    চমৎকার লেখা পারভেজ ভাই। বরিশাল লঞ্চে করে বন্ধুবান্ধব নিয়ে যাবার সখটা এবার দেশে এসে পূরণ করতেই হয়। বর্ণনা পরে মাথা খারাপ হবার জোগাড়।

    দেশে চাকুরীরত অবস্থায় বরিশালের আঞ্চলিক অফিস পরিদর্শনের সুযোগ ছিল কিন্তু বন্ধু বান্ধবের পোস্টিং উত্তরবঙে বেশী হওয়ায় রঙপুর আঞ্চলিক অফিসে গিয়েছিলাম। লঞ্চ ভ্রমন নিয়ে একটা ফটোব্লগ না লিখতে পারলে চলছে না! 🙂


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      ভালো একটা লঞ্চ আর ভালো একটা হোটেলের মধ্যে পার্থক্য একটাই, একটা চলছে জলে অন্যটা থেমে আছে ডাঙ্গায়।
      সেই রকম একটা জায়গায় পরপর দুরাত ১৮ জন প্রাণেরবন্ধু (arete friendships) রাত আটটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত আড্ডা দেয়া (পারিবারিক ইন্টারফেয়ারেন্স ব্যাতীত, কারন সন্তান-সন্ততিসহ পরিবার সাথেই আছে) কি একটা চাঁদ হাতে পাবার মত ব্যাপার তা বর্ননার অতীত...
      হ্যাপী আড্ডা ফর অল হু আর ইন্টারেস্টেড টু ট্রাই এট ঔন রিস্ক এন্ড এফর্ট...


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আহ লঞ্চ ভ্রমন! বরিশালের পড়ার অন্যতম প্লাস পয়েন্ট ছিল এই লঞ্চ জার্নিগুলো। পূর্নিমার রাতে লঞ্চের ছাদে বসে চাঁদ দেখার কোন তুলনা হয় না। 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. টিটো মোস্তাফিজ

    :just: মহাকাব্যিক স্বপ্নালু গদ্য । এক কথায় বলতে পারিছিনা । দুই কথায় বলি পারভেজ ভাই-
    মাহবুব ভাইয়ের লেখাটা অনন্য সাধারণ :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
    কিন্তু -

    ...জন্ম দিয়ে ফেলল যে আমি আমার লিখার উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম।

    এটা মানতে পারছি না ভাই। আপনার লেখাও অসাধারণ। ঢেঁকি গিলতেই হবে ভাইয়া 🙂 (সম্পাদিত)


    পুরাদস্তুর বাঙ্গাল

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      এই রকম পাঠক পেলে না লিখে উপায় কি?
      তবে আজ পারব না। কাল নিয়ে বসবো, ইনশাল্লাহ।
      সৌদি ইনশাল্লাহ না, বাংলাদেশি ইনশাল্লাহ।
      🙂
      @মোস্তাফিজ


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
        • পারভেজ (৭৮-৮৪)

          শোনা গল্প যদিও,
          সৌদি আরবে ইনশাল্লাহ বললে, ঐটা করার আর কোন দায় থাকে না। দায় ট্রান্সফার হয়ে যায় আল্লাহর উপর।
          "কাল আপনার সাথে দেখা করবো" - এটা একটা প্রমিজ। মানতে হবে। না মানলে যে প্রমিজটা করছে সে দায়ী।
          কিন্তু যদি বলে "কাল আপনার সাথে দেখা করবো - ইনশাল্লাহ" তাহলে দেখা করানোটা আল্লাহর দায়িত্ব। আমি দেখা না করতে পারার মানে, আল্লাহ সেটা চান নাই।
          দাড়াচ্ছে এই যে সৌদি কেউ যখন বলে "আমি করবো" মানে সে করবে।
          আর যখন সে বলে "আমি করবো ইনশাল্লাহ" মানে সে আর সেটা করবে না।
          🙂


          Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

          জবাব দিন
  4. প্রথম রাতে আটটা থেকে আর পরের রাতে সন্ধ্যা থেকে ভোররাত অব্দি ননস্টপ অসাংবিধানিক আড্ডার ভিডিওগুলো দেখলে স্বামীদের া ঘরে বেঁধে রাখা কঠিন।প্রথম রাতের ভিডিওটা স্ত্লিদের কাছে লীক হলে ওরাও প্রতিশোধ মূলক ব্যবস্হা নেয় পাল্টা আড্ডা দেয়ার।স্বামীদের সন্তানদের দায়িত্ব দিয়ে।কিন্তু সংসদে না জয়যুক্ত হওয়ার ভয়ে হয়তো তারা আর রাজপথে নামেনি(তিনজন অস্ত্রীক)। আমরা যারা অস্ত্রীক যাত্রী,তাদের ক্ষমতাটা বুঝুন।

    জবাব দিন
  5. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    বাই দ্যা ওয়ে, কেউ এই ভ্রমনের ছবি দেখতে চাইলে তা দেখতে পাওয়া যাবে এখানে এবং এই সবখানে আড্ডা, বরিশাল পৌছানো, https://www.facebook.com/Pervez840/media_set?set=a.10152185916541427.1073741847.724301426&type=3, বরিশাল সিটিতে


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      জেলাস ফিল করার কিছু নাই। তোমার আরও ২৬ বছর সময় হাতে আছে এই রকম একটা মজার অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যাবার জন্য।
      মাথায় টুকে রাখ এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকো। তারপরে একসময়ে চলে গেলেই হলো।
      আমাদের রেকর্ডগুলা খেয়াল রেখো এবং ভাঙ্গার চেষ্টা করো।
      বন্ধু - ১৮
      তদীয় স্ত্রীগণ - ১৫
      সন্তান - ২৭
      মোট - ৬০
      আউটিং কাল - ৩৬ ঘন্টা
      অর্থাৎ
      ৬৪৮ বন্ধু ঘন্টার আউটিং
      ২১০৬ বন্ধু-পরিবার ঘন্টার আউটিং
      যে বা যারা এই রেকর্ডগুলা ভাঙ্গতে পারবে, তাঁদের জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা।
      আর তা হলে, আমার চেয়ে খুশি কেউ হবে না।
      নিজেদের এক আনন্দ অভিজ্ঞতা অন্যদের মাঝে ছড়ানোর মধ্যে কি যে এক অনাবিল আনন্দ, বর্ননা করা কঠিন।
      আরো কিছু রেকর্ড:
      ১৮ জনে ৯ জনের ডিফেন্স ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। ৬ জনই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।
      ৪ জন ডাক্তার।
      ৭ জন ইঞ্জিনিয়ার/আর্কিটেক্ট
      ৫ জন এমবিএ।
      কেউ কেউ একের ভিতর ২ বা ৩, তাই টোটাল ১৮-র বেশী 🙂


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  6. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    ইংরেজ আমলে, এমনকি তার পরেও – তখনো সারাদেশ ঢাকামুখী হয়নি, বরিশালের সঙ্গে কলকাতার সরাসরি জলপথে যোগাযোগ ছিল। এর ফলে এখানে রাজনীতি ও সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য উত্তরণ ঘটে। অনেক দেশবরেণ্য ব্যক্তি, রাজনীতিক, কবি-সাহিত্যিক এই পলিমাটির সন্তান।

    :hatsoff:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  7. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    লঞ্চ ভ্রমণের বিশেষ করে বরিশালের
    আসল মজা হচ্ছে যেতে হবে ডেকে করে। দুয়েক জন বন্ধুবান্ধব কেবিনে থাকলে ভালো। সে আরেক অভিজ্ঞতা হবে।
    হিন্দি সিনেমা দেখতে হবে।
    লঞ্চের ছাদের দীর্ঘ সময় থাকতে হবে।
    ২৯ খেলতে হবে ডেকে বসে। অনেক দর্শক জুটে যাবে যা অনেক আনন্দের খোরাক হবে।
    ইত্যাদি।
    একটা ঝড়ে পড়লে বেশ হয়। জীবন মৃত্যুর এই অনিশ্চয়তা বেশ একটা কাজের জিনিস।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  8. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "শুধু উপরে আকাশে পরিচিত কালপুরুষ অভয় দেয়- না, তোমরা এই পৃথিবীতেই আছো এখনো" - চমৎকার!
    "আমি শুধু এটুকু বলব- শরীরের সব রক্ত মাথায় চলে আসা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো নয়" - তা বটে!
    "আমি কিন্তু মনে করি আমাদের পদ্মা-মেঘনা-যমুনা সহ দেশের সব নদ-নদী হাওর-বাওড় মুক্তিসংগ্রামে আমাদের পাশে ছিল" - খুব ভালো লাগলো এ কথাগুলো।
    "একদিন আমরাও শিখব কিভাবে আমাদের মূল শেকড়টিকে বাঁচাতে হয়। তখন আমাদের নদীগুলো আবারো বিমুক্ত হবে অবাধ দূষণ ও অত্যাচার থেকে।চিরন্তন সৌন্দর্য নিয়ে ছুটে চলবে, যেমনটি চলেছে অযুত শতাব্দী ধরে। এই মাটি ও মানুষ যে তাদেরই একান্ত আপন!" - এমিও এমনটিই আশাবাদী।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।