মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর টেলিফোন কথোপকথন বিষয়ক অনুভূতি

একটি সাম্প্রতিক চলমান বিষয়ের উপর অনুভূতি জানাতেই এটা লিখা। বিষয়টিতে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ প্রক্রিয়ার বিশ্লেষন ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য না খোজার জন্য অনুরোধ করছি।

মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর টেলিফোন কথোপকথন শুনলাম। দুজনেই প্রস্তুতি নিয়েই যে কথা বলতে বসেছিলেন তা পরিষ্কার বুঝলাম।

আমার মনে হলো, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রীর মূল প্রস্ততুতি ছিল দুটি লক্ষ অর্জনে: ১) তাঁর টেলিফোনটি যে ডেড ছিল, সেটা এসটাবলিশ করা, ২) কোন ক্রমেই হরতাল প্রত্যাহারে সম্মত না হওয়া। দ্বিতীয় লক্ষটি তিনি অর্জন করতে পারলেও তাতে সাফল্য কতটুকু ছিল, তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। প্রথম লক্ষটিও তিনি সন্দেহাতিত ভাবে অর্জন করতে পারেন নাই।

একটু ব্যাখ্যা দেই। এনালগ যুগের একটি কমন এক্সকিউজ: “টেলিফোন ডেড ছিল” এখন এক প্রমানযোগ্য লেম এক্সকিউজ। আসুন দেখি টেলিফোন ডেড হয় কি কি কারনে ক) বিল বকেয়া থাকায় এক্সচেঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্নতায়। খ) এক্সচেঞ্জ থেকে যান্ত্রিক কারনে সংযোগ দিতে না পারায়। গ) পথিমধ্যে তার কাঁটা পড়ায়। ঘ) গ্রাহক প্রান্তে সঠিক সংযোগ না থাকায়, যার মধ্যে: সেট নষ্ট, আন প্লাগ করে রাখা, রিংগার বন্ধ রাখা অন্তর্ভুক্ত। বিরোধী দলীয় নেত্রীর রেড টেলিফোন বিলের কারনে কাঁটা পড়াটা প্রশ্নাতিত রকমের অসম্ভব ব্যাপার। এক্সচেঞ্জ থেকে সংযোগ না দিতে পারাটা এখনকার ডিজিটাল দুনিয়ায় লগ করা থাকে। এটা ভেরিফাইএবল। রেড টেলিফোনের সংযোগে একাধিক তাঁর ব্যবহৃত হয়। একসাথে সবগুলো তাঁর কাঁটা পড়া প্রায় অসম্ভব। তাহলে একমাত্র বাকি থাকে চতুর্থ অপশনটি। সেক্ষেত্রে টেলিফোন ডেড ছিল এই দাবীটির প্রমান তাঁকে (বিরোধী দলীয় নেতৃকে) আসলে কতটা সুরক্ষিত করলো, নাকি তাঁর অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো, সে প্রশ্ন করা যেতেই পারে।

দ্বিতীয় লক্ষ অর্জনে তিনি, “আঠারো দলের সিদ্ধান্ত, আমি একা কিভাবে সিদ্ধান্ত নেব” বলে যে কাভারটা তিনি নিলেন, তা প্রথম শ্রবনে বিশ্বাসযোগ্য লাগে নাই। উপরন্তু, “স্টেপডাউন করুন, হরতাল প্রত্যাহার করা হবে” – উক্তি শুনে বরং মনে হয়েছে তিনি সত্যিই সন্দেহজনক আচরণ করছেন।

প্রধান মন্ত্রির মূল প্রস্তুতি ও লক্ষই ছিল বিরোধী দলীয় নেত্রীকে হরতাল প্রত্যাহারে সম্মত করানো। এর বাইরেও তাঁর আর যে কয়টি প্রস্তুতি লক্ষ করা গেছে তা হলো: ক) উত্তেজিত না হওয়া, খ) বলার চেয়ে শোনায় বেশী মনযোগ দেয়া, গ) বেফাঁস কথা বলা থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করা। বেফাঁস কথা বলা থেকে দূরে থাকতে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও মাঝে মাঝে তিনি ঐরকম বিষয় টেনে এনেছেন বাদানুবাদে জড়িয়েছেন। অবশ্য খুবি সাফল্যের সাথে স্বল্প সময়েই তিনি তা থেকে বেরিয়েও এসেছেন।

সাদা চোখে মূল লক্ষ অর্জনে তিনি ব্যার্থ হলেও তাঁর (মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর) সমগ্র প্রচেষ্টাটি বাংলাদেশের রাজনীতি চর্চ্চার প্রেক্ষাপটে বিরল পদক্ষেপ হিসাবে প্রশংসার দাবীদার। এই পদক্ষেপ নিয়ে তিনি ইমেজ উন্নত করনে যে সাফল্য লাভ করেছেন, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী তাঁর থেকেও বড় ইমেজ নির্মানে সক্ষম হতেন যদি তিনি হরতাল প্রত্যাহার না হোক অন্ততঃ স্থগিতও করতেন। ইমেজ পুনর্গঠনের এইরকম সহজ সুযোগ তিনি খুব একটা পাবেন না অথবা তাঁকে দেয়াও হবে না।

জনস্বার্থে হরতাল প্রত্যাহারে ব্যক্তিগত আহ্বান জানিয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী যে নজির স্থাপন করলেন, আশা করছি এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তা নতুন ধারার সৃষ্টি করবে।

হরতাল ডেকে তা প্রত্যাহারের ব্যক্তিগত আহ্বানকে দর কষাকষির একটি সুযোগ হিসাবে ব্যবহারের যে একটি ক্ষেত্র থাকতে পারে সেটা নিয়ে রাজনৈতিক বোদ্ধাগনকে ভাবনা চিন্তার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। ঘোষনা দিয়ে হরতাল করাই শেষ কথা হওয়া উচিৎ নয়। হরতাল আহবান একটি রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের অস্ত্র। এটার বিবিধ রাজনৈতিক ব্যবহার থাকা বাঞ্ছনীয়।

দুই মাননীয় নেত্রীর কথপোকথনে মূল আলোচ্যের বাইরের যেসব অপ্রাসঙ্গিক বিষয় উঠে এসেছে তা তাঁদের মধ্যে যোগাযোগহীনতার সাইড-ইফেক্ট বলে মনে হলো। বোঝা গেল তাঁদের একজনের অন্যজনকে বলার জিজ্ঞাসা করার অনেক কথা আছে। কিন্তু কি এক ভ্রান্ত আচারের কারনে তাঁরা সেটা করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। অবস্থানের দিক থেকে তাঁরা যেই হোন, শেষ পর্যন্ত কিন্তু তাঁরা মানুষই। আর দুজন মানুষ ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও একজন অন্যজনের সাথে কথা বলতে পারছেন না, কথা বলা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন – এ বিষয়টা ভেবে ব্যথিত হলাম।

একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতার মধ্যে নিয়মিত (মাসিক বা ত্রয়োমাসিক বা অন্য কোন ইন্টারভেলে) দেখাশুনার একটি ব্যবস্থা থাকলে এই সমস্যাটা থেকে তাঁরা এবং আমরাও মুক্ত থাকতে পারতেন / পারতাম।

দেখা যাক, ভবিষ্যতে কি হয়? সময়ই বলে দেবে…

১,১৫০ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর টেলিফোন কথোপকথন বিষয়ক অনুভূতি”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ফোনালাপ নিয়া একটা লেখার জন্য সিসিবি তে অপেক্ষা করছিলাম।
    পারভেজ ভাইকে ধন্যবাদ।

    :clap: :clap: :clap:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      মোস্ট ওয়েলকাম। আর কিছু বিশ্লেষন, এক্সপেকটেশন দেখতে পেলে ভাল লাগতো। তা নাআসাটা এই ব্যাপারটা নিয়ে তাঁদের এক্সপেকটেশনহিনতার দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে।
      দেশে এতবড় একটা ইভেন্ট চলছে অথচ কারো এক্সপেকটেশন এটা তেমন কোন ভূমিকা রাখছে না, বিষয়টা খুবই হতাসাব্যাঞ্জক নয় কি?


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ধার করা একটা পরিসংখান দিলাম

    তানভীর চৌধুরী পিয়েল

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়ার ফোনালাপে-

    ফোন শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৪৯ বার
    হরতাল শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৪১ বার
    আলোচনা শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৪১ বার
    প্রত্যাহার শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ১৭ বার
    খুন শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ১৩ বার
    লোক শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ১৩ বার
    রাত শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ১০ বার
    ১৮ দল শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৯ বার
    সুযোগ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৮ বার
    সত্য শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৭ বার
    বিশ্বাস শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৬ বার
    লীগ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৬ বার
    হত্যা শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৬ বার
    পুলিশ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৬ বার
    নিরপেক্ষ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৫ বার
    কোরান শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৫ বার
    গ্রেনেড শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৫ বার
    ক্যামেরা শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৫ বার
    জন্মদিন শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৫ বার
    ২১ আগস্ট শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৪ বার
    যুদ্ধাপরাধী শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৪ বার
    দাওয়াত শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৪ বার
    এরশাদ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ৩ বার
    নির্বাচন শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ২ বার
    ১৪ দল শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ১ বার
    আল্লাহ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ১ বার
    স্বাধীনতা শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ১ বার
    সংলাপ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ০ বার


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      এটা যদি ঠিক হয়ে থাকে তো - ফোন, হরতাল, আলোচনা এই ত্রোয়ী শব্দচয়ন যেভাবে অন্য সব কিছুকে আউট নাম্বার করেছে, তা নিশ্চিতভাবে ঐ হাইপোথিসিসটা সাপোর্ট করে যে মূলতঃ বক্তাগনের প্রস্তুতি ছিল এগুলো নিয়ে কথা বলায়ই।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    কল্পনার সংলাপঃ

    সংলাপটা যদি এমন হতো : ( খুশি হতো দেশের জনগন, জয়ী হতো রাজনীতি)
    শেখ হসিনা : স্লামুয়ালাইকুম।
    খালেদা জিয়া : ওয়ালাইকুম সালাম
    শেখ হাসিনা : আপনি কেমন আছেন
    খালেদা জিয়া : আমি ভাল আছি , আপনি কেমন আছেন ?
    শেখ হাসিনা : আমি ভাল আছি। আপনার শরীর কেমন আছে ?
    খালেদা জিয়া : ভাল আছি। আপনার বাসার সবাই ভাল ?
    শেখ হাসিনা : হাঁ বাসার সবাই ভাল আছে। আমি আজ দুপুরে আপনাকে ফোন করেছিলাম। রিং হচ্ছিল কেউ ধরলো না।
    খালেদা জিয়া : না আমি শুনিনিতো। সম্ভবত ফোনটি ডেড।
    শেখ হাসিনা : তা হলে সরি , ঠিক আছে আমি খবর নিবো।
    খালেদা জিয়া : এবার বলেন কি বিষয় ?
    শেখ হাসিনা : আমি বলতে চাচ্ছি যে আগামী নির্বাচন নিয়ে আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। যদি আপনি আগামী ২৮ তারিখ একটু সময় দেন
    খালেদা জিয়া : ঠিক আছে আমি আসবো।
    শেখ হাসিনা : তা হলে যেহেতু আমরা জনগনের জন্য রাজনীতি করি সেহেতু আপনি দয়া করে হরতালটা প্রত্যাহার করে নিন।
    খালেদা জিয়া : ঠিক আছে আপনার সম্মানে আমরা হরতাল প্রত্যাহার করে নিলাম।
    শেখ হাসিনা : আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
    খালেদা জিয়া : আমিওতো চেয়েছিলাম আমরা দুজনে বসে আলাপ করে সব ঠিক করে নিবো।
    শেখ হাসিনা : জি হ্যাঁ । আপনার সাথে আমি ২৮ তারিখ রাতে একত্রে ভাত খাবো। আপনি সবাইকে নিয়ে আসবেন।
    খালেদা জিয়া : দাওয়াত দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার হাতের রান্না অনেকদিন খাই না। ঐ যে আপনি রান্না করে পাঠাতেন। খুব মজা করেই খেতাম। দেখা হলে সব আলাপ হবে।
    শেখ হাসিনা : ঠিক আছে আমি নিজ হাতে আপনার জন্য রান্না করবো। কি খাবেন বলেন।
    খালেদা জিয়া : বেশী কিছু না। আপনি যা রান্না করেন তাই খাবো।
    শেখ হাসিনা : আপনাকে অংসখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন। আবার দেখা হবে। খোদা হাফেজ
    খালেদা জিয়া : খোদা হাফেজ । আপনিও ভাল থাকুন। (রতন মজুমদার)


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।