সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া একটি দুঃখজনক ঘটনা সংশ্লিষ্ট কতিপয় অনুমান

এইটা কোন তথ্য ভিত্তিক লিখা না স্রেফ একগুচ্ছ অনুমান। অবশ্য গুনিজনেরা বলেন তথ্যের অনুপস্থিতিতে অনুমানই একমাত্র অবলম্বন।
পশ্চিমে এমন অনেক মুভিই হয়েছে যেখানে দেখা গেছে যে একজন ল’এনফোর্সার বা ডিটেকটিভ বা প্রাক্তন এফবিআই এজেন্ট হঠাৎ আবিষ্কার করলেন যে তার খুব ঘনিষ্ট কেউ একজন কোন একটি সংগবদ্ধ অপরাধচক্রের সাথে জড়িয়ে পরেছেন।
কি করবেন তিনি?
প্রথমে অবশ্যই সেই ঘনিষ্ট জনকে ফেরানোর চেষ্টা করবেন। তবে সাথে সাথে চক্রটি ভাঙ্গার, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টাও করবেন।
রিয়েল লাইফ ল’এনফোর্সার বা ডিটেকটিভরা এতটা হিরোইক না হলেও অপরাধচক্রের এটা ধরে নেয়া খুব অবাস্তব নয় যে তাদের কাভার কম্প্রোমাইজড হয়ে গেছে। তাদের কিছু একটা করা উচিৎ।
সেই কিছু-টাই হল যেকোন ভাবে ঐ ল’এনফোর্সার বা ডিটেকটিভকে রাস্তা থেকে সরানো।
আর এই কাজে যদি সেই ঘনিষ্ট জনকেই ব্যবহার করা যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। এক ঢিলে দুই পাখী। একটি তাদের পক্ষের পাখী অন্যটি বিপক্ষের।
তবে কথা হল এই পক্ষের পাখীটি তাদের কথা শুনবে কেন? কেন সে নিজের অতি ঘনিষ্ট জন কে নিশ্চিন্ন করার কাজে অন্যের হাতে পউন হিসাবে ব্যবহৃত হবে?
সুইসাইড বম্বারদের দেখে বোঝা সম্ভব কিভাবে একজন স্বাভাবিক মানুষকে মগজ ধোলাই প্রক্রিয়ায় নিজেকে ধংসে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব। একজন স্বাভাবিক মানুষ যদি নিজেকে ধংসে রাজি হতে পারেন, অন্য, সে যত ঘনিষ্টই হোক (নিজের চেয়ে ঘনিষ্ট আর কে আছে) তাঁকে ধংসে রাজি হওয়া কি খুবই কঠিন?
একটি ষোল-সতের বছরের হঠাৎ রঙ্গিন আলো দেখা মেয়েকে তাদের ভাষায় “নিষ্ঠুর-অবুঝ-সেকেলে” পিতা-মাতার কবল থেকে উদ্ধার করে ইওরোপ-আমেরিকায় নিয়ে সেটেল করে দেয়ার প্রলোভন, হাতের কাছে খুনের অস্ত্র, চেতনা-নাশক পৌছানো, প্রয়োজনে ড্রাগ সরবরাহের মাধ্যমে স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনা বাধাগ্রস্থ করা – এইসবই এজাতিয় দুর্ঘটনা সংঘটন-সম্ভবনার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে।
অপারেশনের ডি-ডে সিলেকশনে যে বিচক্ষনতা ও চেতনা নাশক প্রয়োগের পুর্বে রিয়েল লাইফ রিহার্সালের উপযোগিতা অনুধাবন এক্ষেত্রে প্রফেশনাল টাচ-এর বিষয়ে গভীর ভাবে ভাবায়। হঠাৎ ঘোরে পাওয়া (তবু সে দেখিল কোন ভুত-এর মত) এক কিশোরীর পক্ষে এগুলো এত পুংখানুপুংখভাবে ঘটানো বেশ অনাকাংখিত বলে মনে হতেই পারে। আরও যে যে বিষয় গুলো প্রশ্নবিদ্ধ, তাহলো –
১) কিশোরীর কাছে বিনা প্রেস্ক্রিপশনে একগাদা হাইডোজ সিডেটিভ বা চেতনা নাশক বেচবে এরকম দুঃসাহসি ঔষধ বিক্রেতা কি পাওয়া গিয়েছে?
২) কফির সাথে কতটা সিডেটিভ মেশালে তা পর্যাপ্ত নিস্ক্রিয়তা আনবে আবার কফির স্বাদও রক্ষা হবে এটা জানা একজন কিশোরীর পক্ষে কতটা সম্ভব?
৩) নির্বিঘ্নে কাজ সারার জন্য চেতনা নাশকের সঠিক প্রয়োগ ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি পর্ব। এইটার নিশ্চয়তার ব্যপারটিতে নিশ্চিন্ত হতে, শোনা যায়, যে একটি রিহার্সালও দেয়া হয়েছিল। ঘটনাটা কি?
৪) বেছে নেয়া ক্ষনটি ছুটির রাত। অর্থাৎ ৩৬ ঘন্টার বেশী নির্বিঘ্ন সময় হাতে পাওয়া যাবে অপারেটিভকে নিরাপদ দুরত্বে তথা তার কল্পলোকে পৌছুনোতে। এটা তার জন্য বড় ধরনের একটা মটিভেশন ছিল কি?
এতক্ষন যা যা বললাম, সবই আমার অনুমান। আশা করছি পাঠক যথাযথ যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে এসব অনুমান খন্ডন করবেন।
ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।

১০ টি মন্তব্য : “সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া একটি দুঃখজনক ঘটনা সংশ্লিষ্ট কতিপয় অনুমান”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    ঘটনাটিকে তাহলে মার্কিনি ইংরেজীতে Wet Job ভাবার একটা সুযোগ থেকে যাচ্ছে?

    সমস্যা হলো বের হয়ে কি আসবে মূল ঘটনা? আমি আশাবাদী নই! 🙂


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      আশাবাদী হবার কোন কারনও নাই। মূল ব্যবসাহীরা অনেক বড় মাপের ও ধরা ছোয়ার বাইরের। যাঁদের সামনে দেখি BMW-তে করে ওসব বেচতে তারা এক ধরনের ফেরীওয়ালা বা সেলস পিপল। এরা কেউ হাঁড়ির খবর জানে না।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    পুরো পরিকল্পনা যে ঐশীর মাথা থেকে বের হয়নি সে ব্যাপারে আমি মোটামোটি নিশ্চিত। তবে এখন পর্যন্ত ভাবছিলাম তার তথাকথিত বন্ধুরাই এর পিছনে মূল ইন্ধনদাতা অন্তত সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট পড়ে তাই মনে হয়েছে, তবে আপনার এই লেখা নতুন ভাবে ভাবাচ্ছে।

    আজকে পত্রিকায় পড়লাম ঐশী বলেছে তার বন্ধু 'জনি' তাকে 'নাইটাস' নামের দশটি ঔষধ দিয়েছিল, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দোকান থেকে ১০ টা ঘুমের ঔষদ কেনা অবশ্য তেমন কোন কষ্টসাধ্য ব্যাপার না। (প্রেসকিপসন ছাড়া ঔষধ বিক্রী বন্ধের ব্যাপারে কেন জানি আমাদের দেশে কোন উচ্চ বাচ্য হয় না, সরকারের তরফ থেকেও না, চিকিৎসক মহল থেকেও না)

    তবে আমি অবাক হয়েছি একটা পুলিশি অভিযানকে যেভাবে নিউজ কাভারেজ দেয়া হলো। টিভিতে স্ক্রলে ব্রেকিং নিউজ যাচ্ছে ঐশীকে সাথে নিয়ে পুলিশ তার সহযোগীদের ধরতে অপারেশনে যাচ্ছে, সাসপেক্টদের এভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে আগাম হুশিয়ারী দেয়ার কত বড় নির্বুদ্ধিতা? এখনো নিয়মিত খবরে আসছে পুলিশ অমুককে খুজছে, তমুক জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে!


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      "ব্রেকিং নিউজ যাচ্ছে ঐশীকে সাথে নিয়ে পুলিশ তার সহযোগীদের ধরতে অপারেশনে যাচ্ছে..." - এই ব্যপারটা সাংবাদিকদের স্কুপ প্রতিযোগিতার ফসল। এগুলো বাকীতে কেনা ইনফরমেশন। সরবরাহকারীর ভবিষ্যতের কোন একটি ব্যাড পাবলিসিটি চেপে যাওয়ার শর্তে সংগৃহিত বলে আমার ধারনা।
      সন্দেহভাজনের নামসহ এটা প্রচার করা কতটা নৈতিক, বার্তা সম্পাদক কি তা বোঝেন না? তারপরেও শুধুই টিআরপির অজুহাতে তারা এটা করছেন। দুঃখজনক।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আপনার ওয়ে অফ থিঙ্কিং কে স্যালুট জানাই।

    আমরা চাই হট টপিক যাতে টেবিল গরম করতে পারি।
    স্বভাবতই ঐশী ঘটনা আমাদের সে সুযোগ করে দিয়েছে।
    নিচে দুইটা কমেন্টে ২টা সূত্রের চিন্তা-ভাবনা কপি পেষ্ট করে দিলাম লেখকদের নামের অদ্যাক্ষর দিয়ে।

    মনে হলো আপনার এই লেখার সাথে ঐ দুইটা থাকলে মন্দ হয় না। কারণ দুইটা লেখাতেই বেশ কিছু কেস স্টাডি আছে। অনুসন্ধানী পাঠকরা উপকৃত হবে আশা করি।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ১ম লেখা

    বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল জেনারেশন,একজন ঐশী এবং গুটিকয়েক উদাহরণঃ
    ===============================================
    নিচে যা লিখছি তা দেখে রিমোট মেন্টালিটি, ব্যাকডেটেড যা ইচ্ছা ভাবতে পারেন।
    কারণ বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল যুগে আমরা অনেকটা সেকেলেই। নরমালি আগে সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে অনেক কিছুই লিখতাম, অনেকের বিরুপ মন্তব্য আর সুশীলতার কারনেই লিখা বাদ দিয়েছিলাম। বেড়ে ওঠার সময়টাতে বাংলাদেশ ছেড়েছিলাম, যখন দেশে ফিরে এসেছি তখন দেশের নতুনেরা অনেক এগিয়ে,এডভান্সড, ফাস্ট, নিজেকে সে তুলনায় শামুকের মতই স্লো মনে হয় এখনও। আশির দশকে জন্মেছিলাম কিনা ! খুব বেশি কথা বলবনা, ব্যস দেশে ফিরে গত দুই বছরে দেখা কয়েকটা বাস্তব উদাহরণ দেবোঃ

    ১) ২০০৪ সালে একটা মেয়েকে চিনতাম। লাজুক,নম্র সুন্দর করে চিঠি লিখতো। সে তখন সবে ক্লাস নাইনে পড়ে। ২০০৭ সালে মেয়েটা ভার্সিটি এডমিশনের জন্য ঢাকা আসে। হোস্টেলে থাকতো, প্রাথমিক ভাবে একজন সিনিওর ভাইয়ের বন্ধুর সাথে পরিচয়ের পর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০০৯ সালে মেয়েটি জোড় পূর্বক সেই ভাইয়ের বন্ধুর সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ২০১১ তে এসে বাস্তবে দেখলাম মেয়েটি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে বেসরকারী ভার্সিটিতে, রেগুলার বন্ধুদের আড্ডা,ইয়াবা সেবন,গাজা সেবন করে পড়ে থাকে। চেহারা ভেঙ্গে গেছে। গত দুই বছরে পড়ালেখা এখনও ভার্সিটির ৫ম সেমিস্টারে আটকে আছে যেখানে ২০১২ তে পড়ালেখা শেষ হবার কথা। বাবা-মা বিয়ে দিতে চাওয়ায় তাদের সাথেও যোগাযোগ নেই। বহুজনের সাথেই শারীরিক সম্পর্ক শুধুমাত্র যারা তাকে নেশা করবার সু্যোগ করে দিতে পারে।

    ২)একটা ছেলে, অনার্স ৩য় বছরের স্টুডেন্ট। উচা-লম্বা নায়কদের মত চেহারা ।পরিবারের একমাত্র সন্তান। তার শখ ছিলো মডেল হবে। যথারীতি সেভাবেই বাপ-মা পারমিশন দিয়েছে। মিডিয়াতে কাজ শুরু করার প্রাথমিক অবস্থাতেই বন্ধু-পার্টি-আড্ডায় এমনটাই মজে গেল যে নিজের গন্তব্য থেকে ছিটকে পড়লো। মোটামুটি মিডিয়াতে (বর্তমানের পপুলার) এক মেয়ে মডেলের কাছ থেকে ছ্যাকা খেল।তারপর মেয়ে আসক্তি বেড়ে গেল। ২০১২ সালে দেখলাম মডেলিং ছেড়ে নিজেই DSLR হাতে বিভিন্ন পার্টি শো - তে যায়, ফটোগ্রাফার হবে। জিজ্ঞেস করতেই হেসে বলেছিলোঃ"ভাই বুঝেন না ! এইটা হল বরশির আগায় পড়শী খোঁজার কেঁচো। মাছ তো রেগুলার খাই"
    ২০১৩ জুন, এখনও অনার্স ৩য় বছরেরই স্টুডেন্ট, পড়ালেখা নাকি শেষই হচ্ছেনা।

    ৩) একটা মেয়ে , অনেক উচ্চবিত্ত ফ্যামিলি। বাপ বিশাল পাওয়ারফুল। মেয়েটা বিভিন্ন জায়গায় ফটোশ্যুট করে। বিভিন্ন পত্রিকায় মাঝে মধ্যে দেখা যায় পোজ দিয়ে দাড়িয়ে। ঠিকমত পড়ালেখা করেনাই,বাবা- মার ও টাইম নাই। দিন-রাত্রি মেয়েটা কই থাকে খোঁজও নেয়না। এই মেয়েটার কাজ নতুন বয়ফ্রেন্ড বানানো,তাদের সাথে বিভিন্ন ভি আই পি পার্টি কিংবা ট্যুরে যাওয়া, তাদের কাছ থেকে সব ঈদে দামি দামি পোশাক গিফট পাওয়া এবং সময় সুযোগ বুঝে বন্ধুদের গিফট দেখিয়ে বেড়ানো।

    ৪) একসময়ের জেনারেশন ছিলোঃ বাংলাদেশের ইয়ং জেনারেশনের নষ্টের সূচনা এখানেই। যা ডিজুস জেনারেশন নামে পরিচিত ছিলো। এই সময়টা ছিলো সবচেয়ে ভয়ানক আর আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগ। দিন-রাত্রি ফোনে ফ্রি কথা বলা । তখন সবেমাত্র দেশে মোবাইল ফোনের ৩য় প্রস্তর যুগ চলছে। ছেলে-মেয়ে সবাই উঠে-পড়ে প্রেম করছে, যে মেয়ে বা ছেলে অ -আ উচ্চারণ করতে জানতোনা , তারাও রীতিমত গুটি দশেক প্রেম করে বেড়াচ্ছে মোবাইল ফোনে। ফোন-সেক্স জেনারেশনটা তখন থেকেই জন্ম নেয়। বাস্তবেতো কিছু সম্ভব নয়,তাই ফোনের এপাশ-ওপাশে "উহ! আহ!ইশ!আহারে" । ২ বছরের জুনিয়র ছোট ভাই ছিলো,তার কাছে নিত্য-নতুন কাহিনী শুনতাম, কথা শুনে মনে হত জীবন্ত একটা " Girls' Wikipedia" অবশেষে তার enD-uP হলো হস্তিনী গোছের ৫ বছরের বড় এক আপুর সাথে। ২০১৩ সালে ফলাফলঃ আপুর সাথে বনিবনা না হওয়ায় আপু তাকে ডিভোর্স দিয়েছে, ছেলেটা এখন জীবন যুদ্ধের ফিল্ডে আছে। বিঃদ্রঃ অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ছেলেটা কোন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেনা এখন, তাকে তার মা কিংবা ভাইয়ের ফোনে কল দিয়ে ডাকতে হয়।

    ৫) বাবা-মা না থাকার ফলে ভাইয়ের সাথে বেড়ে উঠেছে মেয়েটা। খেয়াল রাখার তেমন কেউ নেই। দেখতেও মাশাল্লাহ। প্রেম ছিলো, প্রেমিক কাজী অফিসে রেজিস্টার এবং বিয়ে করে দেশের বাইরে চলে যায়। এখানে একা থাকতে থাকতে এখন তার হাজারো বন্ধু-বান্ধব। ফেসবুকে রীতিমত হিরোইন । ভাই রেগুলার বাসায় না থাকায় বন্ধু ছাড়া তার লাইফ কেন, সবই ইম্পসিবল,তাই সপ্তাহে ২-৩ জন বন্ধুর রাতে তাকে পাহাড়া দেবার ডিউটী থাকে, কাল-আকাল ভেদে এই বন্ধুরা পরিবর্তন হয় রেগুলার। ফেসবুকে ইনবক্সে সবচেয়ে ভালো মানসিক সাপোর্ট যারা দিতে পারবে তাদের গার্ড দেবার সুযোগ আগে।

    ৬) আমার কাজিন,সবে ১২ পাশ করেছে। এবার আমার সাথেই চীনে যাচ্ছে আন্ডার-গ্রাজ্যুয়েট পড়তে সরকারী স্কলারশীপে। প্রেমিকাও ১২ -এ পড়তো। মাস খানেক আগে পাগল করে ফেললো ওই মেয়েকে বিয়ে করে রেখে যাবে। পরে চীন নিয়ে যাবে। আমাকে রীতিমত অস্থির বানিয়ে ফেললো। ভাবলাম দেখি কি করা যায়। সে একা একা বাগের হাট ভ্রমন করে, হবু শ্বশুরবাড়ীতে। যে কোন কিছুই ঘটতে পারতো, খালা-খালুর পাগল হবার মত দশা। তারাও মেয়ের - বাপ মায়ের সাথে কথা বললো। ছেলের সম্পদ-টেকাটুকা দেখে মেয়ের চাচা-বাপ রাজি, বাধ সাধলো মেয়ের দুলাভাই। আমি সাপোর্টে ছিলাম এই জন্যে যে এটা দুইজনেরই ফার্স্ট রিলেশন,দুইজনই ভালো,মেয়েটাও অনেক ভাল, একসাথে চীন স্কলারশিপে গিয়ে পড়ালেখা শেষে লাইফ ভালোভাবেই গুছিয়ে নিতে পারবে,এমন উদাহরনও অনেক আছে। সবকিছুর এক পর্যায়ে যখন সব ঠিক তখন মেয়ের ফ্যামিলি বললোঃ আমরা কিভাবে মেয়েটাকে দেবো, ছেলে যদি পড়ে উল্টাপাল্টা করে, এছাড়া আমাদের হাতে আরও ভালো পাত্র আছে,লন্ডনী ছেলে। সেখানে পড়ে-চাকরী করে (ভাই লন্ডনে স্টুডেন্ট কি চাকরী করে সেটা আইডিয়া আছে) যা হোক, আমার কাজিনের সাথে বিয়ে দিতে হবে এই ভয়ে তারা সেই লন্ডনী পাত্রকে কল দেয়,আমাদের ফোন দিয়ে জানায় বিয়ে হয়ে গেছে।
    পরবর্তী ঘটনাঃ মেয়ের দুলাভাই ঈদের পরদিন কান্না করতে করতে ফোন দেয়। ওই লন্ডনী ছেলেকে আগে নাকি তারা রিজেক্ট করেছিলো এলাকার রাজনৈতিক সন্ত্রাসী ফ্যামিলি বলে। লন্ডনী ছেলেকে লন্ডন থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে সেখানে যে কোন এক কুকামের জন্য। অনার্স শেষ না করে এখন নর্থ-সাউথ এ পড়ে। ঈদের আগেরদিন রাত্রিতে মেয়েটাকে অস্ত্রের মুখে বাড়ী থেকে তুলে ঢাকায় এনে জোরপূর্বক বিয়ে এবং বাসররাত করে ইতপূর্বে তাকে রিজেক্ট করার শাস্তি হিসেবে। ঢাকায় লন্ডনী ছেলের বাড়ীতে মেয়েটা আছে এখন, মেয়ের বাবা-মা ফ্যামিলিকে ঢাকায় ঢুকতে মানা,একবার মাত্র দেখা করার সুযোগ দিয়েছে। আমার কাজিন এখন মিনি দেবদাস । মাঝে মধ্যে ডুকরে কান্না করে ফোন দিলে,আর আমি বলিঃ" আমি দুইটা বিয়া করে একটা তোমারে দিয়া দেব" তখন একটু হাসি শুনি।

    =====================
    এই ছিলো আমার উদাহরন,অনেক কথার উদাহরণ। যা ঐশীর ঘটনার তুলনায় নিছক কিছু, কিন্তু এই ঘটনা গুলো থেকেও সূক্ষ্মভাবে কি ২-১জন ঐশীর জন্ম হতে পারতোনা?????
    সেকেলে হতে পারি, বন্ধুদের সাথে ৭-৮ বছর দেখা নাই , তাই বলে আত্মার টান এতটুকুও কমে নাই। ক্লাশ ১-২ থেকে ১২ পর্যন্ত ভালো-ক্লোজ সব বন্ধুদের সাথেই যোগাযোগ আছে, অথচ তাদের ৬০ভাগও ফেসবুক ব্যবহার করেনা।অনেকেই বিয়ে করে বাস্তবতা নিয়ে লড়ছে, অনেকেই দুই -তিন বাচ্চার মা । বন্ধু ছাড়া যাদের লাইফ ইম্পসিবল , দয়া করে সেই বান্ধবীর প্রেমিকের সামনে তার হাতটা ধরে দেখো, কিংবা নিজের প্রেমিকার সামনে তোমার বান্ধবীকে নিজের হাতটা ধরতে দিও...মাইর একটাও মাটিতে পড়বে কিনা বা নিজে সহ্য করতে পারবে কিনা জানিনা।তবে এই টুকু বলি সত্যিকারের বন্ধু যদি থাকে কারও সেক্ষেত্রে মনে কখনও বন্ধুর জন্য খারাপ হতে পারে এমন চিন্তা আসেনা, আর আবেগে হাত ধরা কেন ,জড়িয়ে ধরলেও কেউ মাইন্ড করেনা যদি সে বন্ধুর কদর দিতে জানে। বাবা-মায়ের দোষ থাকলেও দোষ দেবনা,
    আমরাতো ছোট, তাদের দোষ আমাদের বাবা-মায়েরা বিচার করুক। গোবরেও পদ্ম ফোটে,তাইনা? যে কোন বাবা-মা ই সন্তানের ভালো চায়, ঘুসই খাক বা টাইমই না দিক আর যাই করুক। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কমনলি মোটামুটি বয়স ১২-১৩ হওয়া পর্যন্ত কিন্তু তারা ঠিকই খেয়াল রাখেন । তাই নিজের খারাপ-ভালো নিজের কাছে। সব কিছুরই একটা নির্দিস্ট সময় আছে, এক্সপেরিয়েন্স করার সময় আছে , মজার করার, লাইফের চার্ম ফিল করার, নেশা করারও...তবে নিজের জায়গা,অবস্থান আর মাত্রা বুঝে। মানুষ কিছু করতে চাইলে স্বয়ং খোদাও তাকে আটকায় নাহ! তাই ভালটাই নিও, নিজের অবস্থান আর লিমিটেশন বুঝে, যেমন করে ঈদে ভাল জামাটাই বেছে নাও।
    ================================
    সবশেষে বলবোঃ বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল নাহ! ভাল বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল!!!

    লেখকঃ আর এম


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ২য় লেখাঃ

    ঘটনা একঃ শাফিলিয়া আহমেদ, পাকিস্তানি তরুনি,যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময়ে মৃত্যু। মৃত্যুর সময় বয়েস হয়েছিল ১৮ বছর। কবিতা লিখতে পছন্দ করত। পড়ত ওকালতি।

    মারা গেছে শ্বাসরোধে, নিজের জন্মদাতা বাবা মা নিজের হাতে মেরেছে। এই মেয়ের সমস্যা ছিল, সে তার বাপের পছন্দ করা নিজের চেয়ে দ্বিগুণ বয়েসের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি, বাবা-মার আদেশে হিজাব পরতে রাজি ছিল না, এবং ভিনদেশী সাদা চামড়ার সহপাঠীদের সাথে কথা বলত-যা তার বাবা-মা ভালো চোখে নেয়নি। ফলাফল, মেরে ফেলা হল। মারা গেছিল ১১ই সেপ্টেম্বর ২০০৩ সালে, সেই সময়হে কেউ অভিযুক্ত হয়নি, ৮ বছর পরে তারি আপন বোন এক চুরির মামলাতে ফেসে গিয়ে পুলিশের কাছে নিজের পিতা-মাতার কুকর্মের কথা জানায়।

    মেয়েটা যেদিন মারা যায়, তার আগের দিন একটা কবিতা লিখেছিল "I am trapped (আমি জালে আটকা পড়েছি)" শিরোনামে।

    ঘটনা দুইঃ ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১০। নড়াইলের নরাগাতি থানার কলাবারিয়া গ্রামের হাফিজুর রহমান তার নিজের মেয়ে ১৪ বছর বয়স্ক তানিয়া খাতুন কে গলাতে ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

    গ্রেফতার হলে পরবর্তীতে সে বলে পারিবারিক কলহের জের এবং তানিয়ার অবাধ্যতার কারনেই তিনি কন্যাকে খুন করেন।

    ঘটনা তিনঃ ছেলের হাতে বাবা খুনের দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করব। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর এর বৃদ্ধ দানেশ মিয়া (৭০) পুত্র বিল্লাল হোসেনের (৩০) হাতে ছুরিকাহত হয়ে খুন হন আজ (আগস্ট ২০, ২০১৩)

    এবং, টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় বৃদ্ধ এবারত আলী তার মেঝ ছেলে তোজাম এর হাতে নিহত হয় গত ১৯শে জুন, ২০১৩।

    উভয় ক্ষেত্রেই খুনের কারণ ছিল সম্পত্তির ভাগ এবং মোটা দাগে পারিবারিক কলহ।

    এই ঘটনাক্রমের অপর উদাহরণ হল ঐশী এবং অবশ্যই সর্বাধিক আলোচিত।

    ...........................................................................

    এবার আসি কিছু আলোচনাতে। ঐশীর ঘটনাতে কম বেশি অনেকেই যে কারণ গুলি দায়ী করেছেন সেইগুলি হলঃ

    ১)মাদক, ২)পারিবারিক নজরদারির অভাব, ৩)পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসন, ৪)চাকচিক্যময় জীবনের প্রতি লোভ, ৫) বন্ধুবান্ধবের প্রভাব, ৬) পিতামাতার অবহেলা, ৭) পিতামাতার অবৈধ আয়, ৮) ধর্মীয় অনুশাসন না মেনে চলা।

    যদি এই কারণ গুলিকেই আমি ঐশীর ঘটনাতে দায়ী করি, তাহলে উপরের বাকি ঘটনা সমূহের কোন গ্রহণযোগ্য ব্যক্ষা মেলে না। ঐশীর ঘটনা ছাড়া বাকি ঘটনাগুলিতে খুনিরা কেউ মাদকাসক্ত ছিল না। শাফিলিয়ার পিতা এবং মাতা বাকি মেয়ে এবং ছেলে কে বেশ আদর করতেন। তানিয়া খাতুনের উপরে পশ্চিমা সংস্কৃতির এমন কোন প্রভাব পড়বার কথা না, জাতে তাকে খুন হবার মত যথেষ্ট কারণ থাকে। এবং শাফিলিয়া, তানিয়ার পরিবার উগ্র ধার্মিক ছিল, বিল্লাল এবং তোজাম ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করেনাই। ঐশীর মত তাদের বন্ধুবান্ধবরা ইয়াবা খেত না। তানিয়া এবং শাফিলিয়ার পরিবার এত বেশি নজরদারিএবং সন্দেহবাতিকতায় ভুগেছে, যে শেষমেশ নিজেদের মেয়েকে মেরেই ফেলতে হল।

    শাফিলিয়া, তানিয়ার পিতামাতা অবৈধ আয় করত না। ধর্মীয় অনুশাসন মেনেই চলত গ্রামের ছেলে বিল্লাম এবং তোজাম। এদের কারুরই (ঐশী ছাড়া) পিতামাতা অথবা সন্তানেরা অবৈধ আয় করত না। পিতামাতার অবহেলার প্রমানও পাওয়া যায় না খুব একটা, বরং শাফিলিয়া এবং তানিয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নজরদারির আভাস পাওয়া যায়।

    অর্থাৎ এইউপরে উল্লেখিত কারণ গুলির কোনটাই এই ধরনের ঘটনা (পারিবারিক সদস্যদের অভ্যন্তরীণ খুনের) গুলির পিছনে একক কারণ হইতে পারেনা।

    নিজের চোখে, আমি যা দেখি, তা হইলো, শাফিলিয়ার সাথে তার বাবা-মার মতের অমিল, ফলাফল খুন। ১৪ বছরের সাথে তানিয়ার সাথে তার বাবার মতের অমিল, বিল্লাল এবং তোজামের সাথে তাদের বাবার মতের অমিল।

    ভাইয়েরা, আসল কারণ হইলো আমাদের অসহিষ্ণুতা। এই ৪ টা ঘটনার কোনটাই কাউকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট কারণ বহন করেনা।

    বাবা-মা এবং ছেলে-মেয়ের সম্পর্কে মতবিরোধ থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যাটা হয়, যখন সেই মতবিরোধের সাথে নিজের অহম বা লোভ যূক্ত হয়। আজকে ঐশীর ঘটনা নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে, এই রকম হাজারটা একদম একই ধরণের ঘটনা প্রায় প্রতিনিয়তই হইতেছে।

    পারিবারিক ভাবেই যদি উগ্রতার চর্চা বাদ দেওয়া হয়, তাইলে এই ঘটনাগুলি কিছুটা কমতে পারে।

    সব শেষে বলব, নিজের ছেলে মেয়েদের অবুঝ থাকা অবস্থাতেই নিজের মতাদর্শে তৈরি করার চেষ্টা করা ভালো, বুঝতে সেখার পরে তার উপরে কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মানে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি করা। আর নিজের মত অন্যের উপরে চাপানোর ক্ষেত্রেও জোর না খাটিয়ে কৌশল খাটানো ভালো।

    (সকল চরিত্র এবং ঘটনার বর্ণনা সত্য, রেফারেন্স দেওয়া যাবে।)
    - এন এম


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।