চিকেন ফ্রাই-২

প্রিন্সিপাল আবু সাঈদ বিশ্বাস আর অ্যাডজুট্যান্ট শফিউল্লাহ মাস্তান এর শাসনামলে(২০০৪-০৬) আমাদের কলেজ যে এমন একটা দোযখের মধ্য দিয়ে গেল তা আর বলার মত না। আমাদের “শাহী ক্যাডেট”-এর অস্তিত্ত্ব নিয়েও আমরা তখন চিন্তিত। কিন্তু আমাদের ব্যাচের ভাগ্যটা এতোই ভাল যে এস,এস,সি পরীক্ষার সময় প্রিন্সিপাল বদলী হয়ে গেলেন আর ছুটির মধ্যে অ্যাডজুট্যান্ট-ও। আর নতুন যারা এলেন? তারা তো দুইজনই মাটির মানুষ। আমরা কলেজ থেকে আসার আগ পর্যন্ত তাদের ছায়াতলেই কাটিয়ে দিলাম।
আমরা তো ক্লাস XI-এ এসে মজার এক কলেজে পড়লাম। আবার আগের মত সেই রঙ্গিন কলেজ। শুধু ফিরে আসেনি জুনিয়র বীটিং। যদিও হাউস মাস্টার ছিলেন জামশেদ স্যার, সব মিলিয়ে ভালই ছিলাম। যাই হোক, গতবার গল্পের নাম চিকেন ফ্রাই দিয়েও “অস্থি-ফেরাই” খাইয়েই শেষ করে দিয়েছিলাম। এবার বোধ হয় সত্যি সত্যিই “মোরগ-ফেরাই” খাওয়ানোর সময় হয়েছে।
এমনিতেই কলেজের এরকম যাচ্ছেতাই অবস্থা; এর মধ্যে আই,সি,সি,এল,এম-এর সময় আরও জটিল অবস্থা। ব্যাচটা পুরা ফাঁকা ফাঁকা। বেশির ভাগ সবাই আইসিসিতে গেছে। পরীক্ষাও শেষ, কোনও কাজ নাই। আমাদের নজর পড়ল মুরগীর ফার্মের দিকে। এবার মূল হোতা খালিদ(সবুজ) হাউস। আর যেহেতু হিটার কাসিম(নীল) হাউসের কাছে তাই আমরাও নিমন্ত্রিত।
পরীক্ষা শেষে এক দিনের ছুটিতে বাড়ি গেছে নাহিদ। এই সুযোগে সকল মসলার দ্বায়িত্ত্ব তাকে দেওয়া হল।সবই রেডি;এখন শুধু দরকার মুরগি। মুরগির ফার্মটা খালিদ হাউস থেকে কাছেই ছিল। রাত ১২ টায় বিশাল একটা বাহিনী মুরগি চুরির কাজে গেল। সাথে ছিল অত্যাধুনিক “মুঠোফোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা”। তিন জনকে তিনটা মোবাইল দিয়ে তিনটি স্পটে রাখা হল। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন জজ (যিনি ধরা খাওয়ার ব্যাপারে সর্বদায় ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়ে এসেছেন)। সে নারিকেল গাছের পিছনে এমনভাবে দাড়ালো যাতে গার্ডই তাকে আগে দেখতে পায়। আর হলোও তাই। নাহিদ কেবল একটা মুরগির মুখ চিপে ধরেছে আর ওমনি গার্ডের বাঁশির আওয়াজ। সাথে সাথে মিসড কল এবং সবাই যার যার জায়গা থেকে প্রাণপণে দৌড়। শেষ পর্যন্ত গার্ডের সাইকেলকে ব্যর্থ করে সবাই এসে পৌঁছাল ঠিকই; শুধু বাকি রয়ে গেল জজের স্যান্ডেল!
হাউসে এসেই ১ম কাজ-মুরগি জবাই করলাম। তারপর ছিল্ল্যা-কাইট্টা-লবণ-সিরকা-লাগাইয়া রেখে দেওয়া হল। আগেই হিটার এনে রাখা হয়েছিল। সার্কিট-কানেকশন শুরু হয়ে গেল। কিন্তু এই রাতে আমাদের ভাগ্য এতই খারাপ যে রাত ১টার সময়-ও হাউস বেয়ারা আলাউদ্দিন ভাই এসে হাজির! শেষে ওনার হাতে ৫০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে হিটারটা কোনও ভাবে বাঁচানো গেল; কিন্তু রান্না তো আর করা সম্ভব না। তাছাড়া নিচে গার্ডদের অবস্থাও বোঝা যাচ্ছে না।
যাই হোক, শেষ পর্যন্ত কাসিম হাউসই ভরসা। তাছাড়া, হোম-গ্রাউন্ডে খেলে একটা স্বস্তি আছে না! বালতি ভরা মাংস আর শার্টের নিচে হিটার লুকিয়ে আবার আমাদের হাউসে চলে আসলাম। তারপর আবার সার্কিট-কানেকশন এবং যথারীতি ভাজাভাজি শুরু। মাঝখানে নাহিদের আনা তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় সয়াবিনের সাথে সরিষার তেল(এবারও জুনিয়রের কাছ থেকে মারা) মিশিয়ে যা তৈরি হল_সে এক অনবদ্য ঘ্রাণ! আর মুরগিটা যে এত বিশাল ছিল রে ভাই! আমরা দুই হাউসের পোলাপাইন খেয়ে শেষই করতে পারছিলাম না। যারা ঘুমাচ্ছিল তাদেরকেও ডেকে ফ্রি-ফ্রি খাওয়ালাম। তারপরও দেখি শেষ হয়না! ভাগ্যিস মুরগি একটাই ছিল। পিটির পরও এসে আরেক দফা ব্রেকফাস্ট করলাম। বেচারা সামিন রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছিল…
তবে আর যাই হোক, রান্নাটা জোশ ছিল (আমিও রাঁধুনি ছিলাম তো…)। যারা আই,সি,সি,এল,এম-এ ছিল তারা যা একটা মিস করল! আর জজের স্যান্ডেলটা??
দুইদিন অন্যের স্যান্ডেল পরে থাকার পর গার্ডরুম থেকেই উদ্ধার করা হয়েছিল…

৫,১২২ বার দেখা হয়েছে

৬৮ টি মন্তব্য : “চিকেন ফ্রাই-২”

  1. আছিব (২০০০-২০০৬)

    শাব্বাশ ব্যাটা.........ফাঁকা মাঠে ভালাই গোল দিছিলি তরা x-(

    ইশশিরে......আমরা যদি এইরাম টাইম পাইতাম :((
    আমাগো মেহেদী একাই এক মুরগী খায় 🙁 ......আমরা তাইলে পুরা ফার্ম হাউসে আনতাম :grr:

    অ্যানিওয়ে পার্ভ,তরে খালি কে এফ সি না.........সি এফ সি......বি এফ সি......এইচ এফ সি......জি এফ সি......সহ যত এফ সি আছে (এ টু যেড) সবগুলাতে পার্ট্টাইম জব পাবার আশীর্বাদ করলাম :boss:

    জবাব দিন
  2. দারুণ অ্যাডভেঞ্চার। আমরা অবশ্য চুরি করছিলাম ডিম। মুরগী ছিলে, মশলা দিয়ে রান্না করার মত ঝামেলায় কেউ যাইতে চায় নাই। সুপের পাউডারের সাথে ডিম মিশিয়ে কমনরুমে গরম সুপ খাওয়া.. আহ..

    জবাব দিন
  3. আশহাব (২০০২-০৮)

    গরম স্যুপ :dreamy: :grr: :thumbup:
    খাওয়ার হিস্ট্রি ভালাই লাগসে, কিন্তু এতো পেইন কেডা নেয় :grr: আমরা কফি দিয়া বিড়ি খাইয়াই খুশী, আর মাঝে মাঝে তো মুড়ি-চানাচুর পার্টি ছিলই :party: B-)


    "Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
    - A Concerto Is a Conversation

    জবাব দিন
  4. ওই আমরা যখন কেফসি তে খাইতে যাই,আমরা কি মাল মশলা নিয়া যাই?? x-( তুই আমাদের সবাইরে খাওয়াবি,মাল মসলাই দায়িত্ব ও তোর।

    আর তোর আছিব ভাই গরু হইল কবে থেকে??

    জবাব দিন
  5. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    তুমারে মনে হয় আমি আজকেই প্রথম দেখলাম।
    তুমাগো ব্যাপাক প্রতিভা।
    পইড়া ভাল্লাগছে।

    পরামর্শ: সিদ্দিকা কবীরের অনুষ্ঠানে একটা গেস্ট এপেয়ারেন্স দিতে পারো। তাগোরে খালি এই ব্লগ দুইটা প্রিন্ট কইরা পাঠাইলেই ওরা তুমারে ডাকবো শিউর.....।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (২০০২-০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।