চিকেন ফ্রাই-১

:frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll:
সিলেটের রাফির কাছে শুনেছিলাম, ব্লগে প্রথম লিখতে হলে আগে দশটা ফ্রন্ট রোল দিতে হয়। আজ্ঞা শিরোধার্য। আমার ব্লগে খুব বেশি ঢোকা হয় না। হালকা পাতলা দুই-একটা পড়া হয়। পড়তে তো জটিল লাগেই। সেদিন আমাদের আছিব ভাইয়ের কক্ষভোজন পড়ে মনে হল আমিও এরকম একটা কিছু লিখে ফেলি।
আমরা তখন ক্লাস XII-এ। রাতে কারেন্ট গেলে অনেক জেগে থাকা হয়। ব্যালকনির সেই গানের আসর এখন অনেক মিস করি। এরকম কোনও এক বুধবারে রাতে জেগে আছি। তখন প্রায় ৩ টা বাজে। আমাদের পিচ্চি ছেলে জোবায়েরের একটু লাফালাফি করার অভ্যাস ছিল। সে, ভাবুক সাব্বির আর কবি মুজাদ্দিদের হঠাৎ ইচ্ছা হল কবুতর(যদিও গল্পের নাম চিকেন ফ্রাই) খাবে। আমাদের হাউস থেকে একাডেমি যাওয়ার শেডের নিচে অনেক কবুতর থাকতো। তেমন কোনও প্ল্যানিং ছাড়াই হঠাৎ করে তারা কবুতর নিয়ে হাজির। আমি রুমেই ছিলাম। এসে দেখি ৪ টা কবুতর। কিন্তু আমাদের যেহেতু কিছুই রেডি ছিল না কাজেই শুধু ফটো সেশন আর কালকের প্ল্যানিং করেই আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরের দিন ১ম কাজ কেমিস্ট্রি ল্যাবের হিটারটা(আমরা তো আবার ইলেকট্রিক চোর!) চুরি করা। একাডেমিতে গিয়েই নজর স্যার এসেছেন কিনা। আর স্যার সাধারনত ৮ টার আগে আসেন না। একজন ভিতরে গিয়ে হিটারটা জানালা দিয়ে ফেলে দিয়ে চলে আসলো। ভাগ্য ভাল পড়ে ভেঙ্গে যায়নি। পরে মিল্কব্রেকের সময় আরেকজন বাইরে থেকে সেটা নিয়ে হাউসে রেখে আসলো। এরপর সারাদিন আর তেমন কোনও কাজ নেই। শুধু দুপুরে লাঞ্চ এর সময় মসলা সংগ্রহ। মসলা বলতে শুধু একটু হলুদ আর মরিচের গুড়া দরকার। বাটলার ভাইকে ম্যানেজ করে মুড়ি-ভোজের জন্য পেঁয়াজ আনার নাম করে মসলা নিয়ে আসলাম।
আমরা আবার যেনতেন রাধুনি না। ফ্রাই করার জন্য বিস্কুটের গুড়াও আনা হয়েছে টি-ব্রেকের সময়। এরপর শুধু রাতের অপেক্ষা। ফ্রাই-প্যান একটা বড় ঝামেলা হতে পারত। কিন্তু গত প্যারেন্টস ডে তে আনা মাহবুবের বড় বিস্কুটের টিনটা আমাদের বাচিয়ে দিল। যদিও লাইটস আউটের পর শুরু করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু আর তর সইল না। রাত মাত্র সাড়ে নয়টায় আমাদের কবুতর জবাই এবং প্রসেসিং শুরু হয়ে গেল। বাথরুমে আমাদের এসব কাজ চলছে, এমন সময় হাউস মাস্টার জামশেদ স্যার কি যেন সাইন করতে ডেকে পাঠালেন! তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে গেলাম। নখের মধ্যে জমে থাকা ময়লাটা(নখ কাটার ব্যাপারেও আমি বরাবরই অলস ছিলাম) স্যারের চোখে পড়ে গেল। জীববিজ্ঞানের আলোকে কিছু স্বাস্থ্য-জ্ঞান খেয়ে এই যাত্রা বেচে গেলাম।
উপরে গিয়ে আবার কাজ শুরু করে দিলাম। আগেই গরম পানি এনে রাখা হয়েছে ডাইনিং হল থেকে, তাই প্রসেসিং-এ তেমন কোনও সমস্যা হল না। আর ভাজার জন্য তেলও জোগাড় করা হল জুনিয়রদের কাছ থেকে-সরিষার তেল। কাটাকুটি শেষে মাখিয়ে রাখতে গিয়ে খেয়াল করলাম, এত কিছু জোগাড় করা হয়েছে অথচ লবনটাই বাদ পড়ে গেছে। যাই হোক, সেটা আর এখন সম্ভব না। পরে সবাই ঘুমিয়ে গেলে চুরিই একমাত্র বুদ্ধি। আর মাখানোটা যা হল! লেবুর সুঘ্রাণ… জিভে জল আসার মত…
লাইটস অফ এর পর শুরু হয়ে গেল সার্কিট কানেকশন। কলেজে এসব কাজগুলো মুজাদ্দিদ-ই করতো। বাগান থেকে ইট এনে পাকাপোক্ত হিটার রেডি করা হচ্ছে। এর মধ্যে লবন আনতে গেল জোবায়ের আর সাব্বির। বাইরে থেকে নিচের ছিটকানি খুলতে গিয়ে প্রথমবার ঘুম ভেঙ্গে গেল বেয়ারার! খালি হাতে ফিরে এলেন তারা। এদিকে আমাদের সব রেডি হয়ে গেছে। যাই হোক, দশ মিনিট পর ২য় প্রচেস্টায় লবনের বিহিত করা গেল। এরপর তেল গরম শুরু হয়ে গেল। অনেকক্ষণ ধরে ভাজাভাজি করে শেষ পর্যন্ত কবুতর ফ্রাই রেডি হল। আমরা খাওয়া শুরু করলাম। একি!! মাংস কোথায়???…
যাই হোক, কি আর করার! এহেন কষ্টের পর অস্থি ভক্ষণ করিয়াই অমৃত মনে হইল। পরবর্তীতে আরও বেশি সফলতার আশায় হিটারটা লুকিয়ে রাখলাম। আমাদের কবুতর ভোজন এখানেই শেষ……

৪,০৭২ বার দেখা হয়েছে

৫১ টি মন্তব্য : “চিকেন ফ্রাই-১”

  1. আছিব (২০০০-২০০৬)

    😀 পোলাপান.. :bash: .......কবুতর ফেরাই খাইয়া খুশি হইয়া গেলি?? 😡

    ইশশিরে...... :(( ......ব্যালকনিতে চিৎ হয়ে শুয়ে রাতের তারাভরা আকাশ দেখতে কি যে ভালো লাগত,মনে করায়ে দিলি!!! :dreamy:

    জামশেদ স্যারটা আসলে ভালা মানুষ,ইশশিরে ক্যান যে লোকটারে এত্ত জ্বালাইছি......স্যারের তিন মেয়ের মধ্যে দুইটারে দেখছি...দুইটাই সুন্দর O:-) ,ইয়ে মানে......স্যারের বাসায় গেছিলাম,মেজ মেয়ে আমারে পায়েস খাইতে দিছিল.. 😡 .....একাই গেছিলাম........ :dreamy:

    জবাব দিন
  2. আছিব (২০০০-২০০৬)

    যাক.. :thumbup: ....আরসিসির ০৮ গুলাও লেখা দিতাছে.... :party: ...ইশশিরে..........এখন আসলেই নিজেরে ব্লগে সিনিয়র মনে হইতাছে :goragori:

    ওই ,লেখা ভালোই হইছে...... 🙂 ....আগেভাগে গড়াগড়ি খাইয়া চিকনে বাঁইচা গেলি,ভালোই টিরিক্স শিখছস...... x-( ...
    লিখতে থাক.. :clap: ...আবার সার্কিটে বাঁশ খাইস না,পড়াশুনাটা ঠিক রাখিস রে ভাই :guitar:

    জবাব দিন
  3. আশহাব (২০০২-০৮)

    মানে অটো বুইঝা নে :)) :khekz:
    পারভেজ ভালো লিখসোস :thumbup: :goragori:
    তবে এতো তাড়াহুড়ো করে লেখার কোনো দরকার নাই, তুই এই গল্পটা আরো সময় নিয়ে লিখতে পারতি 🙂 অন্তত আরো দুইটা পর্ব পর্যন্ত , ব্যাপার না, প্রথম ব্লগ লেখায় স্বাগতম বন্ধু 😀
    শুভ ব্লগিং ... ০২-০৮ রক্করে :awesome:


    "Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
    - A Concerto Is a Conversation

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাফি (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।