নিজ গৃহে পরবাসী

কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক
কে বলে তা বহুদূর
১০০ কিমির মাঝে স্বর্গ নরক
টাঙ্গাইল ঢাকাতাই সুরাসুর।

শামসুল হক তোরণ

ঢাকার অতি মাত্রায় যান্ত্রিক এবং ব্যস্ততম জীবনে প্রায়ই হাপিয়ে উঠি।ঢাকা আমার কাছে একটা সিক সিটি এবং মাঝে মাঝেই আমার মন বিদ্রোহ করে বসে।তখন কিচ্ছু ভাল লাগেনা।শুধুই মনে হয় আই নীড এ ব্রেক।তখন আর কোথাও না হলেও আমার টাঙ্গাইল যাওয়ার কথাই মনে হয়।তার মানে আমাকে হোমসিক ভাবার কোন কারন নেই।শহীদ কোচিং দিয়ে শুরু তারপর ৯৩-৯৯ ফৌজদারহাট কেন্দ্রীয় কারাগারে কাটানোর পর বিগত ১১ বছর ঢাকার দূষিত বায়ু সেবন আর ভেজাল খাবার খেয়েই কেটে যাচ্ছে।সব মিলে প্রায় ১৯ বছরের হোস্টেল/মেস লাইফ।আমার জীবনের বেশির ভাগ সময়ই বন্ধুময়।সবার মাঝে থেকেও একা থাকা যায় যা ফ্যামিলি লাইফে সম্ভব না।সিংগেল লাইফে এতই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে বিয়ে করতে ইচ্ছে করেনা।আর টাঙ্গাইল গিয়ে বেশিদিন ফ্যামিলির সাথে থাকলেও কেমন যেন আবদ্ধ লাগে!যদিও উত্তরা থেকে টাঙ্গাইল যেতে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে যে সময় লাগে তার চেয়েও কম সময় লাগে তারপরও স্টুডেন্ট লাইফ থেকে আজ পর্যন্ত আমার মাসে একবার যাওয়ার অভ্যাস।উইক এন্ডে দু একদিন থেকে চলে আসি অতিথির মত।সারাজীবন বাড়ির বাইরে থাকার কারনে আমার নিজেকে নিজ গৃহে পরবাসী মনে হয়।কিন্তু সবকিছুর পরও টাঙ্গাইলেই মুক্তি।আমার সোজা হিসেব-ঢাকা নরক আর টাঙ্গাইল স্বর্গ।ঢাকায় আছি স্রেফ পেটের দায়ে।বিদেশে থাকলে বাংলাদেশের প্রতি যেমন ভালবাসা অনেকগুনে বেড়ে যায়, ঢাকায় থেকে টাঙ্গাইলের প্রতি আমার অনুভূতিও তাই।এক্ষেত্রে ঢাকার প্রতি ঘৃনা আর টাঙ্গাইলের প্রতি ভালবাসা সমানুপাতিক এবং ঢাকাপ্রীতির সাথে ব্যাস্তানুপাতিক।

জুন ক্লোজিং এর অতিরিক্ত কাজের চাপের পর মন আবার বিদ্রোহ করে বসল।৩ দিন ছুটি চাইতেই মিলে গেল।এর সাথে আছে শুক্র শনি।ছুটলাম আমার চিরন্তন আশ্রয় টাঙ্গাইলে।অনেক বয়স্ক জুটির মধ্যে যখন দেখি ভাব ভালবাসার কমতি নেই,তখন মনে হয় ইশ এখনো কত রোমান্টিক!চিরচেনা মানুষটিকে তারা প্রতিদিনই যেন নতুন করে আবিস্কার করে।ঠিক তেমনি আমার চিরচেনা শহরকে প্রতিবারই আমি নতুন রুপে দেখি।যত দেখি ততই মুগ্ধ হই।বাজারে গেলে দেখি তাঁজা টাটকা মাছ,ডিস্ট্রিক লেকে দুপুরে অবাধ সাঁতার, বিকেলে রিক্সায় ঘুরে রেইল স্টেশনের দিকে যাওয়া আসার সময় নির্ভেজাল ফ্রেশ বায়ু সেবন করার সুযোগ পাওয়াও যে পরম আরাধ্য।ফিরে এসে সন্ধায় ডিঙ্গিতে বসে ফ্রেন্ডদের সাথে ধূমায়িত(কফি,বিড়ি ও অন্যান্য)আড্ডা,তারপর পুল খেলতে যাওয়া-এসব যদি হয় রেগুলার রুটিন তাহলে স্বর্গ মনে না হয়ে উপায় কি।ঢাকায় যে কল্পনারও অতীত।এবার যে কয়দিন ছিলাম মনে হয়েছে আমি কোন টুরিষ্ট প্লেসে ঘুরতে এসেছি।এ শহরেও যে দেখার অনেককিছু আছে তা কি টাঙ্গাইল বাসীরা কখনো চিন্তা করে!

প্রথমদিনই গেলাম ৩ ফ্রেন্ড বাইক নিয়ে গালা পার হয়ে এক ফ্রেন্ডের গ্রামে।তার পৈত্রিক সম্পত্তি এবং দীঘি আছে।মাছ ছাড়া হয়েছে আর চারিদিকে গাছ লাগানো হয়েছে।গরুর খামারও আছে।একদিকে টং আছে সেখানে বসে থাকা যায়।ইচ্ছে হলে রাতে ক্যাম্প ফায়ার বা পিকনিক করা যাবে।তার ভাষ্যমতে এটি তার কোটি টাকার প্রজেক্ট।টাঙ্গাইল শহরেই ভাল ব্যবসা আছে,পাশাপাশি আবার সে শিল্পী(টাঙ্গাইলে বিভিন্ন প্রোগ্রামে গায়) আর মাঝে মাঝে বাইক নিয়ে চলে আসে দেখাশুনা করার জন্য।আমরা বেশ ভাল সময় কাটালাম সেখানে।ফেরার সময় ঝুম বৃষ্টি তাই এক বাড়িতে উঠলাম সেটিও বন্ধুর পরিচিত যেহেতু তার গ্রাম।আমার খুব ইচ্ছে হল বৃষ্টিতে ভেজার।বললাম,চল মোবাইল আর মানিব্যাগ সেভ করে বাইক নিয়ে বেরিয়ে যাই।তারাও একমত।ওখান থেকে পলিথিনের ঠোঙ্গা নিয়ে মোবাইল মানিব্যাগ ঢুকিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।ঝুম বৃষ্টি আর বাইকে আমরা তিনজন।বলুন ত কেমন হতে পারে ফিলিংস।উফ অসাধারণ!এই অনুভূতি বলে বুঝানো যায়না ফিল করতে হয়।

টং


ভাবুক


প্রজেক্ট মালিক কুরুত এবং হামাঝি




প্রতিদিন সন্ধায় আমরা আড্ডা দেই ডিঙ্গি’তে।ওখানে কফি এবং স্ন্যাক্স আছে।বিশেষ করে কাপল/ফ্রেন্ডদের ভাল আড্ডা জমে এখানে।পাশে আবার পুকুর আছে।লাইটিং,ডেকোরেশন ছিমছাম,হালকা গান চলতে থাকে।একদিন বিকেলে গেলাম রেইল স্টেশনে ঘুরতে।সেখানে কিছু সময় কাটানোর পর সন্ধায় আসার সময় বাতাসে প্রান জুড়িয়ে গেল।আমি আমার ফ্রেন্ডকে বললাম-লাখ টাকা দিয়েও এই ফ্রেশ বায়ু কই পাবি তুই।সেখান থেকে ডিঙ্গি,তারপর পুল খেলতে যাওয়া।রাতে ছাদে শুয়ে তারা গোনা আর মাঝরাতে খেলা দেখা।
চলে আসার আগেরদিন সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম সন্তোষ।ওখানে ‘মৌলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ আছে।আর আছে মৌলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তাঁর মাজার।কিছু ছবি শেয়ার করলাম।

আর দুপুরে ডিস্ট্রিক্টে গিয়ে ‘কোর্টকেক’ খাওয়া আর লেকে সাঁতার ছিল নিত্যকার রুটিন।আসলে আমাদের স্থানীয় ভাষার যার নাম চাপড়ি সেটিকেই আমরা মজা করে কোর্টকেক বলি।পুরোটা বানিয়ে কেটে কেজি হিসেবে বিক্রি করে।ওখানে জর্জ কোর্ট আছে, কোর্টের উকিল,রিক্সা ভ্যান চালক আর আমার মত পাগল(যারা এইটার স্বাদ বুঝতে পেরেছে)কোর্টকেকের রেগুলার ক্লায়েন্ট।

কোর্টকেক কারিগর



ভক্ষক


সালাদ সহ


জলের টান এড়ানো অসম্ভব


মন চায় উড়তে


জলেই সুখ


নদী চর খাল বিল গজারির বন
টাঙ্গাইলের শাড়ি তার গর্বের ধন
আর টাঙ্গাইলের কথা বললে মিষ্টির কথা আসবেই।টাঙ্গাইল গেলাম মিষ্টি নিয়ে আসলামনা এইটা জানতে পারলে ঝাতি আমার ব্যাঞ্চাইবে।এই নেন মিষ্টি আর টাঙ্গাইলের শাড়ি।


ব্লগ লিখব চিন্তা করিনি তাই সেরকম ছবিও দিতে পারলামনা।কিন্তু আমার আনন্দের মুহুর্ত সিসিবি পরিবারে শেয়ার না করেই বা কিভাবে থাকি।জাস্ট আমার সেলোগ্রাফী থেকে কিছু শেয়ার করলাম।টাঙ্গাইল থেকে দূরে না থাকলে এর অপার্থিব সৌন্দর্য বুঝতাম কিনা সন্দেহ।তাই নিজ গৃহে পরবাসী থাকাও ভাল।

২,১৭৮ বার দেখা হয়েছে

১৭ টি মন্তব্য : “নিজ গৃহে পরবাসী”

  1. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    গ্রামের চাইতে আমার কেনো জানি শহরই বেশী ভালো লাগে। ৪/৫ দিন গ্রামে থাকা যায়, কিন্তু অনেকদিন একটানা গ্রামে থাকার কথা চিন্তা করতেই ভয় লাগে। হয়তো ভবিষ্যতে মন বদলে যাবে ...... কি জানি।
    ভালো লাগলো ইমরান।
    এখন পুরানো ঢাকার সোহাগের চাপ আর স্টারের চিকেন তন্দুরী আর নান/পরোটা নিয়ে কে ছবি ব্লগ দিতে পারবে ??????

    জবাব দিন
  2. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)

    ধন্যবাদ আপু,অনেকদিন পর আমার ব্লগে কমেন্টাইলেন।ইদানিং কম দেখা যায় মনে হয়। ;;;
    সুযোগ পেলে সবাইকে টাঙ্গাইলের মিষ্টি খাওয়ানোর ইচ্ছা আছে। 😀

    জবাব দিন
  3. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)

    মইনুল ভাই,
    গ্রাম আমার খুব ভাল লাগে কিন্তু বাস্তবতা আপনার কথা মতই ৪/৫দিন থাকা যায়।কিন্তু টাংগাইলের মত জেলা শহর বেস্ট।ইচ্ছে হলেই কম সময়ে গ্রামের দিকে চলে যাওয়া যায় আবার শহরে সব ধরনের নাগরিক সুবিধাই আছে।বুক ভরে মুক্তভাবে শ্বাস নেয়া যায় আর জ্যাম কি জিনিস এইটা জানিনা।আমার লেখা মূলত টাংগাইল শহর নিয়েই।

    জবাব দিন
  4. তানভীর (৯৪-০০)

    বেশির ভাগ মানুষের কাছেই তার নিজের শহর সবচেয়ে প্রিয়, যেমন আমার প্রিয় আমার কুমিল্লা শহর। এই শহরের প্রতিটি রাস্তা আপন মনে হয়, মনে আসে একটা স্নিগ্ধ, শান্ত ভাব।

    লেখা আর ছবি- ভাল লেগেছে। 🙂

    জবাব দিন
  5. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    তোকে পঁচাইয়া বিশাল সুখ পাই, কিন্তু এই লেখা পইড়া না পঁচাইতে পাইটা বড়ই দুঃখবোধ হইতাছে...বড় ভালো পাইলাম। ছবিগুলোও অসাধারন। :clap: :boss:


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
  6. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    তোমার ওই বন্ধুরে বইলো নিজের বাড়িতে একটা মোটেল খুলতে। ভালোই চলবে।

    আমার কাছেও ঢাকাকে তোমার মতোই লাগে।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  7. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)

    মোটেল না হলেও ওখানে থাকার জায়গা আছে।আর কেয়ারটাকার ও আছে।নেক্সট আমরা ফ্রেন্ডরা কোন পূর্ণিমায় ওভারনাইট পিকনিক করতেও পারি। 😀

    জবাব দিন
  8. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)

    নাজমুল,তাও তুমি কপি না করে নিজে পেইন নিয়ে এত বড় কমেন্ট করেছ।ধন্যবাদ
    জুনা, আমার তরফ থেকে কোন সমস্যা নাই।যা আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ব। টাংগাইলের আরো অনেকেই আছে এখানে তারাও অবদান রাখতে পারে এই ব্যাপারে। 😀

    জবাব দিন
  9. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
    ইসসিরে মেল্লা পোস্ট, কোনটা বাদ্দিয়া কোনটা পড়ি দিশা পাই না/ টাইমো নাই, কাইল্কা পরীক্ষা, কেস স্টাডি/ দূর, বিজি হইয়া গেলাম

    (কপিরাইট : ফয়েজ)
    নিজেরে ফয়েজের জায়গায় খুঁজে পেলাম!! কোনটা ছাইড়া কোনটায় মন্তব্য করি!! ~x(


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  10. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    ইসসিরে মেল্লা পোস্ট, কোনটা বাদ্দিয়া কোনটা পড়ি দিশা পাই না/ টাইমো নাই, কাইল্কা পরীক্ষা, কেস স্টাডি/ দূর, বিজি হইয়া গেলাম

    (কপিরাইট : ফয়েজ)
    নিজেরে ফয়েজের জায়গায় খুঁজে পেলাম!! কোনটা ছাইড়া কোনটায় মন্তব্য করি!! ~x(

    (কপিরাইট :সানাউল্লাহ ভাই) :grr:
    ফয়েজ ভাই মনে হয় কপিরাইট মাষ্টার(নাজমুল কপিমাষ্টার)।অনেক মন্তব্যে ফয়েজ ভাইয়ের কপিরাইট দেখি।বিশেষ করে সানাউল্লাহ ভাইয়ের প্রিয় কপিরাইটার। :khekz: :goragori:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ইমরান(৯৩-৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।