পারসনাল আউটিং।। আলমাস দিনার

আমাদের ব্যাচ যখন পানি সমস্যার জন্য কলেজে একা ছিলাম তখন বস্তুত ডিসিপ্লীন বলে কিছু ছিলনা । আমরা ইচ্ছামত কলেজের বাইরে যেতাম । শুধু খেয়াল রাখতে হত ডাইনিং হলে কাঊণ্ট করে কিনা । পিটি প্যারেড না থাকায় প্যারেড স্টেটমেণ্টের কোন ঝামেলা ছিলনা । আমি আমার আগের আর্টিকেলে ঊল্লেখ করেছি আমাদের প্রিন্সিপাল ছিলেন মহামান্য বশীরুদ্দীন ভাইয়া । আমাদের কলেজে কোন বাঊণ্ডারী দেয়াল ছিলনা । আমাদের পিছনে সমহিমায় দাড়িয়ে আছে পাহাড় যার গায়ে লেখা আছে ‘কথা নয় কাজ’।এটি আমাদের কলেজ মটো । আমাদের প্রতিবেশী বি এম এ’র পাহাড়ের গায়েও তাদের মটো ‘ চির ঊন্নত মম শির’ । আর আমাদের সামনের দিকটায় সকার গ্রাউন্ডের পর তারকাটার বেড়া । তারপর রেললাইন । আমরা ফুটবল কে সকার বলার কারণে অন্য সিসির ফ্রেণ্ডরা আমাদের টীজ করার সুযোগ হাতছাড়া করেনা এখনো । আমার জানামতে আমেরিকায় ফুটবলকে সকার বলে । আর রাগবীকে বলে আমেরিকান ফুটবল । যাহোক রেল লাইন পার হতে পারলেই কেল্লাফতে । :awesome:
আমরা সাধারণত যেটা করতাম পারসনাল ড্রেস পরে বের হতাম । বিকেল বেলা খুব ক্যাজুয়ালী হেটে চলে যেতাম । সকার গ্রাউন্ড ক্রস করার সময় দূর থেকে দেখে বুঝার ঊপায় নেই যে ক্যাডেট । কারণ পারসনাল ড্রেস । আর আমাদের কলেজের পাশে লোকাল লোকজ়ন আছে । ক্যাডেটদের চেনার একমাত্র ঊপায় ড্রেস । যেহেতু কলেজ়ে আমরাই ছিলাম তাও আবার লীডিং ব্যাচ তাই ড্রেস আপ/ডিসিপ্লীন লুজ় থাকাটাই নরমাল । রাতেও আমরা আঊটিং করতাম। আমাদের ‘টিঊব লাইট’ একবার রাতে গিয়ে তারপরদিন গীটার :guitar: নিয়ে কলেজ়ে ঢুকেছিল। নামে ‘টিঊব লাইট’ হলেও কাজ়টা সে সাক্সেসফুলী করেছিল।
একেবারে রিস্ক যে ছিলনা তা নয়। প্রথমত প্রিন্সিপালকে তেমন কেয়ার করতাম না। দিতীয়ত ১২ ক্লাসে থাকলে যা হয় আরকি- ভাবতাম ধরা খেলে আর তেমন কি হবে ? তাছাড়া শিরায় শিরায় ত বিপ্লবী চেতনা ছিলই। আমাদের লূলাবাবা ত ধরা খেতে খেতেও বেচে গিয়েছিল। কলেজ় থেকে বের হওয়ার পর সামনের স্টেশন থেকেই হঠাত স্টাফ বুঝে ফেলে । কোন কারনে হয়ত বিকেলে স্টাফ বাইরে গিয়েছিল । স্টাফ ধাওয়া করেছিল পিছন থেকে তাই চেহারা ভালমত দেখেনি । :just: কোনরকম টেম্পূতে ঊঠে স্টাফের ধরাছোয়ার বাইরে গিয়েই চামে কলেজ়ে ঢুকে পড়ে। তারপর নামাজ়ের ড্রেস পড়ে ভদ্র ক্যাডেট সেজ়ে প্রিন্সিপালের অফিসের সামনে হাটাহাটি করছে। ততক্ষনে কলেজ়ে খবর হয়ে গিয়েছে। স্টাফ ওর সাথেই বলছে একটা ক্যাডেটকে একটুর জ়ন্য ধরতে পারলামনা। ধরতে পারলে :chup:
আমরা একদিন রাতে ‘এমআই ২’ অভিযানে বের হলাম। কয়েকজন মিলে রাতের বেলা বের হলাম। একেবারে শহরে । প্রথম আমরা সওদাগর বাবার বাসায় গেলাম। সেখানে ডিনার সেরে গেলাম আমাদের আল্টিমেট গোল ‘আলমাস- দিনার’ হলে। দুইটা হল একসাথে । একটাতে আবার ‘টূ ইন ওয়ান’ দেখায়।আমরা আবধারিতভাবে সেটাতেই ঢুকে পড়লাম। একটা ছবি হওয়ার পর বিরতির সময় বের হয়ে দেখি আমাদের আরেক গ্রুপ। আরে তোরা :khekz: ! আমাদের আনন্দ আর দেখে কে । তারপর সুন্দরমত পুরুটা কভার করে নিশি রাইতেই ফিরা আইছিলাম। আমাদের আউটিং এমনি র‌্যন্ডম ছিল।

এরপর যখন সব ক্যাডেট কলেজে আসলো তখনো আমরা আউটিং এর লোভ সামলাতে পারলাম না । আর আমাদের আশকারা পেয়ে আমাদের আল্টারনেটিভ জুনিয়র রাও আমাদের সাথে বাইরে যেতে লাগল । কিন্তু কলেজ খোলা থাকা অবস্থায় ত ব্যাপারটা এত সহজ ছিলনা। ফলাফল- কিছু ছেলে ধরা খেল। বাইরে মার্কেটে মৌজ মেরে :tuski: ঘুরছে আর তখনি ২ জন স্যার এর সাথে দেখা। স্যাররা হাসি দিয়ে বলে চল কলেজে যাই। :bash: তখন আমাদের ৪০ আর ৪২ তম ব্যাচ এর আউটিং ওপেন সিক্রেট। অথরিটি জানে বাট বাইরে যাওয়া ঠেকাত পারেনা । প্রিন্সিপাল সব হাউসে এই মর্মে নোটিস দিলেন হাউস মাস্টারদের এড্রেস করে ‘ ৪০ এবং ৪২ তম ব্যাচ এর ক্যাডেটরা বিনা অনুমতিতে কলেজের বাইরে যাচ্ছে। আপনারা ক্যাডেটদের কন্ট্রল করুন’। আগে জানতাম হাউস মাস্টারদের ক্ষমতার বাইরে থাকলে সেটা প্রিন্সিপাল পর্যন্ত যেত। এখন দেখি উল্টো । এমনই সুখের দিন ছিল আমাদের যেটা ভাবতেই জলে চোখ ভিজে যায়।

৩,০০৪ বার দেখা হয়েছে

৪২ টি মন্তব্য : “পারসনাল আউটিং।। আলমাস দিনার”

  1. দিহান আহসান

    সমস্যা কিতা বুঝলাম না। সেই প্রথমে একটা মন্তব্য লিখলাম, কিন্তু দেখছিনা।
    ভাইয়া খুব ভাল লাগলো আপনার স্মৃতিচারন।
    আপনাদেরও দেখি লুলাবাবা, সওদাগর বাবা, টিঊব লাইট সবি আছে।
    আলমাসের পাশেই তখন আমি থাকতাম, সকালের নাস্তা খেয়ে একেবারে নাহয়, কলেজে যেতেন। 😀

    জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    কত কথা মনে পইরা গেল রে :dreamy: :dreamy: :dreamy:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    আমাদের কলেজ থেকে ভাং মারার দুইটা পথ আছিল। একটা ডাইনিং হলের পিছন দিয়া। আরেকটা অবস্ট্যাকল কোর্সের পাশ দিয়া। প্রথম পথে শহরে সিনেমা দেখতে যাইতাম। আর দ্বিতীয় পথে ডিনারে চাপাতি দেওয়ার দিন ফৌজদারহাট বাজারে বাংলা হোটেলে ভাত খাইতে যাইতাম। কি সব দিন যে আছিল!!

    একবার আলমাসে সিনেমা দেইখ্যা দেখি পকেটে তেমন পয়সা নাই। খিদাও লাগছে। তহন তো দিহানের জন্মও হইছে বইল্যা জানি না!! কি করি? শ্যাষে তন্দুরি খাইলাম শুটকি মাছের তরকারি দিয়া। কি যে মজা ফেঁয়েছিলাম!! (আমাদের এক শিক্ষকের প্রিয় উক্তি) :grr: :grr: :grr:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : হাসান (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।