ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর ভূত

আমরা ক্যাডেট কলেজে জয়েন করি ১৯৯৩ সালের ২০শে মে। তারপর কলেজ ছূটি হয় ২৭ মে। :awesome: এর পরের মাসে ২৩ জুন কলেজ খোলা হয়। ঠিক তারপরদিন শুক্রবার দেখি আমার মুরগি বসন্ত x-( (চিকেন পক্স)। তাই এডমিট হতে হল হাসপাতালে এবং সংগত কারনেই আমার স্থান হল একা এক কেবিনে ;;) । আমি ছিলাম ৩ নম্বর কেবিনে। এখানে উল্লেখ্য, আমি এর আগে কখনো একা এক রুমে থাকিনি। চিকেন পক্স হওয়ায় আমার জেনারেল ওয়ার্ডে যাওয়ার পারমিশন ছিলনা। বিকেলে টি টাইমে ফাঁকতালে একটু গিয়ে নিজেকে ধন্য করতাম। আর বাকি সময় গালে হাত দিয়ে বাড়ীর কথা ভাবতে ভাবতে নস্টালজিক হয়ে যেতাম। আমার কেবলই মনে হত আমাকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে :bash: । অং সান সুচির মত আমাকেও মনে হয় সারাজীবন বন্দি জীবন কাটাতে হবে ! আমি তো বিপ্লবী কেউ না। তাহলে আমার কপালে এ কি জুটল ! :(( আমার পাশে ২ নম্বর কেবিনে আমাদের ব্যাচের ‘আ-বেগের বোম’ এডমিট ছিল। আর ১ নম্বর কেবিন ছিল খালি। আমরা রাতের বেলা লুকিয়ে আড্ডা দিতাম। সেই সাথে ওর সাথে আমার একটা পরিচয়ও হয়ে গেল। একমাত্র মজলুমই জানে আরেক মজলুমের কষ্ট। :gulli: আমার মানযাচাই পরীক্ষাও ওখানে বসেই দেয়া।
আর হাসপাতালের পরিবেশটাও ছিল বেশ ভৌতিক। চারদিক শুনশান নিরবতা। আর তার মধ্য ট্রেনের ঝিক-ঝাক-ঝিক-ঝাক শব্দ। ট্রেনের লাইন আমাদের সীমানার ভিতরেই। আর ক্রিকেটের (ঝি ঝি পোকা) ডাকও ছিল। 😡 হাসপাতালটা ছিল পেয়ারা বাগান আর ডাব গাছে ঘেরা। আরো ছিল ঘাস জঙ্গল। অন্য সব ক্যডেট কলেজের ক্যডেটদের এফসিসি’র হাসপাতালের পরিবেশ জানার কথা। কারণ আমাদের রেস্ট হাউস হওয়ার আগে সবাই ইলেভেন এক্সকারশনে :party: ওখানেই থাকত। আমাদের ব্যাচই (এমসিসি) প্রথম রেস্ট হাউসে থাকলো । সবচেয়ে ভাল চেনার কথা আমাদের সিনিয়রদের। এমজিসিসি’র আপুরা যখন আসতেন তখন আমাদের রোমিও বড় ভাইরা ড্রেন দিনে জঙ্গল পার হয়ে জানালার বাইরে থেকে দেখা করত। আর তারা কলেজে ফিরে যাওয়ার পর দেখা যেত আমাদের কলেজের ভাইদের নামে আসত প্রেমপত্র 😡 (যারা বেশী হিট তাদের ৪-৫টা)।

ওখানেই আমার ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের সাথে :gulti: পরিচয়। বড় ভাইরা টি টাইমে উনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার মহৎ উদ্যোগটা নিলেন। বললেন ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর ছিলেন আমাদের কলেজের এডজুটেন্ট। তিনি ভাবীর সাথে অভিমান করে ট্রেনে কাটা পরে আত্নহত্যা করেছিলেন :goragori: । উনার লাশ এনে রাখা হয়েছিল ১ নম্বর কেবিনে। তার আত্মা নাকি আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে। তাই ১ নম্বর কেবিন মার্কামারা। ~x( আমার অবস্থান আশে পাশে হওয়ায় আমার বিপদ আসন্ন। আমি এই ভূতের ভয়ে খুব ভীত ছিলাম না। মূল সমস্যা লোনলিনেস আর এই ভৌতিক নীরবতায় মাঝে মাঝে গা ছম-ছম করত। আমার বদ্ধমূল ধারনা এফসিসির এমন কোন ক্যাডেট নাই যে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের নাম শুনেনি। ক্লাস সেভেন আসলেই ক্লাস এইটের সবচেয়ে বড় কর্তব্য থাকে :just: তাদের ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের ভুতের ভয় দেখানো। ক্যান্ডিডেট লাইফে একদিন আমি রাতে লাইটস অফ এর পর শুয়ে আছি আমার প্লেসে তখন আমার ফ্রেন্ডদের মাথায় কুবুদ্ধি চাপলো আমাকে ভয় দেখাবে। আমি কিন্তু তখন জেগে ছিলাম তাই প্রস্তুত ছিলাম। ওদের ব্যর্থ প্রজেক্টের প্রস্তুতি দেখে মনে মনে হাসছিলাম :khekz: । দুইজন আমার মাথার উপর আমার সাদা টেবিলক্লথ ধরল। আরেকজন উপর থেকে একটা আলো ধরলো। আর টেবিলক্লথ নাড়াতে লাগলো যাতে আলোটা :no: লাফালাফি করে। আর বলতে লাগলো ‘ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর আইল…ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর আইল’। আমি বিরক্ত হয়ে যতই ওদের সরতে বলি ততই এক্টিভ হয়। আমি বললাম, আমি ঘুমাইনাই, বিরক্ত করিস না। :duel: ফলে ওদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেলাম। কিন্তু যত ক্যাডেটই এফসিসি তে এডমিশন নেবে তারা কেউই এই প্রেতাত্না থেকে মুক্তি পাবেনা। 😡 এরকম ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর ভূতের কাহিনী এফসিসি তে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলতেই থাকবে। :grr:

১,৬১৫ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর ভূত”

  1. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ওই মিয়া আবদুল্লাহ, তুমি দেখি ইমোর বন্যা বয়ায় দিছ। সস্তা পাইছো না ইমো গুলারে?

    লেখা ভালো হইছে। ঝাড়িতে ঘাবড়াইও না, আমি মানুষ ভালো, সিসিবির সব্বাই জানে এইটা। পাংগা দেই না।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  2. তৌফিক (৯৬-০২)

    সিসিবির প্রথম প্রজন্মের ব্লগাররা একটু ঝিমাই গেছে। দ্বিতীয় প্রজন্মকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে আব্দুল্লাহ ভাইয়ের মতো লোকই দরকার। 🙂

    অফটপিকঃ
    তেল দিয়া আপনাকে নিয়মিত লেখতে উৎসাহিত করতে চাইতেছি আরকি। তেল হইলেও কথা বানায়ে বলি নাই। O:-)

    জবাব দিন
  3. মোস্তফা (১৯৮৮-১৯৯৪)

    ঘটনার সময়কাল মনে হয় ১৯৯১ বা ৯০ হবে। আমারও এই মুরগি বসন্ত হয় এবং যথারীতি ১ নং কেবিনে যায়গা হয় এবং যথারীতি ক্যাপ্টনে জাহাঙ্গীর স্যারের ভূঁতের সাথে পরিচিত হই। মনে আছে সারারাত হুমায়ন আহমেদের কোন একটি বই পড়ে কাটিয়েছিলাম। তোমার কাহিনী পড়ে মনে হচ্ছে আরো এক শত বৎসর পরেও কোন এক ক্যাডেট থাকবে যার বসন্ত হবে এবং ১ নং কেবিনে থাকবে তাকে এই গল্প শুনে যেতে হবে। এটা শুধু তাঁদেরই ঘটবে যাদের বসন্ত হবে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আব্দুল্লাহ আল ইমরান (১৯৯৩-১৯৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।