৩ টি গর্বিত শেল এবং আমার সত্যিকার ক্যাডেট হয়ে উঠা

মূল ঘটনা শুরুর আগে খলর মামা সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়। মামাকে আমরা মেছো মামা বলেই ডাকতাম। মাছ সম্পর্কিত কোন ব্যাপার ছিল যা ইন-ডিটেইল না বলাটাই ভদ্রোচিত বোধ করছি। মামা ততদিনে কংশ-মামা :gulli2: হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছেন। আমারাও মামাকে ক্লাসে,মাঠে- ঘাটে আমাদের স্টাইলে অভিবাদন জানাতাম। :duel: আমরা বাংলা বর্ণমালা প্র্যাক্টিস করতাম এভাবে —
ক-লর
খ-লর
গ-লর
ঘ-লর
ঐদিন মিল্ক ব্রেক এর পর মামার ক্লাস ছিল। যথারীতি আমারা তখনো ক্লাস এ ঢুকিনি। আমরা ৩ জন পাশের কেমিষ্ট্রি গ্যালারি তে শুয়ে ছিলাম :goragori: । কোন এক মহেন্দ্রক্ষণে মামার আবির্ভাব। আমরা মামা দর্শনে হতচকিত হয়ে উঠে দাড়ালাম। বিনা বাক্যব্যয়ে মামা প্রস্থান করলেন এবং সোজা নিচে চলে গেলেন ভিপি’র রুমে। মামার এহেন আচরন এবং বক্র চাহনিতে বুঝতে বাকি রইলনা- ‘আমাদের ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগপূর্ণ মেঘের ঘনঘটা,কে আমাদের আশা দেবে ? ~x( কে আমাদের ভরসা দিবে ?’। আমরা দ্রূত ক্লাসে গেলাম। খলর মামা নিচতলা থেকে এসে ক্লাসে জয়েন করলেন। লাঞ্চ এর পর হাউসে ঢুকেই নোটিশ বোর্ড এ দেখলাম আমাদের ৩ জনের নামে ৩ টা করে শেল (৬৫ পাউন্ড শেল ক্যারী করা) ইডি।
ইডি ‘এফ সি সি’ তে প্রাত্যহিক ঘটনা। কিন্তু শেল ইডি আমাদের দিয়েই শুরু হলো (সদূর অতীত ইতিহাসে কখনো ছিল কিনা আমার জানা নেই) । তাই আমাদের ইতিহাসের আংশ হতে পেরে গর্বের সীমা নেই। ‘বি এম এ’ থেকে ড্রাম এর বীট শুনা যায়। তাই রগড়াতেও কাছাকাছি থাকার প্রচেষ্টার কোন ত্রূটি নেই। শুধু এডজুটেন্ট না, স্যাররাও ইডি দেয়াতে কম যান না। আর আমাদের ইডিও বেশ টাফ ছিল। লজ্জাবতীর উপড় :frontroll: সাইডরোল এবং টাচ এন্ড ব্যাক সহ কোনকিছুর কমতি ছিলনা। সেদিন আবার বোনাস হিসেবে আমাদের জ়ুটেছিল হ্যাণ্ডস ডাউন হয়ে এডজুটেন্টের কল্যাণে কাচা ডালের মায়াবী স্পর্শ :chup: (আহ ! যেন কাশফুলের নরম ছোয়া)। ইডির শেষদিকে ডীচের গরম পানিতে গা ডুবিয়ে রাখা এবং শেল পরিস্কার করে ধূয়ে সযত্নে (ষ্টাফ বলছিল সাবধানে রাখতে-তা না হলে শেল ব্যথা পেতে পারে !) সিঙ্গেল ফলিন করে রাখা।
ডিসিপ্লিণ্ড ক্যাডেট হওয়ার ‘কূবাদে’ ক্লাস নাইন এ উঠেও ইডি খাওয়ার চান্স পাইনি :bash: । ক্লাস টেন এ আল্লাহর অসীম দয়ায় একেবারে ৩ টা ইডি খেলাম খলর (মেছো মামা)’র সৌজন্যে যিনি আমার ‘সূখের ঘরে তূষের আগুণ’ জেলেছিলেন। আমার সাথে বাকি ২ জন ইডিতে ততদিনে আইকন হয়ে উঠেছে। আর আমার নভিসেস ড্রিলও করা হয়নি। খেলাম ত খেলাম, একেবারে ৩ টা, তাও আবার শেল ইডি এইরকম দূর্দান্ত ডেব্যু আর কারো হয়েছিল কিনা জানিনা। হাউসে গিয়ে আমরা মাসল্‌ :tuski: কতটুকু বেড়েছে সেটা নিয়ে গবেষণা শুরু করলাম আর ফ্রেন্ডদের সামনে আমাদের সে কি ভাব ! ‘জানিস বেটা-শেল ইডি খাইছি’। :guitar: আর আমার ত আনন্দের আরও বড় কারন আছে- আমি যেন ঐদিন সত্যিকার ক্যাডেট হয়ে উঠলাম ! :awesome:

১,৯৩৭ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “৩ টি গর্বিত শেল এবং আমার সত্যিকার ক্যাডেট হয়ে উঠা”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আহ ! যেন কাশফুলের নরম ছোয়া
    আব্দুল্লাহ ভাই,একটা অফ টপিক কাহিনী মনে পইড়া গেল।এই এ্যাডভার্টাইজমেন্টটা আমরা কেলাস সেভেন/এইটে থাকতে খুব দেখাইতো যেইখানে বিশাল গোঁফ ওয়ালা স্বামী আর তার স্ত্রী হাসাহাসি করতেছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সফল হওয়া নিয়া আর স্ত্রী খুশি হইয়া কইতেছে ...যেন কাশফুলের নরম ছোঁয়া

    এই এডভার্টাইজ দেইখা আমাদের পিচ্চি মেহরাজের দ্বারা জাতির বিবেকের কাছে একটা উক্তি জুনিয়র গ্রুপে কিংবদন্তীর পর্যায়ে চলে গেছিলঃ

    "দোস্ত,এই ইয়া মোটকা ব্যাটার **** রে এই মহিলা কাশফুলের নরম ছোঁইয়া কয়,আমার **** তো তাইলে টেরই পাবেনা... :(( :(( :((

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভাইয়া আপনেতো দেখি ঐতিহাসিক পাবলিক :hatsoff: :hatsoff:

    শেলের কতো কাহিনি দেখলাম... এ শেল শুধু পড়ে গেলে ব্যথাই পায় না, তার সাবান পানির গোসল করা লাগে, তেল-স্নো-পাউডার লাগানো লাগে... কমান্ডো আহসান স্যার/ভাই আরো ভালো বর্ননা দিতে পারবে 🙁


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      আকাশদা আমি শুনেচিলুম(এক স্টাফের কাছে) যে কারো নামে শেল ইস্যু হলে নাকি মশাই শেলএর জন্য ডায়নিং হলে আলাদা খানাপিনার ব্যবস্তাও করতে হয়?সত্যি নাকি মশাই?তাহলে তো কোলকাতার আপনাদের জন্য বড় বিপদ হয়ে গেল মাইরি-অত খরচ সামলাবেন কিভাবে বলুন তো? 😀

      জবাব দিন
      • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

        এত্তোদিনে আমি তোর কোলকাতার শিকড় উপড়ে এপারে আসার রহস্য বুঝতে পারলাম :grr: খাওয়ার খরচের জ্বালা ভুলে যেতে তোর ছাল-বাকল পালটে ফেললি?

        শেলের খানাপিনার ঘটনা অনেকাংশেই সত্য


        আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
        আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

        জবাব দিন
  3. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    ভাই, এই খলর কি বাংলার শিক্ষক, যিনি একটু টেনে টেনে কথা বলেন আর চশমা পরেন? তাহলে ইনি আমাদের হাউস মাস্টার ছিলেন। আমরা তাকে খলু বলতাম তার বিখ্যাত স্বাক্ষর এর জন্য।

    জবাব দিন
    • আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)

      তুমি ঠিক ধরেছ বাছা ! তেনার সাক্ষর এরকম ই ছিল 'খলর'।আর বাংলার শিক্ষক।কোথায় আছে হতচ্ছারা? :gulli: আমার 'সুখের ঘরে তুষের আগুন :gulli2: জালানোর কাহিনীও চমকপ্রদ বাট আমি সেন্সর করে গেছি। :bash: আরেকটা কথা-আমার দেশী (টাঙ্গাইলা) হওয়াতে আমাকে একটু বেশীই ভালবাসত। 😡 সেই ভালবাসা থেকেই তার এই ভূমিকা ! 😮

      জবাব দিন
  4. তৌফিক (৯৬-০২)

    সিসিবিতে আরো একজন শক্তিমান ব্লগারের আগমন ঘটিল। 😛

    সিরিয়াসলি, আব্দুল্লাহ ভাই , আপনার লেখার ভংগিটা সুন্দর। 🙂

    মির্জাপুরে প্রিন্সিপাল রফিকুল ইসলাম বিউগল বাজায়া জরিমানার রায় ঘোষণা করার একটা প্রথা চালু করেছিলেন। আমি ফার্স্ট গ্রুপেই ছিলাম। মির্জাপুরের ইতিহাসে আমার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। B-)

    জবাব দিন
    • আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)

      এই রফিক স্যার আমাদের কলেজের ভিপি ছিল :ahem: । আমাদের ভিপি রইস উদ্দিন টাকলুও x-( (মুতু) তোমাদের কলেজে প্রিন্সিপাল হয়ে গেছিল। এলেভেন এক্সারশন এ অনেক জালাইছে। :gulli: একটু পর পর মাইক্রো থামাইছে মুতার জন্য। :pira: আর আমাদের বাসও থামাতে হয়েছে। রইস কথায় কথায় টাকা ~x( পেনাল্টি লাগাইত।

      এতবড় কম্পিমেন্ট 😮 এখনি আমার প্রাপ্য না ।

      আর কাইয়ূম ভাই আমার গাইড, রাবীন্দ্রিক স্পিরিট দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

      জবাব দিন
  5. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    দুর্দান্ত লেখা হইছে আব্দুল্লাহ :clap: :clap:
    খলর মামার কথা মনে পড়ে 'ভয়ে আমার গা সম সম করে উঠলো' 😀
    তয় শেল ইডি কিন্তুক আগেও আছিলো :grr: :grr:
    দারুন লেখার স্টাইল, ফাট্টাফাটি।
    দেখতে হবেনা কোন হাউস :hug:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  6. আশহাব (২০০২-০৮)
    “দোস্ত,এই ইয়া মোটকা ব্যাটার **** রে এই মহিলা কাশফুলের নরম ছোঁইয়া কয়,আমার **** তো তাইলে টেরই পাবেনা…

    =)) =)) =)) :khekz: :khekz: :khekz:
    :pira: :pira: :pira:


    "Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
    - A Concerto Is a Conversation

    জবাব দিন
  7. ইমরান...

    দারুন হইছে...
    এক ফ্ল্যাট এ গত ৯ বছর ধইরা থাকি...তোর এই লেখা লেখির গুন এর কথা তো কোন দিন জানি নাই...(কত অজানা রে...)...

    ভুতের পোষ্ট থেইকা এইটা ভাল হইছে...চালাইয়া যা।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।