হায়রে পাখি !

মা’র কাছে শুনেছি আমি –
যেদিন ডিম ফুটে বেরিয়ে
চোখে মেখেছি সূর্যের আলো,
সেদিন ঝকঝকে এক দিন ছিল।
আমি আমার না ফোটা চোখ কুচকে
চরম বিরক্তিতে চিৎকার দিয়েছিলাম ।

তারপর, আস্তে আস্তে সয়ে গেল ঐ রোদ,
এরপরে ঝড়-তুফান আর কালো অন্ধকার।
মা বলতেন সেই তখন থেকেই কিন্তু –
বৃষ্টিতে আমি বড্ড চঞ্চল হয়ে উঠতাম!

অপার বিস্ময়ে শুধু তাকিয়ে থাকতাম ,
টপ টপিয়ে পড়ন্ত প্রতিটি বৃষ্টির ফোটায়।
ভেবে পেতাম না আমি কে আকাশ থেকে
কোন কারনে অবিরাম বর্ষনধারা ঝরায় ?

তখন মা তার ঠোঁটে করে আনতেন আমার জন্য খাবার,
মাঝে মধ্যে মানুষের ফেলে দেয়া খাদ্যের তিল পরিমান।
কখনোবা ছোট্ট ছোট্ট কাল রংএর পোকামাকড়-
আমি তখন ওসবের নামই শিখিনি ভালমতন।

দেখতে দেখতে আমি নিজকে স্বতন্ত্র শিখি ভাবতে
আমার ডানা দুটোও যেন অস্থির হয়ে উঠে উড়তে।
মা বললেন সব কিছুর জন্যই নির্দিষ্ট সময় আছে
প্রয়োজন সঠিক শিক্ষা আর কঠিন চর্চা তার আগে।

সারাদিন মা অবিরাম উৎসাহ দিতেন আমায়
এভাবে একদিন, আমি উড়তে শিখে গেলাম।
মা দেখে আনন্দিত আর তারপরেই ছেয়ে গেলেন বেদনায়,
বহু মিনতিতেও কোন জবাব পাইনি আমি সেই বিষন্নতার।

একদিন অঝর বৃষ্টিতে পূব আকাশে চক্কর মেরে আমি
ফিরে এসে দেখি এদিকের ঝড়ে তছনছ সব ঘরবাড়ী।
আমাদের নীড়ের অবশেষ কিছুই যেন নেই,শুধু দুরাশা
একলা মা আমার পারেনি বাঁচাতে তার সে তিলোত্তমা।

আমি রইলে মা’র তখন হয়তো একটু সাহায্য হতো, হায়!
এই ভেবে নিজেকেই বারংবার ধিক্কার দিই ভীষন অবজ্ঞায়।
না পেলাম মাটির ঠাঁই আমি, না আকাশ তুই মেঘ দিলি
আর্ত চিৎকারে চারদিক আমি দারুন অসহায় করে তুলি।
আমার তরে চিরন্তন উড়বার শাস্তি ধার্য্য হয়েছে আমরন
ফেলে রেখে আসা ঐ পালকেরা দংশিবে আমায় সারাক্ষন।।

৯ টি মন্তব্য : “হায়রে পাখি !”

  1. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    বেশ ক'দিন ব্লগে আসতে পারিনি।
    আজ এলাম।
    মা দিবসের এই কবিতাটা এখানে জুড়ে দিলাম।
    দেরী হলো হয়তো - কিন্তু এ যে আমাদের বাড়ী - তাই সবাই আপন করে নিবে নিশ্চিত।

    সকল মা'দের জানাই সশ্রদ্ধ সালাম।
    আজ সারাদিন মা'কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটেছি।
    তাঁর ডায়বেটিক্‌স । সুগার বেড়ে গেছে অনেক বেশী।
    সর্বদা আমাদের খেয়াল রাখতে রাখতে নিজের কথা যিনি আজও ভাবেন না।

    দোয়া করবেন সবাই।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    @ ওবায়দুল্লাহ,

    যতখানি ভাবছো তার চেয়েও অনেক বেশি সর্তক থাকতে হয় ডায়বেটিস রোগীদের। সুতরাং এই ব্যাপারটা আন্টির উপরে ছেড়ে দিও না, তোমদের কাউকে নিতে হবে। আর রেগুলার চেক আপ, এর অবহেলা করিও না। পস্তাবা পরে নাহলে।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জাহিদ (১৯৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।