রেডিও সাইলেন্স – ১

মঙ্গলবার সকাল, এখন সময় সকাল ৭;৫৫।
ভার্সিটির ক্যাফে’তে আকাশের সামনে দুজন ভদ্র লোক বসা; একজন কোট টাই পড়া আরেক জন ক্যাজুয়াল শার্ট। আকাশ একটা কনট্র্যাক্ট পেপারে সাইন করে নিজের মোবাইলটা সুইচ অফ করে শার্ট পড়া লোকটাকে দিয়ে দিল। সাথে সাথে স্টপ ওয়াচ এ টাইম ধরলেন টাই পড়া লোকটা।

নেক্সট ৪৮ ঘন্টা আকাশকে কোন ধরনের মোবাইল ব্যবহার না করে তার রুটিন অনুযায়ী যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ওর সাথে পুরা সময় জুড়ে থাকবে্ন শার্ট পড়া লোকটা। সব ঠিক মত করতে পারলে সময় শেষে পাওয়া যাবে মোটা অংকের টাকা। রিয়েলিটি গেম এর একটি শর্ত হচ্ছে – পরিচিত কাউকেই বলা যাবে না ওর চ্যালেঞ্জের কথা। টাই পড়া ভদ্রলোকটিকে পুরো ক্লাসের মধ্যে থেকে আকাশের নাম রেফার করেছেন ওদের মার্কেটিং ফ্যাকাল্টি। প্রথমে মজা পেলেও আকাশ কিছুটা ভড়কে গেছে যখন তারা ওকে গত ২ মাসের মঙ্গল, বুধ এবং বৃহস্পতি বারে ওর স্বাভাবিক রুটিন দেখালো। যার অর্থ, মোটামুটি এ আদলেই সময়টকু পার করতে হবে। সাথে এও বলা হয়েছে – জরুরী কোন বিষয় সামনে এলে তা অ্যাড্রেস করা যাবে। তবে বিপত্তি একটাই – লাইফ মাইনাস মোবাইল ।।
শুরু হলো রেডিও সাইলেন্স…

১ম – ৪র্থ ঘন্টা ০৮০০ -১২০০
হাল্কা আড্ডাফাই করে, সকালের নাস্তা খেয়ে আরাম করে চা শেষ করে আকাশ বেরিয়ে গেল লিফট এর দিকে। অভ্যাসবশতঃ পকেট হাতড়ে মোবাইল না পেয়ে নোটিশ বোর্ডের উপরে দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে নিল। আজ মনে হলো, হাত ঘড়িটা পড়লে ভাল হতো। আড়চোখে ও দেখে নিল – শার্ট পড়া লোকটিও (জাহিদ, ৩২) আসছেন পিছু পিছু। সকালে প্রথম ক্লাসটি HR এর ভিজিটিং প্রফেসর সাদ স্যারের। উনার জন্য বুধবার সকালে টানা দুইটা ক্লাস শিডিউল করা। টাইমলি ক্লাসে না ঢুকলে স্যার মাইন্ড করেন। ঘড়ির কাটা মিলিয়ে এসে আকাশ যখন রুমের সামনে দাড়ালো; দরজায় লেখা – “Today’s Class at Room #303. Sorry for the inconvenience.” ৬ তলা থেকে নেমে ঐ ক্লাসে যেতে যেতে কিঞ্চিৎ দেরী হয়ে গেল। স্যারের শুষ্ক হাসি উপেক্ষা করে আলতো করে সরি স্যার বলে ও বসে পড়লো সামনে একটা খালি সিটে। মেহেদীর সাথে চোখাচোখি হতেই ও হাতের মোবাইল ইশারা করে দেখালো। যার অর্থ ও এই চেঞ্জ এর খবরটি টেক্সট করেছে মোবাইলে বা স্ট্যাটাস দিয়েছে ফেসবুকে । ও মনে মনে বললো – ইটস ওকে, আই অ্যাম অন ‘রেডিও সাইলেন্স’ বন্ধু।

সাথে মোবাইল না থাকায়, থেকে থেকে ফেসবুক চেক করতে হচ্ছে না বলে আজ ‘ফর এ চেঞ্জ’ সাদ স্যারের লেকচার শোনা যাক। ও’র মেজর মার্কেটিং এ। হিউম্যান রিসোর্সের গতানুগতিক প্যাচাল তার তেমন পছন্দ না। মেহেদীর পিড়াপিড়িতে এই কোর্স নিয়েছে সে – Managerial Skills Development আর আজ স্যার পড়াচ্ছেন Supportive Communication এর উপর। নিজেকে হঠাৎ খুব বোকা বোকা মনে হলো ওর। স্যার খুব্বি জোস পড়াচ্ছেন; চমৎকার প্রেজেন্টেশন। এতদিন মনে হয় ও কোন মনোযোগই দেয়নি বলে ব্যাপারটা বুঝে আসে নি। ক্লাস এর ব্রেকে আগ বাড়িয়ে ও স্যার এর সাথে আজকের ক্লাস নিয়ে একটু আলোচনা করলো। এবং ক্লাশ শেষে স্যারকে অ্যাাসাইনমেন্ট এর টপিক প্রপোজ করলো। স্যার খুব আগ্রহ ভরে কিছু গাইডলাইন দিলেন। খুশি খুশি মনে আকাশ ক্লাস থেকে বেরিয়ে লিফট এ চড়ে ক্যাফের দিকে এগিয়ে গেল। আর পেছনে ছায়ার মত লেগে আছেন জাহিদ।
আকাশ ধারনাও করতে পারেনি যে এই ক্লাস রুমে আগের থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন সেট করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা বাসাতেও ইন্টারনেট সার্ভিসের লোকের সাথে টেকনিশিয়ান এসে ওর রুম, ড্রয়িং, ডাইনিং, ফ্যামিলি স্পেসে ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন সংযোগ দেয়া হয়েছে। কাজগুলি করা হয়েছে নিখুঁত ভাবে – এ কমপ্লিট সারভেইল্যান্স প্যাকেজ।

৫ম ঘন্টা ১২০০ – ১৩০০
লাঞ্চ ব্রেক এ প্রথম পাঞ্চ আসলো নীলা’র (মানে নীলিমা) থেকে। আকাশে’র ক্লাসমেট, জাস্ট ফ্রেন্ড এর থেকে একটু বেশী। সকাল থেকে ফেসবুকে আকাশ’কে না পেয়ে ও দারুন ক্ষেপে আছে। রীতিমত দারোগা’র রোলে সে এখন। ওর বক্তব্য – আকাশ যতই ভাল স্টুডেন্ট হোক না কেন- প্রতি ঘন্টায় একটা ইনবক্স করতে না পারাটা ৩য় বিশ্বযুদ্ধের কারন হয়ে ঠেকতে পারে। অগত্যা, আজ আবারও ইগলু লাঞ্চ – যার অর্থ হচ্ছে লাঞ্চে ওরা দুজন শুধুই আইস্ক্রীম খেতে পারবে। বোধকরি মিনিট তিরিশের মধ্যেই ম্যাডামের মুড নরমাল হবে – ব্যাপারটা অনেকটা – “বরফ গলা নদী” রি –লোডেড এর মত। ছায়া জাহিদ – নাটক দেখছেন নিশ্চুপ।

ষষ্ঠ – ৯ম ঘন্টা ১৩০০ – ১৭০০
এর পরে দুটি ক্লাস – অ্যাকাউন্টিং (১৩০০- ১৪৩০) এবং স্ট্যাটিস্টিক্স (১৪৪০ – ১৬১০)। গুড নিউজ – দুটোতেই নীলা আছে। ওরা অবশ্য ক্লাসে পাশে বসে না। এ সময়টুকু টেক্সট না পাঠালেও চলবে। তবে কয়েকবার চোখাচোখি হওয়া আবশ্যক। এতদিনে এ ব্যাপারটা তারা বেশ আয়ত্তে এনে ফেলেছে; বলা যায় শিল্পের পর্যায়ে। ক্লাস সেরে ওরা ক্যাফে’তে গেল। Cold War এর পর এখন Summer of 69, কেননা বেশী ঠান্ডা খেলে আকাশ এর সেন্সিটিভ ভোকাল কর্ড নাজুক হয়ে যায়। নীলাই ঢং করে এই উপমা দিয়েছে। এ পর্বে ওরা ধোঁয়া ওঠা ডবল চা খাবে, মামা স্পেশাল।
জাহিদ আছে্ন পিছু পিছু যেখানে ওদের সারভেইল্যান্স কভারেজ নাই।

১০ম – ১১তম ঘন্টা ১৭০০ – ১৯০০
আজ ভার্সিটি ড্রামা সোসাইটি’র মিটিং আছে। এ ঝামেলায় জড়াতে হয়েছে নীলা’র জন্য। ওর খুব শখ ওরা কোন রোমান্টিক একটা নাটকে অভিনয় করবে। এ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। গত বছর একটা হাসির নাটক হয়েছিল; সব্বাই হেব্বি মজা পেয়েছিল। মিটিং গুলো অধিকাংশ সময় কোন কনক্রীট আউটপুট ছাড়াই শেষ হয়। কেউ কেউ কথা বলে, অন্যরা হয় মোবাইলে চ্যাট করে বা ফেসবুকের স্ট্যাটাসে মত্ত থাকে। আজ সেরকমই চলছিল। নীলা এখন বেশ মুডে আছে – সে প্রস্তাব করলো এবারের থীম হবে রোমান্টিক কমেডি। কেউ একজন বললো- হ্যাঁ, মন্দ হয় না। চলো এবারে একটা ট্রিবিউট করি – আফজাল-সুবর্না’র জুটি কে নিয়ে। আরেকজন বলে উঠলো youtube channel এ Sham Idrees এর জোস কিছু ফান আছে –ওগুলো নিয়ে একটা রিমেক করা যায়। দেখি দেখি – বলে নীলা সহ অনেকেই মোবাইল নিয়ে সার্চে লেগে গেল youtube channel এ Sham Idrees এর ভিডিও। আজ আকাশের অখন্ড ফুসরত। ও শেলফ থেকে একটা বই নিয়ে পাতা উল্টাতে লাগলো।
জাহিদ আছেন বাইরে দাঁড়িয়ে। লোকটি হয়তো কোন গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরী করতেন – ওর সাথে লেগে আছে দেয়ালে সেপ্টে থাকে টিকটিকির মত।

১২তম – ১৩তম ঘন্টা ১৯০০ – ২১০০
ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে ‘সুমি’স হট কেক’ হয়ে বাসায় ফিরতেই মা (শায়লা, ৪২, গৃহিনী) জিজ্ঞেস করলেন। তোর ফোন কই? আমি একবার ফোন করেছিলাম তোর লাঞ্চের সময়; অফ পেলাম। এর পর আফরা (আকাশের বোন, ১২ বছর) অনেক বার কল করে তোকে পায় নাই।
সরি মা – ফোন অফ ছিল।
এই বলে সোজা আফরা’র দরজায় নক করে ওর প্রিয় ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক টা দিয়ে আসলো। এ জন্যই ও বারবার ফোন করছিল।
নিজ রুমে যেয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল আকাশ। এখন নিজেকে একটু অভ্যস্ত মনে হচ্ছে মোবাইল ছাড়া। একটু রিল্যাক্সড ও লাগছে। নো …ফেসবুক স্ট্যাটাস – লাইক – শেয়ার – এস এম এস – ভাইবার – টুইটার – হোয়াটস অ্যাপ- …আহ ! ভালই লাগছে – অবশ্য নীলা’র সাথে কথা না হওয়ায় একা একা লাগছে। আল্লাহ জানে – রেডিও সাইলেন্স এর কারনে বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ এর খেসারত হিসেবে কাল ওকে কত নদী – পাহাড় পেরুতে হবে?
চিন্তায় ছেদ পড়লো। দরজায় আফরা। ভাইয়া, আয় না আজ একটু ক্যারম খেলি। এ অনুরোধ অনেক দিন থেকেই, খেলা হয়ে ওঠে না। হয়তো বা – মোবাইলে মুখ গুজে থাকার কারনে ফ্যামিলি স্পেসে বসাই হয় না আজকাল। আজ তো সে স্বাধীন – হাতে অঢেল সময়।
খানিক বাদে দেখা গেল দুভাই বোন আগ্রহ ভরে ক্যারম বোর্ডে ঠুকাঠুকি করছে। বাবা (আহমেদ সাহেব, ৫০ বছর, প্রাইভেট ব্যাংকে উঁচু পদে চাকরী করেন) ফিরলেন অফিস থেকে। ওদের দেখে – কাছে এসে জিজ্ঞেসে করলেন – কি বোরিক পাওডার আছে নাকি? আফরা’র সপ্রতিভ উত্তর- আছে তো বাবা, আসোনা আমরা সবাই মিলে তাল গাছ – তাল গাছ খেলি। ভাইয়া খালি জিতে যাচ্ছে। কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে তিনিও জমে গেলেন খেলায়। তিনি ভাল খেলতেন এক সময়। হাতের টিপ নষ্ট হয়নি এখনও।

১৪তম ঘন্টা ২১০০ – ২২০০
মা ডিনার পরিবেশন করে সবাইকে ডাকলেন। খাওয়ার ফাঁকে বাবা আকাশকে সকালে খানিকটা এক্সারসাইজ করার কথা বললেন। ক্যাডেট কলেজ থেকে পাশ করার পর ফিগার মেইন্টেইন নিয়ে ওর অনাগ্রহ ওনাকে যথেষ্ঠ পীড়া দেয়। মা ছেলেকে উদ্ধার করেন – রাত জেগে পড়াশোনা করে ছেলেটা; সকালে ও তো নাস্তা না করেই দৌড়ায় ক্লাসে। তোমার মর্ণিং ওয়াক তুমি কর, ওকে কেন টানাটানি করো? বাদ দাও তো। বাবা দমে যান, ছেলের রেজাল্ট ভাল – পড়াশোনার কথা বললে আর কথা চলে না। মা, বাবাকে আরেকটু তরকারী তুলে দিন। আকাশ মনে মনে ভাবে – পড়ার থেকে মোবাইলে অ্যাপস আর ফেসবুক ঘাটাঘাটি করে ঘুমাতে দেরী হয়ে যায় ওর। ফলে সকালে উঠতে দেরী। তাই নো নাস্তা – উঠেই দে দৌড়।

১৫তম ঘন্টা ২২০০ – ২৩০০
ডিনার শেষে কিছুক্ষন টিভি চ্যানেল ঘুরিয়ে (এত চ্যানেল ! একবার সব ঘুরে আসতেও অনেক সময় লেগে যায়) ওর ঘরে চলে এলো। মনে পড়লো নীলা’র কথা। রেগে-মেগে কেঁদে-টেদে রাতে না খেয়েই হয়তো মুখ ভার করে বসে আছে। ও ঠিক করলো – নীলাকে একটি রোমান্টিক চিঠি লেখা যাক। কাল হাতে দিয়ে দেখা যাক উদ্ধার পাওয়া যায় কি না?

আমার নীলিমা,

কেমন আছো? কোনদিন তোমায় চিঠি লিখিনাই। আজ তোমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য আমার এই রোমান্টিক প্রচেষ্টা।
জানো, মোবাইল – এস এম এস – ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের দাপটে আজকাল আমাদের কথাবার্তা গুলোও বড্ড ডিজিটাল হয়ে উঠেছে। গুছিয়ে তোমাকে সত্যি সত্যি রোমান্টিক চিঠি লেখা আমার কম্ম নয়। আজ তাই তোমায় কিছু লিখতে বসে সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। খেই হারিয়ে ফেলছি আমি। অনুভূতির লজিকেরা খুব বিব্রত দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি আসলেই কেমন যেন। তুমি খুব ঠিক চেনো আমাকে। তাই তো কেমন অবলীলায় বলে দাও- ‘এত্ত সিরিয়াস কেন তুমি ! খালি পড়াশোনা করলেই হয় না; লাইফে একটু রোমান্টিকও হতে হয়’।

হুম্‌ম। ভালবাসার গভীরতায় তুমি বরাবর অনেক এগিয়ে। আমি মুখ ফুটে ভালবাসি বলিনি। আর ভালবাসি বলেও যতটুকু বোঝাতে পারব – তার থেকে অনেক বেশী তুমি উজার করে দাও আমায় তোমার না বলা ভাষায়; তোমার দু চোখের তারায়, তোমার দুনির্বার শাসন আর বিরামহীন অনুযোগে … বলছি এ ভাবে – কিন্তু তোমার টক-ঝাল-মিষ্টি… সব কিছুই আমার ভীষন ভাল লাগে; আমি সত্যি ভাগ্যবান।
আজ সারাদিন কোন টেক্সট না করে নিজের সাথে যুদ্ধ করলাম – হেরে গেলাম। জানো , বেশ বুঝতে পারছি -তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। আজ সারারাত তোমার হয়তো মনটা খুব খারাপ থাকবে। মেজাজ এতটাই খারাপ হবে যে কাল সকালে আমাকে ভার্সিটিতে দেখে লংকা কান্ড বাঁধিয়ে দিতে পারো।

আমি নিজেও ভেবে দেখলাম, মাঝে মাঝে দূরে থেকে আরো কাছে আসা যায়। কোথায় জানি পড়েছিলাম – “তোমায় আরো কাছে পাবো বলেই, আমি তাই হারাই বারে বারে”। আমি ঠিকমত প্রকাশ করতে পারি না হয়তো।
নীলা, বিশ্বাস করো – মাঝে মধ্যে আমারো সুনীল হতে ইচ্ছে হয়। মনে হয় বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে নিয়ে আসি ১০৯ নম্বর নীলপদ্ম; দূরন্ত ষাঁড় এর পানে ছুটে যাই লাল কাপড় হাতে। তোমার খুশীর জন্য ট্রয়ের মত আরো হাজার নগরী ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করে অবলীলায় … তোমায় এসব বলছি দেখে তুমি হাসছো নাকি? ।
ইন ফ্যাক্ট, ম্যাডাম- সবচেয়ে হিট ডায়লগ তো এখনও দেই নি – কলেজে পড়েছিলাম –‘পরানের গহীন ভিতর’। একটা কবিতায় কবি লিখেছিলেন- “মৃত্যু এসে ফিরে যাবে, এত প্রেম দিও না আমায়।“

… কি? একটু বেশি হয়ে গেল নাকি? আজ এখানেই শেষ করছি।

– ইতি
ভীষন সিরিয়াস টাইপের বোরিং একটা লোক – ‘আকাশ’।

পুনশ্চঃ রাগ কমলো? না কমলে – কি আর করা ? ক্যাফেতে দেখা হবে – ইগলু লাঞ্চ এ।

১৬তম – ২২তম ঘন্টা ২৩০০ – ০৬০০
চিঠি লেখা হয়ে গেলে আকাশের মনে প্রশান্তি চলে এলো। ‘রেডিও সাইলেন্স’এর ঠ্যালায় বেশ কাব্যিক একটা চিঠি লেখা হয়েছে। নীলা পছন্দ না করে পারবেই না। খানিক ক্ষন অ্যাসাইনমেন্ট এর কাজ করে আকাশ দেখলো যে আর কোন কাজ নেই; তাহলে তো এখনই ঘুমিয়ে পড়া যায়।

২৩তম ঘন্টা ০৬০০ – ০৭০০
আগে আগে ঘুমানোর কারনেই হয়তো আজ খুব সকালেই ঘুম ভাংলো আকাশের। বালিশে পাশে হাতড়ে মোবাইল না পেতেই মনে পড়লো যন্ত্রটি সাথে নেই। ডাইনিং এ বসে বাবা কুরান শরীফ পড়ছেন। প্রতিদিনই পড়েন – আজ খুব ভেঙ্গেছে বলে ও শুনতে পাচ্ছে। ও আরো কিছুক্ষন শুয়ে থাকে। এরপর বাবা যখন মর্নিং ওয়াক এর জন্য বের হচ্ছেন – ও একটা স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে নেমে গেল বাবার সাথে। বাবা দেখে হাসলেন। আকাশের উত্তর – প্রথম দিন- আজ খালি যেয়ে বেঞ্চ পর্যন্ত; নো দৌড়াদৌড়ি। বাবা সায় জানালেন। চেহারায় প্রশান্তির ছাপ স্পষ্ট।

২৪তম – ২৫তম ঘন্টা ০৭০০ – ০৯০০
বাসায় ফিরে রেডি হয়ে আজ বাবার সাথে নাস্তা করলো। মা অনেক খুশি হলেন। ছেলেকে অনেক দিন বাদে গরম গরম পরোটা দিয়ে ডিম পোচ (কুসুম নরম- আকাশের পছন্দ) আর আলুভাজি দিয়ে নাস্তা করালেন। আফরা ওঠেনি – ওর শরীরটা ভাল লাগছে না। আজ স্কুলেও যাবে না মনে হয় মেয়েটা।
বাবা অফিসে যাওয়ার সময় আকাশকে খানিকটা আগিয়ে দিলেন। আজ ও হাত ঘড়ি পড়েছে।
ভার্সিটিতে পা দিয়েই আকাশ নীলার ফায়ারিং জোন এ পড়ে গেল। নতুন গার্ল ফ্রেন্ড এর সাথে সারারাত চ্যাট করায় ওর সাথে কথা বলার সময় পায়নি – ইত্যাদি ইত্যাদি। কথা বেশি বাড়তে না দিয়ে আকাশ দুহাতে ওর মুখটা শক্ত করে ধরে চোখে চোখ রেখে কপালে আলতো করে চুমু দেয় । চকিতেই সব ঠান্ডা, বরফ গলে নদী। তারপর ব্যাগ থেকে চিঠিটা বের করে নীলা’র হাতে দিয়ে বললো – সব লেখা আছে এখানে ম্যাডাম।
আজ নীলার চোখে রাজ্যের কৌতুহল – আবেগের উচ্ছ্বাসে ওর ফর্সা মুখে রক্তিম আভা। ওর হাত ধরে আকাশ এগিয়ে যায় ক্লাসের দিকে।
লিফটের কাছে যেতেই দেখা গেলো জাহিদ সাহেবকে।

(২ আসছে…)

৬ টি মন্তব্য : “রেডিও সাইলেন্স – ১”

  1. অনেকদিন পর কিছু পড়লাম। বিস্মিত হইনি। এই অসম্ভব প্রতিভাবান মানুষটি আমার মত অনেকেরই খুব চেনা। এতদিন পরে হলেও তার লেখা আবার প্রাণ পেতে শুরু করেছে দেখে অনেক ভালো লাগছে। অনেক অনেক শুভকামনা বন্ধু......

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কামরুল হাসান

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।