সবুজ মানুষদের গপ্পো


সবুজ মানুষের ইশারা পেতেই চিহ্নিত স্থানে
মাটি খুঁড়ে উত্তোলিত হলো গুপ্তধনের সিন্দুক।
ডালা খুলতেই ফুস করে উড়াল দিল
এক ঝাঁক রঙীন প্রজাপতি !
সময়ের হাতে কিডন্যাপ হয়ে যাওয়া
কিছু সুপ্ত ভাব ও ভাবনা…

চুপিচুপি উড়ে যায় অভিসারে
চঞ্চলপ্রাণ সকল; এক ঝাপটায় উধাও
ওদের গোপন ডেরায় -সবুজের রাজত্বে।
দেবদারু গাছেরা সীমানায় সারিবেধে;
পাতার প্রাচীর বিচ্ছেদকারী সূর্যকিরন ।
সেখানে ঘাসরঙা শান্ত কয়েকটি ফরিঙ
সতেজ ঘাসের ডগায় বসা।
শেষ প্রান্তে রয়েছে পরিপাটি প্যারেড গ্রাউন্ড।
বহু বার ছুঁয়ে আসা ফুলের কেরী আর পুডিয়াম;
এক ঝাঁক সবুজ হৃদয়ে প্রতিশ্রুতির প্রতীক
স্বর্নাক্ষরে লেখা ‘৩৫’।
যা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিল ওরা
প্রতিদানবিমুখ অমর বন্ধুত্বের।
সিন্দুকে সবার নীচে পাওয়া গেল রুমালে মোড়া
সাদা মলাটের লাল সবুজ ফিতা লাগানো
একটা জীর্ণ ডায়েরী।

তফাতে দাঁড়ানো মাঝ বয়েসী সবুজ মানুষ
তৎক্ষনাত এগিয়ে এলেন স্পটের কাছে ।
বুকে ঝুলানো চশমাটা চোখে লাগিয়ে-
হাতে তুলে নিলেন সদ্য উদ্ধারকৃত ডায়েরীটি
জীর্ণ মলাটের উপর তার কম্পমান হাতটি বুলালেন।
সবুজ মানুষের চেহারায় অপার প্রশান্তির ছাপ।
তিনি সকলকে লাঞ্চ ব্রেকের অনুমতি দিয়ে ফিরে এলেন নিজ তাবুতে।
একান্ত নিরালায় সেই সবুজ মানুষ ~
তার ক্যাম্পখাটে বসে ডায়েরীটি খুললেন।
ধীরে ধীরে পাতা উল্টিয়ে চোখ বুলালেন প্রতি পাতায়;
প্রতিটি শব্দ যেন জীবন্ত হয়ে ফিরিয়ে দিল তাকে তার কৈশোর।

মানস পটে ভেসে ওঠে…
মাইল টেস্টে পিছন থেকে নিঃস্বার্থ সহযোগিতার হাত;
ক্লাসের ব্রেকে এক সিগারেটে পালাক্রমে টান,
কিংবা মাঠে বসে বিরতিতে গোল-গুল্লা আর পাকুড়া।
শুক্রবারের সিটি পাসে জিইসি মোড় প্রজেক্টে যত খুনসুটি,
একে অন্যের সুখ দুখের ভাগাভাগি কারনে বা অকারনে।
আর তিলে তিলে কষ্টি পাথরে আর আগুনে পুড়ে খাঁটি হওয়া;
চকিতেই সবুজ মানুষ হারিয়ে ফেলেন ক্যালেন্ডারে সময়ের হিসাব;
চোখ বুজে তিনি চকিতেই দেখতে পান তার প্রাণপ্রিয় বন্ধুদের।

আহা! সময়টা কেমন যাদুকরের হাত সাফাইয়ে
উধাও হয়ে গেল নিমিষেই চোখের সামনে থেকে;
কেউই যেন ঠিক ঠাহর করতে পারে না।
আজ চশমার লেন্সে গলে সবুজ মানুষ চেয়ে থাকেন,
আয়নায় ফুটে ওঠে তার চেহারা –
চুলে পাক খাওয়া অসহায় প্রতিবিম্বটা।
পরিহাস করে বলে সে – বড্ড বুড়িয়ে যাচ্ছো
তুমি ও তোমরা
পরিণতিটুকু মেনে নিয়ে সেই সবুজ মানুষ
খুঁজে বেড়ান তার বন্ধুদের সব প্রিয় মুখ।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন হাহাকারে-
তার উদ্ভাসিত দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে ওঠে,
ক’ফোটা অশ্রু টপ টপ করে বেয়ে পড়ে
বয়সের ভারে অঙ্কিত বলিরেখা বরাবর।।
……………………………………………………………………
পরিশিষ্টঃ
গপ্পোটি ‘৮৮ ব্যাচের সকল ক্যাডেট এবং ৩৫ লং এর সকল কোর্সমেটদের কে উৎসর্গ করলাম।
আমার নিঃস্বার্থ বন্ধুরা – যারা আমাকে অবিরাম প্রশ্রয়মাখা
ভালবাসায় সিক্ত করে রাখে।
নিজের আত্মবিশ্বাস যখন লোপ পায় কিংবা আশা ছেড়ে দেয় মন;
ওরা তখন এসে পাশে দাঁড়ায়। কাঁধে রাখে হাত।
অভয় দেয় অকৃত্রিম -অবিচল।
দেখা হোক বা না হোক – কথা হোক না হোক ~
জানি; ওরা আছে – ওরা ছিল – ওরা থাকবে।
ভাল থাকিস সব্বাই।।

:hug:

৯৫৮ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “সবুজ মানুষদের গপ্পো”

মওন্তব্য করুন : ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।