শীত উপেক্ষা করিয়া বৃষ্টি বিষয়ক পুরাতন একটি খোশ মেজাজের গপ্পো।

    বৃষ্টি এবং টেলিপ্যাথী !

অফিস থেকে বাড়ী ফেরার জন্য রাস্তায় নামতেই অনাহুতের মত ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হলো। যাকে বলা যায় একেবারে কুকুর বিড়াল বৃষ্টি । 😐

আমি সাথে সাথে উল্টা ঘুরলাম। এভাবে তো আর যাওয়া যাবেনা।
ফিরে গেলাম আবার অফিসে। কেবিনে যেয়ে বসলাম আবার।
কি করবো ভাবছি। :-/

উঠে যেয়ে কফি মেশিনটার কাছে যেয়ে এক গ্লাস কফি নিলাম। চুমুক দিয়েই বুঝলাম, আজ আজাদ মিয়া মিক্সিং করেছে। একেবারে নিখুঁত পরিমাপ তার। চমৎকার কফিতে চুমুক দিতে দিতে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালাম।
বৃষ্টির ভাব বুঝার জন্য ভার্টিকাল ব্লাইন্ড গুলো সরালাম।
ওরে বাব্বা। দেখলাম, এখনো বারিধারা – সগৌরবে চলিতেছে।

কফির প্রভাব কিনা জানি না, হঠাৎ মনে হলো -আজ ভিজে ভিজেই বাড়ী ফিরবো। ব্যস্ততার যাতাকলে যে কৈশোর কোনঠাসা হয়ে থাকে আজ বুঝি চকিতে সে চঞ্চল হয়ে ওঠে। :dreamy:

মুঠোফোন আর দরকারী সব কিছু তালা বন্ধ করে সম্পূর্ণ ঝরঝরে হয়ে নেমে পড়লাম রাস্তায়। খাঁচা থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া পাখি যেমন অসীম আকাশ উড়াল দেয় – আমি যেন ঠিক সেভাবেই মিশে গেলাম হার না মানা জনস্রোতে।

দেখলাম অনেকেই চলছেন ঝমঝম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। কেউ কেউ ছাতা হাতে আবার কেউ বা বর্ষাতি জড়িয়ে। রিক্সাওয়ালারা বেশ কায়দা করে পলিথিন পেঁচিয়ে নিয়েছে । আর যারা বসে আছেন তারাও রং বেরং এর পলিথিন এ শরীর ঢাকতে ব্যস্ত। গাড়ীগুলোতে বড় বড় মানুষেরা বুক ফুলিয়ে ছুটে চলছে। রাস্তায় জমে থাকা পানি ছিটিয়ে তারা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে চারপাশ।

যাত্রী ছাউনীতে তিল পরিমান জায়গা নেই। সব বিভেদ ভুলে সব্বাই যেন মিলেমিশে এক হয়ে আছে। কয়েকটা ছন্নছাড়া টোকাই মহা আনন্দে গোসল করছে ভিজে ভিজে।

আমাদের ড্রেইনেজ সিস্টেম এর যে অবস্থা তাতে খানিক বাদেই দেখলাম রাস্তায় পানি জমে গেল। পানি কেটে কেটে মানুষ -রিক্সা-গাড়ী তরতর করে এগিয়ে যেতে থাকে। সব কিছুকেই উভচর বলে মনে হচ্ছে। আর আমি বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা উপভোগ করতে করতে বাড়ীর পথে ফিরে যাচ্ছি।

স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো আমি আর নীলিমা রিক্সায় একদিন ঝুমা বৃষ্টিতে পুরো ঢাকা শহর ঘুরেছিলাম।অদ্ভুত ভাল লাগায় মনটা নেচে উঠলো। আর তার সাথে এও মনে এলো যে দুজনই কয়েকদিন জ্বরে ভুগেছিলাম। ;;)
আহ! মাঝে মাঝে জ্বরের স্মৃতিটাও খুব প্রিয় প্রসংগ হয়ে ওঠে…।

মানসপটে সযত্নে লালিত এইসব সুখানুভূতি নাড়াচাড়া করতে করতে এতখানি পথ অনায়াসে বীরের মত পেরিয়ে বাড়ি পৌঁছে গেলাম।
কলিং বেল বাজাতেই মা দরজা খুলে কাকভেজা আমাকে দেখেই আৎকে উঠলেন।

তাড়াতাড়ি করে তোয়ালে এনে দিয়ে বললেন, ‘তোর পাগলামি টা এখন ও গেল না রে আকাশ ! আবার তো জ্বর বাঁধাবি। ’
আমি একটু মুচকি হাসলাম।

আমি ভেজা শার্টটা খুলে রেখে বারান্দায় বসলাম। মা রান্না ঘর থেকে সরিষার তেল এনে আমার মাথায় ঘষে দিলেন। মা’র হাতের ছোঁয়ায় আমার সমস্ত কৈশোর যেন হুরমুর করে আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। আমি স্নিগ্ধ আবেশে চোখ বুজে রইলাম।

মা বললেন, ‘হ্যাঁ রে তোর মোবাইল কই? নীলিমা ফোন করেছিল। বললো তোকে পাচ্ছে না। তারপর আমিও ফোন করলাম তোকে। পেলাম না যে।‘
আমি বললাম – মা সব্বার থেকে ছুটি নিয়ে আমি আজ বৃষ্টির সাথে খেলতে খেলতে বাড়ী এলাম। দরকারী সব কিছু অফিসে রেখে এসেছি।

জানো মা, আমারও না ফিরবার সময় নীলিমার কথা মনে হচ্ছিল। তার মানে টেলিপ্যাথী বলে একটা বিষয় সত্যি তাহলে আছে। সাংঘাতিক ব্যাপার তো !
মা বললেন- অনেক লেকচার হয়েছে। যা এখন গোসল করে আয়। আমি চা দিচ্ছি।
মা বেরিয়ে গেলে আমি গোসলে ঢুকলাম।
আজ অনেকদিন পর আমি গলা ছেড়ে গান গাইলাম।

এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকে না তো মন
কাছে যাব – কবে পাব
ওগো তোমার নিমন্ত্রন।

আমি জানি আমার কথা আর সুরে হাল্কা এদিক সেদিক হয়ে যায়। এ নিয়ে নীলিমা হাসাহাসি করে।
তথাপি আমি হাল ছাড়ছি না-

শুধু ঝরে ঝর ঝর
আজি বারি সারাদিন
আজি যেন ক্ষনে ক্ষনে
হলো মন যে উদাসীন।

গোসল শেষে বারান্দায় এসে দেখি -বৃষ্টি থেমে গেছে।
ঝকঝকে চারিদিক। মনটা ফুরফুরে হয়ে ঊঠলো।
মা চা পাঠিয়ে দিয়েছেন। মা’র বৃষ্টি উপলক্ষে সুপার স্পেশাল চা। ঘন দুধ দিয়ে কড়া চা। ১০০ তে ১০০ টাইপ।

চা’র কাপ হাতে নিয়েই আমি নীলিমাকে ফোন করলাম।
ও ফোন ধরতেই কথা না বলে আমি গেয়ে উঠলাম-

আজি আমি ক্ষনে ক্ষনে
কি যে ভাবি আনমনে
হায় হায়রে দিন যায়রে
কবে হবে সে মিলন
কাছে যাব – কবে পাব
ওগো তোমার নিমন্ত্রন।

ও হেসে দিল। বললো আমার এখানে এ গানটাই বাজছে অনেকক্ষন।
এবার আমিও হেসে দিলাম।
বললাম, জী ম্যাডাম। বোঝেন এখন। বিজ্ঞানীরা তপস্যা করে এর নামই দিয়েছেন – ‘টেলিপ্যাথী’ !

:hatsoff:

৪০ টি মন্তব্য : “শীত উপেক্ষা করিয়া বৃষ্টি বিষয়ক পুরাতন একটি খোশ মেজাজের গপ্পো।”

  1. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    ভাই,
    আপনি আসলেই বস :boss: ...কেন যে আপনি নজরুলিয়ান হইলেন না 😀 ?

    অভয় দেন তো, একটা কথা জিজ্ঞেস করি...
    আকাশ ছদ্মনামে আপনি কি আসলে নিজের কথাই লেখেন :-/ ?


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
    • ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

      হুম্‌ম সাকেব,
      ঠিকই বলছো।
      আমি কেন সবুজ হইলাম না।
      বোধকরি সে কারনেই পরবর্তীতে আমি জলপাই হইলাম। :-/

      আমার ছোট ভাই মামুন অবশ্য নজ্ররুলিয়ান হতে পেরেছিল।

      আর আকাশ এর কথা পড়ে তেমন ভাবনার অবকাশ নেই।
      কেননা - অমলেরা রোদ্দুর হতে চাইলেও তারা হয়ে ওঠেনা কখনোই।

      ভাল থেকো ভাইয়া।


      সৈয়দ সাফী

      জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    এতো রাইতে অফিসে বইস্যা উপজেলা নির্বাচন কাভার করতাছি। আর মাঝে-মইধ্যে সিসিবিতে ঢুইক্যা ফ্রেশ হইতাছি। তুমি তো পুরা ভিজাইয়া দিলা। চরম!! :dreamy: :dreamy: :dreamy:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    আর আকাশ এর কথা পড়ে তেমন ভাবনার অবকাশ নেই।
    কেননা - অমলেরা রোদ্দুর হতে চাইলেও তারা হয়ে ওঠেনা কখনোই।

    বস্ ডাউট টাতো রাইখাই দিলেন 😀 😀
    যাহোক, চমৎকার মিষ্টি ভালবাসার গল্পটা দারুন লাগলো :clap: :clap:
    প্রেম ময় এক মধুর বৃষ্টিতে পুরা সিক্ত হয়ে গেলাম বস্ :hatsoff: :hatsoff: :thumbup:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  4. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    বললাম, জী ম্যাডাম। বোঝেন এখন। বিজ্ঞানীরা তপস্যা করে এর নামই দিয়েছেন - ‘টেলিপ্যাথী’ !

    এই ব্যাপারটার বহুত প্রয়োজন আছিল এইখানে 😀 😛 😀 😀 ।

    দূর্দান্ত হইছে বস :boss: :boss: ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  5. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    দুর্দান্ত মিষ্টি সর্বোপরি মন খারাপ করে দেওয়া পোস্ট। মন খারাপ কারণ হইল কেন যেন আমার ও এখন এইরকম কুকুর বিড়াল বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করতেছে। কোন স্মৃতি নাই অবশ্য যে মনে পড়বে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।