একটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফি(!) প্রয়াস – ‘গুপ্ত অভিসার’

গুপ্ত অভিসার

ভূ-তত্ববিদদের ইশারা পেতেই – চিহ্নিত স্থানে
মাটি খুঁড়ে উত্তোলিত হলো গুপ্তধনের সিন্দুক।
ডালা খুলতেই ফুস করে উড়াল দিল
দুটি বন্দী প্রজাপতি !
সময়ের হাতে কিডন্যাপ হয়ে যাওয়া
কিছু সুপ্ত রঙ্গীন ভাবনা…

চুপিচুপি অভিসারে দুই বন্ধু পা বাড়ায়
নিষিদ্ধ প্রাঙ্গনে অজানার হাতছানিতে।
দুপুরের পড়াশোনা গলধঃকরন করে
মা’র প্রশ্রয় মাখা অনুমতি মিলতেই
চঞ্চলপ্রাণ দুজনে একছুটে হয় উধাও।

ওদের গোপন ডেরায় সবুজের রাজত্ব।
দেবদারু গাছেরা সীমানায় সারিবেধে;
পাতার প্রাচীর বিচ্ছেদকারী সূর্যকিরন ।
ঘাসরঙা শান্ত কয়েকটি ফরিঙ
সতেজ ঘাসের ডগায় বসা।
শ্বেতশুভ্র ছোট্ট একটা খরগোশ
বাহারী গুল্মে কুটকুটরত।
বহু আব্দারের পর হস্তগত রিং চুম্বক,
প্রতিশ্রুতির প্রতীক কালচে প্রস্তর খন্ড-
যা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিল ওরা দুজন
প্রতিদানবিমুখ অমর বন্ধুত্বের।
সবার নীচে পাওয়া গেল রুমালে মোড়া
লাল মলাটের একখানা জীর্ণ নোটবুক।

তফাতে দাঁড়ানো প্রবীন এক ভূ-তত্ববিদ
তৎক্ষনাত এগিয়ে এলেন স্পটের কাছে ।
বুকে ঝুলানো মোটা লেন্সের চশমাটা চোখে লাগিয়ে-
হাতে তুলে নিলেন সদ্য উদ্ধারকৃত লাল নোটবুকটি;
জীর্ণ মলাটের উপর তার কম্পমান হাতটি বুলালেন।
প্রবীন ভূ-তত্ববিদের চেহারায় অপার প্রশান্তির ছাপ।
তিনি সকলকে লাঞ্চ ব্রেকের অনুমতি দিয়ে ফিরে এলেন নিজ তাবুতে।

একান্ত নিরালায় প্রবীন ভূ-তত্ববিদ~
তার ক্যাম্পখাটে বসে নোটবুকটি খুললেন।
ধীরে ধীরে পাতা উল্টিয়ে চোখ বুলালেন প্রতি পাতায়;
প্রতিটি শব্দ যেন জীবন্ত হয়ে ফিরিয়ে দিল তাকে তার কিশোর।
চোখ বুজে তিনি চকিতেই দেখতে পান তার প্রাণপ্রিয় বন্ধুটিকে।
প্রবীন ভূ-তত্ববিদের দীর্ঘশ্বাস ফেললেন হাহাকারে-
তার উদ্ভাসিত দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে ওঠে,
ক’ফোটা অশ্রু টপ টপ করে বেয়ে পড়ে
বয়সের ভারে অঙ্কিত বলিরেখা বরাবর।

😐

২০ টি মন্তব্য : “একটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফি(!) প্রয়াস – ‘গুপ্ত অভিসার’”

  1. রহমান (৯২-৯৮)
    তিনি সকলকে লাঞ্চ ব্রেকের অনুমতি দিয়ে ফিরে এলেন নিজ তাবুতে

    তার ক্যাম্পখাটে বসে নোটবুকটি খুললেন।

    বস্‌, ফৌজি ফৌজি গন্ধ পাইতেছি। কিন্তু কাহিনী ধরতে পারতেছিনা :no: । একটু সহজ কইরা দেন 🙁

    জবাব দিন
    • ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

      রহমান,

      নারে ভাই - এটা ফৌজি টাইপ না।
      ক'টা শব্দ এসেছে হয়তো।
      মূলতঃ এটা একটা স্মৃতিচারনমূলক লেখা।

      দৃশ্যপটে এসেছে একটি এক্সপ্লোরেশন অ্যাডভেঞ্চার।
      সে কারনেই শিরোনামে এসেছে 'ন্যাট জিও' প্রয়াস।
      লেখক তার ফেলে আসা স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।
      সেই উদ্দেশ্যেই এই ক্যাম্পিং।

      আশাকরি কিছুটা হলেও বোধগম্য করতে পারলাম।
      আর বাকিটুকুর ব্যররথতার দায়ভার স্বীকার করে নিলাম।
      🙂

      ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।


      সৈয়দ সাফী

      জবাব দিন
  2. তানভীর (৯৪-০০)
    প্রতিশ্রুতির প্রতীক কালচে প্রস্তর খন্ড-
    যা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিল ওরা দুজন
    প্রতিদানবিমুখ অমর বন্ধুত্বের।

    আমরা তো কলেজে কোন প্রতিজ্ঞা ছাড়াই প্রতিদানবিমুখ অমর বন্ধুত্ত্ব পেয়ে যাই।

    কবিতা ভালো লেগেছে ভাইয়া। :thumbup:

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    বস্, এতো দেখি পুরা ডিফরেন্ট প্রফেশন আর পার্সপেক্টিভ এর উপর সেই চিরন্তন সম্পর্কটা নিয়া লেখা চমৎকার একটা কবিতা। :boss: :boss:
    কবিতা তেমোন পড়িনি কখনো। বুঝিনি বা বুঝার চেষ্টা করিনি হয়তো। কিন্তু সিসিবিতে চমৎকার সব লেখকের লেখগুলো বুঝি আর না বুঝি পড়ার চেষ্টা করতে করতেই হয়তো ইদানিং কবিতায় মজে যাওয়া শুরু করেছি :clap: :clap:
    বস্ দারুন কবিতাটার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ :salute:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুনায়েদ কবীর(৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।