যে সীমান্তে শুধুই বসন্ত ! (৩)

গেল বছরে আজকের দিনে একটি খোলা চিঠি
…………………………………………………………

আমার নীলিমা,

অনেক দিন তোমায় চিঠি লিখিনা।
মোবাইল – এস এম এস -ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারের দাপটে আজকাল আমাদের কথাবার্তা গুলোও বড্ড ডিজিটাল হয়ে উঠেছে।

গুছিয়ে ফরম্যাল চিঠি লেখা আমার কম্ম নয়। তোমায় কিছু লিখতে গেলে সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যায়।
খেই হারিয়ে ফেলি আমি। অনুভূতির লজিকেরা খুব বিব্রত দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে থাকে।
আমি আসলেই কেমন যেন। তুমি খুব ঠিক চেনো আমাকে। তাই তো কেমন অবলীলায় বলে দাও- এত্ত ছেলেমানুষ তুমি !
হুম্‌ম। ভালবাসার গভীরতায় তুমি বরাবর অনেক এগিয়ে। আমি মুখ ফুটে ভালবাসি ভালবাসি বলেও যতটুকু বোঝাতে পারি – তার থেকে অনেক বেশী তুমি উজার করে দাও আমায় তোমার না বলা ভাষায়; তোমার দু চোখের তারায়।
আমি সত্যি ভাগ্যবান।

আজ ক’মাস হলো আমি অফিসের কাজে বাইরে আছি। জীবনের ঘোর দৌড়ে জীবিকা জীবনকে হারিয়ে দেয় অহরহ। অতলান্তিকের পাড়ে তাইতো আমার এই তপস্যা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আনন্দ তোমায় দেব বলেই আমার এই পথ চলা। দূরের ঐ সবুজ পাহাড় পেরিয়ে যাওয়া। ধুলিকণা মাড়িয়ে সোনার হরিন খুঁজে ফেরা।

এত দূরে থেকেও আমি বেশ বুঝতে পারি তোমার বিনিদ্র প্রতীক্ষা কতখানি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। প্রতিটি সকাল আসে আবার এক রাশ ব্যস্ততা নিয়ে। নিজের পড়ালেখা-বাবা- মা’কে দেখা- ছোট ভাইয়ের আবদার- সংসার। তোমায় যে উৎসাহ দেব সে যোগ্য ভাষা আমার নেই। তোমরা – অর্থাৎ এই নারী জাতির হৃদয় সৃষ্টিকর্তা কিরূপে বুনন করেছেন কে জানে! জগতের প্রতিটি দায়িত্বের প্রতি এত মমতা তোমরা কি করে লালন করো- ভাবতে চোখে জ্বালা ধরে। নানী-দাদী কে দেখার পর কাছ থেকে দেখেছি মা’কে। আর এখন দেখি তোমাকে। হায়। আমার দীর্ঘশ্বাস এ অতখানি দরদ নেই যা তোমাদের আত্মত্যাগের উপযুক্ত হতে পারে।
আর আমরা তৃষিতের কাকের মত তোমাদের মমতাপিয়াসী হয়ে থাকি। আমি ঠিকমত প্রকাশ করতে পারি না হয়তো। বিশ্বাস করো -ইচ্ছে হয় বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে নিয়ে আসি ১০৯ নম্বর নীলপদ্ম। দূরন্ত ষাঁড় এর পানে ছুটে যাই লাল কাপড় হাতে। তোমার খুশীর জন্য ট্রয়ের মত আরো হাজার নগরী ধ্বংস করে দেই অবলীলায়। মনে মনে এমনই বীরপুরুষ আমি। তোমায় এসব বললে তুমি হেসে ফেলো। বারংবার ছেলেমানুষ বলে সান্তনা দাও আমায় ।

………………………………………………………………..
আবার লিখতে বসলাম।
ঘড়িতে টিকটিক করে যখন ঠিক আজকের দিনটি এলো; অমনি বেজে উঠেছে আমার মুঠোফোন।
আমি না দেখেই বলতে পারতাম এ তুমি।
ফোন কানে ধরতেই – তুমি বলে উঠলে “শুভ জন্মদিন আকাশ।“
অমনি রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে যেন বেজে উঠলো হাজার রাগিনী।
অজস্র নক্ষত্রেরা মিটমিট করে তোমার শুভেচ্ছা পৌঁছে দিলো আমায়।
আমি চোখ বুজে তোমায় দেখে নিলাম একটু। মনে মনে হিসেব করে নিই আর ক’দিন বাদে ফিরে যাবো তোমার কাছে।
তারপর আমার প্রিয় কবির, দুটি লাইন তোমায় শুনালাম-
নীলিমা,
“মৃত্যু এসে ফিরে যাবে।
এত প্রেম দিও না আমায়।“

আজ এখানেই শেষ করছি। আমি যতই বলি না কেন- অত ভাবনা করো না তো। আমি জানি, আমায় নিয়ে তুমি সারাদিনই ভাবো। তুমি বলো এতেই তোমার তৃপ্তি। না চাইতেই যে ভালবাসা আমি পেয়েছি – তার কোন নাম দিতে পারি না আমি। বিধাতার কাছে প্রার্থণা করি- আজীবন যেন তোমায় এইভাবেই পাশে পাই।

– ইতি
তোমার বড্ড ছেলেমানুষ- ‘আকাশ’।
২৫ শে ডিসেম্বর ২০০৮

২,১৩৯ বার দেখা হয়েছে

৩৬ টি মন্তব্য : “যে সীমান্তে শুধুই বসন্ত ! (৩)”

মওন্তব্য করুন : তানভীর (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।