দাদু ভাইয়ের গপ্পো

দাদু ভাই… দাদু ভাই সুর তুলে ছুটে আসে
সাত বছর বয়েসী দাদু ভাইয়ের চোখের মনি।
আহলাদী কন্ঠে সবুজ শুধায় –
আজ কোন গল্প বলবে দাদু ভাই?

ডায়েরী লেখা থামিয়ে চোখ তুলে তাকান বৃদ্ধ।
একটু মুচকি হেসে উত্তর দেন-
কেন দাদা ভাই; ঐ যে সেবার যুদ্ধে গেলাম…সেই টা বলি?
এদিক-ওদিক মাথা নাড়ে সবুজ।
সেতো বলেছো দাদু ভাই।

হুম্‌ম, তাহলে দেশ স্বাধীন হলো।
স্বপ্ন পূরনের দিন এলো… ঐটা ?
উফ্‌ফ দাদু ভাই- সেইটাও তো বলেছো।

তবে শুনো দাদু ভাই…এক সোনার দেশে কিভাবে
হাত ঘুরে ঘুরে সেই সোনালী স্বপ্ন গুলো মরে গেল !
তারপর একসময় আবার মেঘ ঠেলে উঁকি মারে সুর্য ।
নতুনেরা পুরাতনের সাথে একসুরে গেয়ে ওঠে –
বিলম্বিত ন্যায্য বিচারের আহবান – মানবতার জয়গান।

সবুজ এই বার আর কোন উত্তর দেয়না।
সোনালী স্বপ্নগুলো মরে যাওয়ার গল্প
সে দাদুর মুখে আগে শোনেনি।
কিংবা অশ্রু গুলো আগুন হওয়ার উত্তাপ
সে ঠিক ঠাহর করতে পারে না।

দাদু বলে যান ক্লান্ত স্বরে;
একটুতেই হাঁপিয়ে উঠেন আজকাল।
তাই থেমে থেমে বলে যান …
সেবার; কি নেশায় আপামর জনতা ঝাপিয়ে পড়েছিল-
নিজেদের পাওনাটুকু পিশাচদের কাছে থেকে বুঝে নিতে;
একটি বাংলাদেশ জন্ম হবে বলে।
কালক্রমে চলেছে তখনকার মানুষরূপী জানোয়ারদের
মুখোশ পাল্টানোর আদিখ্যেতা।
সবাই বেমালুম হজম করে আছে সে সব বুকে জ্বালা ধরানো কান্নাটুকু।
আশ্চর্য !
কিছু কথা চাপা ক্রোধেই নেতিয়ে পরে;
আর সব কথা সবুজ বুঝতেও পারে না।
বৃদ্ধের চোখ বেয়ে ব্যর্থতা অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে।

এই দেখে সবুজ হঠাৎ মুষড়ে পরে।
আহত কন্ঠে প্রিয় দাদু ভাইকে মিনতি করে-
আহা! দাদু।
থাক – আমি আর তোমায় গল্প বলতে বলবো না।
এই শুনে বৃদ্ধ চোখ মুছেন,
নাতি ভাইকে সান্তনা দিয়ে আশ্বস্ত করেন।
মাথায় আদর করে দিয়ে বলেন-
দাদু ভাই তাড়াতাড়ি বড় হয়ে নাও গো;
সামনে তোমাদের পথ চলার দিন।
নিজ নিজ পাওনা বুঝে নেয়ার দিন।

আজকাল পত্র পত্রিকায় ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে’ – এই খবরে
তার জং ধরা শরীরের শিরায় শিরায়
ক্লান্ত লোহিত কণিকারা বড্ড তটস্থ হয়ে ওঠে।
শেষ বয়সে এসে তিনি আজকাল তাই বেশ স্বস্তি বোধ করেন।
আজকের সবুজ প্রজন্ম নতুন করে জানতে চায় একাত্তুরের কথা।
সোনার বাংলার সোনার ছেলেরা সব সময়ই
দেশকে বুকে নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়।
আকাশে উঁচু করে তুলে ধরতে চায় লাল-সবুজের পতাকা।
দেয়ালে পিঠ ঠেকা মানুষেরা তাই ঘুরে দাঁড়ায়।
নতুন করে বাঁচতে শিখে।
প্রকৃতির এই চক্রকে দাদু ভাই স্বাগত জানান অনেকখানি মমতা নিয়েই।
প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন আজকের সোনার ছেলেদের।
তারা দেশের মাটিতে সেই সব নরপিশাচদের প্রকৃত বিচারটুকু করতে চায়।
সবাই সজাগ – এটাই শুরু।
তারপর একে একে হিসাব হবে সব পাপের ।
এভাবেই শেষ থেকে আবার শুরু হয়।

ছানিতে ঝাপসা হয়ে আসা দৃষ্টিতে দাদুভাই
আগামীর উজ্জ্বল আলোর স্বপ্ন বুনেন।
তিনি ঠিক ঠিক বিশ্বাস করেন
একদিন এই সবুজে’রাই আবার জয়ী হবে।
নাতি ভাইকে মমতায় তিনি কাছে টেনে নেন।
ছোট্ট সবুজের দু’চোখে দাদুভাই খুঁজে নেন-
দেশমাতৃকার স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার তাগিদে
এই প্রজন্মের একাগ্র প্রতিশ্রুতি
সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় পথ চলা।
আগামীতে একসাথে ঝলসে ওঠার স্পৃহা।
অতঃপর – অপর কোন বৃদ্ধের ঝুলিতে ঠাঁই পাওয়া
নতুন আর এক মুক্তিযুদ্ধের সফল গাঁথা..!

১,৯৮৬ বার দেখা হয়েছে

১৭ টি মন্তব্য : “দাদু ভাইয়ের গপ্পো”

  1. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    অসাধারন কবিতা...

    ছোট্ট সবুজের দু’চোখে দাদুভাই খুঁজে নেন-
    দেশমাতৃকার স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার তাগিদে
    এই প্রজন্মের একাগ্র প্রতিশ্রুতি
    সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় পথ চলা।

    :hatsoff: :hatsoff:

    জবাব দিন
  2. রেজওয়ান (৯৯-০৫)
    ছানিতে ঝাপসা হয়ে আসা দৃষ্টিতে দাদুভাই
    আগামীর উজ্জ্বল আলোর স্বপ্ন বুনেন।
    তিনি ঠিক বিশ্বাস করেন
    এই সবুজে’রাই আবার জয়ী হবে।

    হতেই হবে :thumbup: :thumbup: :thumbup: :thumbup:
    অসাধারন হয়েছে ভাইয়া :boss:

    জবাব দিন
  3. রেজওয়ান (৯৯-০৫)
    ছানিতে ঝাপসা হয়ে আসা দৃষ্টিতে দাদুভাই
    আগামীর উজ্জ্বল আলোর স্বপ্ন বুনেন।
    তিনি ঠিক বিশ্বাস করেন
    এই সবুজে’রাই আবার জয়ী হবে।

    হতেই হবে :thumbup: :thumbup: :thumbup: :thumbup:
    অসাধারন হয়েছে ভাইয়া :boss:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুলহাস (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।