পুরনো ঢাকা’র গল্পঃ দুই

ডিম পাড়া মুরগির মত লাবণ্য ঘিরে থাকে কারুর চেহারায় – কবিতায় পড়ি আর বাস্তবে মেলানোর চেষ্টা করি। কাপ্তান বাজার হয়ে হেঁটে বাসায় ফিরি সান্ধ্য অফিস শেষে। জীবনের প্রথম চাকুরি বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা আটটা। দু’দিন হল পাল্লা দিয়ে বাজারের দুই প্রান্তে রাতে ওয়াজ মাহফিল আর কাওয়ালি চলেছে। উৎসব শেষে প্যান্ডেল খোলার কাজ চলছে।
বাজারে প্রায়ই বেশি আয়ের কিংবা স্বল্প আয়ের মানুষদের কাজকারবার মনে দাগ কাটে। এখানে দেখি কোন কোন মানুষ দামাদামি ছাড়াই বড় নদীর বিশাল পাঙ্গাশ গাড়িতে তোলে, কুড়িখানেক দেশি মোরগ, ডিম-পাড়া মুরগী (স্পেশাল অর্ডার) ছিলা হয় তার জন্যে! আবার দেখি অনেক ছেলেপুলের টানাটানির সংসারে মা আড়াইশ’ গ্রাম মহিষের মাংস আর এক কেজি পুরনো বুটের ডাল কিনে ফেরে, সপ্তাহে এই একদিন তাদের ঘরে মাংস রান্না হয়!
এসব এমন কোন বিশেষ ঘটনা নয়, পৃথিবীতে প্রতিদিনই ঘটে থাকে।

একজনের কথা মনে পড়ে, উনি বাজারে ঘুরতেন, দাম করতেন, কিন্তু কেনার সামর্থ্য ছিল না; তবুও দাম করার ইচ্ছাটা চালু ছিল সবসময়। বাজারের অনেকেই ততদিনে এটা বুঝে গেছেন।
মুরগীওয়ালার কাছে জিজ্ঞেস করলেন, “ডিম পাড়া মুরগী জোড়া কত লইবা?”
বিরক্তি সহকারে উত্তর এল, “জোড়া চাইরছ বেচি, আপনে মুরুব্বি মানুস, তিনছ দিলেই আমি খুছি!”
বুঝা গেল ভদ্রলোক দাম শুনে দমে গেলেন। তবুও দম নিয়ে বলতে শুরু করলেন, “তুমার মুরগি খালি ঝিমায় ক্যালা? মাইনসে হালায় লইবো না এইডা।”
ব্যাপারি বুঝলেন উনি কেনার পাত্র না, শুধু শুধু সময় ব্যয় করছেন। চকিতে উত্তর দিলেন, “হ, অহন ঝিমাইবোই তো, কাইল রাইতে কাওয়ালি সুনছে না সারা রাত জাইগা!”
আমি জানি তার ডিম পাড়া মুরগি আর খাওয়া হয়ে ওঠেনি।

পুনশ্চঃ ঢাকা শহরের আবাসিক-অনাবাসিক হোটেলে ডিম পাড়া মুরগির লাবণ্য, স্বাদ খুঁজে চলে অনেক মানুষ আজও।

জুলাই ২৭, ২০১৫
টরন্টো, কানাডা।

৩ টি মন্তব্য : “পুরনো ঢাকা’র গল্পঃ দুই”

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।