সহি খোয়াবনামা

[ভূমিকাঃ তারেক-এর লেখাটা পড়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে মনে পড়ে গেলো। চিলেকোঠার সেপাইখোয়াবনামা — মাত্র এই দুটো উপন্যাসের জনক তিনি। অথচ তাতেই চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন বাংলা সাহিত্যে। ছোটগল্প মোট ক’টা লিখেছেন জানিনা, আর সেটা নিয়ে খানিকটা তো জানলাম তারেক আর মাওলা ব্রাদার্স এর কল্যাণে।

আজকের লেখাটি লিখেছিলাম ‘৯৭ এর জানুয়ারিতে, ৪ তারিখ ইলিয়াস মারা যাবার পর। অস্থি-র ক্যানসার হয়েছিলো। কলকাতায় এসে চিকিৎসা করিয়ে আক্রান্ত পা-টি ছাড়া তাঁকে ঘরে ফিরতে হয়, তবু শেষরক্ষা হয়নি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। তৃতীয় উপন্যাসটির জন্যে অত্যধিক পরিশ্রম করছিলেন তিনি, ডাক্তারের নিষেধ না মেনে একনাগাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন যে এলাকা নিয়ে উপন্যাসটি লিখবেন, সেখানে।

খোয়াবনামা উপন্যাসের চরিত্র আর অনুষঙ্গ সমূহ বিক্ষিপ্ত ছড়িয়ে আছে আজকের লেখাটায়। আর রয়েছে একজন মহান লেখকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও তাঁর মহৎ উপন্যাস পাঠ-পরবর্তী হতবিহ্বল মুগ্ধতার রেশ। যাঁরা খোয়াবনামা পড়েননি বা পড়েননি ইলিয়াসকে তাঁদের কাছে এর সবটাই হয়তো অনধিগম্য ঠেকবে। সেজন্যে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আগেভাগে।]

(বিলে না পরশ যদি পায় মাঝি অঙ্গ।
জল শুকাইয়া যায়, না থাকে তরঙ্গ।।
কেরামতে বলে শুন শুন দিয়া মন।
কাৎলাহারে জল কান্দে আয় মাঝিগণ।।
– খোয়াবনামা, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
)

পৃথিবীতে এক পা থুয়ে
আরেক পায়ে স্বর্গে চলে গেলেন
কেমন আছেন ওইপারে,
আপনি, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস?
কোন সুহৃদ কি কখনো
আপনাকে বলেনি,
“দু’নৌকায় পা দিওনা বন্ধু”?
তার পরো?
তমিজের বাপ কুলসুম ফুলজান বৈকুণ্ঠরা
তেমন জ্বালাতন করেনা ইদানিং?
কাৎলাহার বিল কি পাকুড় গাছের সিথানে
গজার মাছের দল কি ভেড়ার পাল
সব বুঝি চুপ মেরে গেছে একদম?
বিশ্বাস হয়না ……

এ বরং বেশ ভালোই হলো —
আপনার ফেলে যাওয়া
পা চুলকনোর জন্য হলেও,
কিংবা মশা তাড়ানোর জন্যে নিদেনপক্ষে
আকাশ থেকে হাত বাড়িয়ে
পার্থিব খোয়াবসমূহের ভেতর তো
সেঁধিয়ে দিতে হবেই মাঝেমধ্যে;
একেবারে সম্ভব না হলে ততোটা,
তমিজের বাপের খেদানো মেঘের হিমে
হাত-টাত জমে গেলে,
বলবেন, আমাদের বলবেন,
ফুলজান কি কুলসুম,
তমিজ কি তমিজের বাপ কি মুন্সির গজার মাছ
বৈকুণ্ঠ কি ভবানী পাঠক কি মুন্সি নিজে
যে যখন পারি,
আপনার পায়ে হাত বুলিয়ে দেবো,
যতোটা পারি তেমন করে,
যেভাবে আপনি বুলোতেন।

৪,২৪৩ বার দেখা হয়েছে

৩৪ টি মন্তব্য : “সহি খোয়াবনামা”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    নূপুরদা
    আপনার কবিতা যতবার পড়ি নতুন করে মুগ্ধ হই।
    সিসিবির কবিতা ভান্ডার আপনি অনেক সমৃদ্ধ করে তুলছেন দিনকে দিন।

    সব সময় এভাবে লিখে যাবেন শুধু এইটুকুই চাই।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. সাব্বির (৯৮-০৪)

    আমি মনে করি বাংলা সাহিত্যে শ্রদ্ধা করার মতো অল্প কয়েকজন ব্যাক্তির প্রত্যেকেই তাদের যোগ্য সম্মান আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন বাঙ্গালির স্বভাবজাত চিন্তার গভীরতার অভাবের কারনে। এ সময়ে আপনার কবিতা সাধুবাদের যোগ্য কারন ব্যাক্তিগত ভাবে আমি আবার খোয়াবনামা পরার উতসাহ পাচ্ছি (আমার ধারনা ছিলো আমি বুঝেছি এখন মনে হচ্ছে আপনার মতো না!!!!যদিও এইটাও পুরান অভ্যাস :(( । রিভাইস দিয়ে দিয়ে জীবন গেলো :(( )। সেজন্য ধ ন্য বা দ।

    অফটপিকঃ আপনার সব কবিতাই কম বেশি কবিতা হয়ে ওঠে!!!!কেম্নে কী?!!!! :boss:

    জবাব দিন
  3. জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

    অদ্ভুত, আপনার লেখা আমার দ্বিতীয় সবচেয়ে প্রিয় কবিতা। বিশেষত শুরুটা খুবই ড্রামাটিক এবং রিচ, প্রথম চার লাইন। পুরোটা পড়ে যাওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি করে। এবার একটু নিরপেক্ষ হয়ে আমি বলবো প্রথম প্যারাটা হয়েছে খুবই ভালো, তবে দ্বিতীয় প্যারায় আমি আরও বেশী চমক আশা করেছিলাম, একটু হার্টব্রেইক হয়েছে দ্বিতীয় প্যারায়, তবে ওভারঅল চমৎকার। আরো লিখে যান এমন। ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  4. আন্দালিব (৯৬-০২)

    খোয়াবনামা বইটা আমার কাছে অনেক দুর্বোধ্য মনে হয়। মনে হয় বহুমাত্রিক একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে পড়ার সময়ে। সেই বই নিয়ে কবিতা! 🙂

    খুবই ভাল লাগলো পড়ে নূপুর ভাই :clap: :clap:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রবিন (৯৪/ককক)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।