মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দশ মিনিট

আজ আমাদের এখানে ( এখানে অর্থে নতুন দিল্লীর জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে আমি এবং আরো জনা দশেক আছি, বাংলাদেশ থেকে) একটা সভা ছিলো সন্ধ্যায়,
আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় আমাদের অংশগ্রহণ ও করণীয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে।আমার সাম্প্রতিক ব্যস্ততা ও চিরাচরিত পলায়নপ্রবণতার কারণে শুরু থেকেই একটা পালাই পালাই ভাব নিয়ে সেই সভায় যোগ দেই তৌহিদ ভাইয়ের রুমে।গিয়েই পরিচিত হলাম একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোকের সংগে, যিনি আপাতত তৌহিদ ভাইয়ের অতিথি। শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান তৌহিদ ভাই ‘মামুন ভাই’ বলে আমাদের সংগে আলাপ করিয়ে দিলেন তাঁর; আর মামুন ভাইকে অনুরোধ করলেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার খানিকটা ভাগ আমাদের দেয়ার জন্যে।
মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে মামুন ভাই ধরা পড়েন পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে, ঢাকা শহরের ড্রাম ফ্যাক্টরি এলাকায় তারপরের কয়েকমাসের বন্দীদশার কথাই বলছিলেন আমাদের।সেখানে তাঁর সংগে ছিলেন রুমি ( শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এর ছেলে), আলতাফ হোসেন, আজাদ ( আনিসুল হক ‘মা’লিখেছেন যাঁকে নিয়ে), বদি, সামাদ এবং আরো কয়েকজন। সেখান থেকে বেঁচে ফেরাটা ছিলো কল্পনাতীত ব্যাপার। মামুন ভাই বললেন, তাঁরা মনে মনে প্রবলভাবে চাইতেন বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারার পরিবর্তে তাঁদের মাথায় গুলি করে মারা হোক। আবার কাউকে শেষ করে দেয়ার আগে নাকি বিরিয়ানী খাওয়াতো ওরা। কি করে বেঁচে গেলেন, এই প্রশ্ন করতে তিনি জানালেন সম্ভবত ক্যাডেট কলেজের ছাত্র হওয়ায় এবং তখনকার প্রিন্সিপাল তাঁকে অকুন্ঠ সাহায্য করায় তাঁকে পরে ঢাকা সেনানিবাসে স্থানান্তর করা হয় যুদ্ধবন্দী হিসেবে।

মামুন ভাই তৎকালীন মোমেনশাহী, আজকের মির্জাপুর, ক্যাডেট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তাঁর ছোট ভাই, মাসুদ, যিনি তখন কি না ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে পড়ছিলেন মাত্র সেভেনে তিনিও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এই মাসুদ ভাই, সেদিন যিনি ছিলেন ক্ষুদে কিশোর মাত্র, নাকি লুংগিতে গ্রেনেড নিয়ে নৌকো চেপে নদী পেরিয়ে মুড়ি চিবোতে চিবোতে দিব্যি একদল পশ্চিমা সেনার ভেতর দিয়ে বেরিয়ে যান।

১,৪২৪ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দশ মিনিট”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    হুম,
    এই কালে উপভোগ্য সবকিছুই যেখানে তাড়িয়ে তাড়িয়ে ভোগ করার জন্য নানা কৌশল/বটিকা সেবন করে, তখন গল্পটা এতোই ছোট যে, শুরুতেই শেষ। :grr:


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  2. শহীদ (১৯৯৪-২০০০)
    মাসুদ, যিনি তখন কি না ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে পড়ছিলেন মাত্র সেভেনে তিনিও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এই মাসুদ ভাই, সেদিন যিনি ছিলেন ক্ষুদে কিশোর মাত্র, নাকি লুংগিতে গ্রেনেড নিয়ে নৌকো চেপে নদী পেরিয়ে মুড়ি চিবোতে চিবোতে দিব্যি একদল পশ্চিমা সেনার ভেতর দিয়ে বেরিয়ে যান।

    :salute:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।