বছর কুড়ি পরে

আবার বছর কুড়ি পরে
মেঘের মতন শহরে
আমাদের দেখা হলে
মনে রেখো
কফিমগ কিংবা রক্তে
চিনির সঙ্গত পরিমাপ নিয়ে
কথা বলা যেতে পারে

ভিজে ভিজে পথ
এবং ছাতার মিছিলে
মিছেমিছি তাকাবার নাম করে
আমাদের বুড়ো দু’চোখ
পরস্পর ফাঁকি দেবার কথা ভেবে’
‘কী লাভ!’ বলে হেসে দেবে

তারপর ক’ইঞ্চি কাছে’
এই হাত ওই আঙুল
সোনাঠোঁট রূপোলি চুল;
এখানে ওখানে
শতদল হয়ে দ্যাখো,
ফুটেছে কুঞ্চন!
স্পর্শের সারস তবু
সাহস খুঁজে পেতে
খানিক কেশে নিয়ে
‘তো কি খবর,
বাচ্চারা ভালো? বর?’
ইত্যাদিতে মেতে উঠে
উড়াল না দেবার
অজুহাতে’
সচ্ছন্দ চুমুক
বরং শ্রেয় মনে করে

তখন তুমি নখের
টোকায় টোকায়
পিয়ানো বাজাবে টেবিলে,
পুরনো দিন মনে ক’রে
কফিময় বিকেলে
মেঘেদের হুড়োহুড়ি
বেড়ে গেলে
টেবিলের এপাশে
ফেসবুক মেলে ধীরে
আমিও হয়ত ডুবে যাবো
হাঁটুময় বৃষ্টির ভিতরে

———————
কদিন আগের ফেসবুক স্ট্যাটাস

৩,১৮৩ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “বছর কুড়ি পরে”

  1. হা-মীম(২০০০-২০০৬)

    "ভিজে ভিজে পথ
    এবং ছাতার মিছিলে
    মিছেমিছি তাকাবার নাম করে
    আমাদের বুড়ো দু’চোখ
    পরস্পর ফাঁকি দেবার কথা ভেবে’
    ‘কী লাভ!’ বলে হেসে দেবে"

    🙂 🙂


    \\\"।নিউট্রন বোমা বোঝ. মানুষ বোঝ না ! ।\\\"

    জবাব দিন
  2. সাইদুল (৭৬-৮২)

    বাহ, বেশ তো !

    স্পর্শের সারস তবু
    সাহস খুঁজে পেতে
    খানিক কেশে নিয়ে
    ‘তো কি খবর,
    বাচ্চারা ভালো? বর?’
    ইত্যাদিতে মেতে উঠে
    উড়াল না দেবার
    অজুহাতে’
    সচ্ছন্দ চুমুক


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  3. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    আমার মনে হয়, এই লেখাটি একদিন কবিতার মর্যাদা পাবে। 'একদিন পাবে' একথা সচেতনভাবেই বললাম। কারণ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কোন লেখা কবিতা পদবাচ্য কি না, সেটি ভবিষ্যতই কেবলমাত্র বলে দিতে পারে। কখনো কখনো কিছু কিছু বচন কালের আঁচল ছিঁড়ে, বিস্মরণের মুখে ছাই দিয়ে অবিস্মরণীয় হয়। আমরা সেইসব বচনকে কবিতা বলি।

    এবারে একটু আতশী কাচ লাগিয়ে দেখি। চমৎকার কিছু উপমা-রূপকের সমাহার ঘটিয়েছ। এগুলো পাঠকের কল্পনার জগতকে জাদুমন্ত্রে বিস্তৃত করে।
    উপমা,
    মেঘের মতন শহরে
    রূপক,
    ছাতার মিছিলে
    শতদল হয়ে দ্যাখো, ফুটেছে কুঞ্চন!
    স্পর্শের সারস

    অনবদ্য কিছু চিত্রকল্প খুঁজে পাই,

    মিছেমিছি তাকাবার নাম করে
    আমাদের বুড়ো দু’চোখ
    পরস্পর ফাঁকি দেবার কথা ভেবে’
    ‘কী লাভ!’ বলে হেসে দেবে
    তারপর ক’ইঞ্চি কাছে’
    এই হাত ওই আঙুল
    সোনাঠোঁট রূপোলি চুল;
    এখানে ওখানে
    শতদল হয়ে দ্যাখো,
    ফুটেছে কুঞ্চন!
    তখন তুমি নখের
    টোকায় টোকায়
    পিয়ানো বাজাবে টেবিলে,
    পুরনো দিন মনে ক’রে
    কফিময় বিকেলে
    মেঘেদের হুড়োহুড়ি
    বেড়ে গেলে
    টেবিলের এপাশে
    ফেসবুক মেলে ধীরে
    আমিও হয়ত ডুবে যাবো
    হাঁটুময় বৃষ্টির ভিতরে

    আর দেখ, কবিতার আচলের পাশ দিয়ে মিহি করে ছন্দ বুনেছ তাই কত ছড়িয়েছে মোহনীয় সুরেলা বিষাদ।

    'কুড়ি বছর পড়ে' শিরোনামে জীবনানন্দের একটি বহু পঠিত, বহু অধিত, বহু আলোচিত কবিতা আছে। সেখানে হারিয়ে যাবার হাহাকার আছে, তবু শেষে পুনঃপ্রাপ্তির অভীপ্সা সোনালি শিখায় জ্বলেছে। এই প্রিয়তমা চরিত্রটির কিছুটা প্রতিভাস আমরা ওঁর 'কারুবাসনা' উপন্যাসে আঁকা কেদারবাবুর মেয়ে 'বনলতা'র মধ্যে পাই। যেহেতু দুটি কবিতাই শুরু হয়েছে 'আবার বছর কুড়ি পরে' এই শব্দগুচ্ছ দিয়ে, তাই পাঠকমাত্রেরই ইচ্ছে হবে কবিতা দুটোর একটিকে অপরটির সাথে মিলিয়ে দেখবার। এবং এখানেই তুমি ধনী হবে এজন্য যে, তারা তোমার কবিতায় একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন মেজাজ, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন বাকভঙ্গিমা ও ভিন্ন অনুষঙ্গ আবিষ্কার করে মুগ্ধ হবে। জীবনানন্দের কবিতার কথাগুলো অনেক অস্পষ্ট আবহ তৈরি করে। সেটি তাঁর পরিবেশ পরম্পরার সাথে, জাগতিক অপ্রাপ্তি ও চেতনার প্রাপ্তির সাথে দারুণ মানিয়ে যায়। তোমার কথাগুলো স্পষ্টতই তোমার যুগের নাগরিক চৈতন্যের চিহ্ন বহন করে।

    আমাদের দেখা হলে
    মনে রেখো
    কফিমগ কিংবা রক্তে
    চিনির সঙ্গত পরিমাপ নিয়ে
    কথা বলা যেতে পারে

    এখানেই তোমার স্বাতন্ত্র্য। এমন লেখা আরো অনেক লিখ।


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      মোস্তফা ভাই,
      আজ ভোরবেলা আপনার পাঠপ্রতিক্রিয়াটি চোখে পড়ে। পড়তেই দিনটা কেমন নেশা আর ঘোরগ্রস্ততার মধ্যে শুরু হয়ে যায়। সমস্ত দিনমান ধরে ফিরে ফিরে এসে পড়লাম আর একধরণের সলজ্জতায় আক্রান্ত হলাম।
      লিখি যখন, না বুঝেই লিখি -- ব্যাকরণ বা প্রকরণ যাই বলুন না কেন।
      আপনার কথাগুলো আমাকে যে কি পরিমাণ অনুপ্রাণিত করলো তা ভাষায় প্রকাশের সাধ্য আমার নেই।
      আশীর্বাদ করবেন।

      জবাব দিন
  4. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    কবিতাটি সুন্দর হয়েছে নূপুর।

    আমার সময়ের অভাব থাকার কারণে লেখা পড়ার সময় পাই কম।
    তাই সব সময় ইচ্ছা থাকলেও পড়তে পারিনা। এজন্য মনে কষ্ট নিও না।

    জবাব দিন
  5. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    এ ধরণের কবিতা পড়লে মনে একটা আবেশ এসে যায়। সাথে সাথে নিজেরও ইচ্ছে হয় কবিতা লিখতে, নইলে অন্তত: একটা কবিতাকে ভেবে রাখতে, পরে লেখার জন্য। খুবই স্মার্ট পরিবেশনা। কিছু কিছু উপমা ও রূপক তুলনাহীন।
    "তখন তুমি নখের
    টোকায় টোকায়
    পিয়ানো বাজাবে টেবিলে" ... আর,
    "মেঘেদের হুড়োহুড়ি
    বেড়ে গেলে
    টেবিলের এপাশে
    ফেসবুক মেলে ধীরে
    আমিও হয়ত ডুবে যাবো
    হাঁটুময় বৃষ্টির ভিতরে" ... খুব ভালো লেগেছে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : লুৎফুল (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।