মা দিবসে পাঠ প্রচেষ্টা – কখনো আমার মাকে

কখনো আমার মাকে
শামসুর রাহমান

কখনো আমার মাকে কোনো গান গাইতে শুনিনি।
সেই কবে শিশু রাতে ঘুম পাড়ানিয়া গান গেয়ে
আমাকে কখনো ঘুম পাড়াতেন কি না আজ মনেই পড়ে না।

যখন শরীরে তার বসন্তের সম্ভার আসেনি,
যখন ছিলেন তিনি ঝড়ে আম-কুড়িয়ে বেড়ানো
বয়সের কাছাকাছি হয়তো তখনো কোনো গান
লতিয়ে ওঠেনি মীড়ে মীড়ে দুপুরে সন্ধ্যায়,
পাছে গুরুজনদের কানে যায়। এবং স্বামীর

সংসারে এসেও মা আমার সারাক্ষণ
ছিলেন নিশ্চুপ বড়ো, বড়ো বেশি নেপথ্যচারিণী। যতদূর
জানা আছে,টপ্‌পা কি খেয়াল তাঁকে করেনি দখল
কোনোদিন। মাছ কোটা কিংবা হলুদ বাটার ফাঁকে
অথবা বিকেলবেলা নিকিয়ে উঠোন
ধুয়ে মুছে বাসন-কোসন
সেলাইয়ের কলে ঝুঁকে, আলনায় ঝুলিয়ে কাপড়,
ছেঁড়া শার্টে রিফু কর্মে মেতে
আমাকে খেলার মাঠে পাঠিয়ে আদরে
অবসরে চুল বাঁধবার ছলে কোনো গান গেয়েছেন কি না
এতকাল কাছাকাছি আছি, তবু জানতে পারিনি।

যেন তিনি সব গান দুঃখ-জাগানিয়া কোনো কাঠের সিন্দুকে
রেখেছেন বন্ধ ক’রে আজীবন, এখন তাদের
গ্রন্থিল শরীর থেকে কালেভদ্রে সুর নয়, শুধু
ন্যাপথলিনের তীব্র ঘ্রাণ ভেসে আসে!

২,৪০৭ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “মা দিবসে পাঠ প্রচেষ্টা – কখনো আমার মাকে”

      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        আমাদের মা – হুমায়ুন আজাদ
        ==================
        আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি, বাবাকে আপনি।
        আমাদের মা গরিব প্রজার মত দাঁড়াতো বাবার সামনে,
        কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক’রে উঠতে পারতোনা।
        আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে
        মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনোদিন মনেই হয়নি।
        আমাদের মা আমাদের থেকে বড় ছিলো, কিন্তু ছিলো আমাদের সমান।
        আমাদের মা ছিলো আমাদের শ্রেনীর, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের।
        বাবা ছিলেন অনেকটা আল্লার মতো, তার জ্যোতি দেখলে আমরা সেজদা দিতাম
        বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মতো, তার গর্জনে আমরা কাঁপতে থাকতাম
        বাবা ছিলেন অনেকটা আড়িয়াল বিলের প্রচন্ড চিলের মতো, তার ছায়া দেখলেই
        মুরগির বাচ্চার মতো আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম।
        ছায়া সরে গেলে আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম।
        আমাদের মা ছিলো অশ্রুবিন্দু-দিনরাত টলমল করতো
        আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি;-সারাদিন ঝরে ঝরে পড়তো,
        আমাদের মা ছিলো ধানখেত-সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো।
        আমাদের মা ছিলো দুধভাত-তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো।
        আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর-আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম।
        আমাদের মার কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিলো কিনা আমরা জানি না।
        আমাদের মাকে আমি কখনো বাবার বাহুতে দেখি নি।
        আমি জানি না মাকে জড়িয়ে ধরে বাবা কখনো চুমু খেয়েছেন কি না
        চুমু খেলে মার ঠোঁট ওরকম শুকনো থাকতো না।
        আমরা ছোট ছিলাম, কিন্তু বছর বছর আমরা বড় হতে থাকি,
        আমাদের মা বড় ছিলো, কিন্তু বছর বছর মা ছোটো হতে থাকে।
        ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময়ও আমি ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতাম।
        সপ্তম শ্রেনীতে ওঠার পর ভয় পেয়ে মা একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে।
        আমাদের মা দিন দিন ছোটো হতে থাকে
        আমাদের মা দিন দিন ভয় পেতে থাকে।
        আমাদের মা আর বনফুলের পাপড়ি নয়, সারাদিন ঝরে ঝরে পড়েনা
        আমাদের মা আর ধানখেত নয়, সোনা হয়ে বিছিয়ে থাকে না
        আমাদের মা আর দুধভাত নয়, আমরা আর দুধভাত পছন্দ করিনা
        আমাদের মা আর ছোট্ট পুকুর নয়, পুকুরে সাঁতার কাটতে আমরা কবে ভুলে গেছি।
        কিন্তু আমাদের মা আজো অশ্রুবিন্দু, গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত
        আমাদের মা আজো টলমল করে।


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন
  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :clap: :clap: :clap: :clap:

    সিসিবি ঝিমোচ্ছিল কয়েকদিন ধরে, তুমি এসেই আবার ঝড় তুললে বরাবরের মত, নূপুর!

    রবিবারের মেঘের প্রভাত। এক চোখ মেলে রুটিনমাফিক জগতের খোঁজখবর করে আবারও নাক ডাকার প্লান আমার।
    কী শুনালে এই ঘুমঘুম ভোরে তুমি! কানে হেডফোন পরে একবার শুনলাম, আহ! মধু মধু! শুরু হতে না হতেই যেন শেষ হয়ে গেল তোমার কন্ঠের জাদু। আবার আইপ্যাডে চাপিয়ে, আমার পাখিকে জাগিয়ে শুনলাম বারকয়েক!

    নেপথ্যের সুর আর পাঠ জড়াজড়ি করে অপার মুগ্ধতায় ডুবিয়ে রেখেছিল!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিনা (৮৩-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।