পাঠ প্রচেষ্টা – তোমার নগ্ন নির্জন হাত

সাহস করে জীবনবাবুকে আরেকবার স্মরণ করলাম। কিন্তু নেপথ্যে সুর জুড়ে দেবার স্পর্ধা হলোনা। জীবনানন্দে সুর না বসালেই যেন ভালো লাগে শুনতে


___________________________________________________________________________________________
তোমার নগ্ন নির্জন হাত
জীবনানন্দ দাশ

আবার আকাশে অন্ধকার ঘন হয়ে উঠেছে :
আলোর রহস্যময়ী সহোদরার মতো এই অন্ধকার।

যে আমাকে চিরদিন ভালোবেসেছে
অথচ যার মুখ আমি কোনদিন দেখিনি,
সেই নারীর মতো
ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়েছে উঠছে।

মনে হয় কোন্‌ বিলুপ্ত নগরীর কথা
সেই নগরীর এক ধূসর প্রাসাদের রূপ জাগে হৃদয়ে।

ভারতসমুদ্রের তীরে
কিংবা ভূমধ্যসাগরের কিনারে
অথবা টায়ার সিন্ধুর পারে
আজ নেই, কোন এক নগরী ছিল একদিন,
কোন্‌ এক প্রাসাদ ছিল;
মূল্যবান আসবাবে ভরা এক প্রাসাদ;
পারস্য গালিচা, কাশ্মিরী শাল, বেরিন তরঙ্গের নিটোল মুক্তা প্রবাল,
আমার বিলুপ্ত হৃদয়, আমার মৃত চোখ, আমার বিলীন স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা;
আর তুমি নারী –
এই সব ছিল সেই জগতে একদিন।

অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল,
অনেক কাকাতুয়া পায়রা ছিল,
মেহগনির ছায়াঘন পল্লব ছিল অনেক;
অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল,
অনেক কমলা রঙের রোদ;
আর তুমি ছিলে;
তোমার মুখের রূপ কত শত শতাব্দী আমি দেখি না,
খুঁজি না।

ফাল্গুনের অন্ধকার নিয়ে আসে সেই সমুদ্রপারের কাহিনী,
অপরূপ খিলান ও গম্বুজের বেদনাময় রেখা,
লুপ্ত নাশপাতির গন্ধ,
অজস্র হরিণ ও সিংহের ছালের ধূসর পান্ডুলিপি,
রামধনু রঙের কাচের জানালা,
ময়ূরের পেখমের মতো রঙিন পর্দায় পর্দায়
কক্ষ ও কক্ষান্তর থেকে আরো দূর কক্ষ ও কক্ষান্তরের
ক্ষণিক আভাস –
আয়ুহীন স্তব্ধতা ও বিস্ময়!

পর্দায়, গালিচায় রক্তাভ রৌদ্রের বিচ্ছুরিত স্বেদ,
রক্তিম গেলাসে তরমুজ মদ!
তোমার নগ্ন নির্জন হাত;

তোমার নগ্ন নির্জন হাত।

৩,১৫০ বার দেখা হয়েছে

২৯ টি মন্তব্য : “পাঠ প্রচেষ্টা – তোমার নগ্ন নির্জন হাত”

  1. সাইদুল (৭৬-৮২)

    নুপুর

    তোমার পাঠ প্রচেষ্টা আমি খুব মনদিয়ে শুনি। এইটাও শুনলাম। খুব ভালো লাগলো বলতে গিয়েও বললাম 'ভালো লাগলো' । একঊ যেন তাড়া হুড়ো ছিলো। আর কোনো এক বিলুপ্ত নগরী কী ঠিক আছে ? তুমি পড়েছো কোন


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      সাইদুল ভাই,
      শুনবার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। তাড়াহুড়ো একটা বিশাল সমস্যা আমার -- হুড়োহুড়ি করে শেষ করে ফেলতে চাই। তাছাড়া এ কবিতাটা সেদিনই 'পাঠ' করলাম কেবল। আরো বহুবার পড়লে একটা জায়গায় দাঁড়াবে হয়তো।

      ওটা আসলে 'কোন্‌' ই হবে। আমি আব্দুল মানান সৈয়দ সম্পাদিত 'জীবনানন্দ সমগ্র' (অবসর প্রকাশনী) কেই প্রামাণ্য মানি সবসময়। এদিকে আলসেমি করে এখানে পোস্ট করেছি ইন্টারনেট থেকে কপি-পেস্ট করে। বানান এবং অন্যান্য ব্যাপারগুলো চেক করলেও এটা চোখে পড়েনি। পাঠের প্রসঙ্গে আরেকটু বলি -- জীবনানন্দ পাঠের কণ্ঠ তো আমার নেই-ই, অনুশীলনও নেই কোন। শুধু কবিতার প্রতি অনুরাগই ভরসা। এ পাঠে বেশ কিছু সমস্যা ধরা পড়লো নিজের কাছে। সেগুলো উতরোতে পারছিলামনা বেশ কয়েকবার পড়েও। 🙁 (সম্পাদিত)

      জবাব দিন
  2. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    নূপুর নিক্বণ কানে চাপিয়ে হাঁটতে বেড়িয়েছিলাম বাড়ির পেছনের ট্রেইলে। শনিবারের ঝলমলে সকাল আমাদের। তোমার পাঠের ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন সুর না থাকাতে হঠাৎ মনে হলো দূরদ্বীপবাসী কোন একজন এডমায়রার এর অনুরোধেই হয়তো হাঁটতে হাঁটতে পড়ছো জীবনবাবুর অসামান্য এই লেখাখানি! কত সব পাখির মেলা বসেছে এখানে, জানো! নেপথ্য সুরের অভাব হয়নি মোটে, পাখিরাই সুর হয়ে, গান হয়ে অথবা অদেখা আলো বা প্রেম হয়ে এলো কাছে।

    অনবদ্য লাগলো শুনতে!

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      তোমার প্রশ্রয় পেয়েই তো আরো জেঁকে বসলাম কবিতা শোনাব বলে। সাথে আছে মাহবুব ভাইয়ের জীবননান্দ দাশের উল্লেখ। আর যায় কোথা! তোমার এসব মন্তব্যে আমার মধ্যে তো ' কী হনু রে' ভাব চলে আসছে হে

      জবাব দিন
      • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

        🙂 🙂 🙂 🙂

        ড্রাইভ করতে করতে শফি কামালের পাঠ শুনছিলাম আজ। কন্যা পাশে বসে থাকলে কবিতা শুনবার মতো বিলাসিতা করা যায়না মোটে। বিলবোর্ডের টপ গান গুলোই রেডিওতে বাজতে থাকে তখন একটার পর একটা। আজ অনেকদিন পর শফি কামালের কণ্ঠে 'অন্য ঘরে' শুনে কী যে ভাল লাগলো! প্রেমে পরবার মত অবস্থা বলতে পারো (হায়! আমার কী হবেরে 😛 )। বাড়ি ফিরেও সেই 'অন্য ঘরে' কানে বাজছে ক্রমাগত। তুমি পড়বে প্লিজ এটি আমাদের জন্য?

        জবাব দিন
          • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

            আবিদ আজাদের লেখা কবিতা 'অন্য ঘরে', নূপুর! এই কবির অন্য কোন লেখা পড়েছি বলে মনে পরছেনা আমার। তোমার জন্য লেখাটি পাঠাচ্ছি আমি। তোমার কন্ঠে 'অন্য ঘরে' নতুন করে প্রাণ পাবে বলেই আমার বিশ্বাস!

            কবিরা মোস্ট অব দা টাইম কবিতা পড়তে পারেন না বলে মনে হয়েছে আমার। আসাদ চৌধুরী তার ব্যতিক্রম। তুমি একাধারে কবি আবার তোমার পাঠও হৃদয়গ্রাহী, নূপুর। তাছাড়া কন্ঠের জাদুতো আছেই, ভাইয়া!

            হাফিজের লেখা তুমুল প্রেমের কবিতাগুলো আমি ইলেভেন বা টুয়েলভ গ্রেডে পড়ার সময় প্রথম পড়ি। পুরো বই মুখস্ত করে ফেলেছিলাম। বন্ধুরা বলতো কবির প্রেমে না পরে যাই আবার। বছরখানিক আগে টিভিতে হেলাল হাফিজের পাঠ শুনে আমার বাল্যকালের সেই আরাধ্য প্রেম ছুটে গিয়েছিল। কী বিচ্ছিরী উচ্চারণ তার! নিষ্প্রাণ মনোটোনাস গলায় নিজের কবিতার কী সর্বনাশটাই করলেন কবি, জানো!

            জবাব দিন
  3. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    পাঠ বরাবরের মতোই সুন্দর । স্পষ্ট উচ্চারণ ।
    কিন্তু তাড়াহুড়ো, আর তারো চেয়ে বেশী মনে হয়েছে যে পাঠ আত্মার সাথে সম্পর্ক তৈরীর আগেই ধারণ করা হয়েছে ।
    জানি বলছি যদিওবা ... আমি পাঠ করে বোঝাতে গেলে কোথায় কী মন চাইছিলো ... লোকে হাসবে ।
    আসল কথা হচ্ছে তোমার পাঠের প্রতি আমাদের আকাঙ্ক্ষা আকাশ ছুঁয়ে আছে ।
    ঈগল ডানায় ভর করবার মতোন দুর্বার দূরত্বে তাই বসে আছে আমাদের আহলাদ ।

    আরো আরো শুনবার ইচ্ছে পকেটে পোরা রইলো ।

    জবাব দিন
  4. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)
    মনে হয়েছে যে পাঠ আত্মার সাথে সম্পর্ক তৈরীর আগেই ধারণ করা হয়েছে ।

    একেবারে সঠিক পর্যবেক্ষণ লুৎফুল ভাই।
    জীবনানন্দ পাঠ করার জন্যে বহুবার নিবিড় পঠনের মধ্য দিয়ে যাবার প্রয়োজন রয়েছে। আপনাদের সবার মন্তব্যগুলো পেয়ে খুব ভালো লাগছে। আরেকটু পরিমার্জনা আরেকটু শীলনের প্রেরণা পাচ্ছি। তাছাড়া আমার এ স্পর্ধাকে আপনারা সবাই যে বেশ সয়ে নিচ্ছেন তার জন্যেও কৃতজ্ঞ বোধ করি। আরেকটু কঠোর সমালোচনা আমি আসলে চাইছিলাম কবিতাপ্রেমী লোকজনের কাছে।

    তাছাড়া উপরি পাওনা হিসেবে আছে আপনার শৈল্পিক মন্তব্যসমূহ। আমার এক অত্যন্ত প্রিয় কবিবন্ধুর কাছে 'মতামতের শিল্প' কথাটা শুনি। আপনার মতামত -- তাকে প্রকাশের সযত্ন সশিল্প প্রয়াস আমাকে মোহিত করছে প্রতিবার। শিল্পকে জীবনে ধারণ না করলে অথবা জীবনধারণকেই শিল্পে পরিনত না করলে এমনটা পেরে ওঠা যায় না।

    জবাব দিন
  5. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    উচ্চারন ভাল, স্পষ্ট।
    তবে পজগুলা কেমন জানি হয়ে গেছে। আর তাতে কবিতার ধারাবাহিকতা কেমন যেন কেটে কেটে গেল। স্টিডি থাকে নি।
    শেষ দুইটা লাইন দুইভাবে বলা উচিৎ ছিল। একই রকম হয়ে গেল না?
    ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক না থাকার ডিসএডভান্টেজ বুঝলাম। সব মনযোগ পাঠে নিবন্ধিত হয়।
    ছোটখাটো ত্রুটিও কান এড়ায় না।
    ডেসট্রাক্ট করার জন্য মিউজিক খুবই কাজের জিনিষ। অনেক সমস্যা ঢেকে দেয়। 😉 😉


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      পারভেজ ভাই,
      ক্রিটিকাল মন্তব্যের জন্যে বিশাল ধন্যবাদ। জীবনানন্দের কবিতার সঙ্গে সুর বসাতে চাইছিলামনা। খালি গলায় কেমন শোনায় দেখতে চাইছিলাম। আর কেটে কেটে যাবার কথা যেটা বললেন সেটাই বলে দিচ্ছে পাঠকের সত্যিকারের অবস্থাটা। স্বরের ওঠানামা ইচ্ছাধীন নয় সেটাই অসহায়ের মত দেখলাম। শেষ দুলাইন দুরকম তো হবার কথাই -- চেষ্টাও করলাম, হলনা। একজন গুরু দরকার - অন্য যে কোন বিদ্যার মতই

      জবাব দিন
  6. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    সুন্দর! আমার ভালো লেগেছে। সামান্য কিছু ঘাটতি যদি থাকে সেটা অনুশীলনে ঠিক হয়ে যাবে। অনেকের মত দু একবার চেষ্ঠা করে- নাহ আমার হবে না গোছের একটা কিছু মনে করে ক্ষান্ত দেবে না- এটাই জোর দাবী।
    চলুক- আরো চাই :thumbup:

    জবাব দিন
  7. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ভাল হয়েছে।
    কিন্তু ঠিক যতটা আশা করেছিলাম ততটা নয়।
    ব্যাপারটা এমন স্টার মার্কস জুটেছে কিন্তু লেটার নয়।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  8. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    পাঠ প্রচেষ্টা ভালো হয়েছে। শোনার পর যে কথাগুলো মনে এসেছিলো, তা ইতোমধ্যে বলা হয়ে গেছে। নিজ কানকে বিচারক মেনে কয়েকবার খসড়া আবৃত্তির পর রেকর্ড করলে মানের উত্তরণ ঘটবে নিঃসন্দেহে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।