আমার প্রাণের পরে চলে গেলো কে
বসন্তের বাতাসের মতো একটা পোস্টকার্ড এসেছে আজ অফিসের ঠিকানায় – সেখানে সবকটা গাছে আগুন লেগে আছে আর হ্রদের উদ্দামরকমের নীল পাড়ে থোকা থোকা সে-আগুন উল্টো ঝুলে আছে। আমি ব্যস্ত ঢাকার ভেতরে এক ডুবে সাঁতরে সে হ্রদের পাড়ে গিয়ে মাথা তুলতে’ পৃ-র দেখা পেয়ে যাই। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিতে দিতে বলে – কতক্ষণ ধরে ডাকছি!
‘এই ভালো। কোলাহল-হলাহলের চে’ নিরিবিলিতে দু’দণ্ড শান্তিতে এখানেই আমাদের দেখা হতে পারে রোজ, কি বলিস?’ ফোনটাকে মেরে ফেলতে ফেলতে শুধালাম।
‘সে তো ঠিক। কিন্তু প্রতিবার এতদূর থেকে ডাক দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তুই শুনতেই পাস না একটুও।’
ভালো করে পোস্টকার্ডের ডাকটিকিটটাকে লক্ষ্য করবার চেষ্টা করি – কোন্ দেশ থেকে এসেছে, কোথায় এমন আগুনলাগা বসন্তদিন।
আমার ভাবনা যেন শুনতে পেয়েছে – পৃ হা হা করে সমস্ত বনাঞ্চল কাঁপিয়ে হেসে ওঠে। দুটো কাঠবিড়ালী একে অপরকে তাড়া করে ঝরাপাতা মাড়িয়ে গাছের ওপরে মিলিয়ে যেতে রবিবুড়োকে স্মরণ করে গুনগুনিয়ে উঠলাম।
খেয়ালই করা হলোনা কখন পায়ে পায়ে পৃ মিলিয়ে গেছে পোস্টকার্ডের ভেতরে। ঢাকার শব্দদূষণ আমাকে ঘোর ভাঙিয়ে ঝপাৎ করে ফের অফিসরুমেই ফেরত পাঠিয়ে দিলো…
কী কথা স্মরিয়া এ তনু ভরিয়া
সব পাখি ঘরে ফিরে গেছে। আমিই কেবল অফিসে পড়ে থেকে ফেসবুকের মিটমিট আলোয় দিনশেষের ভ্রান্তি ভুলে একটু চাঙা হতে চাইছি। তবু শরীর ভেঙে জ্বরের মতো কিছু আসতে থাকে। অতটা পথ সাঁতরে পাড়ি দেবার অবসাদে না কি ভালো করে মাথা না মোছার অপরাধে পৃ-কে শাপশাপান্ত করতে করতে সোফায় গড়িয়ে পড়ি।
অথচ এমন চুম্বন
সহজে পাচ্য ছিলো কি
কোন কালে’!
যেই তুমি তাকালে,
আশরীর উত্তাপ
ধেয়ে এসে
বেভুল ডাকাতের মতো
কেমন থম মেরে গেলে
ঘোরের ভেতরে
তখনি জানি –
তোমার ঠোঁটই
হতে পারে
একমাত্র রাজধানী,
ব্যর্থ আজ
প্যারাসিটামল কি
অন্য ধন্বন্তরি
যতই দেখি তারে ততই দহি
কতরাত হল জানিনা, স্কাইপি থেকে ডাক পাঠিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দিলো পৃ।
আমাকে অফিসে পড়ে থাকতে দেখে ওর বুঝি খুব মায়া হল।
‘এখনো বাড়ি যাসনি সোনা? আমি আরো ভাবলাম কাল ছুটির দিন বলে তুই রসিয়ে রসিয়ে ড্রিঙ্ক বানাচ্ছিস!’
‘আমার কি একলা একলা খেতে ভালো লাগে? ঘরে কিচ্ছু নেই, ফ্রিজ খালি।’
‘কিন্তু আমার যে খেতে ইচ্ছে করছে?’
‘তো উপায়?’
কিচ্ছু না, তুই বানিয়ে দেখা তাতেই আমার খাওয়া হয়ে যাবে।’
মহারাণীর আদেশ অমান্য করি সাধ্য কি। অফিসের ফ্রিজ খুলে দেখি প্রায় আধাবোতল Grey Goose পড়ে আছে। সেটা নিয়েই চম্পট দিলাম।
তোমার আছে তো হাতখানি
বাসায় ফিরেই চটপট টিভিতে স্কাইপি কানেকশন দিতে হাসি হাসি মুখে পৃ চলে এলো।
চিল্লিয়ে বললো, ভালো করে সবগুলো স্টেপ বলবি। তাড়াহুড়ো করবিনা একদম।
ফ্রিজ খুলে যা পেলাম তাতেই আজকের ড্রিঙ্ক বানাবার তোড়জোড় শুরু করে দিলাম। বানানো হচ্ছে দুজনের আন্দাজে।
বড় জলপাই – ২ টা
আমলকি – বড় হলে ২ টা, ছোট হলে ৪ টা
লেবু – ১ টা
কাঁচা মরিচ – অর্ধেক টা
আইস কিউব – গোটা ১০
চিনি – ৩ চা চামচ
Grey Goose বা যে কোন ভদকা
সেভেন আপ বা স্প্রাইট
জলপাই,আমলকি, কাঁচা মরিচ ছোট ছোট করে কেটে ব্লেন্ডারে নিয়ে লেবু চিপে রস দিয়ে
১০০ মিলি মতন খাবার পানি আর ৫০ মিলি ভদকা সহ
ভালো করে ব্লেন্ড করে নিচ্ছি।
Shaker এ ৭-৮টা আইসকিউব, চিনি নিয়ে ব্লেন্ডারে যা ছিল ঢেলে বেশ ভালো করে ঝাঁকালাম যতক্ষণ না Shaker-এর বাইরেটা বেশ হিম হিম হয়ে আসছে।
তারপর একটা লম্বামতন গ্লাসে ৩/৪ টা আইসকিউব আর ৫০ মিলি ভদকা নিয়ে তার ওপর Shaker এর মিশ্রণ ঢেলে একটু জায়গা রেখে দেবো যাতে ৫০ মিলি মতন সেভেন আপ যোগ করা যায়। যদি ঝাল করে খাবার ইচ্ছে থাকে তাহলে কাঁচা মরিচ গোটা ১টাও দেয়া যেতে পারে।
জলপাই বা আমলকি দিয়ে garnish করা যেতে পারে যদি ধৈর্য থাকে।
পৃ-র চোখমুখ এদিকে চকচক করে উঠেছে। ভাবছি কালই না আবার বাংলাদেশে আসবার টিকেট করে ফেলে।
গেলাসটাকে ওর বাড়িয়ে দেয়া হাতের ওপর ছুঁইয়েই অগত্যা বলে উঠলাম – চিয়ার্স!
এতো রাতে Grey Goose কোথায় পাই, বলো দিকিনি?? 😛 বিকল্প কিছু আছে নাকিগো?? B-)
যে কোন ভদকা হলেই চলবে আপা। তা না হলে Bacardi lemon rum আরামসে চলে যাবে। 🙂
চিয়ার্স! 🙂
চিয়ার্স!
~x( ~x( :bash: :bash: 😮
মাথা ঠোকেন ক্যান ওমর ভাই? 😛
তুমি ঠিক আছ নূপুর। আমার এই মাথা ঠোকানোয় তোমার কোনোই অবদান নেই। লেখা চালিয়ে যাও। তুমি লেখো ভাল।
😛 😛 🙂
ভালো লাগা রেখে সাথেই আছি। 🙂
নিজের মনের আনন্দে লিখালিখি করি।
অশেষ ধন্যবাদ মামুন।
চমতকার কবিতা.
সেই সাথে সুরা.
আহারে খৈয়াম কে মনে পড়ে.
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂 🙂
ঘ্রানে অর্ধ ভোজন হওয়ার কথা।
কেবল বর্ননেও যে অর্ধের বেশী পান হয়ে যেতে পারে, নতুন করে আবিষ্কার করলাম।
সুপার লাইক, এজ ইউজুয়াল.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
অশেষ ধন্যবাদ রইলো পারভেজ ভাই।
অসাধারন নূপুরদা, সবসময়ের মতই :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
সিসিবির পোস্টের জোয়ারে র চুপ করে থাকা গেলোনা।
ভাবলাম কিছু একটা লেখাই লাগে।
আমলকির রিপ্লেসমেন্ট কিছু দেয়া যাবে? গ্রে গুজের যেই দাম! 🙁
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
এটা এই শুক্রবার সন্ধ্যায় হুট করে বানানো। বাসায় এই-ই ছিল. আমলকি আর জলপাই বাংলাদেশী দোকান থেকে পাওয়া। তাই ভাবলাম দেশি একটা ফ্লেভার থাক। তুমি এখানকার জলপাই দিয়ে চেষ্টা করতে পার আমলকি ছাড়াই। আমি কোন বিকল্প ভেবে পেলে জানাবো।
গ্রে গুজ এর সত্যি খুব দাম। অনেক ভাবনা চিন্তা করে বহুদিন পর কিনেছি একটা। কিন্তু এই ড্রিংক স্মারনফ দিয়েই বানানো।
শহরে ফেরার আগ (২১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত "বাঙলাদেশী দোকান" দৈনন্দিন জীবনের অভিধানে যোগ করতে পারছি না। অপেক্ষায় রইলাম।
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
নূপুর,
আর কতো লোভ জাগাবে তুমি?
গদ্য পদ্য এবং ককটেল!!
চিয়ার্স
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সানা ভাই,
কতদিন পর আপনার দেখা পেলাম। ভালো আছেন?
আপনার লেখা পাইনা অনেকদিন।
গতকাল Chardonnay এর glass এ চুমুক দিতে দিতে পড়ছিলাম নাক ডুবিয়ে
O:-) :hatsoff: :tuski:
মানুষ এমনতয়, একবার পাইবার পর
নিতান্তই মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর.........
অশেষ ধন্যবাদ আপা।
যাক, তবু শার্ডনে খেয়েই আপনার নেশা হয়ে থাকবে -- অধমের লেখাকে দায়ী করা যাবেনা আর। 😀
আহ ! রেসিপি তো জিভে এবং মনে দুটো তেই উত্তাপ সৃষ্টি করে ফেললো ! অনেকদিন পর লগ ইন করলাম সিসিবিতে। ছুটিতে গেলে একদিন ট্রাই করে জানাবো কেমন লাগলো 🙂
ধন্যবাদ নাফিস!
উপরে ব্লগে যা বলা হয়নি সেটা হচ্ছে -- একটু খেয়াল রাখতে হবে যাতে বেশি টক না হয়ে যায়। আর ব্লেণ্ড করে দেয়াড় কারণে গ্লাসে একটা stirrer রাখতে হবে একটু নেড়ে নিয়ে তারপর পান করার জন্য, না হলে সবটা তলানিতে বলসে যাবে একটু পর।
:clap: :clap: :thumbup: নূপুর দা , আমি কিন্তু ভালো তরমুজ শিল্পী 😀
\\\"।নিউট্রন বোমা বোঝ. মানুষ বোঝ না ! ।\\\"
ব্যাখ্যা প্লিজ হা-মীম
হঠাৎ আবার পড়তে গিয়ে প্রশ্নঃ
তারমানে কি প্রথমে সব উপকরণের সাথে ব্লেন্ডারে ৫০ মি,লি ভদকা যাচ্ছে? তারপরে পরিবেশনের সময় গ্লাসে আরো ৫০ মি,লি ভদকা তার উপরে ব্লেন্ডারের মিশ্রণ এবং তার উপর ৫০ মি,লি মত স্প্রাইট? ঠিক ধরলাম কি?
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
বেশ ডিটেইলে পড়েছ দেখছি।
ঠিক তাই। প্রথমে ব্লেন্ডারে ওইটুকু ভদকা যাচ্ছে -- চাইলে ওটাকেই খুব লাইট ড্রিঙ্ক হিসেবে পেশ করা যায়। এটা করার দুটো কারণ ছিল আমার কাছে -- একটু infuse করতে চাইছিলাম ভদকাটাকে। এটাকে আগেই বানিয়ে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজারে চালান করে দেয়া যেতে পারে। পরিবেশনার সময় এটার সঙ্গে ফের ৫০ মিলি ভদকা -- আগের ব্লেণ্ডিং এর ভলিউমটা যদি মোট চারজন এর আন্দাজে হয় তাহলে ওখান থেকে আসছে ১২-১৩ মিলি-র মতো। ফাইনালি একেকটা গ্লাসে যাচ্ছে মোট ৬০ মিলি-র কিছু বেশি - একটা লার্জ পেগ বড়জোর। তেমন কিছু না মোটেও। চাইলেই এটাকে ১০০-র কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া যায়। আমার অভিজ্ঞতা বলে মূল পানীয় আর ফ্লেভারের উপকরণকে কিছুক্ষণ একত্রে ছেড়ে দিলে তারা বেশ মিশ খেয়ে মানিয়ে নেয়। অনেকটা রান্নাবান্নার মেরিনেড করে নেয়ার কনসেপ্ট।
হুম পুরো উত্তরটা দিয়ে দিলেন। ককটেল বিষয়ে ধারণা কম। ১৫০ মিলির মিশ্রণ পুরোটা তো আর ০১ পরিবেশন না। এটা বোঝা উচিৎ ছিল। আমি ভেবেছি এত বড় আকারের পানীয় কিভাবে শেষ করবো 😛 ?!
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
দোস্ত ... 'লং আইল্যাণ্ড আইস টি ' খাওয়াবো তোকে দেশে ফিরলে ... :shy: (সম্পাদিত)
😀 😀